Dhaka , Wednesday, 12 February 2025
নিবন্ধন নাম্বারঃ ১১০, সিরিয়াল নাম্বারঃ ১৫৪, কোড নাম্বারঃ ৯২
শিরোনাম ::
নারায়ণগঞ্জ শহীদ মিনারে ‘আমাদের স্বজন আমাদের দায়িত্ব’ শীর্ষক পথ নাটক পরিবেশিত জিনিয়াস ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে ৪০৭ শিক্ষার্থীকে বৃত্তি সংবর্ধনা অপারেশন ডেভিল হান্ট সিলেটে মেট্রোপলিটন পুলিশের অভিযানে গ্রেফতার- ৯ জন সাতকানিয়ায় যানজট নিরসনে স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ পাইকগাছায় কলেজ ছাত্রী উদ্ধার অপহরণকারী আটক-১ অপারেশন ডেভিল হান্ট সাভারে গ্রেফতার ১২ রামগঞ্জ প্রবাসী সিটি প্রকল্পে অনিয়মের অভিযোগ, কোটি  টাকার প্রতারণা ভুক্তভোগীদের অভিযোগ  চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে ট্রাক-পিকআপ সংঘর্ষ, আহত কয়েকজন বর্ষার আগেই চট্টগ্রামে জলাবদ্ধতা নিরসনের কাজ দৃশ্যমান হবে- মেয়র শাহাদাত কক্সবাজারের সাবেক হুইপ কমলের সহকারী ও স্বেচ্ছাসেবকলীগ নেতা গ্রেফতার অটো টম টম ও মালিক ঐক্য পরিষদের বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ সভা পাইকগাছায় অবৈধ নেটজাল জব্দ রূপগঞ্জে জেলা ছাত্রদলের আনন্দ মিছিল গাজীপুরে ৪ টি আসনে জামায়াতের প্রার্থীদের  নাম ঘোষণা মেহেরপুরে গম ক্ষেতের পরিচর্যায় কৃষক  নোয়াখালীতে ট্রাক চাপায় প্রতিবন্ধী নারীর মৃত্যু জেলা লিগ্যাল এইড ও ফুটন্ত যুব সংঘের উদ্যোগে শিক্ষার্থীদের আইনি সহায়তা বিষয়ক কর্মশালা  অপারেশন ডেভিল হান্ট, নোয়াখালীতে আগ্নেয়াস্ত্র,গুলি,ককটেলসহ গ্রেপ্তার-২ নরসিংদীতে হাসিনার ফাঁসির দাবিতে ছাত্রদলের বিক্ষোভ মিছিল গণপূর্ত বিভাগ পিরোজপুর এস এ ই কাপ ব্যাডমিন্টন টুর্নামেন্ট ২০২৫ অনুষ্ঠিত গাজীপুর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি গঠন আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে শেষ হলো জাকের পার্টির ইসলামী সম্মেলন নোয়াখালীতে ট্রকা চাপায় ভাই-বোনের মৃত্যু অপারেশন ডেভিল হান্ট কক্সবাজারে গ্রেফতার ১৪ জন ট্র্যাব অ্যাওয়ার্ড পেলেন ‘আমার দেশ’ পত্রিকার আবাসিক সম্পাদক জাহিদুল করিম কচি পরিবেশবান্ধব ও ন্যায়ভিত্তিক বাংলাদেশ গড়তে গ্রাজুয়েটদের প্রতি আইইউবিএটি সমাবর্তনে পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান পাইকগাছা থানার এএসআই আলতাফ মাহমুদ চতুর্থ বারের মতো জেলা শ্রেষ্ঠ কর্মকর্তা নির্বাচিত বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের ৬টি অলাভজনক ও কার্যক্রমহীন স্থলবন্দর প্রাথমিকভাবে বন্ধের সুপারিশ অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন করার প্রস্তুতি নিচ্ছে- মির্জা আলমগীর ৫৩ তম জাতীয় শীতকালীন ক্রীড়া প্রতিযোগিতা কক্সবাজার জেলা পর্যায় অনুষ্ঠিত

রাষ্ট্র সংস্কারে পাঠাগার।।

  • Reporter Name
  • আপডেট সময় : 02:06:49 pm, Monday, 9 December 2024
  • 24 বার পড়া হয়েছে

