
মেহেরপুর থেকে জুরাইস ইসলাম ।।
গেল বছর করোনার কারণে মাত্র দুটি গরু বিক্রি করেছিলাম। লোকসানের ভয়ে বাকী গরু ফেরত আনা হয়। এক বছর ধরে গরুগুলি খাবার দিয়ে পালন করা হচ্ছে। এবারও যদি গরু না বিক্রি হয় তাহলে মোটা অংকের লোকসান গুনতে হবে। এমনি ভাবে মতামত ব্যক্ত করছিলেন মেহেরপুরের গাংনীর সোনার বাংলা ফার্মের মালিক এনামুল হক। কোরবানীর জন্য তার খামারে প্রস্তুত রাখা হয়েছে ২৫ টি গরু। এ গরুগুলি ঢাকাতে না নিতে পারলে পথে বসবেন তিনি। শুধু এনামুল নয়, তার মতো কয়েক হাজার খামারী ও পশু পালনকারী লোকসান গুনবেন।
মেহেরপুরের বিভিন্ন এলাকার পশু পালনকারী ও খামারীদের সাথে আলাপ করে জানা গেছে, সবারই টার্গেট থাকে কোরবানীর ঈদ। কোরবানীর ঈদ পশু পালনকারিদের জন্য একটি বড় বাজার। সকলেই পালিত পশু বিক্রি করে বাছুর গরু কিনে লালন পালন শুরু করে। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে অনেক গবাদি পশু রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় নিয়ে যাওয়া হয় বিক্রির জন্য। তবে এবছর লকডাউনের কারনে স্থানীয় পশুহাটগুলিও বন্ধ করেছেন প্রশাসন। দুশ্চিন্তায় দিন কাটছে খামারিদের।
গাংনীর লাভলী এগ্রো ফার্ম এর মালিক সুলতান মাহমুদ শান্ত জানায়, তার খামারে রয়েছে ১০ টি হরিয়ান ও নেপালী জাতের গরু। প্রতিটি গরুর দাম অন্ততঃ ৫ লাখ টাকা থেকে ৭ লাখ টাকা। গেল বছর স্থানীয় ব্যাপারীরা খামারে এসে গরু কিনেছিল। এবার পশু হাট বন্ধ হওয়ায় কেউ আসছেনা। আবার ঢাকাতে নিয়ে যেতে না পারলে মোটা অংকের লোকসান গুণতে হবে।
বামুন্দির বালিয়া ঘাট গ্রামের জেএ এগ্রো ফার্ম এর মালিক সাইদুর রহমান জানান, তিনি কোরবানির ঈদের জন্য খামারে ২২ টি গরু পালন করেছেন। দু,দিন আগে বিক্রি করেছেন তিনটি গুরু । বিক্রিয়কৃত একেকটি গরুর ওজন হবে ১২ থেকে ১৩ মন। দাম পেয়েছেন দুই লাখ আশি হাজার। তবে পরিস্থিতি সাভাবিক থাকলে আরো বেশি দামে বিক্রি করতে পারতেন। তার খামারে আরো ৭ টি বড় গরু রয়েছে যার ওজন হবে ১৬ থেকে ১৮মন। এদেরকে তিনি ঢাকায় নিয়ে যাওয়ার জন্য পস্তত করছেন।
মেহেরপুর জেলা ডেইরী এসোসিয়েশনের সভাপতি রেজাউল হক বলেন, এক বছর লালন পালন ও পরিচর্যা করে অনেক খামারিদের স্বপ্ন কোরবানির ঈদে গরু বিক্রি করবেন। বাজার পরিস্থিতি ভাল না হলে লোকসান গুনতে হবে প্রতিটি খামারিদের। বাইরের ব্যাপারিদের সাথে অনেকেরই কথা হয়েছে। পরিবেশ না বদলালে তারা জেলায় পশু কিনতে আসবেন না। তবে পরিস্থিতি কি হবে তাও বলা যাচ্ছেনা। ঈদের এখনো বেশ কিছুদিন বাকী । সকলেই প্রশাসনের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় রয়েছে।
মেহেরপুর জেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা কৃষিবিদ সাইদুর রহমান বলেন, জেলায় প্রায় ৩০ হাজার খামারী কোরবানীর বাজারে বিক্রির জন্য প্রস্তত করেছেন ১ লাখ,৮৩ হাজার ৫৬৯ টি গবাদি পশু। এর মধ্যে গরু প্রস্তত রয়েছে ৫৭ হাজার ২৮৭ টি, ছাগল একলাখ ২২ হাজার ৯৯৪টি, ভেড়া দু হাজার ৭১২টি এবং মহিষ রয়েছে ৫৭৬ টি। আমাদের সার্বিক পরামর্শ ও সহযোগীতায় খামারিরা গবাদি পশু পালনে সফল হয়েছেন। জেলার চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন জেলায় তা বিক্রি করে মোটা টাকা আয় করেন। গত বছর করোনা পরিস্থিতিতে অনেককেই লোকসানের মধ্যে পড়তে হয়েছে। এবছর এলাকাতে গরু মহিষের দাম ভাল আশা করি খামারিরা লাভবান হবে।
মেহেরপুর জেলা প্রশাসক ড. মুনসুর আলম খান বলেন, দেশে এখন কঠোর লকডাউন চলছে। কোবরানির বাজারে খামারিরা তাদের গবাদিপশু বিক্রি করবেন। মেহেরপুর জেলায় গতবছর আমরা একটি অনলাইন পশু হাট চালু করেছি। এবছরও সেটি চালু রয়েছে। অনেকেই অনলাইনের মাধ্যমে বেচাকেনা করছেন। কোরবানির পশু হাটের ওপর সরকারি নির্দেশনা এখনো পাইনি। পেলে জানানো হবে।