Dhaka , Saturday, 26 July 2025
নিবন্ধন নাম্বারঃ ১১০, সিরিয়াল নাম্বারঃ ১৫৪, কোড নাম্বারঃ ৯২
শিরোনাম ::
এলএলবি ফাইনালে উত্তীর্ণ হয়ে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলেন কক্সবাজার আইনজীবী সহকারী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক শামসুল আলম বিএন”পি পালিয়ে যাওয়ার দল নয়- রক্ত ঝরাইছি তবুও হাসিনার সাথে আপোষ করি নাই “শহিদুল ইসলাম বাবুল। মধুপুরে  উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষার্থীদের মাঝে এসইডিপি পুরস্কার বিতরণ জাতির প্রত্যেকটি প্রয়োজন ও দূর্যোগ মোকাবিলায় শহীদ জিয়া সবসময় সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছে ———– কাজী মনিরুজ্জামান মনির রূপগঞ্জে এলাকাবাসীর চাপে মুচলেকা দিয়ে মাদক ব্যবসা ছেড়ে দেওয়ার অঙ্গীকার ৭ মাদক ব্যবসায়ীর ‎মির্জাপুরে ছেলের হাতে মা খুন; আটক ছেলে ইউনুস মন্ডল বেতাগীতে আগুনে পুড়ে তিন বসতঘর ছাই-দিলেন অর্থিক অনুধান চরভদ্রাসনে জামায়েত ইসলামের সরোওয়ার হোসেনের গণসংযোগ। রূপগঞ্জে দুই মাদক ব্যবসায়ীকে গণধোলাই দিয়ে পুলিশে সোপর্দ্য রামগঞ্জের পাউবোর  অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ দেশসেরার স্বীকৃতি গ্রহণ করলেন চসিক মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন  মাইলস্টোন ট্র‍্যাজেডিতে নিহতদের আত্মার মাগফেরাত কামনায় দুর্গাপুরে দোয়া মাহফিল নোয়াখালীতে পুকুরের পানিতে ভাসছিল নারীর মরদেহ আত্ম-নিয়ন্ত্রণ: ক্ষণিকের ভুলে দীর্ঘস্থায়ী আক্ষেপ ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে থাকা দলগুলো এখন পারস্পরিক দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েছে মাদক কারবারীকে যাবজ্জীবন: পুলিশের কঠোর অবস্থানের প্রমাণ কালিয়াকৈরে বোয়ালী বিএনপির হিন্দু সমর্থকদের আলোচনা সভা ও মিছিল অনুষ্ঠিত  কানাডা সফর শেষে চট্টগ্রাম ফিরলেন চসিক মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন মধুপুরে যুবককে ছুরিকাঘাতে গুরুতর আহত- মুমূর্ষু অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি পরিবার কল্যাণ পরিদর্শিকা সমিতির নির্বাচন সম্পন্ন: সভাপতি লিজা, সম্পাদক তাসলিমা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত রূপগঞ্জে ডাকাতির প্রস্তুতি কালে অস্ত্রসহ দুই ডাকাত গ্রেফতার নারায়ণগঞ্জর রূপগঞ্জে রাসায়নিক পদার্থ বিস্ফোরণে তিনজন দগ্ধ হয়েছেন। তারা হলেন- মো. বেলাল (৩৫), মো. রোমান (২০) ও মো. রাব্বানী (৩৫)। রামগঞ্জের পাউবোর  অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ রামগঞ্জে জিপিএ-৫ প্রাপ্ত কৃতি শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা  মাইলস্টোন  কলেজের  নিহত ও  আহতদের স্মরণে রামগঞ্জে দোয়া অনুষ্ঠিত   মাহেরিন চৌধুরীর সমাধিতে বিমান বাহিনী ও জেলা প্রশাসনের শ্রদ্ধা  শিক্ষিকা মাহেরীন চৌধুরীর সমাধিতে বিমান বাহিনী ও ডিসি-এসপির শ্রদ্ধা  সিলেটে বিজিবি গত এক মাসে ৪৬ কোটি ও ২৪ ঘণ্টায় ৪ কেটি টাকার চোরাচালান জব্দ করেছে  নগরীর পাঁচলাইশ থানার খুনসহ ডাকাতি মামলার ওয়ারেন্টভুক্ত পলাতক আসামী গ্রেফতার  নামেই ২৫০ শয্যা, জনবল ১০০ শয্যারও কম: চিকিৎসক সংকটে ধুঁকছে লালমনিরহাট সদর হাসপাতাল

