মামুন মিঞা
সিনিয়র স্টাফ রিপোর্টার ফরিদপুর।।
সোনালি আঁশ পাটের সঙ্গে বাড়তি সুবিধা এনে দিয়েছে পাটকাঠি বা পাটখড়ি।বর্তমান সময়ে পাটের আঁশ,আঁশ ছাড়ানো পাটকাঠি পোড়ানো ছাই দুই-ই অতি মূল্যবান।
ফরিদপুরের বিভিন্ন উপজেলাগুলোতে প্রচুর পাট উৎপাদন হয়।
পাটকাঠি আগুনে পোড়া ছাই থেকে রাসায়নিক উপজাত কার্বন তৈরি হয়- এই ছাই নাকি হীরার মতোই দামী।
বর্তমানে চীনসহ ইউরোপ ও আমেরিকার কয়েকটি দেশে রফতানি হচ্ছে এই ছাই। ছাইরের ভেতরের কার্বন পাউডার থেকে তৈরি হচ্ছে কার্বন পেপার- কম্পিউটার ও ফটো কপিয়ারের কালি -টোনার- আতশবাজি- মোবাইল ফোনের ব্যাটারি ও পলিমার ব্যাটারি- প্রসাধন সামগ্রী- মাউথওয়াশ- দাঁত পরিষ্কারের ওষুধ- সারসহ বিভিন্ন পণ্য।
কার্বনের ৮০ শতাংশ রফতানি হয় চীনে। বাকি ২০ শতাংশ মেক্সিকো-যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা- অস্ট্রেলিয়া- জাপান- দক্ষিণ কোরিয়া- জার্মানি- তাইওয়ানে রফতানি হয়।
কৃষক এখন পাটের সঙ্গে পাটখড়ি বিক্রি করছে। পাটখড়ির ছাইকেও আর অবহেলা করা যায় না।
ফরিদপুর সদর-
নগরকান্দা,সালথা,আলফাডাঙ্গা,বোয়ালমারী,মধুখালি উপজেলাগুলোতে বেশ কিছু ছাই তৈরি কারখানা গড়ে উঠেছে।
কারখানাগুলো ঘুরে দেখা যায়,কিছু কারখানার চিমনি নেই,শ্রমিকরা কাজ করছে মুখে নেই মাক্স,হাতে নেই হাত মুজা,সম্পূর্ণ অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে কাজ করছে শ্রমিক।
শুধু তাই নয়- জনবহুল এলাকায় ও গড়ে উঠেছে এই ছাই কারখানা,যার কারণে স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে রয়েছে জনজীবন। একটি ছাই তৈরির কারখানার ধোয়ায় অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছে জনজীবন। কালো ধোয়ার প্রভাবে কৃষি উৎপাদন ব্যহত হচ্ছে মারাত্বকভাবে। কৃষি জমিতে ফসল উৎপাদন কমে যাওয়া ও পরিপক্ক হওয়ার আগেই বিভিন্ন ফল ফলাদী ঝরে পড়ে। পাটকাঠির ছাই তৈরি কারখানাই চারকোল নামেও পরিচিত।
এছাড়া কারখানার ভিতরে যে পরিমাণ ছাই উড়ে যেখানে,সেখানে মানুষ থাকার কোন সুযোগ নেই। তবুও জীবিকার তাগিদে কাজ করে ২০ থেকে ২৫ জন শ্রমিক।
এখানে প্রতি রাতে পাটখড়ি পুড়িয়ে ছাই তৈরি করার প্রক্রিয়ার সময় প্রচুর কালো ধোয়া নির্গত হয়। যার ফলে পুরা এলাকা ধোয়ায় পরিপূর্ণ থাকে।
স্থানীয় জানায়- শীত মৌসুমে ছাই তৈরি কারখানা শুরু হয়,যার কারণে কুয়াশায় কালো ধোয়া শিশিরের সাথে মিশে ফোটায় ফোটায় কালো পানি পড়ে এলাকাবাসীর গায়ে। ঘরের প্রতিটি জিনিসপত্র কালো হয়ে যায়। স্থানীয় বয়স্ক লোকদের এবং হাপানী রোগীদের শ্বাস- প্রশ্বাস নিতে কষ্ট হয় ।
ক্রমাগত এভাবে চুলা বাড়িয়ে পাটখড়ি পুড়িয়ে পরিবেশ দুষিত করলে এ এলাকাটি মানুষের বসবাসের অযোগ্য হয়ে যাবে বলে ধারনা করছে স্থানীয় সচেতন মহল।
নগরকান্দা উপজেলার প্রভাকর্দী এলাকাবাসী জানান- প্রশাসনের কাছে কয়েক দফা জানালেও কোনো প্রতিকার পায়নি এলাকাবাসী।
এ বিষয় পরিবেশ অধিদপ্তর ফরিদপুর এর আঞ্চলিক পরিচালক সাঈদ আনোয়ার এর সাথে যোগাযোগ করতে গেলে,তিনি ফোন না তোলায় তার বক্তব্য দেওয়া সম্ভব হলো না।
কারখানাটি জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হলে অবশ্যই আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।