হোসাইন রুবেল ভোলা।
জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ডের অর্থায়নে চরফ্যাশন উপজেলার মেঘনা ও বঙ্গোপসাগরের কোল ঘেঁষে অবস্থিত বিচ্ছিন্ন দ্বিপ কুকরি-মুকরি ইউনিয়নে চলছে ইকোপার্ক নির্মানের কাজ। জীববৈচিত্র সংরক্ষণ ও জলবায়ু পরিবর্তণের বিরুপ প্রভাব নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে ৪ কোটি ৯৭ লাখ টাকা ব্যয়ে প্রকল্পটির ৮০ ভাগ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। ২০১৮ সালের জানুয়ারি মাসের ২৫ তারিখ এই ইকোপার্কের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। চরফ্যাশন উপজেলা সদর থেকে প্রায় ৪০ কিলোমিটার দক্ষিণে ২০ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের ম্যানগ্রোভ বনাঞ্চল নিয়ে গঠিত এ দ্বিপ ইউনিয়ন। মহান স্বাধীনতার স্থপতি বাঙালী জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৩ সালের ডিসেম্বরের ১৩ তারিখ এ দ্বিপে সফরে আসেন। এসময় কুকরি-মুকরির নান্দনিক সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে দ্বীপটির বাসিন্দাদের সুরক্ষায় বেড়িবাঁধ ও বিভিন্ন অবকাঠামোগত উন্নয়নের আগ্রহ প্রকাশ করেন তিনি। বঙ্গবন্ধুর সেই স্বপ্নের পর্যটন কেন্দ্রের সুদূরপ্রসারী চিন্তা ও ধারাবাহিকতার প্রতিফলন এই কুকরি-মুকরি ইকোপার্ক যা আজ বাস্তবায়িত হচ্ছে। জেলা বন বিভাগ সূত্রে জানা যায়,জলবায়ু পরিবর্তনে নেতিবাচক প্রভাব নিয়ন্ত্রণে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে বন অধিদপ্তর ২০১৭ সালে কুকরি-মুকরি ইকোপার্ক স্থাপন প্রকল্পটি গ্রহণ করে। নান্দনিক সৌন্দর্যে বনায়ন সৃষ্টির মধ্য দিয়ে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় সাজানো হয়েছে কুকরি-মুকরিকে। এছাড়াও ইকোটুরিজম এর মাধ্যমে দ্বীপের পরিবেশ উন্নয়ন ও প্রতিবেশ সংরক্ষন , দেশের বন ও পরিবেশ সংশ্লিষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী ও শিক্ষক এবং গবেষকদের গবেষনার সুযোগ সৃষ্টি,বন্যপ্রাণীর আবাসস্থল ও প্রজনন উন্নয়ন এবং উদ্ভিদসহ বিভিন্ন পাকপাখালীর অভয়ারন্য গড়ে তোলা, দেশি বিদেশি পর্যটকদের আগমনে প্রান্তিক দরিদ্র জনগোষ্টির জীবন মান ও আর্থ সামাজিক উন্নয়নে দারিদ্র বিমোচনের লক্ষ্যে কুকরি-মুকরির এ ইকোপার্ক প্রকল্পের কাজ প্রায় শেষের পথে রয়েছে। গেলো শুক্রবার (১অক্টোবর) যুব ও ক্রিড়া মন্ত্রনালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি সাবেক বন ও পরিবেশ জলবায়ু উপ-মন্ত্রী আবদুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব এমপি এবং বাংলাদেশ জলবায়ু পরির্বতন ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) ডা. মো. রেজাউল হক কুকরি-মুকরি সফরে আসেন। এসময় কুকরি-মুকরিতে ১কোটি ১০ লাখ টাকা ব্যয়ে কুকরি-মুকরি লঞ্চঘাট থেকে বাজার সড়ক পাকাকরণে ভিত্তিপ্রস্তর উদ্বোধন করেন এমপি জ্যাকব ও অতিরিক্ত সচিব ডা. রেজাউল হক সহ অন্যান্য অতিথি বৃন্দ। পরে দ্বীপটিতে ইকোপার্ক নির্মাণে চলমান কার্যক্রম পরিদর্শন করেন অতিথিরা। প্রকল্পটির নির্মাণ ও পূর্ত সংক্রান্ত কাজ বাস্তাবায়ন করছে গণপূর্ত বিভাগ। ভোলা গণপূর্ত বিভাগ সূত্রে জানা যায়, প্রকল্পের কুকরি-মুকরী অংশের ভূমি উন্নয়ন,বাউন্ডারী