আত্ম-নিয়ন্ত্রণ: ক্ষণিকের ভুলে দীর্ঘস্থায়ী আক্ষেপ

  • Reporter Name
  • আপডেট সময় : 07:54:51 pm, Friday, 25 July 2025
  • 102 বার পড়া হয়েছে

তৌহিদুল ইসলাম চঞ্চল,

কলামিস্ট,

মানবসম্পদ–শ্রম ও মানবাধিকার বিশেষজ্ঞ:

মহাসড়কে চলতে থাকা একটি গাড়ি যখন নিয়ন্ত্রণ হারায়, তখন তার পরিণতি হয় ভয়াবহ দুর্ঘটনা। ঠিক তেমনি, মানুষ যখন নিজের আবেগের ওপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে, তখন তার জীবনেও ঘটে যায় ছোট-বড় নানা অঘটন। বন্দুক থেকে বেরিয়ে যাওয়া গুলি যেমন ফিরিয়ে আনা যায় না, তেমনি ক্রোধ বা ক্ষোভের বশে করে ফেলা কোনো কাজের পরিণতিও আর নিজের হাতে থাকে না। এর ফলে কখনও সমাধান করা গেলেও, বেশিরভাগ সময়েই তা দীর্ঘস্থায়ী মানসিক যন্ত্রণার কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

প্রতিটি মানুষের ভেতরেই স্নেহ, মায়া, ভালোবাসার মতো মানবিক গুণাবলী রয়েছে। কিন্তু তার পাশাপাশি ষড়রিপু—কাম, ক্রোধ, লোভ, মোহ, মদ ও মাৎসর্য—এই ছয়টি শত্রুও সমানভাবে ক্রিয়াশীল। এই রিপুগুলো, বিশেষ করে ক্রোধ, যখন আমাদের विवेक বা বুদ্ধিমত্তাকে গ্রাস করে, তখনই আমরা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাই।

একটি সাধারণ ঘটনা, একটি বড় শিক্ষা

পারভেজ সাহেবের ঘটনাটি এর একটি सटीक উদাহরণ। তিনি পরিবার নিয়ে ঢাকা থেকে গ্রামের বাড়ি যাচ্ছিলেন। হঠাৎ গাড়ির সামনে এক ছেলে এসে পড়লে তিনি সজোরে ব্রেক করেন। পেছনের একটি রিকশা তার গাড়িতে হালকা ধাক্কা দেয়, যাতে গাড়ির ইন্ডিকেটর লাইটটি ভেঙে যায়। পরিবারের সামনে নিজের ‘কর্তৃত্ব’ জাহির করতে তিনি গাড়ি থেকে নেমে রিকশাচালকের গালে সপাটে এক চড় বসিয়ে দেন। কিন্তু এরপর যা ঘটলো, তার জন্য তিনি প্রস্তুত ছিলেন না। নেশাগ্রস্ত রিকশাচালকটিও পাল্টা এক চড় কষে দেয় পারভেজ সাহেবের গালে। পরিবারের সদস্যদের সামনে এই অপ্রত্যাশিত ঘটনায় তার সম্মান ও লজ্জা ধুলোয় মিশে যায়। সামান্য ক্রোধ সংবরণ করতে না পারায় তাকে অকারণে অপ্রস্তুত হতে হলো, হারাতে হলো নিজের সম্মান।

কেন আমরা নিয়ন্ত্রণ হারাই?

