Dhaka , Monday, 23 December 2024
নিবন্ধন নাম্বারঃ ১১০, সিরিয়াল নাম্বারঃ ১৫৪, কোড নাম্বারঃ ৯২
শিরোনাম ::
গাংনীতে অভিভাবক সমাবেশ অনুষ্ঠিত।। যাকাত বোর্ড হতে চলতি অর্থবছরে দরিদ্রদের মাঝে ১১ কোটি টাকা বিতরণের প্রস্তাব অনুমোদিত।। জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় তরুণদের প্রস্তুতি নিতে হবে এবং উন্নয়নের মডেল পরিবর্তন করতে হবে- পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।। দৈনিক বাংলাদেশ সমাচার’র ৯ম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উৎসবে বহুমুখী শিল্প প্রতিভাবান ব্যক্তিত্ব ড. খান আসাদুজ্জামান-এর একক সংগীত সন্ধ্যা অনুষ্ঠিত।। এখনো থামেনি নিহত হাবিবের মায়ের আহাজারি।। পাইকগাছায় সাদপন্থি খুনী-সন্ত্রাসীদের বিচারের দাবীতে মানববন্ধন।। দোহাজারীতে গ্রীন চার্টার্ড স্কুল এন্ড কলেজের উদ্বোধন ও বৃত্তির পুরস্কার বিতরণ।। লক্ষ্মীপুরে প্রকাশ্যে দুই নারীকে পিটিয়ে আহত করলো যুবলীগ নেতা।। গাংনীতে শিক্ষক সুপারভাইজারদের প্রশিক্ষণের উদ্বোধন।। শ্রীপুরে প্রতিহিংসায় জেলা যুবদল ও শ্রমিকদল নেতাকে বিশৃঙ্খলার দায় চাপানোর অভিযোগ।। চবিতে ক্যাব যুব গ্রুপ চবি ও জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর’র যৌথ অভিযান ৩ টি দোকানে জরিমানা ৩১ হাজার টাকা।। লক্ষ্মীপুরে পানিতে ডুবে দুই শিশুর সলীল সমাধি।। সুন্দরগঞ্জে পরিত্যক্ত কোয়াটারে যুবকদের আড্ডা।। নরসিংদী সাবেক সংসদ সদস্য হত্যা  মামলায়  ৩ দিনের রিমান্ডে।। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ আরেক কিশোরের মৃত্যু।। শ্রীপুর উপজেলা কিন্ডারগার্টেন এসোসিয়েশনের অভিষেক অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়েছে।। শ্রীপুরে সেই কারখানা থেকে আরেকজনের লাশ উদ্ধার নিহত ৩।। পরিকল্পিত হামলা ও হত্যার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত।। বিজিবি’কে সীমান্তের অতন্দ্র প্রহরী হিসেবে দায়িত্ব পালনের আহ্বান স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার।। উন্নত ভবিষ্যৎ গড়তে শিশুদের হাতে এন্ড্রোয়েড সেট নয়- অধ্যক্ষ হেলালী।। বিএনপির নাম ভাঙিয়ে মাদরাসা দখলের হুমকি- হেফাজতের নিন্দা।। অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীদের ডাটাবেজ তৈরি করা হচ্ছে পুলিশ কমিশনার।। ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগেঞ্জ জিংক ধানের সম্প্রসারণে কৃষকদের প্রশিক্ষণ ও বীজ বিতরণ।। শিবপুরে প্লাস্টিক কারখানা আগুনে পুড়ে ছাই।। পাইকগাছায় বিপুল পরিমাণ নিষিদ্ধ পলিথিন ও কারেন্ট জাল জব্দ।। ফিসারীতে হামলা ও হত্যা চেষ্টা মামলার আসামি গ্রেফতার।। সা’দ পন্থীদের নিষিদ্ধের দাবিতে ঈদগাঁওতে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত।। শরীয়তপুরে ৫ কোটি টাকা বাজেটের গাইড ওয়ালে ব্যবহার হচ্ছে ভিটি বালু ও ব্যবহৃত পাথর।। দেবহাটায় ছাত্রশিবিরের কর্মী শিক্ষাশিবির অনুষ্ঠিত।। পাইকগাছায় হলুদ ফুলে সোভা ছড়াচ্ছে সরিষা ক্ষেত।।

সিরাজগঞ্জে সরকারি বালুতে ব্যক্তিগত রমরমা ব্যবসা

  • Reporter Name
  • আপডেট সময় : 03:39:11 pm, Sunday, 8 January 2023
  • 88 বার পড়া হয়েছে

সিরাজগঞ্জে সরকারি বালুতে ব্যক্তিগত রমরমা ব্যবসা

মোঃ সৌরভ হোসাইন (সবুজ)

স্টাফ রিপোর্টার সিরাজগঞ্জ।।

 

সিরাজগঞ্জে উত্তোলিত বালু বিক্রি হচ্ছে বানিজ্যিকভাবে, অনাবাদি হচ্ছে ফসলি জমি, ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে গ্রামীণ রাস্তা, দূষিত হচ্ছে পরিবেশ
গাইবান্দা থেকে বগুড়া হয়ে সিরাজগঞ্জ পর্যন্ত অভ্যন্তরীণ মৃত প্রায় বাঙ্গালী, করতোয়া, ফুলজোড় ও হুরাসাগর এ ৪টি নদ-নদী দীর্ঘদিন খননের অভাবে মৃতপ্রায় হয়ে গিয়েছিল। এসব নদী পানি শুণ্য হয়ে পড়ায় একদিকে যেমন ব্যাহত হতো নৌ-চলাচল, তেমনি শুস্ক মৌসুমে সেচ কাজের মিলতো না কাক্ষিত পানি। সংকট ছিল মাছেরও। তাই মৃতপ্রায় এসব নদ-নদীগুলো নাব্যতা ফেরাতে বর্তমান সরকার গাইবান্ধা, বগুড়া হয়ে সিরাজগঞ্জ পর্যন্ত ২১৭ কিলোমিটার নদীখনন প্রকল্প গ্রহন করেছে। এ প্রকল্পের আওতায় নদীতীর সংরক্ষণ ও সবুজায়নও করার কথা রয়েছে। প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে ২ হাজার ২৩৫ কোটি টাকা। ২০১৯ সাল থেকে শুরু হয় ৩ বছর মেয়াদি এ প্রকল্প। নির্ধারিত সময়ে প্রকল্পের কাজ শেষ না হওয়ায় আরো দুই বছর সময় বর্ধিত করা হয়েছে। এই প্রকল্পের উত্তোলিত বালু নদীর তীরবর্তি আবাদি জমিগুলোতে স্তুপ রাখা হয়েছে। এ বালু নদীতীর সংরক্ষণ কাজের পাশাপাশি গ্রামীণ উন্নয়ন ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের কাজে ব্যবহারের কথা থাকলেও তা দেদারছে বানিজ্যিকভাবে বিক্রি করছে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ও এলাকার প্রভাবশালীরা। আর বালি পরিবহনে ভারী যানবাহন ব্যবহার করায় গ্রামীণ রাস্তা-ঘাট ক্ষতির পাশাপাশি দূষিত হচ্ছে পরিবেশ। এছাড়াও নদীতীরের কৃষি জমিতে বালু মজুত করে রাখায় অনাবাদি হয়ে পড়ছে এসব আবাদি জমি। এ বিষয়ে প্রশাসনের কাছে অভিযোগ করেও সুরাহা মেলেনি বলে জানান ভুক্তভোগীরা। আর প্রশাসন বলছে উত্তোলিত বালু দ্রুত নিলামে বিক্রি করে সরকারের কোষাগারে অর্থ জমা দেয়া হবে। সম্প্রতি সরজমিন ঘুরে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

কামারখন্দের আলোকদিয়া গ্রামের জহুরুল ইসলাম বলেন, খনন কাজে নিয়োজিত বাদল এন্টার প্রাইজের ঠিকাদারকে টাকা দিয়ে নদী থেকে বালু উত্তোলন করে নলকা এলাকায় নিজের জমিতে রেখে বিক্রি করছি।

একই এলাকার লুৎফর রহমান বলেন, বাদল এন্টার প্রাইজের ঠিকাদার নদী থেকে উত্তোলিত বালু নলকা এলাকায় আবাদি জমিতে স্তুপ করে রেখেছে। আমি সেখান থেকে বালু কিনে বানিজ্যিকভাবে বিক্রি করছি।