ওয়াল, টিউবওয়েল স্থাপন, ও সরকের কাজ শেষ হয়েছে। গাইডশেড,বণ্যপ্রাণীর মূর্যাল নির্মাণ, রাইড স্থাপনসহ অন্যান্য কাজ চলমান রয়েছে। এছাড়াও নারিকেল বাগান অংশে ৭৭ ফুট উচ্চতা পর্যবেক্ষণ টাওয়ার নির্মাণের কাঠামোগত কাজ শেষ হয়েছে। এছাড়াও যাত্রী ছাউনি,জেটি নির্মাণ,ফুট ট্রেইল,গার্ডশেড,ছাউনিসহ বসার যায়গা, হরিণের জন্য বেষ্টনি পাবলিক টয়লেট ও অন্যান্য কার্যক্রম চলমান রয়েছে। ২০১৮ সালের জুন মাসে এই ইকোপার্কের কাজ শুরু হয়। তবে এর নির্দিষ্ট মেয়াদ শেষ হলেও পুনরায় মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। যার সার্বিক সহযোগিতায় কাজ করছে বন বিভাগ। এ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে চরাঞ্চলটিতে দারিদ্র জনগোষ্টির জন্য ব্যপক কর্মসংস্থান সৃষ্টির মধ্য দিয়ে স্থানিয় মানুষের জলবায়ু পরিবর্তিত পরিস্থিতি মানিয়ে নিতে সাহায্য করবে বলেও প্রকল্পটির সঙ্গে জড়িত সংশ্লিষ্টরা মনে করেন। চলতি বছরের ডিসেম্বরে এই ইকোপার্কের কাজ সম্পন্ন হবে বলে আশা করছে সংশ্লিষ্টরা। স্থানীয় বাসিন্দারা বলেন, পরিবেশ প্রকৃতি নিয়ে গড়ে ওঠা দ্বিপ কুকুরি-মুকরি দেশ বিদেশের মানুষের জন্য একটি আকর্শনীয় স্থান। নদী ও সাগরের জলরাশি বেষ্টিত এ দ্বিপে চারদশক আগেও তেমন জনবসতি ছিলোনা। আজ সময়ের পক্রিমায় এটি একটি মডেল ইউনিয়নে পরিনত হয়েছে। ইউনিয়নটির চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ্য আবুল হাসেম মহাজন বলেন, এখানে প্রায় ১৫ হাজার মানুষ বসবাস করছে। কুকরি-মুকরিতে প্রায় ১০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয়েছে অত্যাধুনিক রেস্ট হাউজ। পাখি পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র,পর্যবেক্ষণ টাওয়ার,আমব্রেলা সেড,আরসিসি বেঞ্চসহ একাধীক স্থাপনা তৈরী করা হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, ইকোপার্ক প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে এখানকার মানুষের আর্থসামাজিক উন্নয়নের পাশাপাশি পর্যটক আগমনে স্থানীয়দের ব্যবসা বাণিজ্যের ব্যপক প্রসার ঘটবে। পাশাপাশি বনায়নের ফলে পরিবেশে প্রাণ বৈচিত্র ফিরে আসবে। চরফ্যাশন ও মনপুরা আসনের সংসদ সদস্য আবদুল্লাহ আল ইসলাম জ্যাকব বলেন,বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতিবিজড়িত নান্দনিক সৌন্দর্যের লিলাভূমি কুকরি-মুকরি দ্বীপ। ১৯৭৩সালে ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত এ দ্বীপে সফরে আসেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। এসময় তিনি চরের বাসিন্দাদের সুরক্ষায় বেড়িবাঁধসহ বিভিন্ন উন্নয়নের প্রতিশ্রæতি দেন। তাঁর সেই স্বপ্ন পূরণ করেছেন বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এমপি আরও বলেন,আওয়ামীলীগ সরকার ক্ষমতায় আছে বলেই অবহেলিত এ বিচ্ছিন্ন দ্বীপে আজ বেড়িবাঁধ নির্মান হয়েছে পাশাপাশি চরাঞ্চলগুলোতে গ্রামীন শহর উন্নয়নে অবকাঠামো গড়ে তোলা হয়েছে। কুকরি-মুকরিতে ইকোপার্ক নির্মানের মধ্য দিয়ে চরাঞ্চলকে এমনভাবে গড়ে তোলা হচ্ছে যে দেশ বিদেশের মানুষের মুখে,মুখে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আজ উন্নয়নের প্রসংশা। যা দেখার জন্য রাজধানীসহ সারাদেশের মানুষ এখানে ছুটে আসছে।