মোঃ মাসুদ রানা মনি
লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি।।
টানা বৃষ্টিতে লক্ষ্মীপুরের ৫ উপজেলার বন্যার পরিস্থিতির মারাত্মক অবনতি ঘটেছে।বিশুদ্ধ পানির চরম সংকট দেখা দিয়েছে।
টানা ও ভারী বৃষ্টি অব্যাহত থাকায় প্রতিদিনই পরিস্থিতির আরও অবনতি ঘটছে। জেলার পাঁচটি উপজেলায় সৃষ্ট বন্ধ্যায় জলাবদ্ধতা প্রকট আকার ধারণ করেছে। চার দিন ধরে বেশির ভাগ ঘরবাড়ি জলমগ্ন হয়ে আছে। চরাঞ্চলের বেশিরভাগ নলকূপ ডুবে যাওয়ায় বর্তমানে বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দিয়েছে। অনেকেই রান্না বান্না করতে না পেরে মানবেতর জীবন-যাপন করছেন।
লক্ষ্মীপুর জেলা সদর- রায়পুর- রামগঞ্জ- রামগতি ও কমলনগর উপজেলার নিম্নাঞ্চলের বসতবাড়ি ও রাস্তাঘাট তলিয়ে যাওয়ায় দিশাহারা হয়ে পড়েছেন জেলার কয়েক লাখ মানুষ। কয়েক দিনের টানা বর্ষণ ও মেঘনার জোয়ারের পানি বাড়ছে বলে জানিয়েছে লক্ষ্মীপুর পানি উন্নয়ন বোর্ড। এতে কয়েক হাজার পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। তলিয়ে গেছে আমন ধানের খেতসহ শত শত হেক্টর জমি শাকসবজি। এছাড়া মহিষ- গরু ও হাঁস-মুরগীর খামারে পানি ঢুকে ক্ষতির সম্মুক্ষিণ হয়েছে শত শত খামারি।
রামগতি আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের আবহাওয়া পর্যবেক্ষক সোহরাব হোসেন বলেন- গত চার দিনে লক্ষ্মীপুরে ৩১২ দশমিক ৮ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে।
বৃহস্পতিবার সকালে রামগতি ও কমলনগর উপজেলা ঘুরে দেখা গেছে, চরাঞ্চলের বেশিরভাগ ঘরবাড়ি পানিতে ডুবে আছে। বসতঘরের ভিতরে হাঁটু পানি। বিশেষত চরাঞ্চলে বিশুদ্ধ পানির সংকট বেশি। অনেকে কোমর পানি ভেঙে- নৌকা ও কলাগাছের ভেলায় দূর থেকে বিশুদ্ধ খাওয়ার পানি সংগ্রহ করছেন।
লক্ষ্মীপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. বিল্লাল হোসেন জানান- চলমান বন্যা পরিস্থিতিতে জেলায় ১৭ হাজার ৫০০ পুকুর-জলাশয় ভেসে গেছে, চাষিদের বিভিন্ন প্রকার ছোট বড় ৪- ৫হাজার মেট্রিক টন মাছ ভেসে গেছে। এতে কয়েক কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। বৃষ্টি না কমলে তা বেড়ে দ্বিগুণ হওয়ার শঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।
লক্ষ্মীপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা মো. মঞ্জুর হোসেন জানান, বন্যায় আমন ধানের বীজ তলা ১৪৮৬ হেক্টর, আমন ধান ধান ২৬১৮ হেক্টর, আউশ ধান ২৯৬৩ হেক্টর ও শরৎকালীন ৪৪৩ হেক্টরের সবজি আক্রান্ত হয়েছে। পানি আরও বেড়ে ২ দিন থাকলে এসব নষ্ট হয়ে যাবে।
লক্ষ্মীপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী নাহিদ-উজ জামান খান বলেন, মেঘনা নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এত পানি আগে কখনো দেখা যায়নি।
লক্ষ্মীপুর জেলা প্রশাসক সুরাইয়া জাহান বলেন, জলাবদ্ধতা নিরসনে স্ব স্ব উপজেলা নির্বাহী অফিসারগণ সাধারণ মানুষদের নিয়ে কাজ করছে। ইতিমধ্যে বিভিন্ন খালের বাঁধ কেটে দেওয়া হয়েছে। খাল-নালা পরিষ্কারের কার্যক্রম অব্যাহত আছে। বন্যার্তদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোয় আশ্রয় নিতে বলা হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারগুলোর মধ্যে শুকনা খাবার বিতরণ করা হচ্ছে।