রাষ্ট্র সংস্কারে পাঠাগার।।

সমসাময়িক সময়ে বিশেষ করে ৫ আগস্ট ২০২৪ দেশের পেক্ষাপট পরিবর্তনের পর রাষ্ট্র সংস্কারের কথাটি ব্যাপকভাবে আলোচিত হচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে দেশ একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত পার করছে। সব জায়গা থেকেই রাষ্ট্র সংস্কারের কথা উঠছে। যখন একটি রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক কাঠামো দুর্বল হয়ে যায়- সর্বক্ষেত্রে জবাবদিহিতার বড় বেশি অভাব পরিলক্ষিত হয়- সুশাসন ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে যায়- মানবিক মূল্যবোধ খুব একটা নজরে পড়ে না- নীতি আদর্শ লোপ হয়ে যায়- রাষ্ট্রের সাংবিধানিক কাঠামো সঠিকভাবে কাজ করতে পারে না- ঠিক তখনই রাষ্ট্র মেরামত তথা রাষ্ট্র সংস্কার জরুরি হয়ে পড়ে। ছাত্র জনতার অভ্যুত্থানের প্রেক্ষাপটে বর্তমান অন্তর্র্বতী সরকারের করণীয় হিসেবে জরুরি যে বিষয়টি সামনে এসেছে তা হলো সংস্কার। ইতোমধ্যে নির্বাচন ব্যবস্থা- সংবিধান- বিচার বিভাগ- দুর্নীতি দমন- পুলিশ প্রশাসন- জনপ্রশাসনসহ গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানসমূহের সংস্কারের জন্য গঠিত কমিশন কাজ করে যাচ্ছে।

 

রাষ্ট্রযন্ত্র মেরামত তথা রাষ্ট্রের সংস্কারের কাজ চলছে। এখন কথা হচ্ছে অন্তবর্তকালীন সরকারের কাজ হচ্ছে যথাসম্ভব যৌক্তিক সময়ের মধ্যে রাষ্ট্র সংস্কার শেষে একটি সুষ্ঠু- অবাধ- বৈষম্যহীন- জবাবদিহিমূলক ব্যবস্থায় একটি সর্বজন গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা চালু করা। এক্ষেত্রে একটি বিষয় গুরুত্বের সঙ্গে লক্ষণীয় যে- সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার গঠন করে যারা ভবিষ্যতে দেশ পরিচালনা করবেন তারা হচ্ছেন রাজনীতিবিদ। আর জনসাধারণ ভোট দিয়ে তাদের প্রতিনিধি নির্বাচন করবেন। যারা ভোট দেবেন অর্থাৎ ভোটার এবং যারা নির্বাচিত হবেন অর্থাৎ রাজনীতিবিদ- তারা যদি তাদের চরিত্র না বদলান তবে সংস্কারের ফলাফল সুদূরপ্রসারি অর্থাৎ টেকসই হবে না। কোটা সংস্কার পরবর্তীতে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের প্রধান কারণ হচ্ছে রাষ্ট্রের সর্বক্ষেত্রে ন্যায্যতা প্রতিষ্ঠা করা। ন্যায়ভিত্তিক রাষ্ট্র গঠন তখনই সম্ভব যখন এ রাষ্ট্রের জনগণ সচেতন হয়- সুশিক্ষিত হয়- সর্বোপরি উত্তম চরিত্র বিশিষ্ট মানবিক মানুষ হয়।

আর এই মানবিক মানুষ গড়ে তুলতে যে প্রতিষ্ঠানটি সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখতে পারে তা হচ্ছে পাঠাগার। পাঠাগার প্রতিষ্ঠার ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট- সভ্যতা বিকাশে পাঠাগারের ভূমিকা- জ্ঞানভিত্তিক সমাজ বিনির্মাণে পাঠাগারের কার্যকারিতা- উন্নত চরিত্র গঠন থেকে শুরু করে উন্নত রাষ্ট্র গঠনে পাঠাগার কিভাবে ভূমিকা পালন করতে পারে তা পর্যালোচনা করলেই রাষ্ট্র সংস্কারে পাঠাগারের ভূমিকা বিষয়টি সুস্পষ্ট হয়ে উঠবে।

 

রাষ্ট্র সংস্কারে পাঠাগার কেন একটি বিবেচ্য বিষয় তা অনুধাবনের জন্য নিকট অতীতের আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট তুলে ধরা দরকার। জনগণের ভোটে নয় অন্য কোন ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে অস্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় যখন কোন সরকার ক্ষমতায় আসে তখন সেই সরকার জনগণের ওপর কর্তৃত্ববাদী ও অত্যাচারী হয়ে উঠে- কারণ জনগণের কাছে তার কোন জবাবদিহিতা থাকে না। ফলে অগণতান্ত্রিকভাবে সরকার তার ক্ষমতা প্রলম্বিত করতে থাকে। সরকারের নিবর্তনমূলক আচরণ এবং জনগণের চাহিদা অনুযায়ী বিরাজমান বিরোধী দল সরকারবিরোধী কার্যকর কোন আন্দোলন গড়ে তুলতে পারে না। এমতাবস্থায় অস্বচ্ছ-অগণতান্ত্রিক উপায়ে নির্বাচিত সরকার এবং দুর্বল বিরোধী দল উভয়ের কাছেই সাধারণ জনগণ উপেক্ষিত। কারণ সরকার ও বিরোধী দল শুধুমাত্র ক্ষমতার জন্যই রাজনীতি করে। উভয়পক্ষের কেউই জনআকাক্সক্ষা অনুধাবন করে না। দুর্বৃত্তায়নের মাধ্যমে গঠিত সরকার প্রায় সময়ই জনগণের ওপর ক্ষমতা প্রয়োগে নিরঙ্কুশ ক্ষমতা রাখে। রাষ্ট্রে এ ধরনের অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা তখনই ঘটে যখন ভোটার তথা সাধারণ জনতা এবং রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যে মানবিক মূল্যবোধ কমে যায়। বিশেষ করে শাসকগোষ্টী সুশাসন- নীতিবোধ এবং ন্যায্যতা রাষ্ট্র পরিচালনার কোন ক্ষেত্রেই চালু রাখে না। একচ্ছত্র ক্ষমতা শাসকগোষ্ঠীকে স্বৈরশাসকে রূপান্তর করে। সুশিক্ষায় পিছিয়ে থাকা রাষ্ট্রসমূহে বিরোধী দলের শ্রেণী চরিত্র শাসকগোষ্ঠীর শ্রেণী চরিত্রের চেয়ে খুব বেশি উন্নত হয় না। কল্যাণ রাষ্ট্র গড়ে তুলতে দেশের রাজনৈতিক দলসমূহের সদস্যসহ দেশের নাগরিক শ্রেণীকে সুশিক্ষিত ও সচেতন করে গড়ে তোলার কোন বিকল্প নেই। আর জনগণকে সুশিক্ষিত ও সচেতন করে গড়ে তুলতে পাঠাগার মুখ্য ভূমিকা পালন করে থাকে।

গণতন্ত্রের চর্চা করতে- দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন করতে- উন্নত জীবন ব্যবস্থা- রাষ্ট্রে সুশাসন প্রতিষ্ঠা তথা জবাবদিহিতামূলক রাষ্ট্র গড়ে তুলতে- ভোট ও ভাতের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে রাষ্ট্র সংস্কারের কাজ চলছে- কিন্তু রাষ্ট্রের মানুষের সংস্কার না হলে রাষ্ট্র সংস্কার টেকসই হবে না। দেশের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিসহ সংশ্লিষ্ট সব ব্যক্তির চরিত্র সংশোধন অতীব জরুরি মর্মে তথ্যাভিজ্ঞ মহল মনে করেন। সেই সঙ্গে জনগণ যাতে তাদের অধিকার এবং দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন হয় এবং সাময়িক লোভের বশবর্তী না হয়ে যোগ্য ব্যক্তিকে তাদের নেতা হিসেবে বেছে নেয়- সেই লক্ষ্যে জনগণকে যোগ্য হয়ে উঠতে হবে। আর জনগণকে সেই পর্যায়ের যোগ্য হিসেবে গড়ে তুলতে পাঠাগারের ভূমিকা অনস্বীকার্য।

