
মো: আব্দুর রহিম, শরীয়তপুর প্রতিনিধি:
শরীয়তপুরের জাজিরায় অপরাধ দমনের কঠোর অবস্থান আর নির্ভীক ভূমিকার জন্য পরিচিত অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোহাম্মদ মাইনুল ইসলামকে এক ডিসেম্বর হঠাৎ করেই বদলি করা হয়েছে চট্টগ্রাম রেঞ্জে। তার বদলির খবর ছড়িয়ে পড়তেই স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের মধ্যে স্বস্তির বাতাস বইলেও সাধারণ মানুষ, ভুক্তভোগী ও রাজনৈতিক বিরোধীরা এটিকে দেখছেন “অপরাধীদের জন্য নতুন সুযোগ” হিসেবে।
দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগপন্থী সন্ত্রাসী চক্রের শক্ত ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত জাজিরা উপজেলা। প্রশাসনের প্রভাবশালী অংশ দীর্ঘ সময় তাদের নিয়ন্ত্রণে ছিল বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।
পাঁচ আগস্টের পরিবর্তনের পরও সেই চক্র দাপট বজায় রাখলেও ওসি মাইনুল থানার দায়িত্ব নিতেই পরিস্থিতির চিত্র পাল্টাতে শুরু করে।
দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই তিনি ধারাবাহিকভাবে হাত দিয়েছেন ক্ষমতাসীন দলের সেই অপ্রতিরোধ্য দলীয় সন্ত্রাসীদের ওপর। কয়েক মাসের মধ্যেই গ্রেপ্তার করেছেন আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের বিভিন্ন পদমর্যাদার ৪৭৫ জন নেতাকর্মী—যা জেলায় নতুন রেকর্ড। একই সাথে কিশোর গ্যাং, মাদক, নারী ও শিশু নির্যাতন মামলায়ও করেছেন অসংখ্য গ্রেপ্তার। অপরাধী যেই হোক—রাজনৈতিক পরিচয়ে ছাড় দেননি কাউকে।
তার এই ভূমিকার স্বীকৃতি হিসেবে গত ২৪ আগস্ট ঢাকা রেঞ্জের ৯৮টি থানার ওসিদের মধ্যে তাকে দেওয়া হয় ‘শ্রেষ্ঠ অফিসার ইনচার্জ’-এর সম্মাননা।
কিন্তু হঠাৎ করে তার বদলির পর এলাকায় মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। সাধারণ মানুষের মধ্যে শঙ্কা—ওসি মাইনুল চলে গেলে পুরনো সন্ত্রাসী চক্র আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারে।
অন্যদিকে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা প্রকাশ্যে স্বস্তি প্রকাশ করছেন। অনেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লিখছেন “আলহামদুলিল্লাহ”—যেন দীর্ঘদিনের চাপ কমেছে তাদের।
বিএনপি, জামায়াতসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলের দায়িত্বশীল নেতারাও বলছেন—ওসি মাইনুল রাজনৈতিক প্রভাবের উর্ধ্বে উঠে কাজ করেছেন, তাই তার বদলি দুঃখজনক।
এ বিষয়ে ওসি মাইনুল ইসলাম প্রতিক্রিয়ায় বলেন,
“অপরাধী আমার কাছে শুধু অপরাধী—তার অন্য কোনো পরিচয়ের মূল্য নেই। কে আমাকে পছন্দ করলো বা অপছন্দ করলো সেটি কখনোই আমার কাজে প্রভাব ফেলবে না। দায়িত্বে যতদিন আছি, অপরাধ দমনে কাজই করে যাবো।”
অল্প সময়েই অপরাধীদের আতঙ্কে পরিণত হওয়া এই ওসির স্থানান্তর জাজিরার অপরাধ চিত্রে কী প্রভাব ফেলবে—এখন সেটিই দেখার অপেক্ষা।
























