
ইসমাইল ইমন চট্টগ্রাম জেলা প্রতিনিধি
হাইকোর্ট বেঞ্চ বাস্তবায়ন পরিষদ, চট্টগ্রাম ও চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাব এর যৌথ উদ্যোগে”মতবিনিময়” সভা ২৬ এপ্রিল শনিবার বেলা ১১ টায় অনুষ্ঠিত হয় চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে।
সভায় সভাপতিত্ব করেন চট্টগ্রাম হাইকোর্ট বেঞ্চ বাস্তবায়ন পরিষদের সভাপতি এড. এ.এস.এম. বদরুল আনোয়ার এবং অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করে পরিষদের সাধারণ সম্পাদক এড. কাশেম কামাল ও চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সদস্য সচিব জাহিদুল রহমান কচি। এতে উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম জেলা বারের সাবেক সভাপতি, সেক্রেটারী ও বিশিষ্ট আইনজীবী এবং বিশিষ্ট সাংবাদিকবৃন্দ। এড. এ.এস.এম. বদরুল আনোয়ার বলেন- বাংলাদেশের মানচিত্রে দক্ষিণ পূর্বে অবস্থিত চট্টগ্রাম হাজার বছরের ইতিহাসের সাক্ষী। ২০০৩ সালে ৬ ই জানুয়ারী বাংলাদেশের বাণিজ্যিক রাজধানী হিসাবে ঘোষিত হয় চট্টগ্রাম। ইতিহাসের প্রেক্ষাপট বিবেচনায় ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার আন্দোলন হতে শুরু করে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের পেছনে চট্টগ্রামের জনগণের অবদান অনস্বীকার্য।
চট্টগ্রাম বাংলাদেশের সর্ব বৃহৎ বিভাগ, যার আয়তন ৩৩৯০৪ বর্গকিলোমিটার। জনসংখ্যা প্রায় ৩ কোটি। এই বিভাগে জেলা রয়েছে ১১টি, উপজেলা ১০৩টি, থানা ১২০টি, পৌরসভা ৬২টি, ইউনিয়ন পরিষদ ৯৪৯টি, দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম বৃহত্তম সমুদ্রবন্দর চট্টগ্রামে অবস্থিত। দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম সমুদ্র বন্দর চট্টগ্রামে অবস্থিত। এছাড়াও এখানে রয়েছে দেশের বৃহত্তম ইস্পাত নির্মাণ কারখানা, জাহাজ নির্মাণ কারখানা সহ অগণিত কারখানা ও শিল্প প্রতিষ্ঠান এবং বহু একক ও বহুজাতিক কোম্পানি। বাংলাদেশের সর্ব বৃহত্তম পাইকারী বাজার খাতুনগঞ্জ চট্টগ্রামে অবস্থিত হয়। অর্থনৈতিক উন্নয়নে চট্টগ্রামের ব্যবসা বাণিজ্যি সর্বোচ্চ ভূমিকা রাখছে। World City Mayor Statistic ২০২০ এর সমীক্ষা মতে চট্টগ্রাম এশিয়ার ৭ম ও বিশ্বের ১০ম দ্রুততম ক্রমবর্ধমান উন্নয়নশীল নগরী। সে সমীক্ষায় চীনের বেইহাট ১ম ও ঢাকা ১৯তম স্থানে রয়েছে। ফলে বাংলাদেশের অর্থনীতি গুরুত্ব বিবেচনায় চট্টগ্রাম প্রধান ও প্রথম। চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দরে