মোঃ মাসুদ রানা মনি
লক্ষ্মীপুর প্রতিনিধি।।
লক্ষ্মীপুরের রামগঞ্জে ও এম এস এর আটা কিনতে এসে অনেকেই ফিরতে হচ্ছে খালি হাতে। ডিলাররা জানান বরাদ্দ অনুপাতে মানুষ বেশি হওয়ার কারণে অনেকই খালি হাতে ফিরতে হচ্ছে। গতকাল উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন ঘুরে এমন দৃশ্যই দেখা গেছে।
রামগঞ্জ উপজেলার ভাটরা ইউনিয়নের ডিলার মো. বেল্লাল হোসেনের দোকানে তিন ঘণ্টা অপেক্ষার পর খালি হাতে ফিরতে হয় ঐ এলাকার আম্বিয়া বেগম কে-৬৭-। সকাল ১০টায় লাইনে দাঁড়ানোর পর দুপুর ১টার দিকে তাঁকে জানানো হয়- দিনের বরাদ্দ চাল-গম শেষ। এতে খুব মন খারাপ নিয়ে বাড়ি ফেরেন এই বৃদ্ধ নারী।
একই অবস্থা উপজেলার অন্যান্য এলাকায়ও। বুধবার উপজেলার ভাটরা- ভাদুর- কাঞ্চনপুর- চণ্ডীপুর ইউনিয়নের বিক্রয় কেন্দ্রে গিয়ে জানা গেছে, চাল-আটা বরাদ্দ কম থাকায় বেশির ভাগ মানুষকে খালি হাতে ফিরতে হচ্ছে। ডিলারদের ভাষ্য- বরাদ্দের চার-পাঁচ গুণ বেশি মানুষ আসছেন। বাধ্য হয়ে বাড়তি লোকদের ফিরিয়ে দিতে হচ্ছে তাদের।
চণ্ডীপুরের বিক্রয় কেন্দ্রে কথা হয় শিবপুর গ্রামের রাবেয়া বেগমের সঙ্গে। তাঁর বয়স সত্তর ছুঁইছুঁই। কাপড়ে মুখ ঢেকে লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন তিনি। এ বয়সে এখানে কেন– এমন প্রশ্নে এই বৃদ্ধ নারী বলেন, আগে কখনও ভাবেননি চাল-আটার জন্য লাইনে দাঁড়াতে হবে। দ্রব্যমূল্য বাড়তে থাকায় স্বামীর আয়ে সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন। কম দামে চাল-আটা কেনা ছাড়া উপায় নেই। তারা অভাবে পড়ে বাধ্য হয়ে এখানে এসেছেন।
একই এলাকার স্বরূপা খাতুনের -৩০- স্বামী দিনমজুর। দৈনিক আয়ে সংসার চলে না। বাজার থেকে চাল-আটা কিনলে তরিতরকারি কেনা যায় না জানিয়ে স্বরূপা জানান- ছেলেমেয়েদের মাসে এক দিনও মাছ খাওয়াতে পারি না। মাংস তো স্বপ্নের ব্যাপার। এখান থেকে কম দামে চাল-আটা কেনার সুযোগ না পেলে তাদের আরও বেশি কষ্টে থাকতে হতো। তবে মাঝেমধ্যেই তাঁকে খালি হাতে ফিরতে হয়।
উপজেলা খাদ্য অধিদপ্তর সূত্র জানায়- উপজেলায় পাঁচজন ওএমএস ডিলারের মাধ্যমে দিনে ৫ টন চাল ও ৫ টন আটা বিক্রি হচ্ছে। এর মধ্যে পৌর শহরে একটি ও চার ইউনিয়নে চারটি বিক্রয় কেন্দ্র রয়েছে। ডিলারপিছু দিনে ১ টন চাল ও ১ টন আটা বরাদ্দ হয়। ক্রেতাপিছু ৫ কেজি করে আটা ও ৫ কেজি চাল বিক্রি করা যায়। প্রতি কেজি চালের দাম ৩০ টাকা ও আটার দাম ২৪ টাকা। সপ্তাহে পাঁচ দিন ওএমএস দোকানে বিক্রি হয়। সকাল ৯টায় শুরু হলেও ব্যাগ হাতে ভোর থেকেই লাইন ধরেন মানুষ।
সাম্প্রতিক সময়ে দোকানে ভিড় কয়েক গুণ বেড়েছে বলে জানান ভাটরা ইউনিয়নের ওএমএস ডিলার মো. বেল্লাল হোসেন। তিনি বলেন- বরাদ্দ অনুযায়ী দিনে ২০০ জনের কাছে চাল-আটা বিক্রি করতে পারেন। কিন্তু লাইনে থাকেন চার-পাঁচ গুণ বেশি মানুষ। এ কারণে অধিকাংশ মানুষ খালি হাতে ফিরে যান। তারা বরাদ্দ বাড়ানোর আবেদন করলেও খাদ্য বিভাগ ব্যবস্থা নিচ্ছে না।
চণ্ডীপুর ইউনিয়নের ডিলার মো. নূরুল আমিনের ভাষ্য- পাশের ইছাপুর ইউনিয়নের রাঘবপুর, সোন্দড়া; লামচর ইউনিয়নের পানপাড়া- দাসপাড়া আর তাহিরপুর থেকেও লোকজন আসেন তাঁর দোকানে। প্রতি ইউনিয়নে বিক্রয় কেন্দ্র থাকলে সাধারণ মানুষের উপকার হতো বলে মনে করেন তিনি।
ওএমএস দোকানগুলোতে মানুষের ভিড় অনেক বেড়েছে– এ তথ্য স্বীকার করেন রামগঞ্জ উপজেলা খাদ্য কর্মকর্তা মো. আফছার উদ্দিন। তিনি বলেন, বরাদ্দ অনুপাতে মানুষের সংখ্যা অনেক বেশি।
তিনি আরো জানান,বরাদ্দ বাড়াতে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করবেন।