আরিফ আহমেদ
বিশেষ প্রতিবেদক।।
বরিশাল ৫ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী কর্ণেল অবঃ জাহিদ ফারুক শামীম কে ২৩ সেপ্টেম্বর সোমবার সকালে বরিশালের আদালতে তোলা হয়েছে। এসময় তার কাছ থেকে সুবিধাভোগী অনেক সাংবাদিকই আদালত প্রাঙ্গণে ভিড় করেছেন তার বিরুদ্ধে নিউজ সংগ্রহের জন্য। তাদের কেউ কেউ নির্লজ্জ আচরণও করেছেন তার সামনে। যদিও বরিশাল সদর উপজেলার বেশিরভাগ মানুষের কাছে জাহিদ ফারুক একজন ভালো মানুষ হিসেবে পরিচিত। দলমত নির্বিশেষে মানুষের ভালোবাসা পাওয়ার অসংখ্য কাজ তিনি করেছেন বলে জানিয়েছেন একাধিক গ্রামবাসী।
২২ সেপ্টেম্বর রোববার বিকেলে র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার এক খুদে বার্তায় রাজধানীর বারিধারা থেকে জাহিদ ফারুককে গ্রেপ্তারের কথা জানানো হয়েছে। তিনি বরিশাল-৫ -সদর- আসনের সাবেক সংসদ সদস্য জাহিদ ফারুক ২০১৯ সাল থেকে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছিলেন। র্যাবের লিগ্যাল ও মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মুনিম ফেরদৌস বলেন, তার বিরুদ্ধে একাধিক হত্যা মামলা রয়েছে। ওই মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হবে।সুনির্দিষ্ট গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে অবস্থান নিশ্চিত হওয়ার পর রাজধানীর বারিধারা থেকে জাহিদ ফারুককে গ্রেপ্তার করা হয় বলে জানান লেফটেন্যান্ট কর্নেল মুনিম ফেরদৌস। তাকে ডিবির কাছে হস্তান্তর করা হবে বলেও জানান র্যাবের এই কর্মকর্তা। সোমবার সকালে তাকে বরিশালের আদালতে তোলা হবে বলে জানা যায় এসময়।
জাহিদ ফারুক ২০১৮ সালে প্রথম বরিশালের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। একইসময় বলপূর্বক বরিশালের মেয়র নির্বাচিত হন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাইস্তা সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ। সাদিক আব্দুল্লাহ এর সাথে প্রথম দিন থেকেই জাহিদ ফারুক এর দ্বন্দ্ব শুরু হয় জনগণের উন্নয়নে ভুমিকা রাখা নিয়ে। বরিশাল সিটি করপোরেশনের আওতাধীন এলাকায় জাহিদ ফারুককে কোনোরকম কাজ করতে দিতে রাজী হননি সেরনিয়াবাত পরিবার। এমনকি দুটি হাসপাতালের সভাপতিও সেরনিয়াবাত পরিবার হওয়ার কারণে পুরো ৫টি বছর কোনঠাসা ছিলেন জাহিদ ফারুক। সততা ও তাৎক্ষণিক কর্ম তৎপরতা দিয়ে তিনি প্রতিমন্ত্রী হিসেবে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের অনেক জটিল ও গুরুত্বপূর্ণ সমস্যার সমাধান করে দিয়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর সুদৃষ্টিতে ছিলেন। তার সময়ে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রকল্পে বা টাকা-পয়সার হিসাব নিকাশে দূর্নীতির খুব একটা অভিযোগ দৃষ্টিগোচর হয়নি গণমাধ্যমে। বরিশালের বেশিরভাগ গণমাধ্যমে ছিলো তার কর্ম তৎপরতা নিয়ে প্রশংসার ঝড়।
আর এ প্রশংসা মিথ্যাও ছিলনা। কেননা, কোনো ইউনিয়ন বা গ্রামের সমস্যা তার সামনে তুলে ধরা হলেই তিনি সেখানে ছুটে যেতেন এবং সমস্যার সমাধান করতে ব্যস্ত হতেন। যার অন্যতম সাক্ষী বরিশালের চরকাউয়া ইউনিয়নের পূর্ব কর্ণকাঠী ও চরকারঞ্জী গ্রামবাসী। সেখানের মানুষের মুখে মুখে তাই এখনো জাহিদ ফারুক শামীম এর জয়জয়কার।
বরিশাল সদর উপজেলার ১০ ইউনিয়নের মানুষের কাছে ই জাহিদ ফারুক ভালো মানুষ হিসেবে পরিচিতি অর্জন করেছেন। যার প্রমাণ পাওয়া যায় বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের গঠিত একটি কমিশনের উপদেষ্টা ড বদিউল আলম মজুমদারের বক্তব্যে। বরিশালে এক সুজন সমাবেশে তিনি জাহিদ ফারুক এর প্রশংসা করে বলেছেন, আমি অনেক রাজনৈতিক নেতা এমপি মন্ত্রীদের দেখেছি। তবে জাহিদ ফারুক এর মতো এভাবে কেউই বুকে হাত দিয়ে বলতে পারেননি – আমি সততার সাথে মানুষের জন্য কাজ করতে এসেছি। তিনি অবশ্যই একজন ভালো মানুষ।
বরিশালের কীর্তনখোলা নদী তীরবর্তী এলাকা চরকাউয়া ও চরবাড়িয়া নদী ভাঙন রোধে বেরীবাধ নির্মাণ করে জাহিদ ফারুক ভাঙন কবলিত মানুষেরও মনেও স্থান করে নিয়েছেন।
আওয়ামী লীগ সরকারের প্রতিমন্ত্রী হিসেবে নয়, ভালো মানুষ জাহিদ ফারুক এর জন্য ন্যায় বিচার আশা করে বরিশালের সাধারণ মানুষ।
এসময় চরকাউয়া, চরবাড়িয়া ও চরকারঞ্জী গ্রামবাসীর কয়েকজন বলেন, শেখ হাসিনা সরকারের যাদের আটক বা গ্রেফতার করা হচ্ছে, তারা কেউই নীতিনির্ধারকের কেউ নয়। শেখ বা সেরনিয়াবাত পরিবারের কোনো লোক কি এখন পর্যন্ত আটক হয়েছে? আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ কোন নেতাকে গ্রেফতার করা হয়েছে দেখানতো বলে উল্টো প্রশ্ন তোলেন গ্রামবাসী। তারা বলেন, যাদের আটক করা হচ্ছে বা পাওয়া যাচ্ছে তাদের বেশিরভাগ অংশের তেমন ভুমিকা খুঁজে পাওয়া যাবেনা। ন্যায়বিচার হলে তথ্য প্রমাণের অভাবে তারা ছাড়া পেয়ে যাবেন বলে জানান গ্রামের সাধারণ মানুষ।