মানুষ সাধারণত রাগান্বিত হয়েই নিজের ওপর নিয়ন্ত্রণ হারায়। অপ্রীতিকর পরিস্থিতি, অপূর্ণ আশা, কিংবা ইচ্ছার বিরুদ্ধে কোনো কাজ করতে বাধ্য হলে আমাদের মধ্যে ক্ষোভ জন্মায়। এই ক্ষোভের উৎস হতে পারে শত শত কারণ:

  • পারিবারিক জীবনে: স্ত্রীর সঙ্গে মতের অমিল বা সন্তানের আশানুরূপ ফল না করা।
  • কর্মক্ষেত্রে: বসের ভর্ৎসনা বা সহকর্মীর সাফল্যে ঈর্ষা।
  • সামাজিক জীবনে: বন্ধুর এড়িয়ে যাওয়া, দাওয়াতে অপ্রীতিকর প্রশ্ন, বাসে কন্ডাক্টরের সাথে ভাড়া নিয়ে বচসা।
  • ব্যক্তিগত হতাশা: হোটেলে চায়ের মান পছন্দ না হওয়া থেকে শুরু করে নিজের কোনো বদভ্যাস—এমন হাজারো ছোট-বড় কারণে আমাদের মন বিষিয়ে ওঠে এবং আমরা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাই।

এই নিয়ন্ত্রৃহীন আবেগগুলো জীবনকে দুর্বিষহ করে তোলে। তাই নিজেকে নিয়ন্ত্রণের কৌশল জানা অত্যন্ত জরুরি।

আত্ম-নিয়ন্ত্রণের পথে কিছু সহজ কৌশল

কিছু কৌশল অবলম্বন করলে কঠিন মুহূর্তেও আবেগ নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব।

১. নিজেকে জানুন ও চিহ্নিত করুন: প্রথমেই একটি তালিকা তৈরি করুন—কোন কোন পরিস্থিতিতে এবং কী কী কারণে আপনি নিজের ওপর নিয়ন্ত্রণ হারান। এটি আপনাকে আপনার দুর্বল মুহূর্তগুলো চিহ্নিত করতে সাহায্য করবে। যখন আপনি বুঝতে পারবেন ঠিক কোন আচরণটি নিয়ন্ত্রণ করতে হবে, তখন সমাধান খুঁজে পাওয়া সহজ হবে।

২. কারণগুলো বিশ্লেষণ করুন: যেসব কারণে আপনি উত্তেজিত হন, সেগুলো নিয়ে গভীরভাবে ভাবুন। যেমন:

  • অতিরিক্ত খরচ: আপনি কি বাজারে গেলে প্রয়োজনের অতিরিক্ত জিনিস কেনেন? তাহলে বাজারে যাওয়ার আগে একটি তালিকা করুন এবং দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হন যে তালিকার বাইরে কিছুই কিনবেন না।
  • বদভ্যাস ত্যাগ: ধূমপানের মতো বদভ্যাস ছাড়তে চাইলে এর ক্ষতিকর দিকগুলো (শারীরিক, অর্থনৈতিক) নিয়ে ভাবুন। এই অভ্যাস আপনার জীবনের জন্য কতটা জরুরি, তা নিজেকে প্রশ্ন করুন।

৩. বিকল্প আচরণের অনুশীলন করুন: যে পরিস্থিতিতে আপনি সাধারণত রেগে যান, সেখানে কীভাবে শান্ত থাকা যায় তার একটি তালিকা তৈরি করুন। প্রয়োজনে সফল মানুষদের পর্যবেক্ষণ করুন বা এ বিষয়ে পড়ুন। যেমনটি করেছিলেন সেই ব্যক্তি, যিনি প্রতিদিন ৫০০ টাকার কফি খেতেন। একটি সিনেমার দৃশ্য দেখে তার মধ্যে আত্মসমালোচনা জন্মায় এবং তিনি সেই অভ্যাস ত্যাগ করেন। এখন তিনি প্রতিদিন কফি শপের সামনে দাঁড়িয়ে ভাবেন, “কফির দাম ৫০০ টাকা, মাসে ১৫ হাজার টাকা!”—এই একটি ভাবনাই তাকে নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে।