রায়গঞ্জের সাহেবগঞ্জ এলাকার হোটেল ব্যবসায়ী নুর নবীউল আহসান রুমি বলেন, ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান বাদল এন্টার প্রাইজ আমার ৪ বিঘা জায়গায় মাটি স্তুপ করে রেখে গত ৩ বছর বিক্রি করেছে। জায়গার ভাড়া বাবদ আমি কিছু বালু তাদের কাছ রেখে দিয়েছি।

প্রকল্প এলাকায় ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান বাদল এন্টার প্রাইজের কাউকে পাওয়া যায়নি। মোবাইলে যোগাযোগ করা হলেও রিসিভ না করায় তাদের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান আব্দুল মোনায়েম লিমিটেড সাসেক প্রকল্পের আওতায় মহাসড়ক নির্মান করছে। এ প্রকল্পের সিনিয়র সুপারভাইজার আল আমিন বলেন, ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান টিএনবি ড্রেজিং প্রজেক্ট রায়গঞ্জের ঘুড়কা এলাকায় নদী খননের বালু স্তুপ করে রেখেছে। আমরা সেখান থেকে বালু কিনে মহাসড়ক নির্মান কাজে ব্যবহার করছি।

রায়গঞ্জ উপজেলার সীমানা থেকে জয়েনপুর পর্যন্ত ৮ কিলোমিটার এলাকায় নদী খনন করছে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান টিএনবি ড্রেজিং প্রজেক্ট। এ প্রতিষ্ঠানে ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী মোঃ রাশেদ বলেন, নদী খননের বালু মহাসড়ক নির্মান প্রকল্পসহ বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করছি। এটা বিক্রির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি এ প্রতিবেদককে তঁার অফিসে দেখা করার কথা বলে মোবাইলের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।

রায়গঞ্জের নলকা ইউপির ৯ ওয়ার্ডের সদস্য ইউসুফ আলী বলেন, গত দুই থেকে আড়াই বছর যাবত গ্রামীণ রাস্তায় অবৈধভাবে ১০ চাকার ড্রাম ট্রাক দিয়ে বালু পরিবহন করা হচ্ছে। এ কারনে ফুলজোড় কলেজ থেকে বকুলতলা পর্যন্ত আঞ্চলিক পাকা রাস্তা চলাচলের অনুপযোগী হয়ে গেছে। মাঝে মধ্যেই ঘটছে দূর্ঘটনা। আর বালু পরিবহনের কারনে ধুলাবালিতে এলাকার পরিবেশও দুষিত হচ্ছে।

কায়েমপুর গ্রামের কৃষক আবু হানিফ বলেন, নদী খননের বালু আবাদি জমিতে স্তুপ করে রেখে বিক্রি করা হচ্ছে। এ কারনে জমিগুলো বর্তমানে অনাবাদি হয়ে পড়েছে, গুনগতমান ক্ষতি হওয়ায় ভবিষ্যতেও এসব জমিতে আর ফসল হবে না।

রায়গঞ্জ উপজেলার চরতেলিজানা গ্রামের কৃষক মহসিন কবির লিটন মোল্লা জানান, আমার জমি জোরপূর্বক লিজ নিয়ে ঠিকাদার মাটি স্তুপ করে রেখেছে। বালু পরিবহনের কারনে অভ্যন্তরীণ রাস্তা নষ্ট হওয়ায় বাড়িতে যাওয়া আশা কষ্ট হয়। নদীতীর কাটার কারনে অন্য আবাদি জমিগুলোও ভাঙ্গনের হুমকিতে রয়েছে। এসব বিষয়ে উপজেলা প্রশাসনে অভিযোগ করা হলেও কোন লাভ হয়নি।

চান্দাইকোনা ইউপির শিলন্দা গ্রামের আমির হোসেন বলেন, নদী থেকে উত্তোলিত বালু মসজিদ, মাদ্রাসা, কবরস্থানসহ বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজে বিনামূল্যে ব্যবহার হওয়ার কথা ছিল, অথচ দেদারছে বানিজ্যিকভাবে বিক্রি করা হচ্ছে। বালু পরিবহনের কারনে এলাকার পরিবেশ দূষিত হচ্ছে। নদীখনন কাজে নিয়োজিত ঠিকাদার, দলীয় নেতাকর্মী ও প্রভাবশালীরা এ কাজে জড়িত। অথচ প্রশাসন এসব দেখেও না দেখার ভান করছে।