পাঠাগার সমাজ তথা রাষ্ট্র উন্নয়নের বাহন। একটি জাতির মেধা- মনন- ইতিহাস- ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির ধারণ ও লালন-পালনকারী হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে পাঠাগার। শিক্ষার আলোয় আলোকিত মানুষ উন্নয়নমনষ্ক হয়। পাঠাগার শিক্ষার আলোকবর্তিকা হিসেবে কাজ করে। বই পড়ার মাধ্যমে একজন মানুষ নিজেকে পরিশুদ্ধ করতে পারে। আর এই পরশুদ্ধ মানুষ তৈরি হলে তবেই কার্যকরভাবে রাষ্ট্র সংস্কার সম্ভব। মানবিক মূল্যেবোধসম্পন্ন মানুষই রাষ্ট্র সংস্কার করতে পারে এবং সেই সংস্কার ধরে রাখতে কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারে। পাঠাগার একটি জাতির বিকাশ ও উন্নতির মাপকাঠি। পাঠাগারের মাধ্যমে মানুষের মধ্যে উন্নত চিন্তা-চেতনা গড়ে ওঠে- মানবিক মূল্যবোধ জাগ্রত হয় এবং অধিকার আদায় ও তা রক্ষার উপায় বের হয়; যা মানুষের মধ্যে সৃষ্টি করে সংহতি- সৌহার্দ্য এবং গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ। মূল্যবোধসম্পন্ন সচেতন মানুষ রাষ্ট্র সংস্কার করতে এবং সেই সংস্কার ধরে রাখতে কার্যকর ভূমিকাও পালন করতে সক্ষম হয়। আর উন্নত চরিত্র সম্বলিত সচেতন মানুষ গঠনে পাঠাগার যে অনন্য ভূমিকা পালন করে তা সর্বজন স্বীকৃত।

লেখক- সাবেক যুগ্ম পরিচালক (অব.) এনএসআই।

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সঞ্চয় করে রাখুন

জনপ্রিয় সংবাদ

রূপগঞ্জে বস্ত্র ও পাটমন্ত্রীর নির্দেশে নির্মিত চার সড়কের উদ্বোধন।।

পেকুয়ায় বেড়িবাঁধ ভেঙে লোকালয়ে প্লাবিত,২ শত পরিবার পানিবন্দী।।

নারায়ণগঞ্জ শহীদ মিনারে ‘আমাদের স্বজন আমাদের দায়িত্ব’ শীর্ষক পথ নাটক পরিবেশিত

রাষ্ট্র সংস্কারে পাঠাগার।।

আপডেট সময় : 02:06:49 pm, Monday, 9 December 2024

সমসাময়িক সময়ে বিশেষ করে ৫ আগস্ট ২০২৪ দেশের পেক্ষাপট পরিবর্তনের পর রাষ্ট্র সংস্কারের কথাটি ব্যাপকভাবে আলোচিত হচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে দেশ একটি ঐতিহাসিক মুহূর্ত পার করছে। সব জায়গা থেকেই রাষ্ট্র সংস্কারের কথা উঠছে। যখন একটি রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক কাঠামো দুর্বল হয়ে যায়- সর্বক্ষেত্রে জবাবদিহিতার বড় বেশি অভাব পরিলক্ষিত হয়- সুশাসন ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে যায়- মানবিক মূল্যবোধ খুব একটা নজরে পড়ে না- নীতি আদর্শ লোপ হয়ে যায়- রাষ্ট্রের সাংবিধানিক কাঠামো সঠিকভাবে কাজ করতে পারে না- ঠিক তখনই রাষ্ট্র মেরামত তথা রাষ্ট্র সংস্কার জরুরি হয়ে পড়ে। ছাত্র জনতার অভ্যুত্থানের প্রেক্ষাপটে বর্তমান অন্তর্র্বতী সরকারের করণীয় হিসেবে জরুরি যে বিষয়টি সামনে এসেছে তা হলো সংস্কার। ইতোমধ্যে নির্বাচন ব্যবস্থা- সংবিধান- বিচার বিভাগ- দুর্নীতি দমন- পুলিশ প্রশাসন- জনপ্রশাসনসহ গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানসমূহের সংস্কারের জন্য গঠিত কমিশন কাজ করে যাচ্ছে।

 