৪. সম্পর্ক নিয়ে নতুন করে ভাবুন: দাম্পত্য জীবনে খাবার নিয়ে স্ত্রীকে রোজ দু’কথা শোনানো যদি আপনার অভ্যাসে পরিণত হয়, তবে থামুন। নিজেকে প্রশ্ন করুন:

  • “যার সাথে এমন করছি,তার সাথে আমার সম্পর্ক কী?”
  • “আমার জীবনে তার প্রয়োজন কতটা?”
  • “আসলেই কি রান্না খারাপ,নাকি এটা আমার বদভ্যাসে পরিণত হয়েছে?”

সমস্যাটি খুঁজে বের করে সমাধান চিন্তা করুন এবং নতুন করে সম্পর্ক শুরু করুন।

শেষ কথা

আত্ম-নিয়ন্ত্রণ একটি শক্তি। যে ব্যক্তি নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন, তিনি কখনও ক্ষতিগ্রস্ত হন না, বরং সবদিক থেকে লাভবান হন। আত্ম-নিয়ন্ত্রণে দাম্পত্য জীবন সুন্দর হয়, পরিবারে শান্তি বজায় থাকে এবং সন্তান একটি সুস্থ পরিবেশে বেড়ে ওঠার শিক্ষা পায়। এর ইতিবাচক প্রভাব ব্যক্তিজীবন ছাড়িয়ে সমাজ ও রাষ্ট্রেও পড়ে। ক্ষণিকের আবেগের কাছে বন্দী না হয়ে, আসুন আমরা আত্ম-নিয়ন্ত্রণের সহজ পাঠগুলো অনুশীলন করি।

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সঞ্চয় করে রাখুন

জনপ্রিয় সংবাদ

রূপগঞ্জে বস্ত্র ও পাটমন্ত্রীর নির্দেশে নির্মিত চার সড়কের উদ্বোধন।।

পেকুয়ায় বেড়িবাঁধ ভেঙে লোকালয়ে প্লাবিত,২ শত পরিবার পানিবন্দী।।

এলএলবি ফাইনালে উত্তীর্ণ হয়ে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলেন কক্সবাজার আইনজীবী সহকারী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক শামসুল আলম

আত্ম-নিয়ন্ত্রণ: ক্ষণিকের ভুলে দীর্ঘস্থায়ী আক্ষেপ

আপডেট সময় : 07:54:51 pm, Friday, 25 July 2025

তৌহিদুল ইসলাম চঞ্চল,

কলামিস্ট,

মানবসম্পদ–শ্রম ও মানবাধিকার বিশেষজ্ঞ:

মহাসড়কে চলতে থাকা একটি গাড়ি যখন নিয়ন্ত্রণ হারায়, তখন তার পরিণতি হয় ভয়াবহ দুর্ঘটনা। ঠিক তেমনি, মানুষ যখন নিজের আবেগের ওপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলে, তখন তার জীবনেও ঘটে যায় ছোট-বড় নানা অঘটন। বন্দুক থেকে বেরিয়ে যাওয়া গুলি যেমন ফিরিয়ে আনা যায় না, তেমনি ক্রোধ বা ক্ষোভের বশে করে ফেলা কোনো কাজের পরিণতিও আর নিজের হাতে থাকে না। এর ফলে কখনও সমাধান করা গেলেও, বেশিরভাগ সময়েই তা দীর্ঘস্থায়ী মানসিক যন্ত্রণার কারণ হয়ে দাঁড়ায়।

