
মোঃ মাসুদ রানা মনি
লক্ষ্মীপুর জেলা প্রতিনিধি।।
লক্ষ্মীপুরের লক্ষী হলো এ জেলার সুপারি। তবে এ বছর সুপারীর ফলন কিছুটা কম হয়েছে, কিন্তু দাম বেশী হওয়ায় সন্তুষ্ট এ অঞ্চলের কৃষক। জানা গেছে এ বছর প্রায় ৭০০ কোটি টাকার সুপারী বিক্রি করা হয়েছে।
সুপারি লক্ষ্মীপুরের একটি অর্থকরী ফসল। জেলার প্রায় প্রতিটি বাড়িতে রয়েছে সুপারি গাছ। মৌসুমে সুপারি বিক্রি করে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হচ্ছেন জেলার অনেকে।
এছাড়া মৌসুমী এ ব্যবসার সঙ্গে জড়িত রয়েছেন জেলার অনেক মানুষ। প্রায় সারাদেশেই চাহিদা রয়েছে লক্ষ্মীপুরের সুপারির। লক্ষ্মীপুরের মাটি এবং আবহাওয়া সুপারি চাষের জন্য উপযোগী। তাই প্রতিটি স্থানেই দেখা মেলে গাছটির। গেল বছর জেলাতে সুপারির বাম্পার ফলন হলেও চলতি মৌসুমে ফলন নেমে গেছে অর্ধেকে। ফলন কম হওয়ায় বাজারে দাম কিছুটা বেড়েছে। বিক্রেতা এবং ব্যবসায়ীদের কথা বলে জানা গেছে-গত বছরের এ সময়ে প্রতি পোন -৮০পিস- সুপারি বিক্রি হয়েছে ১০০ থেকে ১২০ টাকা। চলতি বছর বিক্রি হচ্ছে ১৫০-১৭০ টাকা দামে।
সুপারির বাগান মালিকরা জানায়- সুপারী গাছ অল্প পরিমাণ জমিতে বেড়ে উঠে। রাস্তার পাশে- বাড়ির আঙ্গিনায়- ঝোপ-ঝাড়ে- ফসলি খেতের কাছে- পুকুর বা খাল পাড়সহ আনাচে-কানাচে লাগানো হয় গাছটি। জেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি সুপারি বাগান রয়েছে রায়পুর উপজেলাতে। এছাড়া লক্ষ্মীপুরের দক্ষিণ অঞ্চলের তুলনায় উত্তর এবং পশ্চিম অঞ্চলে সুপারির আবাদ বেশি হচ্ছে।
জানা গেছে- লক্ষ্মীপুর উত্তর তেমুহনী- জকসিন-মান্দারী-বটতলী- হাজিরপড়া- চন্দ্রগঞ্জ- ভবানীগঞ্জ, রায়পুরের হায়দরগঞ্জ- বাসাবাড়ি- মোল্লারহাটসহ জেলা এবং উপজেলার সবগুলো বাজারেই বসে সুপারি ক্রয়-বিক্রয়ের হাট। এছাড়া প্রায় প্রত্যেক গ্রামগঞ্জের আনাচে-কানাচে এবং রাস্তার মোড়ে খুচরা ব্যবসায়ীরা গেরস্তো থেকে সুপারি ক্রয় করে বাজারগুলোতে এনে পাইকারী দামে বিক্রি করে।
লক্ষ্মীপুরে সুপারি গননা হয় পোন এবং ক্রাউনে। ৮০টি সুপারিতে এক পোন এবং ১৬ পোনকে এক ক্রাউন ধরা হয়।
লক্ষ্মীপুর উত্তর তেমুহনী সুপারীর হাটে গিয়ে দেখা যায়- আকার ভেদে পাকা প্রতি পোন সুপারি বিক্রি হচ্ছে ১৫০ থেকে ১৭৯ টাকা পর্যন্ত। আর কাঁচা সুপারির পোন বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৮০ টাকায়। তবে প্রতি হাটে বাজার মূল্য উঠানামা করে বলে জানান ব্যবসায়ীরা।
আল আমিন নামে ব্যক্তি বলেন- ৫ পোন সুপারি বিক্রি করেছি ৮০০ টাকায়। এ টাকা দিয়ে বাজার সদাই করবো।
আবুল কালাম নামে এক বাগান মালিক বলেন- এবার গাছে সুপার খুবই কম। কিন্তু গত দুই বছর ভাল ফলন হয়েছে- কিন্তু দাম কম ছিল। এবার ফলন কম হওয়ায় দাম বেশি।
কয়েকজন সুপারি বাগান মালিক ও গেরস্তোর সঙ্গে কথা বলেন জানা গেছে- সুপারি লাভজনক ফসল হওয়ায় প্রত্যেকে পতিত জমিতে সুপারির চারা বা বীজ রোপণ করেন তারা। মৌসুমে ভালো মানের সুপারিগুলো বীজ হিসেবে সংরক্ষণ করে তা মাটিতে পুতে রাখেন। বর্ষা মৌসুমে খালি জমিতে বা বাড়ির আঙ্গিনায় চারা গাছ রোপন করেন। তেমন কোনো পরিচর্যা ছাড়াই প্রাকৃতিক পরিবেশে গাছ বড় হতে থাকে। ৫-৭ বছরের মধ্যেই গাছে ফল আসতে শুরু হয়। একবার ফল দেওয়া শুরু করলে প্রতিটি গাছ ২৫-৩০ বছর পর্যন্ত ফলন দিতে থাকে। তবে গাছের বয়স যত বেশি হবে, ফলনের পরিমাণ তত কমতে থাকবে। প্রাপ্ত বয়স্ক একটি গাছে মৌসুমে ৪-৫ পোন সুপারি ধরে।
তারা আরও জানান- দিন দিন সুপারির বাগানের পরিধি কমতে শুরু করেছে। বাগান উজাড় করে ঘর-বাড়ি নির্মাণের ফলে সুপারির উৎপাদন কমে যাচ্ছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক সোহেল মো. শামসুদ্দীন ফিরোজ বলেন- লক্ষ্মীপুরে এবার ৭ হাজার ২০০ হেক্টর জমিতে সুপারির আবাদ হয়েছে। উৎপাদন হয়েছে ৪০ হাজার মেট্রিক টন সুপারি। যার বাজারমূল্য ৭০০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে। এবার ফলন কম হলেও এবার সুপারির দাম বেশি। তাই চাষিদের পোষাচ্ছে। একেক বাগান মালিক মৌসুমে ৪ থেকে ৫ লাখ টাকার সুপারি বিক্রি করতে পারে। এটা চাষিদের জন্য অর্থের বড় একটা সংস্থান।
সুপারীর ফলন বাড়াতে এবং বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত সুপারি বাগান মালিকদের ভাল মানের চারা রোপণ এবং দূরত্ব বজায় রেখে চারা লাগানোর পরামর্শ দেন এ কৃষি কর্মকর্তা।