একই এলাকার আলফার উদ্দিন টরিক বলেন, আমরা নদীখননের বিরোধী নয়, তবে এসব বালু পরিবহনের কারনে এলাকার রাস্তাঘাট নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। সরকারের উচিত দ্রুত সময়ের মধ্যে এসব নষ্ট রাস্তা মেরামত করা। অন্যস্থায় জনগনকে চরম ভোগান্তি পোহাতে হবে।
এ বিষয়ে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মোবারক হোসেন বলেন, প্রশাসনের অজান্তে নদী থেকে উত্তোলিত বালু বিক্রি করা হচ্ছে। এসব বন্ধে বিভিন্ন সময় অভিযান চালিয়ে জরিমানাও করা হচ্ছে। তবুও বালু বিক্রি বন্ধ না হওয়ায় উত্তোলিত বালু প্রকাশ্য নিলামে বিক্রি করে সরকারের কোষাগারে টাকা জমা দেওয়ার সিদ্বান্ত হয়েছে।

এ বিষয়ে সদ্য যোগদানকৃত সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী মাহবুবুর রহমান বলেন, রায়গঞ্জ, কামারখন্দ, উল্লাপাড়া ও শাহজাদপুর উপজেলার ২৮টি স্থানে স্তুপ করে রাখা বালু চিহিৃত্ব করা হয়েছে। এসব বালু নিলামে বিক্রির জন্য টেন্ডার আহবান করা হয়েছে। দরপত্র বিক্রি চলছে, আগামী ১৭ জানুয়ারী দরপত্র দাখিল হবে।

প্রকল্পের অগ্রগতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, প্রকল্পের সিরাজগঞ্জ অংশের ৮৫ কিলোমিটার এলাকায় ৬৫ ভাগ নদী খনন হয়েছে। ১২টি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠান এ কাজে নিয়োজিত রয়েছে। এ প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে নদীতে পানি প্রবাহের পাশাপাশি মৎস্য চাষ ও কৃষির উন্নয়নে ভুমিকা রাখবে।

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সঞ্চয় করে রাখুন

জনপ্রিয় সংবাদ

রূপগঞ্জে বস্ত্র ও পাটমন্ত্রীর নির্দেশে নির্মিত চার সড়কের উদ্বোধন।।

পেকুয়ায় বেড়িবাঁধ ভেঙে লোকালয়ে প্লাবিত,২ শত পরিবার পানিবন্দী।।

গাংনীতে অভিভাবক সমাবেশ অনুষ্ঠিত।।

সিরাজগঞ্জে সরকারি বালুতে ব্যক্তিগত রমরমা ব্যবসা

আপডেট সময় : 03:39:11 pm, Sunday, 8 January 2023

মোঃ সৌরভ হোসাইন (সবুজ)

স্টাফ রিপোর্টার সিরাজগঞ্জ।।

 

সিরাজগঞ্জে উত্তোলিত বালু বিক্রি হচ্ছে বানিজ্যিকভাবে, অনাবাদি হচ্ছে ফসলি জমি, ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে গ্রামীণ রাস্তা, দূষিত হচ্ছে পরিবেশ
গাইবান্দা থেকে বগুড়া হয়ে সিরাজগঞ্জ পর্যন্ত অভ্যন্তরীণ মৃত প্রায় বাঙ্গালী, করতোয়া, ফুলজোড় ও হুরাসাগর এ ৪টি নদ-নদী দীর্ঘদিন খননের অভাবে মৃতপ্রায় হয়ে গিয়েছিল। এসব নদী পানি শুণ্য হয়ে পড়ায় একদিকে যেমন ব্যাহত হতো নৌ-চলাচল, তেমনি শুস্ক মৌসুমে সেচ কাজের মিলতো না কাক্ষিত পানি। সংকট ছিল মাছেরও। তাই মৃতপ্রায় এসব নদ-নদীগুলো নাব্যতা ফেরাতে বর্তমান সরকার গাইবান্ধা, বগুড়া হয়ে সিরাজগঞ্জ পর্যন্ত ২১৭ কিলোমিটার নদীখনন প্রকল্প গ্রহন করেছে। এ প্রকল্পের আওতায় নদীতীর সংরক্ষণ ও সবুজায়নও করার কথা রয়েছে। প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে ২ হাজার ২৩৫ কোটি টাকা। ২০১৯ সাল থেকে শুরু হয় ৩ বছর মেয়াদি এ প্রকল্প। নির্ধারিত সময়ে প্রকল্পের কাজ শেষ না হওয়ায় আরো দুই বছর সময় বর্ধিত করা হয়েছে। এই প্রকল্পের উত্তোলিত বালু নদীর তীরবর্তি আবাদি জমিগুলোতে স্তুপ রাখা হয়েছে। এ বালু নদীতীর সংরক্ষণ কাজের পাশাপাশি গ্রামীণ উন্নয়ন ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের কাজে ব্যবহারের কথা থাকলেও তা দেদারছে বানিজ্যিকভাবে বিক্রি করছে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ও এলাকার প্রভাবশালীরা। আর বালি পরিবহনে ভারী যানবাহন ব্যবহার করায় গ্রামীণ রাস্তা-ঘাট ক্ষতির পাশাপাশি দূষিত হচ্ছে পরিবেশ। এছাড়াও নদীতীরের কৃষি জমিতে বালু মজুত করে রাখায় অনাবাদি হয়ে পড়ছে এসব আবাদি জমি। এ বিষয়ে প্রশাসনের কাছে অভিযোগ করেও সুরাহা মেলেনি বলে জানান ভুক্তভোগীরা। আর প্রশাসন বলছে উত্তোলিত বালু দ্রুত নিলামে বিক্রি করে সরকারের কোষাগারে অর্থ জমা দেয়া হবে। সম্প্রতি সরজমিন ঘুরে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