প্রতিটি মানুষের ভেতরেই স্নেহ, মায়া, ভালোবাসার মতো মানবিক গুণাবলী রয়েছে। কিন্তু তার পাশাপাশি ষড়রিপু—কাম, ক্রোধ, লোভ, মোহ, মদ ও মাৎসর্য—এই ছয়টি শত্রুও সমানভাবে ক্রিয়াশীল। এই রিপুগুলো, বিশেষ করে ক্রোধ, যখন আমাদের विवेक বা বুদ্ধিমত্তাকে গ্রাস করে, তখনই আমরা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাই।

একটি সাধারণ ঘটনা, একটি বড় শিক্ষা

পারভেজ সাহেবের ঘটনাটি এর একটি सटीक উদাহরণ। তিনি পরিবার নিয়ে ঢাকা থেকে গ্রামের বাড়ি যাচ্ছিলেন। হঠাৎ গাড়ির সামনে এক ছেলে এসে পড়লে তিনি সজোরে ব্রেক করেন। পেছনের একটি রিকশা তার গাড়িতে হালকা ধাক্কা দেয়, যাতে গাড়ির ইন্ডিকেটর লাইটটি ভেঙে যায়। পরিবারের সামনে নিজের ‘কর্তৃত্ব’ জাহির করতে তিনি গাড়ি থেকে নেমে রিকশাচালকের গালে সপাটে এক চড় বসিয়ে দেন। কিন্তু এরপর যা ঘটলো, তার জন্য তিনি প্রস্তুত ছিলেন না। নেশাগ্রস্ত রিকশাচালকটিও পাল্টা এক চড় কষে দেয় পারভেজ সাহেবের গালে। পরিবারের সদস্যদের সামনে এই অপ্রত্যাশিত ঘটনায় তার সম্মান ও লজ্জা ধুলোয় মিশে যায়। সামান্য ক্রোধ সংবরণ করতে না পারায় তাকে অকারণে অপ্রস্তুত হতে হলো, হারাতে হলো নিজের সম্মান।

কেন আমরা নিয়ন্ত্রণ হারাই?

মানুষ সাধারণত রাগান্বিত হয়েই নিজের ওপর নিয়ন্ত্রণ হারায়। অপ্রীতিকর পরিস্থিতি, অপূর্ণ আশা, কিংবা ইচ্ছার বিরুদ্ধে কোনো কাজ করতে বাধ্য হলে আমাদের মধ্যে ক্ষোভ জন্মায়। এই ক্ষোভের উৎস হতে পারে শত শত কারণ:

  • পারিবারিক জীবনে: স্ত্রীর সঙ্গে মতের অমিল বা সন্তানের আশানুরূপ ফল না করা।
  • কর্মক্ষেত্রে: বসের ভর্ৎসনা বা সহকর্মীর সাফল্যে ঈর্ষা।
  • সামাজিক জীবনে: বন্ধুর এড়িয়ে যাওয়া, দাওয়াতে অপ্রীতিকর প্রশ্ন, বাসে কন্ডাক্টরের সাথে ভাড়া নিয়ে বচসা।
  • ব্যক্তিগত হতাশা: হোটেলে চায়ের মান পছন্দ না হওয়া থেকে শুরু করে নিজের কোনো বদভ্যাস—এমন হাজারো ছোট-বড় কারণে আমাদের মন বিষিয়ে ওঠে এবং আমরা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাই।

এই নিয়ন্ত্রৃহীন আবেগগুলো জীবনকে দুর্বিষহ করে তোলে। তাই নিজেকে নিয়ন্ত্রণের কৌশল জানা অত্যন্ত জরুরি।

আত্ম-নিয়ন্ত্রণের পথে কিছু সহজ কৌশল

কিছু কৌশল অবলম্বন করলে কঠিন মুহূর্তেও আবেগ নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব।

