
সাকিব ফারহান,
কুমারখালী (কুষ্টিয়া) প্রতিনিধি ।।
করোনা মহামারিতে এক সুপরিচিত, জনপ্রিয় ও মানবিক খ্যাত ব্যক্তি কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলা নির্বাহী অফিসার রাজীবুল ইসলাম খান। সংক্রমণ প্রতিরোধে স্বাস্থ্যবিধি, সরকারি নির্দেশনা ও লকডাউন প্রতিপালনে শহর থেকে শুরু করে প্রত্যন্ত গ্রাম – গঞ্জে ছুটে বেড়িয়েছেন তিনি। অমান্যকারীদের কখনও সু কৌশলে বুঝিয়ে, কখনও বা জরিমানা করে ঘরে ফেরাতে সার্বক্ষণিক মাঠ দাপিয়েছেন তিনি। তার আচার – আচরণ, বুদ্ধিমাত্তা, সৃজনশীলতা, মানবিকতা ও সততা দিয়ে সাধারণ জনগণ থেকে শুরু করে জনপ্রতিনিধি, সরকারি – বেসরকারি কর্মকর্তা, কর্মচারি, ব্যবসায়ী, শিক্ষক – শিক্ষার্থী, বীরমুক্তিযোদ্ধা সহ সকল শ্রেণি পেশার মানুষের মন জয় করতে সক্ষম হয়েছেন তিনি। অর্জন করেছেন ব্যাপক জনপ্রিয়তা।
সেই জনপ্রিয় ও মানবিক ইউএনও রাজীবুল ইসলাম খানের আজ সোমবার (১২ জুলাই) বদলিজনিত বিদায়। তিনি পদোন্নতি পেয়ে আজ পার্শ্ববর্তী জেলা ঝিনাইদহতে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক হয়ে যোগদান করবেন। কুমারখালী উপজেলা নির্বাহী অফিসার কার্যালয় সুত্রে বদলির তথ্য নিশ্চিত হওয়া গেছে।
এরআগে রোববার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের নির্দেশনা অনুযায়ী ২০২০-২০২১ অর্থবছরে উপজেলা নির্বাহী অফিসার হিসাবে জেলা পর্যায়ে শুদ্ধাচার পুরষ্কারের জন্য মনোনীত হয়েছেন তিনি।দুপুরে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে তার হাতে শুদ্ধাচার সম্মাননা ক্রেস্ট তুলে দেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সাইদুল ইসলাম।
উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয় সুত্রে জানা গেছে, করোনা ভাইরাস ( কোভিড-১৯) এর সংক্রমণ প্রতিরোধে স্বাস্থ্যবিধি ও লকডাউন অমান্য করায় ১১৩ বার ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেছেন উপজেলা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রাজীবুল ইসলাম খান।
২০২০ সালের ১৯ মার্চ থেকে গতকাল ১০ জুলাই রোববার পর্যন্ত উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হয়।আদালতে ৮২৭ মামলায় ৮৩৮ জনকে দন্ড প্রদান করা হয়। তন্মধ্যে ৮১৭ জনকে নয় লক্ষ ৩৭ হাজার ৯৯০ টাকা অর্থদণ্ড ও ১০ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড প্রদান করা হয়।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয় সুত্রে জানা গেছে,তিনি গত ২০১৮ সালে ১৩ অক্টোবর কুমারখালীতে যোগদান করেন। যোগদানের পর থেকেই সুন্দর আচরণ, চমৎকার ব্যক্তিত্ব ও দক্ষ কর্ম দ্বারা উপজেলাবাসীর মন জয় করতে সক্ষম হন। এরপর মহামারী করোনায় অসামান্য ভূমিকা পালন করে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেন ইউএনও রাজীবুল ইসলাম খান।
এছাড়াও চলমান করোনা পরিস্থিতিতে ইউ,এনও রাজিবুল ইসলাম খানের সাহসী ভূমিকা কালের সাক্ষী হয়ে থাকবে বলে মনে করেন উপজেলাবাসী।উপজেলাবাসীর বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে রাত-দিন উপজেলার আনাচে-কানাচেতে ঘুরে বেরিয়েছেন অতন্দ্র প্রহরী হিসেবে।
আবার কোন সময় মানবিক ইউ,এনও হিসেবে করোনাকালীন এসময়ে অসহায় মানুষের দড়জায় গিয়ে কড়া নেড়েছেন খাদ্য সহায়তা নিয়ে।উপজেলার প্রতিটি দপ্তরের দাপ্তরিক কাজের যথাযথ পর্যবেক্ষনের মধ্য দিয়ে
একটি দক্ষ কর্ম কাঠামোবলয় তৈরি করে সরকারী কাজে নিয়ে এসেছেন শতভাগ সচ্ছতা।
ইতিমধ্যে ইউ,এনও রাজিবুল ইসলাম খান তার মেধা ও কর্মদক্ষতার কারনে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক হিসেবে পদন্নোতিও পেয়েছেন।
অন্যদিকে ইতিহাস ঐতিহ্য আর সংস্কৃতির রাজধানী ক্ষ্যাত কুষ্টিয়া তথা কুমারখালীকে তার নিজ উদ্যোগে একটি ডকুমেন্টরী তৈরি করে আবার নতুন করে কুমারখালীকে তুলে ধরেছেন বিশ্ব দরবারে।
এ বিষয়ে বিদায়ী এই ইউএনও রাজীবুল ইসলাম খান বলেন, আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করছি। সরকারি চাকুরে হিসাবে শুদ্ধাচারী হওয়াটাই স্বাভাবিক। আমি সরকারি কাজে সবসময় ১০০% দেয়ার চেষ্টা করেছি এবং সরকারি আইন কানুনের উপর থেকে শতভাগ কাজ করার চেষ্টা করেছি। মানুষ ভুলের ঊর্ধ্বে নয়, তবে ইচ্ছাকৃতভাবে ভুল করি নাই বলে দাবী করি। আমাকে মনোনীত করার জন্য শ্রদ্ধেয় ডিসি স্যারসহ কমিটির সদস্যবৃন্দকে কৃতজ্ঞতা জানাই এবং সবার কাছে দোয়া চাই।