Dhaka , Wednesday, 2 July 2025
নিবন্ধন নাম্বারঃ ১১০, সিরিয়াল নাম্বারঃ ১৫৪, কোড নাম্বারঃ ৯২
শিরোনাম ::
দুর্গাপুর মটরযান ক’র্মচা’রী শ্র’মিক ইউনিয়ন নি’র্বাচ’নে সাধারণ সম্পাদক পদে শ্রমিকদের পছন্দের প্রার্থী আলিউল আজিম সাবেক মেয়র মাহবুব খান ও তার ছেলে সিয়ামের ৩২৯ কোটি টাকা আ’ত্মসা’ৎ, দেশ ত্যা’গে নি’ষেধা’জ্ঞা রূপগঞ্জে ট্রা’ক চা’পা’য় অ’জ্ঞা’তনা’মা ব্যক্তির মৃ’ত্যু হাটহাজারীতে কৃষক সমা’বে’শ ন্য’য্য মূল্যে সা’র,বী’জ,কী’টনা’শক ও বিনা সু’দে ঋ’নে’র জো’র দা’বি হাসিনাকে ভারত থেকে ধ’রে এনে বি’চার করতে হবে— নাসিরুদ্দীন পাটওয়ারী কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারী অ’গ্নিকা’ণ্ডে পু’ড়ে যায় বাড়িসহ নগদ ৫ লক্ষ টাকা এবং প’শুপা’খি  রামগঞ্জে ই’য়া’বা’স’হ যুবদল ক’র্মী আ’টক লায়ন্স ক্লাব অব চিটাগাং কর্ণফুলী এলিট’র নতুন কমিটি গঠন কাজল প্রেসিডেন্ট ও উজ্জল সেক্রেটারী কউকের নী’রবতা’য় কক্সবাজার হোটেল জোনে প্র’ভাবশা’লী সি’ন্ডিকে’টের অ’বৈ’ধ ব’হুত’ল নি’র্মা’ণ জো’রাল! নরসিংদী প্রকল্প জা’লিয়া’তির ৫২ লাখ টা’কা উ’দ্ধা’র, ২ ক’র্মচা’রী গ্রে’প্তার হালিশহরে কোটি টাকার ম’দ উ’দ্ধা’র, কিন্তু চো’রাচা’লানী রয়ে গেছে ব’হাল ত’বিয়’তে আগামী ৬ মাসের জন্য চট্টগ্রাম বন্দর নিউমুরিং কন্টেইনার টার্মিনাল (এনসিটি) পরিচালনায় বাংলাদেশ নৌ’বাহি’নীকে সু’পারি’শ করেছে সরকার নৌ’পরি’বহন উপদেষ্ট রূপগঞ্জে প্রে’মিকা ও স্বা’মীর ছু’রিকা’ঘা’তে প্রে’মিক নি’হত গাকৃবিতে উচ্চফলনশীল অধিক লবণ সহিষ্ণু গমের নতুন জা’ত ‘জিএইউ গম ১’ উদ্ভাবন    রাজাপুরে সরকারি ৫টি গাছ বি’ক্রির অ’ভিযো’গ স্থানীয় সরকার বিভাগের কর্মকর্তার বি’রু’দ্ধে নোয়াখালীতে ক’রো’নায় বৃ’দ্ধে’র মৃ’ত্যু নতুন অর্থবছরের প্রথমদিনেই ব’ন্দর জে’টিতে চার বিদেশি জাহাজ নোয়াখালীতে সা’পের কা’ম’ড়ে শি’শু’র মৃ’ত্যু সিলেট এমএজি ওসমানী মে’ডিকে’ল কলেজ ও হা’সপাতা’লে শি’শু বিভাগে বিশেষায়িত ক্লি’নিক চালু লালমনিরহাটে বিভিন্ন মা’মলা’র উনিশ আ’সা’মি গ্রে’প্তার  লালমনিরহাটের হ’ত্যা মা’মলা’র দুই আ’সামী’কে বগুড়া থেকে গ্রে’প্তার করেছে র‍্যাব মফস্বল সাংবাদিকতায় অনন্য অবদান সাংবাদিক নোমানীকে বার্তা প্রবাহ সম্মাননা কালিয়াকৈরে মেধাবী শিক্ষার্থীদের মাঝে ১০ হাজার গাছের চা’রা বিত’রণ শৌলজালিয়ায় আও’য়ামী লী’গ নে’তা চেয়ারম্যান রিপন ও প্যানেল চেয়ারম্যানকে মা’রধ’র নেত্রকোণার দুর্গাপুরে ক’মরে’ড অনিমা সিং’হে’র প্র’য়াণ দিবস উপলক্ষে স্মর’ন স’ভা পদ্মা সেতু দক্ষিণে প্রায় দেড় লাখ টাকার গাঁ’জাস’হ না’রী ও পু’রুষ আ’টক আদিতমারীতে পানিতে ডু’বে ১৮ মাস বয়সী শি’শুর মৃ’ত্যু  র‍্যাবের হাতে আ’ন্তঃজে’লা ডা’কা’ত দলের স’র্দার গ্রে’প্তার সীমান্ত এলাকায় ১৫ বিজিবির অ’ভিযা’নে বি’পুল প’রিমা’ণ অ্যা’ন্ড্রয়ে’ড মোবাইল ফোনের ডি’সপ্লে উদ্ধা’র ডাক বিভাগের কো’ষাগা’র ব্য’বস্থা’প’না ডিজিটাল রূ’পা’ন্তরে’র উদ্বোধন

