আরিফ আহমেদ- বরিশাল থেকে।।
সড়কে যেখানে সেখানে ঝুলে বা পরে আছে ইন্টারনেট ও স্যাটেলাইট সংযোগের ক্যাবল। বরিশাল নগরীর ১১ কিলোমিটার সড়ক ছাড়াও সিটি করপোরেশন এলাকার অলিগলির প্রতিটি সড়কের পাশের বিদ্যুৎ খুঁটি দখল করে আছে রাশি রাশি ক্যাবল। একইচিত্র রাজধানী ঢাকার মিরপুরেও। দশ নম্বর গোলচক্কর থেকে শুরু করে পল্লবী- মাজার রোড- শেওড়াপাড়া, আগারগাঁও পথের প্রতিটি বিদ্যুৎ খুটিতে রীতিমতো তার বা ক্যাবলের জঞ্জাল। যেকোনো মূহুর্তে ভয়ংকর দূর্ঘটনার জন্ম দিতে পারে এসব তার বা ক্যাবল। শুধু শহরেই নয়, এ চিত্র এখন বাংলাদেশের প্রতিটি উপজেলা শহরের গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতেও। নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করেই বিদ্যুৎ খুটি ব্যবহার করে তারের জঞ্জাল লটকে দিচ্ছে ইন্টারনেট ও স্যাটেলাইট সংযোগ দানকারী কয়েকটি প্রতিষ্ঠান। আর পাড়া মহল্লায় এই কাজে জড়িত এলাকাভিত্তিক রাজনৈতিক দলগুলোর নেতারা। স্যাটেলাইট সংযোগের নিয়ন্ত্রণ নিয়েও চলে রাজনীতি। রাজনৈতিক কারণেই প্রাতিষ্ঠানিক ভিত্তি পায়না এসব কাজগুলো। তারাও স্যাটেলাইট সংযোগ ব্যবহার করতে ইচ্ছেমতো ব্যবহার করছে বিদ্যুৎ খুটি এবং বাসাবাড়ির বিদ্যুৎ সংযোগের লাইনগুলো। সবকিছু জেনেও এ নিয়ে নগর প্রশাসন, সিটি করপোরেশন বা জেলা প্রশাসনের কোনো উদ্যোগ কখনোই চোখে পড়েনি। এমনকি এ নিয়ে নিরব ওজিপাডিকো প্রশাসনও। ওজিপাডিকোর জেলা কর্তৃপক্ষ বলছেন, এটি ঊর্ধ্বতন মহলের হাতে। আমাদের করণীয় কিছুই নেই।
৯ নভেম্বর বরিশালের অশ্বিনী কুমার টাউনহলের সামনে ছিলো মহানগর বিএনপি বিপ্লব ও সংহতি দিবস উদযাপন উপলক্ষে রেলী। এই রেলীতে আসা নেতাকর্মীদের অনেকেই বিবির পুকুর পাড় ও কেবি হেমায়েতউদ্দিন সড়কের মোড়ে সড়কে পরে থাকা ক্যাবলে হোঁচট খেয়ে পরে যান। যা নিয়ে অনেকটাই বিব্রত পরিস্থিতি তৈরি হয় তখন।
সড়কে পরে থাকা এই ক্যাবলের অনুসন্ধানে জানা গেছে, মাত্রই গত ১ নভেম্বর বরিশালের সদর রোডে বিদ্যুতের খুঁটিতে আগুন লাগার কারণে বিদ্যুৎ ও ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ ছিলো পুরো বরিশালে। আগুন লাগার কারণে সেখানে থাকা বিদ্যুৎ ও ইন্টারনেটের তার পুড়ে যায়। এ ঘটনার পর বন্ধ হয়ে যায় সদর রোড, গির্জা মহল্লা এলাকার বিদ্যুৎ সংযোগ। পাশাপাশি বন্ধ হয় আশেপাশের এলাকার ইন্টারনেট সেবা ও ব্যাংকের বুথের টাকা উত্তোলন সেবাও। জানা যায়, বরিশালে প্রায় ৪০টি ইন্টারনেট কোম্পানির দশ হাজারের মতো লাইন সংযোগ রয়েছে শুধু সদর রোড এলাকায়। নগরী জুড়ে দাপটের সাথে কয়েক লক্ষ সংযোগ নিয়ে কাজ করছে ইউরোটল, সামিট, ফাইবার এটোম, আম্বার আইটি, কেএস আইটি, অরেঞ্জ কমিউনিকেশন, রেডিয়েন্ট, স্কাইভিউ, ডেল্টা, ব্রাক নেট, মেট্রোনেট, গেটকো, আ্যামা নেট, বোল, বিডিকম, স্কয়ার, (rangs) র্যাংগস আইটি, টেল নেট, ব্রীক আইটি, লিংক থ্রি, কোয়ান্টাম, এম্বার