মিজানুর রহমান অপু,
পটুয়াখালী জেলা প্রতিনিধি।।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন “যদি পায়রা নদীর উপর নির্মিত আধুনিক সুবিধা সম্পন্ন পায়রা সেতুর উপর দিয়ে গাড়ি চালিয়ে যেতে পারতাম তাহলে অনেক আনন্দ পেতাম। একদিন অবশ্যই এই সেতু পার হাবার জন্য চলে আসবো। পায়ে হেটে এই সেতু পার হবো। পায়রা শান্তি প্রতিক,তাই পায়রা নামটা আমি পছন্দ করেছি। এই সেতু নির্মানের ফলে কুয়াকাটা পর্যন্ত নিরবিচ্ছন্ন সড়ক যোগাযোগ স্থাপতি হলো। অবহেলিত পটুয়াখালী উন্নয়নের মহাসড়কে আরও এক ধাপ এগিয়ে গিলো।্
প্রধানমন্ত্রী আজ সকাল ১০ টায় সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রনালয়ের আয়োজনে পটুয়াখালী-কুয়াকাটা সড়কের ২৬তম কিলোমিটারে নির্মিত পায়রা সেতুর ভার্চুয়াল উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এ কথা বলেন। গণ ভবন প্রান্তে প্রধানমন্ত্রীর মূখ্য সচিব আহমেদ কায়কাউসের সঞ্চালনায় উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য প্রদান করেন সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। গণভবন প্রান্তে সাবেক চীপ হুইপ আবুল হাসনাত আবদুল্লাহ এমপি,আমির হোসেন আমু এমপি,পররাষ্ট্র মন্ত্রী আবদুল মোমেন উপস্থিত ছিলেন।
পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী মেজর (অব) জাহিদ ফারুক এমপি,সাবেক ধর্মপ্রতিমন্ত্রী এডবোকেট মো.শাহজাহান মিয়া এমপি,এসএম শাহজাহাদা এমপি,মহিব্বুর রহমান এমপি,শেখ হাসিনা সেনা নিবাসের জেওসি মেজর জেনারেল আবুল কালাম মো.জিয়াইর রহমান,বিভাগীয় কমিশনার সাইফুল ইসলাম বাদল,ডিআইজি এসএম আক্তারুজ্জামান,আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এডভোকেট আফজাল হোসেন,বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সাদিক আবদুল্লাহ,বরিশাল ও পটুয়াখালীর জেলা প্রশাসক,পুলিশ সুপার ও স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দ পটুয়াখালীর দুমকী প্রান্তে উপস্থিত ছিলেন।
স্থানীয়রা জানান, সেতুটি চালু হবার ফলে বরিশাল,খুলনা ও রাজশাহী বিভাগের সাথে পর্যটন নগরী কুয়াকাটা ও পায়রা বন্দর পর্যন্ত ফেরিবিহীন সড়ক যোগাযোগ স্থাপিত হলো। আগামী দিনে যোগাযোগ ব্যবস্থা,পণ্য পরিবহন এবং পর্যটনের নতুন দ্বার উন্মোচন হয়ে অর্থনীতিতে ব্যাপক ভূমিকা রাখবে এই সেতু।
সরেজমিন পরিদর্শনকালে দেখা যায়, পায়রা নদীর বুকে মাথা উঁচু করে দাড়িয়ে আছে চার লেনের লেবুখালী পায়রা সেতু। সেতু বিভাগ জানায়, পটুয়াখালী-বরিশাল মহাসড়কের লেবুখালী পয়েন্টে পায়রা নদীতে পায়রা সেতু নির্মান প্রকল্প একনেকে অনুমোদন পায় ২০১২ সালে। নকসা জটিলতায় দীর্ঘ সময় কাজ বন্ধ থাকলেও নির্মানযজ্ঞ শেষ করে এখন যান চলাচলের জন্য প্রস্তুত এই সেতু। এক হাজার চারশ সাত চল্লিশ কোটি টাকা ব্যায়ে ২০১৬ সালে ২৪ জুলাই সেতুটির নির্মাণ কাজ শুরু করেন চিনের একটি ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান লংজিয়ান রোড এন্ড ব্রীজ কোম্পানি লিমিটেড।