কামারখন্দের আলোকদিয়া গ্রামের জহুরুল ইসলাম বলেন, খনন কাজে নিয়োজিত বাদল এন্টার প্রাইজের ঠিকাদারকে টাকা দিয়ে নদী থেকে বালু উত্তোলন করে নলকা এলাকায় নিজের জমিতে রেখে বিক্রি করছি।

একই এলাকার লুৎফর রহমান বলেন, বাদল এন্টার প্রাইজের ঠিকাদার নদী থেকে উত্তোলিত বালু নলকা এলাকায় আবাদি জমিতে স্তুপ করে রেখেছে। আমি সেখান থেকে বালু কিনে বানিজ্যিকভাবে বিক্রি করছি।

রায়গঞ্জের সাহেবগঞ্জ এলাকার হোটেল ব্যবসায়ী নুর নবীউল আহসান রুমি বলেন, ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান বাদল এন্টার প্রাইজ আমার ৪ বিঘা জায়গায় মাটি স্তুপ করে রেখে গত ৩ বছর বিক্রি করেছে। জায়গার ভাড়া বাবদ আমি কিছু বালু তাদের কাছ রেখে দিয়েছি।

প্রকল্প এলাকায় ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান বাদল এন্টার প্রাইজের কাউকে পাওয়া যায়নি। মোবাইলে যোগাযোগ করা হলেও রিসিভ না করায় তাদের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান আব্দুল মোনায়েম লিমিটেড সাসেক প্রকল্পের আওতায় মহাসড়ক নির্মান করছে। এ প্রকল্পের সিনিয়র সুপারভাইজার আল আমিন বলেন, ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান টিএনবি ড্রেজিং প্রজেক্ট রায়গঞ্জের ঘুড়কা এলাকায় নদী খননের বালু স্তুপ করে রেখেছে। আমরা সেখান থেকে বালু কিনে মহাসড়ক নির্মান কাজে ব্যবহার করছি।

রায়গঞ্জ উপজেলার সীমানা থেকে জয়েনপুর পর্যন্ত ৮ কিলোমিটার এলাকায় নদী খনন করছে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান টিএনবি ড্রেজিং প্রজেক্ট। এ প্রতিষ্ঠানে ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী মোঃ রাশেদ বলেন, নদী খননের বালু মহাসড়ক নির্মান প্রকল্পসহ বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করছি। এটা বিক্রির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি এ প্রতিবেদককে তঁার অফিসে দেখা করার কথা বলে মোবাইলের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।