দেশের রপ্তানি বাণিজ্যের ৭৫% এবং আমদানি বাণিজ্য ৮০% সংঘটিত হয়। দেশের রাজস্ব আয়ের ৬০ ভাগ আসে চট্টগ্রাম ব্যবসা বাণিজ্য থেকে। আর জিডিপিতে চট্টগ্রামের অবদান ১২%। এই বিভাগে ভারী শিল্প প্রতিষ্ঠান ৩৩০টি, ক্ষুদ্র শিল্প প্রতিষ্ঠান প্রায় ৪৩২৫টি, পাটকল ২৪টি, সরকারী বস্ত্রকল ৫টি, সিমেন্ট ফ্যাক্টরী ১০টি, টেক্সটাইল ৬৫০টি, ইপিজেড ৩টি (সরকারী ১টি) জাহাজ ভাঙ্গ শিল্প ৮০টি, বহুজাতি কোম্পানী ১২টি, এছাড়াও রয়েছে আরো অনেক ছোট কারখানা, কোম্পানী ও শিল্প প্রতিষ্ঠান। বাংলাদেশের আর্থ সামাজিক উন্নয়নের দীর্ঘ ইতিহাসে চট্টগ্রাম যেমন সিংহভাগ স্থান দখল করে আছে, তেমনি প্রিয় দেশকে উন্নয়নশীল দেশে পরিণত করতে এই চট্টগ্রামের অবদান অনস্বীকার্য। কিন্তু চট্টগ্রামবাসীর নাগরিক ও মৌলিক অধিকারসহ আইনগত অধিকার নিশ্চিত করিতে দীর্ঘদিনের আকাংখা হাইকোর্ট বিভাগের সার্কিট বেঞ্চ এখনো পুনঃ স্থাপন হয় নাই।
চট্টগ্রামবাসী ও বিচার প্রার্থী জনগণের এখন প্রাণের দাবী চট্টগ্রামে হাইকোর্ট বেঞ্চ। চট্টগ্রাম বাসীর এই প্রাণের যৌক্তিক দাবীর সাথে চট্টগ্রাম হাইকোর্ট বেঞ্চ বাস্তবায়ন পরিষদ একাত্ততা ঘোষণা করছে। কারণ-
প্রথমত: হাইকোর্টের সার্কিট বেঞ্চ চট্টগ্রামবাসীর আইনতগত ন্যায্য ও যৌক্তিক দাবী। উক্ত দাবী বাস্তবসম্মত, আবশ্যিক ও ন্যায়ত সঠিক, যথার্থ ও আইন সঙ্গত।
দ্বিতীয়ত: চট্টগ্রাম বিভাগ ২০০৩ সালে বাংলাদেশের বাণিজ্যিক রাজধানী হিসাবে ঘোষিত হয়। এছাড়াও সর্ববৃহৎ বিভাগ, সর্ব বৃহৎ সমুদ্র বন্দর সহ ব্যবসা-বাণিজ্য সর্বোচ্চ অবদান চট্টগ্রামে হওয়ার পরেও চট্টগ্রামের বিচার প্রার্থি জনগণ সর্বোচ্চ আইনের আশ্রয় লাভে সাংবিধানিক সম অধিকার হতে বঞ্চিত হচ্ছে।
তৃতীয়তঃ ২৯/০৩/২০২০ ইং পত্রিকার প্রতিবেদন মতে বর্তমানে এই দেশের বিচারাধীন মামলা প্রায় ৬০ লক্ষের অধিক। তন্মধ্যে হাইকোর্টে বিচারাধীন প্রায় ৬ লক্ষের অধিক। হাইকোর্টের কেবলমাত্র স্থায়ী বেঞ্চ ঢাকায় অবস্থিত হওয়ায় চট্টগ্রামের বিচার প্রার্থী জনগণ সঠিক ও যথাযথ ন্যায় বিচার হতে বঞ্চিত হয়। তৎ কারণ হলো অনাকাংখিত অতিরিক্ত খরচ, প্রতারক (দালাল) দ্বারা লক্ষ লক্ষ টাকা হারানো, সারাদেশের মামলায় একমাত্র হাইকোর্ট ভারাক্রান্ত হওয়ায় মামলায় দীর্ঘসূত্রিতা, সামান্য বিষয়ে বা ইস্যুতে মামলার জন্য আইনজীবী নিয়োগে অনাকাংখিত খরচ প্রদান ও ন্যায় বিচার অনিশ্চয়তা। হাইকোর্ট ঢাকায় স্থাপনকালীন দেশের জনগণ ছিল ৫ কোটি। আর বর্তমান জনসংখ্যা প্রায় ২০ কোটির অধিক। সুতরাং সার্কিট বেঞ্চ জনসংখ্যার তুলনায় যুগোপযোগী যৌক্তিক দাবী। বাংলাদেশ প্রতিদিন পত্রিকার ০২/০৪/২০২০ ইং এর সমীক্ষা মতে হাইকোর্টে কেবল শুল্ক, ভ্যাট ও আয়কর সংক্রান্তে ২৫ হাজার মামলা বিচারাধীন। যাতে সরকারের প্রায় ৩১,০০০ কোটি টাকা শুল্ক, রাজস্ব ও ভ্যাট মামলা জটে আটকে আছে। বিচারাধীন উক্ত মামলাগুলোর মধ্যে ৭০% মামলা চট্টগ্রাম বন্দর ও চট্টগ্রাম বাণিজ্য সংক্রান্ত।
চতুর্থতঃ একটি মাত্র হাইকোর্ট ঢাকায় হওয়ায় মামলার খরচ স্বাভাবিকের তুলনায় ৩/৪ গুন বেশি হয়। এছাড়াও প্রতারণার খপ্পরে পড়ে হারাতে হয় ১০/২০ গুন অতিরিক্ত টাকা। বিধায় আইনের অধিকার থেকে বঞ্চিত করনে অর্থটাই যেন প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। কেবল ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের খরচ বাড়ছে শুধু তা নয়। চট্টগ্রাম থেকে বন্দরের ও কাষ্টমসের মামলা পরিচালনা করিতে সরকারেরও মাত্রাতিরিক্ত অর্থ ব্যয় হচ্ছে।
পঞ্চমত: কেবল চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবি সমিতিতে বর্তমানে প্রায় ৬০০০ সদস্য তন্মধ্যে প্রায় ২ হাজার হাইকোর্টে প্র্যাকটিসের অনুমতি প্রাপ্ত। এই চট্টগ্রাম আইনজীবি সমিতি সহ এই বিভাগের অধীনে সংশ্লিষ্ট জেলার আইনজীবী সমিতিতে অনেক তরুণ মেধাবী যোগ্যতাসম্পন্ন আইনজীবী আছেন। হাইকোর্ট একটিমাত্র বেঞ্চ ঢাকায় স্থাপিত হওয়ায় সেই তরুণ মেধাবী আইনজীবিগণের মেধার বিকাশ বাধাগ্রস্থ হচ্ছে আর দেশের সার্বিক উন্নয়ন ও অগ্রগতি বাধাগ্রস্থ হচ্ছে।
আইনগত যৌক্তিকতা: বাংলাদেশ সংবিধানের ১০০ অনুচ্ছেদ হলো “রাজধানীতে সুপ্রীম কোর্টের স্থায়ী অফিস থাকিবে তবে রাষ্ট্রপতির অনুমোদন লইয়া প্রধান বিচারপতি সময়ে সময়ে অন্য যে স্থান বা স্থান সমূহ নির্ধারণ করিবেন, সেই স্থান বা স্থান সমূহে হাইকোর্ট বিভাগের অধিবেশন অনুষ্ঠিত হইতে পারিবে”।
প্রস্তাবনার ৩য় খন্ডে বর্ণিত আছে, “আমরা আরো অঙ্গীকার করিতেছি যে, আমাদের রাষ্ট্রের অন্যতম মূল লক্ষ্য হইবে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে এমন এক শোষনমুক্ত সমাজতান্ত্রিক সমাজের প্রতিষ্ঠা- যেখানে সকল নাগরিকের জন্য আইনের শাসন মৌলিক মানবাধিকার এবং রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক সাম্য স্বাধীনতা ও সুবিচার নিশ্চিত হইবে।”
রাষ্ট্রের মূলনীতির ১৯(১) অনুচ্ছেদে বর্ণিত আছে, সকল নাগরিকের জন্য সুযোগের সমতা নিশ্চিত করিতে রাষ্ট্র সচেষ্ট হইবে”
