
অরবিন্দ রায়,
নরসিংদী ভূমিকম্পে হারিয়ে গেল শিশুসহ পাঁচ জীবন। ঘোড়াশাল – পলাশ সার কারখানার উৎপাদন সাময়িক বন্ধ, ঘোড়াশাল তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রে আগুন, বিভিন্ন স্হানে মাটিতে ফাটল দেখা দিয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগের প্রতিনিধি দল শনিবার পলাশ রেসিডেন্সিয়াল মডেল কলেজে থেকে ভূমিকম্পনে মাটি ফাটলের বিভিন্ন নমুমা সংগ্রহ করেছেন।
ভূমিকম্পে শহরের মানুষের আতন্ক ছড়িয়ে পড়লে বাজার এলাকা , বাস স্টেশন,রেল স্টেশন, ডিসি রোড়, কলেজ রোড়, আবাসিক এলাকার মানুষ হুরোহুরি করে রাস্তায় বেরিয়ে আসে। এ সময় শতাধিক মানুষ আহত হয়।
নরসিংদীতে ভয়াবহ ভূমিকম্পে মাটির ঘরের দেয়াল চাপায় কাজম আলী (৭৫) নামে বৃদ্ধ নিহত হয়েছেন। নিহত কাজম আলী নরসিংদীর পলাশ উপজেলার চরসিন্দুর ইউনিয়নের মালিতা পশ্চিমপাড়া গ্রামের বাসিন্দা। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন নিহতের চাচাতো ভাই আউয়াল মিয়া। পলাশ উপজেলার ডাঙ্গা ইউনিয়নের কাজীরচর নয়াপাড়া এলাকার মৃত সিরাজ উদ্দীন ছেলে মৃতা: নাসির উদ্দীন (৬৫)ভূমিকম্পের সময় স্টোক করে নিজ বাড়িতে মৃত্যু হয়েছে।
নরসিংদীর গাবতলীতে বাসার দেয়াল চাপা পড়ে ওমর (১০) নামে এক শিশুর মৃত্যু হয় ও গুরত্বর আহত হয় আরও তিনজন। এ মধ্যে ঢাকা মেডিকেল কলেজ নেওয়ার পর আরো একজনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানা যায়। নিহতে নাম ঠিকানা এখনো পাওয়া যায়নি ।
শিবপুর উপজেলার জয়নগর ইউনিয়নের গআজকিতলা (পূর্বপাড়া) গ্রামের ফোরকান ( ৪০) ভূমিকম্পনকালে কম্পনের ফলে গাছ থেকে পড়ে যান ও তাৎক্ষণিক নরসিংদী জেলা হাসপাতালে নিলে তাকে ঢাকা মেডিক্যাল রেফার্ড করে। ঢাকায় নেওয়ার পথে রাস্তায় তার মৃত্যু হয়।
রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত নরসিংদী জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) আবু তাহের মো: সামসুজ্জামান জানান, ভূমিকম্পে ৪ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন। বাকি একজনের মৃত্যুর বিষয়টি ভেরিফাই করা হচ্ছে।
শুক্রবার সকাল ১০টা ৩৮ মিনিটে ভয়াবহ ভূমিকম্প ঘটে। ঘোড়াশাল তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রে অগ্নিকান্ডের সূচনা হলে ফায়ার সার্ভিসের ২ টি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রনে আনে। এতে জাতীয় গ্রিডের সাবস্টেশনের বিপুল পরিমাণ পিটি ( প্রডাকশন ট্রান্সফরমান) ভূ- কম্পনের ফলে ভেঙ্গে পড়ে।
ঘোড়াশাল পলাশ সারকারখানার ইউরিয়া প্রডাকশন ভূমিকম্পের কারনে সাময়িক বন্ধ হয়ে যায়। ভূ- কম্পনের সময় ইঞ্জিন মেশিনারিজ বন্ধ হয়ে যায় ও বর্তমানে মেশিনারিজ চেকিং অপারেশনে আছে।
ভূমিকম্পে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, সার্কিট হাউস সহ কয়েক শতাধিক ভবনে ফাটল দেখা দিয়েছে।