রাষ্ট্রযন্ত্র মেরামত তথা রাষ্ট্রের সংস্কারের কাজ চলছে। এখন কথা হচ্ছে অন্তবর্তকালীন সরকারের কাজ হচ্ছে যথাসম্ভব যৌক্তিক সময়ের মধ্যে রাষ্ট্র সংস্কার শেষে একটি সুষ্ঠু- অবাধ- বৈষম্যহীন- জবাবদিহিমূলক ব্যবস্থায় একটি সর্বজন গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা চালু করা। এক্ষেত্রে একটি বিষয় গুরুত্বের সঙ্গে লক্ষণীয় যে- সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার গঠন করে যারা ভবিষ্যতে দেশ পরিচালনা করবেন তারা হচ্ছেন রাজনীতিবিদ। আর জনসাধারণ ভোট দিয়ে তাদের প্রতিনিধি নির্বাচন করবেন। যারা ভোট দেবেন অর্থাৎ ভোটার এবং যারা নির্বাচিত হবেন অর্থাৎ রাজনীতিবিদ- তারা যদি তাদের চরিত্র না বদলান তবে সংস্কারের ফলাফল সুদূরপ্রসারি অর্থাৎ টেকসই হবে না। কোটা সংস্কার পরবর্তীতে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের প্রধান কারণ হচ্ছে রাষ্ট্রের সর্বক্ষেত্রে ন্যায্যতা প্রতিষ্ঠা করা। ন্যায়ভিত্তিক রাষ্ট্র গঠন তখনই সম্ভব যখন এ রাষ্ট্রের জনগণ সচেতন হয়- সুশিক্ষিত হয়- সর্বোপরি উত্তম চরিত্র বিশিষ্ট মানবিক মানুষ হয়।

আর এই মানবিক মানুষ গড়ে তুলতে যে প্রতিষ্ঠানটি সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখতে পারে তা হচ্ছে পাঠাগার। পাঠাগার প্রতিষ্ঠার ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট- সভ্যতা বিকাশে পাঠাগারের ভূমিকা- জ্ঞানভিত্তিক সমাজ বিনির্মাণে পাঠাগারের কার্যকারিতা- উন্নত চরিত্র গঠন থেকে শুরু করে উন্নত রাষ্ট্র গঠনে পাঠাগার কিভাবে ভূমিকা পালন করতে পারে তা পর্যালোচনা করলেই রাষ্ট্র সংস্কারে পাঠাগারের ভূমিকা বিষয়টি সুস্পষ্ট হয়ে উঠবে।

 

রাষ্ট্র সংস্কারে পাঠাগার কেন একটি বিবেচ্য বিষয় তা অনুধাবনের জন্য নিকট অতীতের আর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট তুলে ধরা দরকার। জনগণের ভোটে নয় অন্য কোন ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে অস্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় যখন কোন সরকার ক্ষমতায় আসে তখন সেই সরকার জনগণের ওপর কর্তৃত্ববাদী ও অত্যাচারী হয়ে উঠে- কারণ জনগণের কাছে তার কোন জবাবদিহিতা থাকে না। ফলে অগণতান্ত্রিকভাবে সরকার তার ক্ষমতা প্রলম্বিত করতে থাকে। সরকারের নিবর্তনমূলক আচরণ এবং জনগণের চাহিদা অনুযায়ী বিরাজমান বিরোধী দল সরকারবিরোধী কার্যকর কোন আন্দোলন গড়ে তুলতে পারে না। এমতাবস্থায় অস্বচ্ছ-অগণতান্ত্রিক উপায়ে নির্বাচিত সরকার এবং দুর্বল বিরোধী দল উভয়ের কাছেই সাধারণ জনগণ উপেক্ষিত। কারণ সরকার ও বিরোধী দল শুধুমাত্র ক্ষমতার জন্যই রাজনীতি করে। উভয়পক্ষের কেউই জনআকাক্সক্ষা অনুধাবন করে না। দুর্বৃত্তায়নের মাধ্যমে গঠিত সরকার প্রায় সময়ই জনগণের ওপর ক্ষমতা প্রয়োগে নিরঙ্কুশ ক্ষমতা রাখে। রাষ্ট্রে এ ধরনের অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা তখনই ঘটে যখন ভোটার তথা সাধারণ জনতা এবং রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যে মানবিক মূল্যবোধ কমে যায়। বিশেষ করে শাসকগোষ্টী সুশাসন- নীতিবোধ এবং ন্যায্যতা রাষ্ট্র পরিচালনার কোন ক্ষেত্রেই চালু রাখে না। একচ্ছত্র ক্ষমতা শাসকগোষ্ঠীকে স্বৈরশাসকে রূপান্তর করে। সুশিক্ষায় পিছিয়ে থাকা রাষ্ট্রসমূহে বিরোধী দলের শ্রেণী চরিত্র শাসকগোষ্ঠীর শ্রেণী চরিত্রের চেয়ে খুব বেশি উন্নত হয় না। কল্যাণ রাষ্ট্র গড়ে তুলতে দেশের রাজনৈতিক দলসমূহের সদস্যসহ দেশের নাগরিক শ্রেণীকে সুশিক্ষিত ও সচেতন করে গড়ে তোলার কোন বিকল্প নেই। আর জনগণকে সুশিক্ষিত ও সচেতন করে গড়ে তুলতে পাঠাগার মুখ্য ভূমিকা পালন করে থাকে।