আইডি, বন্ধন আইটি ইত্যাদি প্রায় ৪০টি প্রতিষ্ঠান। যদিও গত ২০০০ সালেই সিটি করপোরেশনের বিদ্যুৎ খুঁটি ব্যবহারের বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা জারী রয়েছে। তা স্বত্বেও অজ্ঞাত কারণে এ নিয়ে কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছেন কর্তৃপক্ষ। নগরবাসীর অনেকেই অভিযোগ করেন, একটি সিটি করপোরেশন এলাকায় এভাবে বিদ্যুৎ খুঁটি ক্যাবল দিয়ে ঢেকে রাখা এটা শুধু বাংলাদেশেই সম্ভব। বরিশাল শুধু নয়, রাজধানী ঢাকায়ও এ নিয়ে কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই প্রশাসনের।
সামাজিক আন্দোলনের নেতা ও বরিশালের ষাটোর্ধ সিটিজেন ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সহসভাপতি কাজী মিজানুর রহমান বলেন, বিশ্বের আর কোনো দেশে, এমনকি পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতেও এ রকম দৃশ্য নেই। অথচ আমাদের সরকার প্রধানরা কথায় কথায় ভারতের উদাহরণ দিয়ে থাকেন। এই তার বা ক্যাবলগুলো মাটির নীচ দিয়ে অনায়াসে নেয়া সম্ভব বলে জানান তিনি।
ঢাকার মীরপুর ৬ নং সেকশন বাজার মার্কেটের ব্যবসায়ী মামুনুর রশীদ মামুন বলেন, মার্কেটের চারপাশে যতগুলো খাম্বা বা বিদ্যুৎ খুঁটি রয়েছে সবগুলো ঢাকা পরে গেছে এই ক্যাবলে। প্রায়শই শর্টসার্কিট ঘটছে। তারে আগুন জ্বলছে। তার গলে গলে পরছে। মারাত্মক বিপদজনক অবস্থা।
এ বিষয়ে রাজনৈতিক বিশ্লেষক মাহবুব খান বলেন, ময়লা আর ডিশের লাইনের পাশাপাশি এখন নতুন দখলদারি শুরু হয়েছে এই ইন্টারনেট সংযোগ নিয়ে। পাড়া-মহল্লায় ইতিমধ্যেই এগুলোর হাতবদল শুরু হয়েছে। যে কারণে নতুন সংযোগ স্থাপন করে নিজেদের কর্তৃত্ব বিস্তার করছে নতুন দখলদার। এটি বন্ধ হওয়া খুবই জরুরী। এ জন্য নগর প্রশাসন এবং জেলা প্রশাসনের যৌথ অভিযান চালানোর পরামর্শ দেন তিনি।
এ বিষয়ে বরিশাল সিটি করপোরেশনের বিদ্যুৎ ব্যবস্থাপক অহিদ মুরাদ বলেন, আসলে একটি সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে পুরাতন তার না সরিয়েই নতুন তার স্থাপনের কারণে বিদ্যুৎ খুঁটিগুলোর এই দশা হয়েছে। ক্যাবল নেটওয়ার্ক প্রতিষ্ঠানগুলো পুরাতন ক্যাবল সরিয়ে নিয়ে গেলে এই পরিস্থিতি হতো না। সড়কে পরে থাকা তারাগুলো সরানো যাচ্ছেনা- কারণ তাদের কাজ এখনো চলমান রয়েছে।
মুরাদ আরো বলেন- আগামী প্রশাসনিক বৈঠকে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। সিটি বিদ্যুৎ খুঁটি আর তাদের ব্যবহার করতে দেয়া হবে না বলে জানান তিনি।
এদিকে বরিশালের ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের -ওজোপাডিকো- নির্বাহী প্রকৌশলী মনজুল কুমার স্বর্ণকার বলেন, সড়কের পাশে প্রায় সবগুলো বিদ্যুৎ খুটিতেই রাশি রাশি ক্যাবল ঝুলছে। এগুলো মারাত্মক ঝুকিপূর্ণ হয়ে আছে। এ বিষয়ে উপরমহলে বেশ কয়েকবার অভিযোগ জানানো হয়েছে। এটা আসলে উর্ধতন কর্তৃপক্ষকেই সিদ্ধান্ত দিতে হবে বলে জানান তিনি।