মৌলিক অধিকারের ২৭ অনুচ্ছেদে বর্ণিত, ‘সকল নাগরিক আইনের দৃষ্টিতে সমান ও আইনের সমান আশ্রয় লাভের অধিকারী” ৩১ অনুচ্ছেদে বর্ণিত, “আইনের আশ্রয় লাভ এবং আইন অনুযায়ী ও কেবল আইন অনুযায়ী ব্যবহার লাভ যে কোন স্থানে অবস্থানরত প্রত্যেক নাগরিকের এবং সাময়িকভাবে বাংলাদেশে অবস্থানরত অপরাপর ব্যক্তির অবিচ্ছেদ্য অধিকার”
৪৪ অনুচ্ছেদে হাইকোর্টকে মৌলিক অধিকার বাস্তবায়ন ও সংবিধানের রক্ষাকবজ হিসাবে বর্ণনা করা হয়েছে।
দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম ও বাংলাদেশের বৃহত্তম সমুদ্র বন্দর ও বাণিজ্য বাজার চট্টগ্রামে অবস্থিত। কিন্তু বন্দর সংশ্লিষ্ট এডমিরালটি আইন সংক্রান্তে ও কোম্পানী আইন সংক্রান্তে এখতিয়ার সম্বলিত হচ্ছে একমাত্র হাইকোর্ট। বিশ্বের রাষ্ট্রসমূহ পর্যালোচনায় দেখা যায়, যেই রাষ্ট্রের মূল বন্দর যেই শহরে অবস্থিত সেই শহরের মধ্যেই এডমিরালটি ও কোম্পানি আইন এখতিয়ার সম্পন্ন সংশ্লিষ্ট আদালত বা হাইকোর্ট সার্কিট বেঞ্চ স্থাপিত হয়েছে। উদাহরণ স্বরূপ চীনের সাংহাই, দক্ষিণ কোরিয়ার কুসান, ভারতের মুম্বাই, নেদারল্যান্ডের রটাডাম, জার্মানির হামবুর্গ পশ্চিম অস্ট্রেলিয়ার পোর্ট হার্ডলেড উল্লেখযোগ্য। বিধায় এডমিরালটি ও কোম্পানী আইন এখতিয়ার সম্বলিত সার্কিট হাইকোর্ট বেঞ্চ কিংবা আদালত চট্টগামে স্থাপিত হওয়ার আবশ্যকতা থাকলেও তা সর্বদা উপেক্ষিত হয়েছে।
বিশ্বের যে সকল গণতান্ত্রিক রাষ্টে সার্কিট বেঞ্চ স্থাপিত হয় ও সফলতা পেয়েছে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের কলকাতায় হাইকোর্টের স্থায়ী বেঞ্চ থাকলেও আন্দামান নিকোবর ও জলপাইগুড়িতে সার্কিট বেঞ্চ স্থাপিত হয়। সারাদেশে ২৪টি সার্কিট স্থায়ী বেঞ্চের সাথে ৬টি সার্কিট বেঞ্চ স্থাপিত আছে। তৎমধ্যে কয়েকটি সার্কিট বেঞ্চকে স্থায়ী বেঞ্চে পরিণত করা হয়।
পাকিস্তানে হাইকোর্টের ৫টি স্থায়ী বেঞ্চ স্থাপিত হয়েছে। মুল বেঞ্চ ইসলামাদে, অপর ৪টি বেঞ্চ লাহোর, করাচি, পেশোয়ার ও কুট্টাতে স্থাপিত হয়। লাহোর হাইকোর্টের ৩টি সার্কিট বেঞ্চ, করাচিতে হাইকোর্টের ৩টি বেঞ্চ, পেশোয়ারে ৪টি বেঞ্চ এবং কুঠাতে ৪টি বেঞ্চ স্থাপিত হয়েছে।
ইংল্যান্ড ও ওয়েলসে মূল বেঞ্চের পাশাপাশি ৬টি সার্কিট বেঞ্চ স্থাপিত হয়েছে। এছাড়াও ৬০০ জনের অধিক সার্কিট বিচারক আছেন, যারা বিভিন্ন সময়ে Specialised Sub Division of High Court, Country Court এবং Crown Court এ বিচার কার্য্য পরিচালনা করেন।
অস্ট্রেলিয়ার মোট জনগণ ২.৫০ কোটি তথাপি অষ্টেলিয়ার স্থায়ী বেঞ্চের পাশাপাশি ২টি করে সার্কিট বেঞ্চ স্থাপিত হয়েছে। নিউজিল্যান্ডে রয়েছে ১টি।
