মোঃ সিরাজুল মনির চট্টগ্রাম ।।
চট্টগ্রাাম মহানগরে পাহাড় ক্ষয়রোধে বিন্না ঘাস লাগানোর জন্য চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) তিন কোটি টাকার প্রকল্প তিন বছরেও মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন মিলেনি। প্রকল্পটি এখন মুখ থুবড়ে পড়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জলাবদ্ধতার অন্যতম কারণ হল বৃষ্টির পানিতে পাহাড়ের মাটিক্ষয়ে খাল-নালা ভরাট হওয়া। অথচ নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসনে সিডিএ’কে ৫৬০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে সরকার। কিন্তু পাহাড়ের ক্ষয়রোধে মাত্র তিন কোটি টাকাই দেয়নি।
২০১৮ সালের ৩০ মে থাইল্যান্ডের রাজকন্যা মাহা ছাকরি সিরিনধরন, তৎকালীন পরিবেশ বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ এবং সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিনের হাতে বিন্না ঘাসের চারা তুলে দিয়ে এ সেন্টারের উদ্বোধন করেন। দ্রুত বর্ধনশীল ও জলবায়ু সহিষ্ণু বিন্না ঘাস লাগিয়ে ভূমিক্ষয় ও পাহাড় ধসের ঝুঁকি কমানোর চেষ্টায় এই প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। পাইলট প্রকল্পের ব্যয় ছিল ৪০ লাখ টাকা। যার মধ্যে ২০ লাখ টাকা দেয় থাইল্যা-ের সাইপাতানা ফাউন্ডেশন। পাইলট প্রকল্পের উদ্বোধন করেন থাইল্যা-ের প্রিন্সেস মাহা ছাকরি সিরিনধরন। প্রকল্প গ্রহণে চসিকের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য ছিল- বন্দর নগরীর পাহাড়ে বিন্না ঘাস লাগিয়ে পাহাড়ের মাটির ক্ষয়রোধ করার মাধ্যমে খাল-নালা ভরাট হওয়া থেকে রক্ষা করা। কারণ নগরীর ৪৭ ভাগই পাহাড়। চসিকের ধারণা ছিল পাহাড়ের মাটির ক্ষয়রোধ করা গেলে জলাবদ্ধতা কিছুটা কমানো যাবে। মেগা প্রকল্পের মাধ্যমে নগরীর খাল-নালা যতই পরিষ্কার করা হোক না কেন, বৃষ্টির পানিতে পাহাড়ের মাটি নেমে এলে তা পুনরায় ভরাট হয়ে যাবে।
পরিকল্পনা রয়েছে চসিকের। এ কাজে থাইল্যান্ড সাইপাতান ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে সহযোগিতা করছে। পাইলট প্রকল্পে প্রায় ৪০ লাখ টাকা ব্যয় হচ্ছে যার প্রায় অর্ধেক দিয়েছে থাইল্যা-ের ওই ফাউ-েশন। বাকি ২০ লাখ টাকা দেয়ার কথা ছিল সিটি কর্পোরেশনের। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তৎকালীন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ঘোষণা দিয়েছিলেন, “জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব এ দেশের মানুষকে মোকাবিলা করতে হচ্ছে। ভারী বর্ষণের কারণে ভূমিধস হচ্ছে। বাংলাদেশের জনগণ বর্তমানে জলবায়ু পরিবর্তনের শিকার হচ্ছে। থাইল্যান্ডের রয়্যাল চাইপাত্তানা ফাউন্ডেশনের সঙ্গে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন এবং পরিবেশ, বন ও জলবায়ু মন্ত্রণালয় এই প্রকল্পে কাজ করবে। মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এ প্রকল্পের জন্য দুই কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হবে।”
এর কিছুদিনের মধ্যেই চসিকের পক্ষ থেকে তিন কোটি টাকার একটি প্রকল্পের ডিপিপি তৈরি করে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। প্রকল্পের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য ছিল নগরীর সব পাহাড়ে বিন্না ঘাস লাগানো। যারা লাগাবে তাদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা। একইসাথে দেশের পাহাড়ি অঞ্চলে কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান যদি এই ঘাস নিতে চায় তাদের সরবরাহের ব্যবস্থা করা। কিন্তু প্রকল্পটি গত তিন বছরেও আলোর মুখ দেখেনি। এমনকি পাইলট প্রকল্পের অর্ধেক টাকা চসিকের পক্ষ থেকে দেয়ার কথা থাকলেও তা মিলেনি।
বিন্না ঘাস প্রকল্পের পরিচালক চসিকের নির্বাহী প্রকৌশলী বিপ্লব কুমার দাশ বলেন, পাইলট প্রকল্প গ্রহণের কিছুদিন পর তিন কোটি টাকার একটি ডিপিপি মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু অনুমোদন না হওয়ায় প্রকল্পটি নিয়ে আর আগানো যায়নি। তবে প্রকল্প বন্ধ না করে কোন রকমে বাঁচিয়ে রাখা হয়েছে। তিনি বলেন, মাটিক্ষয় রোধ করা ছাড়া নগরীর খাল-নালা পরিষ্কার রাখা সম্ভব নয়। আর খাল-নালা পরিষ্কার রাখতে না পারলে জলাবদ্ধতা নিরসন করা সম্ভব নয়।
পাইলট প্রকল্পের টাকা বরাদ্দ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, চসিক থেকে প্রায় ছয় লাখ টাকার মত খরচ করা হয়েছে। অর্থাৎ ৪০ লাখ টাকার প্রকল্পে খরচ হয়েছে প্রায় ২৬ লাখ টাকা। বাকি টাকা বরাদ্দ পাওয়া যায়নি। তবে পাইলট প্রকল্পের অধীনে অস্থায়ী নগর ভবন কার্যালয়ের প্রবেশমুখে মিঠা পাহাড়ে যেসব বিন্না ঘাস লাগানো হয়েছে সেখান থেকে এ পর্যন্ত ৩০ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান ঘাস নিয়ে গেছে। তাদেরকে বিনামূল্যে এই ঘাস দেয়া হয়েছে।