
চঞ্চল,
উজানের ঢল ও টানা বৃষ্টির পর তিস্তা নদীর পানিপ্রবাহ কিছুটা কমতে শুরু করলেও লালমনিরহাটের প্লাবিত এলাকার মানুষের দুর্ভোগ কমেনি। আকস্মিক প্লাবনে ক্ষতিগ্রস্ত হাজার হাজার পরিবার এখনও চরম ভোগান্তিতে দিন কাটাচ্ছে।
সোমবার (৪ আগস্ট) বিকেল ৩টায় তিস্তা ব্যারাজের ডালিয়া পয়েন্টে নদীর পানি বিপদসীমার (৫২.১৫ মিটার) ১৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। পানির উচ্চতা ছিল ৫২.০০ মিটার। এর আগের দিন, রবিবার (৩ আগস্ট), একই পয়েন্টে তিস্তার পানি বিপদসীমার ৫ সেন্টিমিটার উপরে ছিল। পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, নদীর পানিপ্রবাহ স্বাভাবিক রাখতে ব্যারাজের ৪৪টি জলকপাট এখনো খোলা রাখা হয়েছে।
পাউবো সূত্র অনুযায়ী, টানা বৃষ্টি ও উজানের পানিপ্রবাহ হঠাৎ বৃদ্ধি পাওয়ায় রবিবার রাতে লালমনিরহাটের তিস্তা নদী সংলগ্ন চরাঞ্চল ও নিম্নাঞ্চলগুলো প্লাবিত হয়। এতে হাজারো পরিবার পানিবন্দী হয়ে পড়ে। বসতবাড়ি, ফসলের জমি এবং মাছের ঘের পানিতে তলিয়ে যায়। অনেক জায়গায় সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ায় স্থানীয়দের যাতায়াতের একমাত্র উপায় এখন নৌকা বা ভেলা।
এই প্লাবনে পাটগ্রাম, আদিতমারী, হাতীবান্ধা, কালীগঞ্জ ও সদর উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে পাটগ্রামের দহগ্রাম, গড্ডিমারী, দোয়ানী, ছয়আনী, সানিয়াজান, সিঙ্গামারি, সিন্দুর্না, হলদিবাড়ী ও ডাউয়াবাড়ী; কালীগঞ্জের ভোটমারী, শৈইলমারী ও নোহালী; আদিতমারীর মহিষখোচা, গোবর্ধন, কালমাটি, বাহাদুরপাড়া ও পলাশী এবং সদর উপজেলার ফলিমারী, খুনিয়াগাছ, কুলাঘাট, মোগলহাট, রাজপুর ও গোকুন্ডা ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ অঞ্চল রয়েছে।
ক্ষতিগ্রস্তদের ভোগান্তি চরমে পৌঁছেছে। মহিষখোচা ইউনিয়নের রিয়াজুল হোসেন জানান, “গত দু’দিন ধরে বৃষ্টির পর পানি বেড়েছে। গরু-ছাগল নিয়ে আমরা বিপাকে পড়েছি। এখনো কোনো জনপ্রতিনিধি বা সরকারি সাহায্য আসেনি।” গোবর্ধনের জালাল হোসেন বলেন, “সারা রাত ঘরে পানি ঢুকেছে, রান্নাবান্না বন্ধ। বাচ্চারা স্কুলে যেতে পারছে না। কেউ আমাদের খোঁজ নিতে আসছে না।”
পাউবো লালমনিরহাটের নির্বাহী প্রকৌশলী সুনীল কুমার জানিয়েছেন, “রবিবার তিস্তার পানি বিপদসীমার উপরে থাকলেও বর্তমানে তা কমেছে। তবে নিম্নাঞ্চলে সতর্কতা জারি রয়েছে।” তিনি আরও জানান, “রংপুর বিভাগের তিস্তা, ধরলা ও দুধকুমার নদীর পানি গত ২৪ ঘণ্টায় বেড়েছে। আগামী দুই দিনে তিস্তার পানি আবারও বিপদসীমা অতিক্রম করতে পারে এবং ধরলা ও দুধকুমার নদীর পানিও সতর্কসীমায় প্রবাহিত হতে পারে। এর ফলে লালমনিরহাট, নীলফামারী, রংপুর ও কুড়িগ্রাম জেলার নিম্নাঞ্চল আবারও সাময়িকভাবে প্লাবিত হতে পারে।”
এই পরিস্থিতিতে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার মানুষ দ্রুত ত্রাণ ও সরকারি সহায়তার দাবি জানিয়েছেন।