এ ছাড়া জেলা সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের তথ্যমতে, জেলা ও উপজেলায় কমপক্ষে শতাধিক মানুষ আহত হয়ে প্রাথমিকভাবে চিকিৎসা নিয়েছেন বলে জানা যায়। আহতদের মধ্যে তিনজনের অবস্থা সংকটাপন্ন। তবে আহতদের তাৎক্ষণিকভাবে তাদের নাম পরিচয় পাওয়া যায়নি।
ভূমিকম্পে নরসিংদীতে মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। জেলার প্রায় সব উপজেলায় ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। নরসিংদী শহরের অনেক ভবন ফেটে ও হেলে পড়েছে।পলাশ, শিবপুর, রায়পুরা, মনোহরদী, বেলাব ও মাধবদীতেও বহু ভবনে হয় ফাটল দেখা দিয়েছে।
অন্যদিকে, ভয়াবহ ভূমিকম্পে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে ঘোড়াশাল তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রেও। পলাশ উপজেলার ঘোড়াশাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের সাবস্টেশনে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে।
সিনিয়র শিক্ষক আনোয়ার হোসেন জানান,
বন্ধের দিন থাকায় আমরা সবাই বাসায় ছিলাম। প্রথমে মনে হয়েছিল মাথা ঘুরছে। পরে দেখি আলমারি, টেবিল, ফ্যান কাঁপছে তখন বুঝলাম ভূমিকম্প হচ্ছে। আমি পরিবারের সবাই কে নিয়ে নিচে নেমে আসি।
পলাশ ফায়ার সার্ভিসের সিনিয়র স্টেশন অফিসার মো. আব্দুল শহিদ ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ‘খবর পেয়ে পলাশ ফায়ার সার্ভিসের ২টি ইউনিটের চেষ্টায় অল্প সময়ের মধ্যে এ আগুন নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসে।
ঘোড়াশাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রধান প্রকৌশলী মো. এনামুল হক জানান, ভূমিকম্পে এ আগুনের ঘটনা ঘটে। বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক করতে কাজ চলছে বলেও জানান তিনি।
রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ৫ দশমিক ৭ মাত্রার ভূমিকম্প হয়েছে। শুক্রবার (২১ নভেম্বর) সকালে ১০টা ৩৮ মিনিটে অনুভূত এ ভূকম্পনের উৎপত্তি নরদিংসদীর মাধবদীতে।
জেলার গাবতলী এলাকার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন নরসিংদী পুলিশ সুপার মেনহাজুল আলম। এসময় তিনি বলেন, ভূমিকম্পে জেলায় শতাধিক আহত হওয়ার খবর পেয়েছি। তবে যে কোনো দুর্যোগে জেলা পুলিশ সাধারণ মানুষের পাশে রয়েছে।
নরসিংদীর জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আনোয়ার হোসাইন গণমাধ্যমকে জানান, ভূমিকম্প সৃষ্ট ক্ষয়ক্ষতি ও দুর্যোগ সংশ্লিষ্ট তথ্যের জন্য জেলা প্রশাসন থেকে কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে খোঁজ খবর রাখা হচ্ছে।
অল্প সময়ের ভূমিকম্পে মানুষের মনে ভয় রেখে গেছে। অনেক পরিবার গত রাত আতন্কে ঘুমাতে পারেননি । বিভিন্ন ভবনে ফাটল দেখা দেওয়ার মালিক ও বাসার ভাড়াটিয়ারা চিন্তায় রয়েছেন।
অভিজ্ঞ মহল মনে করছেন, ভবন নির্মাণে নিয়ম মেনে কঠোমোগত নিরাপত্তা নিশ্চিত করা জরুরি। ভূমিকম্পনে সাধারন মানুষের সচেতনতা বাড়ানোর প্রয়োজন বলে তারা মনে করেন।
























