
বিশেষ প্রতিনিধি:
দেশের দক্ষিণাঞ্চল কৃষি ও মৎস্যসম্পদে সমৃদ্ধ। পাশাপাশি বাণিজ্যিক গতিশীলতা বাড়াতে বঙ্গোপসাগরের তীরে নির্মাণ করা হয় দেশের তৃতীয় সমুদ্রবন্দর—পায়রা বন্দর। বন্দর থেকে পণ্য পরিবহন সহজ করতে সংযোগ সড়ক নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হলেও প্রকল্পের শেষ পর্যায়ে এসে অবকাঠামো উন্নয়ন কাজ ধীরগতিতে চলছে।
ভুক্তভোগীদের দাবি, সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের (সওজ) গাফিলতি ও উদাসীনতার কারণেই অতি গুরুত্বপূর্ণ এ প্রকল্পে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, পায়রা বন্দরের চাল লেন সড়ক ধরে এগোতেই কাজের অগ্রগতিতে স্থবিরতা চোখে পড়ে। স্কেবেটর, রোলার ও ঢালাই মেশিন বন্ধ পড়ে আছে, হাতে গোনা কয়েকজন শ্রমিক মাটি কাটার কাজ করছেন। প্রকল্পের এক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করলে তিনি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগের পরামর্শ দিয়ে স্থান ত্যাগ করেন।
নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, প্রশাসনিক জটিলতা ও Variation Order (পরিবর্তনের আদেশ) অনুমোদনে বিলম্বের কারণে প্রকল্পের অগ্রগতি ব্যাহত হচ্ছে। প্রায় ৬৮ কোটি টাকারও বেশি বিল ঝুলে থাকায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ধীরগতিতে কাজ চালাচ্ছে।
প্রকল্প সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, প্রকল্পটির মূল দায়িত্বে রয়েছে পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষ। নির্মাণ কাজ বাস্তবায়নের জন্য এটিকে একটি ডিপোজিট প্রকল্প হিসেবে সওজের বরিশাল জোনের মাধ্যমে টেন্ডার আহ্বান ও চুক্তি সম্পন্ন করা হয়। পরবর্তীতে নকশা, এলাইনমেন্ট ও কিছু ডিজাইন পরিবর্তনের কারণে মূল চুক্তির কিছু কাজ ও উপকরণের ধরনে পরিবর্তন আসে। এতে কয়েকটি নন-টেন্ডার আইটেম—যেমন ড্রেনেজ লেয়ার, জিও-টেক্সটাইল ও উচ্চমানের কংক্রিট—সংযোজন করা হয়, যার জন্য Variation Order অনুমোদন জরুরি হয়ে পড়ে।
ইতোমধ্যে প্রকল্পের প্রায় ৭৫ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। কিন্তু Variation Order অনুমোদন না হওয়ায় ঠিকাদার সংস্থা অনেক সম্পন্ন কাজের বিল এখনও পায়নি।
উল্লেখ্য, ২০২১ সালের ২৬ আগস্ট স্পেকট্রা ইঞ্জিনিয়ার্স লিমিটেডের (Spectra Engineers Ltd.) সঙ্গে প্রায় ৬৫৫ কোটি টাকার এ প্রকল্পের চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। প্রকল্পের আওতায় ৬.৩৫ কিলোমিটার দীর্ঘ ছয় লেন সড়ক, ৭টি পিসি/আরসিসি ব্রিজ, ৭টি কালভার্ট, টোল প্লাজা এবং বৈদ্যুতিক কাজ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। তবে নকশা ও ডিজাইন পরিবর্তনের পরও পরিবর্তনের আদেশ ও মূল্য সমন্বয় না হওয়ায় প্রকল্পে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে।
এ বিষয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রকল্প ব্যবস্থাপক মো. মামুন দৈনিক আজকের বাংলা-কে বলেন,
“মোটা অঙ্কের বিল না পাওয়ায় অর্থসঙ্কট দেখা দিয়েছে। প্রকল্পের ডিপিপিতে Price Adjustment (মূল্য সমন্বয়) এর বিধান থাকা সত্ত্বেও চুক্তির সময় তা কার্যকর করা হয়নি। ফলে জ্বালানি তেলসহ অন্যান্য নির্মাণসামগ্রীর মূল্য ব্যাপকভাবে (প্রতি লিটার ৬৫ টাকা থেকে বেড়ে ১০৫ টাকা পর্যন্ত) বৃদ্ধি পেয়েছে। এতে আমরা আর্থিক সংকটে পড়েছি, যার প্রভাব পড়েছে কাজের গতিতে।”
তিনি আরও বলেন, “মূল্য সমন্বয়ের অনুমোদন ও বকেয়া বিল দ্রুত পরিশোধ হলে কাজের গতি বাড়ানো সম্ভব হবে। এতে নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই পায়রা বন্দর কর্তৃপক্ষের ব্যবহারের জন্য সড়কটি হস্তান্তর করা যাবে।”
স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানান, আগামী বছর পায়রা বন্দরের প্রথম জেটিতে পণ্য খালাস কার্যক্রম শুরু হওয়ার কথা। এর আগে সংযোগ সড়ক সম্পন্ন না হলে বন্দরের কার্যক্রমে বড় বাধা তৈরি হবে। দেশের বৃহত্তর অর্থনৈতিক স্বার্থে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দ্রুত হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন তারা।
এ বিষয়ে সওজের বরিশাল জোনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মো. রেজাউল করিমের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।