নান্দনিক নির্মান শৈলীতে দ্বিতীয় কর্নফুলি সেতুর আদলে করা প্রায় দেড় কিলোমিটার দৈর্ঘ্যে ও ২০ মিটার প্রস্থের সেতুর মাঝ বরাবর একটি মাত্র পিলার বসানোর ফলে নদীর গতিপথ থাকবে সচল। দুই পাড়ে প্রায় ৭ কিলোমিটার সংযোগ সড়ক ও আধুনিক টোল প্লাজা নির্মান করা হয়েছে। রাখা হয়েছে ওজন পরিমাপের ব্যবস্থা। সেতুটি চালু হলে এর কোন সমস্য হচ্ছে কিনা তা নির্নয়ের জন্য সচল থাকবে ব্রীজ হেলথ মনিটরিং সিষ্টেম। আধুনিক এ সেতু চালু হওয়ায় খুশি দক্ষিনাঞ্চলের মানুষ। পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী সাগর(২২),সুজনী বিদ্যানিকেতনের একাদশ শ্রেণীর শিক্ষার্থী সুমাইয়া(১৬), স্থানীয় ব্যবসায়ী আলী আকবর(৫৫)সহ একাধীক মানুষ জানান,অত্যাধুনিক এ স্থাপনা নির্মানের জন্য প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনার প্রতি চির কৃতজ্ঞ এ অঞ্চলের মানুষ।
পটুয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীরমুক্তিযোদ্ধা কাজী আলমগীর,সাধারন সম্পাদক ভিপি আবদুল মান্নান,সাংগঠনিক সম্পাদক এডভোকেট উজ্জল বোসসহ একাধীক নেতা জানান,দক্ষিনাঞ্চলের মানুষের কাংখিত একটি স্বপ্ন পূরণ করলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার প্রতি এ অঞ্চলের মানুষের কৃতজ্ঞতার শেষ নেই। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকলে দক্ষিনাঞ্চলের উন্নয়ন হয় এটা বার বার প্রমানিত। দু’হাত তুলে প্রধানমন্ত্রীর দীর্ঘ জীবনের জন্য মহান আল্লাহর কাছে দোয়া করেন বলে জানান তারা।
পায়রা লেবুখালী সেতু প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক মোহাম্মদ আবদুল হালিম জানান, দীর্ঘ কর্মযজ্ঞ শেষে পায়রা সেতু মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আজ সকালে যানচলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দিয়েছেন। এটি একটি অত্যাধুনিক সেতু। পদ্মা সেতু চালু হলে সারা দেশের সাথে এই সেতু চালুর মাধ্যমে কুয়াকাটা পর্যন্ত ফেরী বিহীন সড়ক পথের স্বপ্ন বাস্তবায়িত হবে। এছাড়া পর্যটন কেন্দ্র কুয়াকাটাকে ঘিরে পর্যটন শিল্পের প্রসার ঘটবে বলেও দাবী করেন তিনি। পর্যটন শিল্প বিকশিত হবার পাশাপাশি এ সেতু চালু হলে পায়রা বন্দরের মাধ্যমে ব্যবসা বানিজ্যের নতুন দ্বার উন্মুক্ত হবে এবং পটুয়াখালী তৃতীয় অর্থনৈতিক করিডোরে রুপান্তরিত হবে ।
পটুয়াখালীর জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামাল হোসেন জানান,এ সেতু চালুর ফলে পায়রা বন্দর,পর্যটন নগরী কুয়াকাটা,নির্মানাধীন পটুয়াখালী ইপিজেডসহ দক্ষিনাঞ্চলের মানুষের জীবন মান পাল্টে যাবে। কৃষি এবং মৎস্য শিল্পে হাজার হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ হবে। কুয়াকাটা পর্যটন নগরী হবে ঢাকার সবচেয়ে কাছের সমুদ্র সৈকত। আগামী দিনে পটুয়াখালী দেশের তৃতীয় অর্থনৈতিক করিডোর হিসেবে আর্বিভূত হবে বলে জানান তিনি।