গণতন্ত্রের চর্চা করতে- দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন করতে- উন্নত জীবন ব্যবস্থা- রাষ্ট্রে সুশাসন প্রতিষ্ঠা তথা জবাবদিহিতামূলক রাষ্ট্র গড়ে তুলতে- ভোট ও ভাতের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে রাষ্ট্র সংস্কারের কাজ চলছে- কিন্তু রাষ্ট্রের মানুষের সংস্কার না হলে রাষ্ট্র সংস্কার টেকসই হবে না। দেশের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিসহ সংশ্লিষ্ট সব ব্যক্তির চরিত্র সংশোধন অতীব জরুরি মর্মে তথ্যাভিজ্ঞ মহল মনে করেন। সেই সঙ্গে জনগণ যাতে তাদের অধিকার এবং দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন হয় এবং সাময়িক লোভের বশবর্তী না হয়ে যোগ্য ব্যক্তিকে তাদের নেতা হিসেবে বেছে নেয়- সেই লক্ষ্যে জনগণকে যোগ্য হয়ে উঠতে হবে। আর জনগণকে সেই পর্যায়ের যোগ্য হিসেবে গড়ে তুলতে পাঠাগারের ভূমিকা অনস্বীকার্য।

পাঠাগার সমাজ তথা রাষ্ট্র উন্নয়নের বাহন। একটি জাতির মেধা- মনন- ইতিহাস- ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির ধারণ ও লালন-পালনকারী হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে পাঠাগার। শিক্ষার আলোয় আলোকিত মানুষ উন্নয়নমনষ্ক হয়। পাঠাগার শিক্ষার আলোকবর্তিকা হিসেবে কাজ করে। বই পড়ার মাধ্যমে একজন মানুষ নিজেকে পরিশুদ্ধ করতে পারে। আর এই পরশুদ্ধ মানুষ তৈরি হলে তবেই কার্যকরভাবে রাষ্ট্র সংস্কার সম্ভব। মানবিক মূল্যেবোধসম্পন্ন মানুষই রাষ্ট্র সংস্কার করতে পারে এবং সেই সংস্কার ধরে রাখতে কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারে। পাঠাগার একটি জাতির বিকাশ ও উন্নতির মাপকাঠি। পাঠাগারের মাধ্যমে মানুষের মধ্যে উন্নত চিন্তা-চেতনা গড়ে ওঠে- মানবিক মূল্যবোধ জাগ্রত হয় এবং অধিকার আদায় ও তা রক্ষার উপায় বের হয়; যা মানুষের মধ্যে সৃষ্টি করে সংহতি- সৌহার্দ্য এবং গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ। মূল্যবোধসম্পন্ন সচেতন মানুষ রাষ্ট্র সংস্কার করতে এবং সেই সংস্কার ধরে রাখতে কার্যকর ভূমিকাও পালন করতে সক্ষম হয়। আর উন্নত চরিত্র সম্বলিত সচেতন মানুষ গঠনে পাঠাগার যে অনন্য ভূমিকা পালন করে তা সর্বজন স্বীকৃত।

লেখক- সাবেক যুগ্ম পরিচালক (অব.) এনএসআই।