রায়গঞ্জের নলকা ইউপির ৯ ওয়ার্ডের সদস্য ইউসুফ আলী বলেন, গত দুই থেকে আড়াই বছর যাবত গ্রামীণ রাস্তায় অবৈধভাবে ১০ চাকার ড্রাম ট্রাক দিয়ে বালু পরিবহন করা হচ্ছে। এ কারনে ফুলজোড় কলেজ থেকে বকুলতলা পর্যন্ত আঞ্চলিক পাকা রাস্তা চলাচলের অনুপযোগী হয়ে গেছে। মাঝে মধ্যেই ঘটছে দূর্ঘটনা। আর বালু পরিবহনের কারনে ধুলাবালিতে এলাকার পরিবেশও দুষিত হচ্ছে।

কায়েমপুর গ্রামের কৃষক আবু হানিফ বলেন, নদী খননের বালু আবাদি জমিতে স্তুপ করে রেখে বিক্রি করা হচ্ছে। এ কারনে জমিগুলো বর্তমানে অনাবাদি হয়ে পড়েছে, গুনগতমান ক্ষতি হওয়ায় ভবিষ্যতেও এসব জমিতে আর ফসল হবে না।

রায়গঞ্জ উপজেলার চরতেলিজানা গ্রামের কৃষক মহসিন কবির লিটন মোল্লা জানান, আমার জমি জোরপূর্বক লিজ নিয়ে ঠিকাদার মাটি স্তুপ করে রেখেছে। বালু পরিবহনের কারনে অভ্যন্তরীণ রাস্তা নষ্ট হওয়ায় বাড়িতে যাওয়া আশা কষ্ট হয়। নদীতীর কাটার কারনে অন্য আবাদি জমিগুলোও ভাঙ্গনের হুমকিতে রয়েছে। এসব বিষয়ে উপজেলা প্রশাসনে অভিযোগ করা হলেও কোন লাভ হয়নি।

চান্দাইকোনা ইউপির শিলন্দা গ্রামের আমির হোসেন বলেন, নদী থেকে উত্তোলিত বালু মসজিদ, মাদ্রাসা, কবরস্থানসহ বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজে বিনামূল্যে ব্যবহার হওয়ার কথা ছিল, অথচ দেদারছে বানিজ্যিকভাবে বিক্রি করা হচ্ছে। বালু পরিবহনের কারনে এলাকার পরিবেশ দূষিত হচ্ছে। নদীখনন কাজে নিয়োজিত ঠিকাদার, দলীয় নেতাকর্মী ও প্রভাবশালীরা এ কাজে জড়িত। অথচ প্রশাসন এসব দেখেও না দেখার ভান করছে।

একই এলাকার আলফার উদ্দিন টরিক বলেন, আমরা নদীখননের বিরোধী নয়, তবে এসব বালু পরিবহনের কারনে এলাকার রাস্তাঘাট নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। সরকারের উচিত দ্রুত সময়ের মধ্যে এসব নষ্ট রাস্তা মেরামত করা। অন্যস্থায় জনগনকে চরম ভোগান্তি পোহাতে হবে।
এ বিষয়ে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মোবারক হোসেন বলেন, প্রশাসনের অজান্তে নদী থেকে উত্তোলিত বালু বিক্রি করা হচ্ছে। এসব বন্ধে বিভিন্ন সময় অভিযান চালিয়ে জরিমানাও করা হচ্ছে। তবুও বালু বিক্রি বন্ধ না হওয়ায় উত্তোলিত বালু প্রকাশ্য নিলামে বিক্রি করে সরকারের কোষাগারে টাকা জমা দেওয়ার সিদ্বান্ত হয়েছে।

এ বিষয়ে সদ্য যোগদানকৃত সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী মাহবুবুর রহমান বলেন, রায়গঞ্জ, কামারখন্দ, উল্লাপাড়া ও শাহজাদপুর উপজেলার ২৮টি স্থানে স্তুপ করে রাখা বালু চিহিৃত্ব করা হয়েছে। এসব বালু নিলামে বিক্রির জন্য টেন্ডার আহবান করা হয়েছে। দরপত্র বিক্রি চলছে, আগামী ১৭ জানুয়ারী দরপত্র দাখিল হবে।

প্রকল্পের অগ্রগতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, প্রকল্পের সিরাজগঞ্জ অংশের ৮৫ কিলোমিটার এলাকায় ৬৫ ভাগ নদী খনন হয়েছে। ১২টি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠান এ কাজে নিয়োজিত রয়েছে। এ প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে নদীতে পানি প্রবাহের পাশাপাশি মৎস্য চাষ ও কৃষির উন্নয়নে ভুমিকা রাখবে।