চট্টগ্রাম রিপোরটার্স ফোরাম এর সভাপতি ও বিশিষ্ট সাংবাদিক কাজী মনসুর বলেন, আজকের সহ অতীতে অনেক সংবাদ সম্মেলন হয়েছে হাইকোর্টের বেঞ্চ বাস্তবায়নের জন্য। এটিকে বাস্তবরূপ দিতে হলে হাইকোর্ট বাস্তবায়ন পরিষদ ও সিনিয়র সাংবাদিকবৃন্দকে জনগণের কল্যাণে আরো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে হবে এবং যারা চট্টগ্রামে হাইকোর্ট বেঞ্চ বাস্তবায়নে বাধার সৃষ্টি করছে সেই বাধা ভাঙ্গতে হবে এবং জনগণকে জনগণের অধিকার ফিরিয়ে দিতে হবে।
বিশিষ্ট সাংবাদিক এ.কে.এম. জহরুল ইসলাম বলেন, এরশাদ সরকার সৈরাচারী হলেও তিনি জনগনের কল্যাণে চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে হাইকোর্ট বেঞ্চ স্থাপন করেন।
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি ও বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বাসস) এর চট্টগ্রাম বুরো প্রধান মোঃ শাহ নওয়াজ বলেন, ১৯০৫ সালের বঙ্গভঙ্গ থেকে এই পূর্ব বঙ্গের সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানদের স্বার্থের পরিপন্থি। কলকাতা কেন্দ্রীক এলিট স্বার্থবাদী মহল পূর্ববঙ্গের মুসলমানদের বিচারবিভাগসহ, অর্থনৈতিক, প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক উন্নয়নের পথে নানাভাবে বাধার সৃষ্টি করেছিলো, তখনও কলকাতার পাশাপাশি ঢাকায় হাইকোর্ট স্থাপনের বিরোধীতা করেছিলো একটি কুচক্রী মহল। এই চক্র পরবর্তীতে পাকিস্তান আমলে রাওয়ালপিন্ডিতে ভর করেছিলো। একইভাবে বর্তমানে তারা ঢাকায় বসে চট্টগ্রামের বিচার বিভাগসহ, অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও বিচার প্রাপ্তি সহজীকরণের যেকোন উদ্যোগকে নানাভাবে বাধাগ্রস্ত করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে। তিনি আরো বলেন, নৌবাহিনীর সদর দপ্তর ঢাকাতে হওয়ার কোন যৌক্তিকতা নেই। একইভাবে চা-বোর্ডের সদর দপ্তর চট্টগ্রামে হলেও তার মূল কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে ঢাকা থেকে। এভাবেই যুগ যুগ ধরে চট্টগ্রামকে বঞ্চিত করা হচ্ছে।
চট্টগ্রাম বারের সাবেক সভাপতি নাজিম উদ্দিন চৌধুরী বলেন, বিচারবিভাগ সংস্কার কমিশন দেশের জনগনের সার্বিক কল্যানে চট্টগ্রামসহ সাবেক বিভাগীয় শহরে হাইকোর্টের বেঞ্চ স্হাপনের প্রস্তাব করেছেন, যা যুগোপযোগী ও দেশের মানুষের জন্য সার্বিক কল্যানকর।
চট্টগ্রাম বারের সাবেক সভাপতি এডভোকেট এনামুল হক বলেন, চট্টগ্রামের বৃহত্তর উন্নয়নের স্বার্থে বর্তমান সরকারের আমলেই হাইকোর্ট বেঞ্চ স্থাপন করা অতীব জরুরী।
