নীলফামারী থেকে
সাদ্দাম আলী।।
জীবন্ত ঘোড়া নিয়ে শোডাউন করার অভিযোগে নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেটের দেয়া ৪০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে এক মাসের জেলের রায় মেনে না নেয়ায় চেয়ারম্যান প্রার্থীকে নিয়মিত মামলায় করা হয়েছে। নীলফামারীর সৈয়দপুর উপজেলার এ ঘটনায় পরদিন শনিবার ওই নিয়মিত মামলা করেছেন উপজেলা সহকারী কমিশনার -ভূমি- আমিনুল ইসলাম। মামলার প্রেক্ষিতে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী ওই প্রার্থী ফয়সাল দিদার দিপু বর্তমানে কারাগারে।
শহীদ তুলশীরাম সড়কে সোনালী ব্যাংকের বিপরীত পার্শে তার নির্বাচনী অফিসের সামনে একটা ঘোড়া সহ টমটম গাড়ি রাখা ছিল। এসময় নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে ওই প্রার্থীর বিরুদ্ধে নির্বাচনী আচরণ বিধি লঙ্ঘনের অভিযোগে ৪০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে এক মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড প্রদান করেন। এতে প্রার্থী ওই রায় না মানায় তাঁকে পুলিশ হেফাজতে নিয়ে থানায় নেয়া হয়।
রাত ১ টা পর্যন্ত তাঁকে জরিমানা প্রদান করে মামলা নিষ্পত্তির জন্য বলা হলেও তিনি রায় অস্বীকার করে। ফলে তাঁর বিরুদ্ধে সরকারি কাজে বাধা প্রদান সংক্রান্ত নিয়মিত মামলা রজু করা হয়। এর আগে রাত আনুমানিক ২ টার দিকেই ফয়সাল দিদার দিপুকে নীলফামারী সদর থানায় পাঠানো হয়। পরে মামলার প্রেক্ষিতে আদালতে সোপর্দ করা হয় এবং আদালতে জামিন না মঞ্জুর হওয়ায় কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে।
এব্যাপারে চেয়ারম্যান প্রার্থী ফয়সাল দিদার দিপু বলেন- ঘটনার সময় আমরা ঘোড়ার গাড়ি নিয়ে কোন প্রকার প্রচারণা চালায়নি। এমনকি সেই গাড়িতে কোন ব্যানার বা পোষ্টারও লাগানো ছিলনা। অথচ ম্যাজিষ্ট্রেট এসে ভূয়া অভিযোগে ৪০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে এক মাসের জেল প্রদান করেন। অতএব আচরণ বিধি লঙ্ঘনের কোন ঘটনা ঘটেনি। তাই এই রায় আমি মানিনা এবং জরিমানাও দিবোনা।
তিনি আরও বলেন- এটা আমার প্রতি জুলুম করা হয়েছে। প্রয়োজনে এক মাস জেল খাটবো তবু অন্যায় মেনে নিবোনা। প্রশাসন একপেশে আচরণ করছেন। অনেক প্রার্থী সরাসরি নানাভাবে নির্বাচনী আচরণ বিধি লঙ্ঘনের পরও প্রশাসন নির্বিকার। অথচ আমরা অপরাধ না করেও আজ শাস্তির আওতায়।
দিপুর স্ত্রী ফাতেমা দিদার বলেন- আমাদের প্রার্থী হেভিওয়েট হওয়ায় অনেকের মাথা ব্যাথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তাই আমাদের গতি রোধ করতেই পরিকল্পিত ভাবে এই অনাকাংখিত ঘটনা ঘটানো হয়েছে। প্রশাসন কারো ইন্ধনে প্রভাবিত হয়ে এমনটা করেছে। কারণ একইভাবে অন্যান্য প্রার্থীরাও আচরণ বিধি লঙ্ঘন করলেও তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।
সম্পূর্ণ উদ্দেশ্য প্রণোদিত ভাবে দিপুকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। আমরা এর তীব্র নিন্দা জানাই। এই বেআইনী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে আইনগতভাবে লড়াই করবো। আগামীকাল রবিবার আদালতে ও নির্বাচন কমিশনে আপিল করা হবে। নিশ্চয় সত্যের বিজয় হবে। বিগত ২৫ বছর ধরে দিপু স্থানীয় ও কেন্দ্রীয় রাজনীতির সাথে জড়িত। ষড়যন্ত্রমুলক ভাবে তাঁর সম্মানহানী করা হলো। এর বিচার একদিন অবশ্যই হবে।
সৈয়দপুর থানার অফিসার ইনচার্জ শাহা আলম শনিবার দুপুরে প্রেস ব্রিফিং করে বলেন- প্রকৃত বিষয় কি তা আমরা জানিনা। গতকাল বিকাল ৪ টায় উপজেলা সহকারী কমিশনার -ভূমি- আমিনুল ইসলাম মুঠোফোন কল করে গ্রেফতার করার নির্দেশ দেয়ায় পুলিশ ওই প্রার্থীকে আটক এবং ঘোড়া সহ টমটম গাড়ি জব্দ করে থানায় নিয়ে আসে। নির্বাচনী আচরণ বিধি লঙ্ঘনের দায়ে জরিমানা করা হলে তিনি তা প্রদানে অস্বীকৃতি জানানোয় এই নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এরপর আজ শনিবার এসিল্যান্ড স্যার নিজে বাদী হয়ে নিয়মিত মামলার এজাহার দেয়ায় আটক আসামীকে আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে। মানলা নং ১৮- তারিখ ১৮-০৫-২০২৪ ইং। এজাহারের কপি দিতে অপারগতা প্রকাশ করেন ওসি।
মামলার বিষয়ে জানতে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা নুর ই আলম সিদ্দিকী এবং মামলার বাদী উপজেলা সহকারী কমিশনার -ভূমি- আমিনুল ইসলামের মন্তব্য জানতে ঘটনার পর থেকে বারবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু তারা শেষ পর্যন্ত কল রিসিভ না করায় তাদের মতামত জানা সম্ভব হয়নি।
এদিকে ঘটনার পর ঘোড়া মার্কার সমর্থকরা শহরে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সভা করেছে। আজও থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। এই ঘটনার জের ধরে ভোটের দিন অনাকাঙ্খিত আরও ঘটনার আশঙ্কা করছেন অনেকে। পাশাপাশি ফয়সাল দিদার দিপুর ঘোড়া মার্কার প্রতি জন সমর্থন বৃদ্ধি পেয়েছে। সর্বত্র এনিয়ে ব্যাপক আলোচনা চলছে। সেই সাথে অনেক প্রার্থী ৫০-৮০ টি মোটর সাইকেল নিয়ে প্রচারণা-হেলিকপ্টার এনে আলোড়ন সৃষ্টি, সর্বোপরি দেয়ালে পোসটার সাটানো ও একাধিক হর্ণ ব্যবহার করে মাইকিং করলেও প্রশাসন কোন পদক্ষেপ না নেয়ায় সমালোচনা দেখা দিয়েছে।