মীর নোয়াবুল হক মেমোরিয়াল হাই স্কুলে পিঠা উৎসব ঐতিহ্যের মিলনমেলা

  • Reporter Name
  • আপডেট সময় : 04:50:35 pm, Tuesday, 21 January 2025
  • 47 বার পড়া হয়েছে

মীর নোয়াবুল হক মেমোরিয়াল হাই স্কুলে পিঠা উৎসব ঐতিহ্যের মিলনমেলা

মোঃ আবু তৈয়ব, হাটহাজারী, চট্টগ্রাম প্রতিনিধি 
হাজার বছরের সমৃদ্ধশালী সংস্কৃতির উত্তরাধিকারী আমরা। খাদ্যরসিক বাঙালি প্রাচীনকাল থেকে প্রধান খাদ্যের পরিপূরক মুখরোচক অনেক খাবার তৈরি করে আসছে। তবে পিঠা সর্বাধিক গুরুত্বের দাবিদার। শুধু খাবার হিসেবেই নয় বরং লোকজ ঐতিহ্য এবং নারীসমাজের শিল্প নৈপুণ্যের স্মারক রূপেও পিঠা বিবেচিত হয়। বাঙালির হাজার বছরের ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতির সঙ্গে মিশে আছে পিঠা। যখনই পিঠা-পায়েস, পুলি কিংবা নাড়ুর কথা উঠে তখনি যেন শীত ঋতুটি আমাদের চোখে ও মনে ভেসে ওঠে। প্রতি শীতেই গ্রাম বাংলার ঘরে ঘরে শুরু হয় পিঠা পুলির উৎসব। 
বাংলার নারী সমাজ অতীতে শিক্ষা দীক্ষায় অনগ্রসর থাকলেও বিভন্ন লোকজ শিল্পকর্মে ছিল অত্যন্ত নিপুণ এবং সুদক্ষ। অঞ্চল ভেদে এই পিঠার বৈচিত্র্য লক্ষ্য করা যায়। গ্রামাঞ্চলে সাধারণত নতুন ধান ওঠার পর থেকেই পিঠা তৈরির আয়োজন করা হয়। শীতের এ সময় বাহারি পিঠা তৈরিতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে তারা। বাঙালির ইতিহাস ও ঐতিহ্যে পিঠা-পুলি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে বহুকাল ধরে। এটি লোকজ ও নান্দনিক সংস্কৃতিরই বহি:প্রকাশ। যান্ত্রিক সভ্যতার এই ইট-কাঠের নগরীতে হারিয়ে যেতে বসেছে পিঠার ঐতিহ্য। সময়ের স্রোত গড়িয়ে লোকজ এই শিল্প আবহমান বাংলার অপরিহার্য অঙ্গ হয়ে উঠলেও এ যুগে সামাজিকতার ক্ষেত্রে পিঠার প্রচলন অনেকটাই কমে এসেছে। 
তাই মুখরোচক খাবার হিসেবে পিঠার স্বাদ গ্রহণ ও জনসমক্ষে একে আরো পরিচিত করে তুলতে মীর নোয়াবুল হক মেমোরিয়াল হাইস্কুলে আয়োজন করা হয় পিঠা উৎসব।
তারুণ্যের উৎসব এর অংশ হিসেবে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. সেলিম উদ্দিন রেজার নির্দেশনায় মঙ্গলবার (২১ জানুয়ারি) বিদ্যালয়ের মাঠে অনুষ্ঠিত দিনব্যাপী পিঠা উৎসবের উদ্বোধন করেন রাজনীতিক,সমাজ সেবক ও শিক্ষানুরাগী এম এ শুক্কুর। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ সেলিম উদ্দিন রেজার সভাপতিত্বে ও বিদ্যালয়ের সিনিয়র সহকারী শিক্ষক মোঃ শাহ আলমের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, হাটহাজারী উপজেলার নির্বাহী অফিসার এ.বি.এম মশিউজ্জামান, প্রধান আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, হাটহাজারী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার ড. সেলিম রেজা, এতে বিশেষ অতিথি হিসেবে আরও উপস্থিত ছিলেন, প্রবীণ শিক্ষক ও শিক্ষানুরাগী নুর নাহার বেগম।