বিশিষ্ট মানবাধিকার নেতা এডভোকেট জিয়া হাবীব আহসান বলেন, আন্তর্জাতিক রিপোর্ট মতে ঢাকা বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত নগরী, ফলে ঢাকাকে রক্ষায় প্রশাসনিক ও বিচার বিভাগীয় বিকেন্দ্রীকরণ আবশ্যক। একইসাথে বন্দরনগরী চট্টগ্রামের উন্নতিকল্পেও এটি সহায়ক। ঢাকায় গমন ও অবস্থান ব্যয়বহুল হওয়ায় দরিদ্র জনগন রিটসহ অন্যান্য প্রতিকার পেতে ঢাকা যেতে পারছেনা। ফলে সাধারণ জনগনের বিচারপ্রাপ্তি ব্যাহত হচ্ছে।
চট্টগ্রাম বারের সাবেক সেক্রেটারি এডভোকেট জিয়াউদ্দিন আহমেদ বলেন, চট্টগ্রামসহ দেশের সার্বিক মানুষের কল্যানে চট্টগ্রামে হাইকোর্ট বেঞ্চ স্থাপনেরর কোন বিকল্প নেই। তিনি চট্টগ্রামের সকল শ্রেনী, পেশার মানুষকে এ বিষয়ে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানান।
হাইকোর্ট বাস্তবায়ন পরিষদের প্রধান সমন্বয়ক ও চট্টগ্রাম আইন কলেজের উপাধ্যক্ষ এডভোকেট বদরুল হুদা মামুন বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন এককেন্দ্রিক রাষ্ট্রে হাইকোর্টের সার্কিট বেঞ্চে থাকার নজির রয়েছে। কাজেই, চট্টগ্রামকে বঞ্চিত করার কোন কারন থাকতে পারেনা।
এডভোকেট মোস্তফা আজগর শরিফী বলেন যে, পঞ্চদশ সংশোধনী মামলায় তিনি স্বয়ং একটি পক্ষ। উক্ত মামলা শুনানী করতে গিয়ে বুঝা যায় ঢাকায় রাজনৈতিক দলগুলো কিভাবে ঢাকার বাইরের মানুষের কল্যাণকে ব্যাহত করছে।
এডভোকেট কাজী আশরাফুল হক আনসারি চট্টগ্রামে হাইকোর্ট বাস্তবায়নে জনমত তৈরীতে সকলের সহযোগিতা কামনা করেন এবং এডভোকেট বদরুল রিয়াজ চট্টগ্রামে হাইকোর্ট বাস্তবায়নে চট্টগ্রামের সচেতন আইনজীবী সমাজকে সোচ্চার ভূমিকা রাখার আহ্বান জানান।
পরিশেষে, বিশিষ্ট সাংবাদিক ও চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সদস্য সচিব জাহেদুল করিম কচি বলেন, জনগনের আইনের অধিকার নিশ্চিতে ও আইনী সেবা মানুষের দোরগোড়ায় নিয়ে আসতে চট্টগ্রামে হাইকোর্ট বেঞ্চ স্থাপনের কোন বিকল্প নেই।
মতবিনিময় সভায় আরো উপস্থিত ছিলেন এডভোকেট সাইফুল আবেদীন, এডভোকেট পুষ্পা সুলতানা, এডভোকেট এ.বি.এম. ওমর আলী সহ বিশিষ্ট আইনজীবীগণ ও সাংবাদিকবৃন্দ।
সবশেষে, মতবিনিময় সভার সঞ্চালক ও হাইকোর্ট বাস্তবায়ন পরিষদের সেক্রেটারি এডভোকেট কাশেম কামাল উপস্থিত সকল বিজ্ঞ আইনজীবী ও সাংবাদিকবৃন্দকে ধন্যবাদ জানান এবং চট্টগ্রামে হাইকোর্ট বেঞ্চ বাস্তবায়নের পরবর্তী সকল কার্যক্রমে সকলের সহযোগিতা কামনা করেন।