১. নিজেকে জানুন ও চিহ্নিত করুন: প্রথমেই একটি তালিকা তৈরি করুন—কোন কোন পরিস্থিতিতে এবং কী কী কারণে আপনি নিজের ওপর নিয়ন্ত্রণ হারান। এটি আপনাকে আপনার দুর্বল মুহূর্তগুলো চিহ্নিত করতে সাহায্য করবে। যখন আপনি বুঝতে পারবেন ঠিক কোন আচরণটি নিয়ন্ত্রণ করতে হবে, তখন সমাধান খুঁজে পাওয়া সহজ হবে।

২. কারণগুলো বিশ্লেষণ করুন: যেসব কারণে আপনি উত্তেজিত হন, সেগুলো নিয়ে গভীরভাবে ভাবুন। যেমন:

  • অতিরিক্ত খরচ: আপনি কি বাজারে গেলে প্রয়োজনের অতিরিক্ত জিনিস কেনেন? তাহলে বাজারে যাওয়ার আগে একটি তালিকা করুন এবং দৃঢ়প্রতিজ্ঞ হন যে তালিকার বাইরে কিছুই কিনবেন না।
  • বদভ্যাস ত্যাগ: ধূমপানের মতো বদভ্যাস ছাড়তে চাইলে এর ক্ষতিকর দিকগুলো (শারীরিক, অর্থনৈতিক) নিয়ে ভাবুন। এই অভ্যাস আপনার জীবনের জন্য কতটা জরুরি, তা নিজেকে প্রশ্ন করুন।

৩. বিকল্প আচরণের অনুশীলন করুন: যে পরিস্থিতিতে আপনি সাধারণত রেগে যান, সেখানে কীভাবে শান্ত থাকা যায় তার একটি তালিকা তৈরি করুন। প্রয়োজনে সফল মানুষদের পর্যবেক্ষণ করুন বা এ বিষয়ে পড়ুন। যেমনটি করেছিলেন সেই ব্যক্তি, যিনি প্রতিদিন ৫০০ টাকার কফি খেতেন। একটি সিনেমার দৃশ্য দেখে তার মধ্যে আত্মসমালোচনা জন্মায় এবং তিনি সেই অভ্যাস ত্যাগ করেন। এখন তিনি প্রতিদিন কফি শপের সামনে দাঁড়িয়ে ভাবেন, “কফির দাম ৫০০ টাকা, মাসে ১৫ হাজার টাকা!”—এই একটি ভাবনাই তাকে নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে।

৪. সম্পর্ক নিয়ে নতুন করে ভাবুন: দাম্পত্য জীবনে খাবার নিয়ে স্ত্রীকে রোজ দু’কথা শোনানো যদি আপনার অভ্যাসে পরিণত হয়, তবে থামুন। নিজেকে প্রশ্ন করুন:

  • “যার সাথে এমন করছি,তার সাথে আমার সম্পর্ক কী?”
  • “আমার জীবনে তার প্রয়োজন কতটা?”
  • “আসলেই কি রান্না খারাপ,নাকি এটা আমার বদভ্যাসে পরিণত হয়েছে?”

সমস্যাটি খুঁজে বের করে সমাধান চিন্তা করুন এবং নতুন করে সম্পর্ক শুরু করুন।

শেষ কথা

আত্ম-নিয়ন্ত্রণ একটি শক্তি। যে ব্যক্তি নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন, তিনি কখনও ক্ষতিগ্রস্ত হন না, বরং সবদিক থেকে লাভবান হন। আত্ম-নিয়ন্ত্রণে দাম্পত্য জীবন সুন্দর হয়, পরিবারে শান্তি বজায় থাকে এবং সন্তান একটি সুস্থ পরিবেশে বেড়ে ওঠার শিক্ষা পায়। এর ইতিবাচক প্রভাব ব্যক্তিজীবন ছাড়িয়ে সমাজ ও রাষ্ট্রেও পড়ে। ক্ষণিকের আবেগের কাছে বন্দী না হয়ে, আসুন আমরা আত্ম-নিয়ন্ত্রণের সহজ পাঠগুলো অনুশীলন করি।