
তৌহিদুল ইসলাম চঞ্চল, বিশেষ প্রতিনিধি
লালমনিরহাটে পাটগ্রামের বাসিন্দা ৬২ বছর বয়সী বৃদ্ধা মোছা. ছালেহা খাতুন ওরফে ছালেহা বেওয়া। বয়স্ক ভাতা ১ হাজার ৬শ টাকা আর ভিক্ষাবৃত্তি করে কোনোরকমে জীবনযাপন করেন তিনি। ১০ এপ্রিল -বৃহস্পতিবার- ভোরে হওয়া কালবৈশাখি ঝড়ে মাথা গোজার ঠাঁই শেষ সম্বল টিনের চালের ঘরটি লন্ডভন্ড হয়ে যায়। ঘরটি পুনরায় নির্মাণ করার মতো সামর্থ্য না থাকায় রোদের তাপ ও বৃষ্টি থেকে বাঁচতে ও রাত্রিযাপনের জন্য সেই ভাঙা ঘরটিতেই কোনোরকমে বসবাস করছিলেন এই দুঃখিনী নারী।
অবশেষে পাটগ্রামের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা -ইউএনও- মো: জিল্লুর রহমানের উদ্যোগে উপজেলা প্রশাসন থেকে তার ঘর নির্মাণের কাজ শুরু হওয়ায় যারপরনাই খুশী একাকী এই নারী।
ছালেহা জানান, তাদের বাড়ি ছিল হাতীবান্ধা উপজেলার নদী তীরবর্তী এলাকায়। নদী ভাঙনের ফলে তাদের পরিবার চলে আসে পাটগ্রাম পৌরসভার রসুলগঞ্জ পুরাতন বাসস্ট্যান্ড এলাকায়। সেখানে রেল লাইনের পাশে রেলের পরিত্যক্ত জমিতে তারা ঘর করে বসবাস শুরু করেন। তখন তিনি কোলের শিশু ছিলেন তাই তেমন কিছুই মনে নেই তার। পরে তার বিয়ে হয় হাতীবান্ধার বড়খাতা এলাকার বাসিন্দা ও রেলওয়ে কর্মচারী আনোয়ার হোসেনের সাথে। ১২ থেকে ১৩ বছর আগে মারা যান তার স্বামী। দ্বিতীয় স্ত্রী হওয়ায় প্রথম স্ত্রীর সন্তান ও আত্মীয়স্বজন তাকে তার প্রাপ্য পাওনা থেকে বঞ্চিত করেন। ফলে তাকে আবার অস্থায়ী এই জায়গায় ফিরে আসতে হয় তাকে। বয়স্ক ভাতা ১ হাজার ৬শ টাকা আর ভিক্ষাবৃত্তি করে কোনোরকমে বেঁচে আছেন ছালেহা। ছেলে সন্তান নেই তাই তার এই দশা বলে আক্ষেপ করেন তিনি।
সরকারি ও বেসরকারি কোনো সাহায্য না পাওয়ায় তিনি নিজেই উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ে যান। পরে বৃহস্পতিবার -১৭ এপ্রিল- সেই অফিস থেকে একজন কর্মকর্তা এসে তার অবস্থা দেখে যান। এর কয়েকদিন পর ইউএনও’র উদ্যোগে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তার ঘর নির্মাণের কাজ শুরু হয়।
এমনকি শুক্রবার -২৪ এপ্রিল- ইউএনও নিজে তার ঘর নির্মাণ কাজের অগ্রগতি দেখতে ও তার সাথে দেখা করতে যান। সে সময় তিনি তার দুঃখ দুর্দশার করা শোনেন। কয়েকদিনের মধ্যে ঘরটি তাকে হস্তান্তর করবেন ইউএনও।
ছালেহা বেগম বলেন, “ইউএনও স্যার আমার এখানে এসে আমার সাথে কথা বলেন। আমি তাকে একটি জানালার কথা বলেছি। তিনি আমার এখানে আসায় আমি অনেক খুশী। সৃষ্টিকর্তা তার মঙ্গল করুন।“
পাটগ্রামের প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা -পিআইও- মো. আতাউর রহমান বলেন, “ঘটনাটি জানার পর ইউএনও স্যার বিষয়টিকে অনেক গুরুত্বের সাথে ও মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে বিবেচনায় নিয়েছেন। ফলে তার নির্দেশনায় বিভিন্ন দিক থেকে সমন্বয় করে আমরা ছালেহা বেগমের ঘরের কাজটি শুরু করি। আমি নিজেও ঘটনাস্থলে যাই। পরে ইউএনও স্যারও সেখানে গিয়ে বৃদ্ধা ছালেহার সাথে দেখা করেন। তার জন্য আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করেছি।
পাটগ্রামের ইউএনও মো: জিল্লুর রহমান বলেন, “আমি নিজে ছালেহা বেগমের সাথে দেখা করতে গিয়েছি। তিনি এখন খুশী কিনা তা জানতে চেয়েছি। তিনি জানালার কথা বলেছেন। যত দ্রুততার সাথে সম্ভব তার ঘরের কাজ শেষ করে তার হাতে সেটি হস্তান্তর করা যায় আমরা সেই চেষ্টাই করছি। আমি আমার দায়িত্ব পালন করছি মাত্র।
এদিকে ইউএনও’র উদ্যোগে বৃদ্ধা ছালেহার থাকার ঘরের চলমান নির্মাণের কাজের প্রশংসা করেছেন এলাকাবাসী। তারা ইউএনও’র এই মানবিক উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন।