শরীয়তপুর প্রতিনিধি।।
পদ্মা সেতুর নাওডোবা প্রান্ত থেকে শরীয়তপুর জেলা শহর পর্যন্ত ২৭ কিলোমিটার চার লেনের সংযোগ সড়কে ‘সড়ক রক্ষা বাঁধের’ কাজে নিম্নমানের মালামাল ব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়- সড়কের পাশে গর্ত গভীর হওয়ায় নির্মাণ করা হচ্ছে সড়ক রক্ষা বাঁধ -গাইডওয়াল-। কিন্তু ওই বাঁধ নির্মাণে প্রয়োজনীয় মালামাল ব্যবহার না করে নিম্নমানের মালামাল ব্যবহার করা হচ্ছে। এমন অভিযোগ করছেন স্থানীয়া বাসিনাদারা।
জানা যায়- এধরনের বাঁধ নির্মাণে সাধারণত সিমেন্টের সাথে সিলেকশন বালু, স্বচ্ছ পাথর ও আস্তর বালু ব্যবহার করার কথা। তবে কথা থাকলেও ব্যবহার করা হচ্ছে ভিটি বালু ও ব্যবহৃত পাথর। গত ২৪ নভেম্বর ও তারও এক সপ্তাহ্ আগে থেকে সড়ক রক্ষা বাঁধের নির্মাণকাজ পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায় এমন চিত্র। এতে বাঁধ নির্মাণ হলেও খুব বেশীদিন টেকসই হবেনা বলে বলছেন স্থানীয়রা। কারন সড়কের কাজ সম্পন্ন হওয়ার পর এখান দিয়ে ভারী যানবাহন চলাচল বেড়ে যাবে। তাই নির্মাণ করা ঐ সড়ক রক্ষা বাঁধে নিম্নমানের মালামাল ব্যবহার করায় যেকোন সময় তা ধসে পড়বে।
বিষয়টি নিয়ে জেলা নির্বাহী প্রকৌশলী নাবিল আহমেদের কাছে জানতে ২৪ নভেম্বর তার মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি জানান- বিষয়টি আমার জানা নেই। খোঁজ নিয়ে দেখবো। এর কিছুক্ষণ পরেই ওই কর্মকর্তা এই প্রতিবেদককে মুঠোফোনে কল ব্যাক করে বলেন, ‘আপনি ফালতু অভিযোগ করেছেন! সড়ক রক্ষা বাঁধের কোন কাজ চলছে না’ বলেই তিনি ফোন কেটে দেন।
এরপর ঐ দিন থেকে চলমান সড়ক রক্ষা বাঁধের কাজ বন্ধ করে দেয়া হয়। এর চারদিন পর ২৮ নভেম্বর আবারও ঐ সড়ক রক্ষা বাঁধের কাজ শুরু করা হয়। পরে সেখানে গিয়ে দেখা যায়। নির্মাণকাজে ভালো মালামাল ব্যবহার করা হচ্ছে। তবে এর আগে নিম্নমানের মালামাল ব্যবহারের কারনে বাঁধটি ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে।
২০২০ সালের মার্চে পদ্মা সেতুর নাওডোবা প্রান্ত হতে শরীয়তপুর জেলা শহর পর্যন্ত ১ হাজার ৬৮২ কোটি টাকার প্রকল্প অনুমোদন দেয় সরকার। আর এর নির্মাণকাজ শেষ করার জন্য সময় দেওয়া হয় ২০২২ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত। কিন্তু নির্দিষ্ট সময় পাড় হলেও সড়কটির নির্মাণকাজ শুরুই করতে পারেনি সড়ক ও জনপথ বিভাগ -সওজ-। এরপর প্রকল্পের মেয়াদ বাড়িয়ে ২০২৪ সালের জুন মাস পর্যন্ত করা হয়। মেয়াদ বাড়ানোর পর গত জুনে আবারও প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হলেও সড়ক বিভাগ বলছে এখন পর্যন্ত সড়কের কাজ শেষ হয়েছে ৫৬ শতাংশ। এ সড়কের জমি অধিগ্রহণ চার লেনের জন্য করা হলেও বর্তমানে সড়কটিতে ৩৩ ফুট প্রশস্ত দুই লেন নির্মাণ করা হচ্ছে। গত জুনে দ্বিতীয়বার মেয়াদ শেষ হওয়ায় পর আবারও দুই বছরের জন্য প্রকল্পটির মেয়াদ বাড়িয়ে ২০২৬ সালের জুন পর্যন্ত করা হয়েছে। কিন্তু এখনো সড়কটির কাজ চলছে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে।
সড়ক বিভাগ সূত্রে জানা যায়- প্রয়োজন অনুযায়ী সড়কটির বিভিন্ন স্থানে এ পর্যন্ত ১২০০ মিটার সড়ক রক্ষা বাঁধ নির্মাণ করা হয়েছে যার ব্যয় ধরা হয়েছে ৫ কোটি ৬ লাখ ৩৮ হাজার টাকা। প্রয়োজন অনুযায়ী সড়কের আরো কয়েকটি স্থানে এমন সড়ক রক্ষা বাঁধ নির্মাণ করা হবে।
সড়ক রক্ষা বাঁধের কাজটি বাস্তবায়ন করার দায়িত্ব পেয়েছে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স সালেহ আহমেদ। সড়ক রক্ষা বাঁধে নিম্নমানের মালামাল ব্যবহারের বিষয়ে কথা হয় ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানটির ইনচার্জ আমজাদ হোসাইনের সাথে। তিনি বলেন- আমাদের স্টিমেটে যেভাবে ধরা হয়েছে আমরাতো সেভাবেই দিচ্ছি। তবে কাজ করতে গেলে কিছুটা এদিক-সেদিক হবে এটা খুবই স্বাভাবিক।”
সড়কটি নির্মাণকাজের সার্বিক বিষয় নিয়ে জানতে সড়ক বিভাগের জেলা নির্বাহী প্রকৌশলী নাবিল আহমেদের সাথে কথা বলতে একাধিকবার তার দপ্তরে গিয়ে তাকে পাওয়া যায়নি। পরে তার মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।