
কক্সবাজার অফিস:
কক্সবাজারে আওয়ামী লীগনেতা রফিক আহমদ চেয়ারম্যান অবশেষে গ্রেফতার হয়েছেন। স্বৈরাচার সরকারের পতনের একবছর পরে হলেও পালিয়ে আর রক্ষা পাননি দোসর এই ইউপি চেয়ারম্যান। ৩৬ জুলাই’র বর্ষপূর্তির রাতে দুর্ধর্ষ এই আওয়ামী ক্যাডারকে পুলিশ পোকখালী থেকে গ্রেফতারে সক্ষম হয়।
গ্রেফতার রফিক আহমদ চেয়ারম্যান কক্সবাজারের ঈদগাঁও উপজেলার উপকূলীয় পোকখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান। তিনি ইতোপূর্বে দীর্ঘ তিন দশক ধরে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। পোকখালী ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের মধ্যম পোকখালী গ্রামের ফকিরপাড়ার মৃত নুরুল হক মিয়ার বড় ছেলে তিনি।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) আহমেদ পেয়ার বলেন, ‘গ্রেফতার রফিক আহমদ চেয়ারম্যান স্বৈরাচারের দোসর এবং হত্যা, ভোট ডাকাতি, সন্ত্রাসসহ প্রায় অর্ধ ডজন মামলার আসামি। দীর্ঘদিন আত্মগোপনে থাকার পরে পুলিশ অবশেষে তাকে গ্রেফতারে সক্ষম হয়েছে’।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, একসময়ের ছাত্রলীগের দুর্ধর্ষ ক্যাডার রফিক আহমদ তিন দশক ধরে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদে ছিলেন। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পরে ২০১০ সালে প্রথম তিনি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। ওই বছরের ১০ জুলাই ভোটের দিন ফলাফল ঘোষণার পরে রফিক আহমদ পরাজিত হন। এই ক্ষোভে তার আপন চাচা, এলাকার সর্বজন শ্রদ্ধেয় আলেম, অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক শামসুল হুদা হেলালীকে দলবল নিয়ে নৃশংসভাবে কুপিয়ে হত্যা করেন। সেসময় কুপিয়ে আহত করেন শামসুল হুদা হেলালীর বড় ছেলে মাওলানা জুনায়েদ ও শ্যালক মাওলানা আখতার আহমদকে।
জানা যায়, এই লোমহর্ষক হত্যার ঘটনায় মামলা হলে রফিক আহমদ সপরিবারে পালিয়ে দীর্ঘদিন আত্মগোপনে থাকেন। কিছু পরে আবারও এলাকায় ফিরে এসে দলীয় পদ ও প্রভাব কাজে লাগিয়ে সন্ত্রাসের রামরাজত্ব কায়েম করেন। পরে ২০১৬ সালে ইউপি নির্বাচনের ক’দিন আগে আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। সেই সময় আদালত তাকে জেলহাজতে প্রেরণ করে। এসময় তিনি কারাগারে থেকে সেই বছরের ৪ জুন প্রথম তিনি ইউপি চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন।
স্থানীয় লোকজন জানায়, ওই নির্বাচনে রফিক আহমদ কারাগারে থাকলেও ভোটের দিন ফলাফল ঘোষণাকে কেন্দ্র করে পুরো এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব ও এক ভীতিকর পরিস্থিতি তৈরি করে তার কর্মী-সমর্থকেরা। ব্যাপক হামলা, ভাঙচুর, গোলাগুলি, আগুন সন্ত্রাস, সাধারণ মানুষের বাড়িঘরে হামলা ও তাণ্ডব, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উপর হামলা, রাস্তা অবরোধ করে রাখে। পরে কক্সবাজার থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অতিরিক্ত ফোর্স গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ ও ভোট গ্রহণে দায়িত্বপ্রাপ্তদের উদ্ধার করে আনতে সক্ষম হয়।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, সর্বশেষ বিগত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনেও রফিক আহমদ আবারও চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। এই নির্বাচনেও ভোটগ্রহণ শেষে ফলাফল পক্ষে নেওয়ার জন্য রফিক আহমদ ও তার সন্ত্রাসী বাহিনী ব্যাপক তাণ্ডব চালায়। তারা তৎকালীন কক্সবাজার সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আরিফউল্লাহ নিজামী ও অন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য এবং ভোটগ্রহণ কর্মকর্তাদের গাড়ি আটকে ফলাফল পক্ষে নেওয়ার জোর অপচেষ্টা চালায়। সেই সময় পুলিশ, বিজিবি, র ্যাব সদস্যরা কয়েক ঘন্টা সাউন্ড গ্রেনেড, টিয়ারশেল ইত্যাদি নিক্ষেপ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নেয়। এদিন রফিক আহমদ, তার ভাই ফিরোজ আহমদ ও ছেলে আসিফুজ্জামান বাবুসহ কয়েকশো অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী ব্যাপক তাণ্ডব ও নারকীয় পরিস্থিতি সৃষ্টি করে। এই ঘটনায় কক্সবাজার জেলা নির্বাচন অফিসার নিজে বাদী হয়ে ঈদগাঁও থানায় মামলা করেন। এছাড়া ওই নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী সাইফুদ্দিন নিজে বাদী হয়ে নির্বাচন কমিশনে আরও একটি মামলা দায়ের করেন।
একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, সন্ত্রাসের গডফাদার ও অসংখ্য মামলার আসামি রফিক আহমদকে চেয়ারম্যান পদ থেকে অপসারণে আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। জেলা প্রশাসন, বিভাগীয় কমিশনার ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে এবিষয়ে কাজ চলছে বলেও জানিয়েছে ওই সূত্র।