
অরবিন্দ রায়, স্টাফ রিপোর্টার
দেশের সর্ববৃহৎ পাইকারি কাপড়ের হাট নরসিংদীর বাবুরহাট “প্রাচ্যের ম্যানচেস্টার ” হিসেবে পরিচিত। ঈদকে সামনে রেখে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ক্রেতাদের ভিড়ে জমজমাট এখন বাবুর হাট। রোজা শুরুর আগে থেকেই এ হাটের অলিগলি জুড়ে দোকানে দোকানে ক্রেতাদের ব্যাপক ভীড় লক্ষ্য করা যায় । সব মানুষ বেচা কেনায় ব্যস্ত, তাদের যেন দম ফেলার সময় নেই। গামছা, শাড়ি, লুঙ্গি, থ্রি -পিজ, শার্ট পিজ, প্যান্ট পিজ, পাঞ্জাবির কাপড়, থান কাপড়, বিছানা ছাদর সহ দেশীয় সব ধরনের কাপড় পাওয়া যায় বাবুর হাটে। নরসিংদী ও আশেপাশের জেলাগুলোতে তৈরিকৃত সব ধরনের দেশীয় কাপড় বাবুর হাটে বিক্রি হয়। দেশের মোট কাপড়ের প্রায় ৭০ শতাংশ কাপড়ের চাহিদা বাবুর হাট থেকে মিটিয়ে থাকে।
বাবুরহাটের অলিগলি জুড়ে দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে আসা পাইকারি ক্রেতাদের ব্যাপক ভিড়। ক্রেতারা এ দোকান সে দোকান ঘুরে পছন্দ মতো শাড়ি, লুঙ্গি , থ্রি পিস সহ নানা ধরনের নিত্য নতুন ডিজাইনের সব কাপড় কিনছেন। আবার ব্যক্তি পর্যায়েও অনেকেই পরিবারের সদস্য ও স্বজনদের উপহার দিতে বাবুর হাট এসে কাপড় কিনছেন। কিছু কিছু ছোট পাইকারকে দেখা যায় নিজের কাপড়ের গাট মাথায়, গাধে, হাতে বহন করে নিয়ে যাচ্ছেন। যাদের কাপড়ের গাট বড় তারা কুলি বা ভ্যানের সাহায্যে ঢাকা – সিলেট মহাসড়কে নিয়ে ট্রাক, লরি ও পিক-আপ ভ্যানে তুলে নিয়ে যান। আবার অনেক ক্রেতা কাপড় কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে নিজ এলাকায় পাঠাচ্ছেন। সব মিলিয়ে হাটের দিনগুলোতে প্রতিদিন অন্তত চার – পাঁচশত ট্রাক কাপড় দেশের বিভিন্ন প্রান্তে যাচ্ছে।
হাটের ব্যবসায়ীদের সাথে আলাপ করে জানা যায় , সারা বছরের মধ্যে রোজার ঈদের সময়টাতে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ক্রেতারা বেশি সংখ্যায় পাইকারি দামে কাপড় কিনতে বাবুর হাটে আসেন। দেশের অন্যান্য হাটের তুলনায় যোগাযোগ ব্যবস্হা হাটের তুলনায় ভালো ও সব ধরনের দেশীয় কাপড় কম দামে পাওয়া যায়। বাবুর হাটে পাইকারি ক্রেতাদের পাশাপাশি খুরচা ক্রেতারাও কাপড় কিনতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। তবে এ বছর হাটে প্রত্যাশা অনুযায়ী পাইকারি ক্রেতা অন্য বছরের তুলনায় কম।
নরসিংদী চেম্বার অব কর্মাস অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের তথ্য মতে, জেলায় ছোট বড় প্রায় তিন হাজার শিল্প কারখানা রয়েছে। এর মধ্যে পাওয়ার লুম, বৈদ্যুতিক তাঁত, টেক্সটাইল, ডাইং ( সুতা ও কাপড় রং করা) কারখানাই বেশী। এ সব কারখানায় কাজ করেন প্রায় দুই লাখ শ্রমিক। পাওয়ার লুমগুলোতে দিন রাত খটখট শব্দে সুতা থেকে তৈরি হয় গ্রে কাপড়। এই গ্রে কাপড় বিভিন্ন কারখানায় ডাইং কারখানায় পছন্দ অনুযায়ী রং করা হয়।
ব্যবসায়ী শাকিল আহমেদ জানান, বাবুর হাটে তিনি একজন নিয়মিত পাইকার। রুমাল থেকে শুরু করে কাফনের পর্যন্ত সব ধরনের কাপড় বাবুর হাটে পাওয়া যায়। আগে এক সপ্তাহ পর পর শাড়ি, লুঙ্গি, থ্রি পিস সহ বিভিন্ন ধরনের কাপড় কিনতে বাবুর হাট আসতেন। বেচা কেনা কম থাকায় এ বছর হাটে কম আসা হয়।
বাবুর হাট বনিক সমিতির সভাপতি মো. বোরহান উদ্দিন জানান, গত বছরের তুলনায় এ বছর ঈদে বেচা কেনা কম। উৎপাদন খরচ বেশি হওয়ায় কাপড়ের দাম বেড়েছে।
ঈদকে সামনে রেখে শেষ পর্যায়ে এসে বাবুর হাটে বেচা কেনা বেড়েছে। খুরচা ক্রেতারাও ঈদের কাপড় কিনতে বাবুর হাটে ভীড় জমাচ্ছে।