পিঠা উৎসবে প্রধান অতিথি হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী অফিসার জনাব এ বি এম মশিউজ্জামান, বলেন, বাঙ্গালির চিরায়ত ঐতিহ্য পিঠা পায়েস এবং আতিথিয়তা সাধারণত শিক্ষাঙ্গনগুলি এ ধরণের ঐতিহ্য উজ্জীবনকারী কর্মসূচী পালন করেন। মীর নোয়াবুল মেমোরিয়াল হাই স্কুল এ মহতী এবং ঐতিহ্যবাহী কর্মসূচী হাতে নিয়েছে। এজন্য আমি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকসহ সংশ্লিষ্ঠদের ধন্যবাদ জানাই। এ উদ্যোগ আমাদেরকে আমাদের শেকড়ে নিয়ে যায়। তাই ব্যস্ততার মাঝে ও আমি এ উৎসবে অংশ নিতে এসেছি।
 প্রধান আলোচক উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার ড. সেলিম রেজা  বলেন-চীকেন চাপ, গ্রীল আর ফাস্ট ফুডে চাপা পড়ে যাচ্ছে বাঙালীর ঐতিহ্যবাহী পিঠাপুলি। সেই হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্যকে উজ্জীবিত করারই একটি প্রয়াস এ পিঠা উৎসব। এ সুন্দর এবং মনোজ্ঞ আয়োজন শিক্ষার্থীদের যেমন আনন্দ দেবে তেমনি ভবিষ্যতে উদ্যোক্তা হওয়ার জন্য অনুপ্রাণিত করবে।
 পিঠা উৎসবের উদ্ভোধক এম এ শুক্কুর বলেন “পিঠা বাঙালির সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। শীতের মৌসুম এলেই গ্রামবাংলার প্রতিটি ঘরজুড়ে পিঠার ঘ্রাণ ছড়িয়ে পড়ে। পিঠা শুধু খাবার নয়; এটি বাঙালির আবেগ, ভালোবাসা এবং সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের বহিঃপ্রকাশ। বিভিন্ন অঞ্চলে ভিন্ন ভিন্ন পিঠার নাম, স্বাদ ও রূপ দেখা যায়। নামে, স্বাদে ও রূপে বাহারি রকমের পিঠা তৈরির মাধ্যমে গ্রামীন নারী সমাজ আমাদের ঐতিহ্যকে ধরে রেখেছে। বিদ্যালয়ে এ ধরনের আয়োজন সত্যি প্রশংসনীয়। আমাদের এই তরুণ শিক্ষার্থীরা ভবিষ্যতে আমাদের এই ঐতিহ্যের বাহক হয়ে কাজ করবে।
পিঠা উৎসবের সভাপতি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জনাব মুহাম্মদ সেলিম উদ্দীন রেজা বলেন- কারিকুলামের পাশাপাশি সহ পাঠ্যক্রমিক কার্যক্রম শিক্ষার্থীদের সুপ্ত মেধা ও প্রতিভা বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে শিক্ষাদানের পাশাপাশি আনন্দময় পরিবেশ নিশ্চিত করা জরুরী। আজকের এ উৎসব ক্যাম্পাসকে আনন্দঘন করে শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ের দিকে আকর্ষিত করার একটি কৌশলমাত্র।
বিদ্যালয়ের সিনিয়র সহকারী শিক্ষক জনাব মো: আবুল হাসেম জানান, পিঠাপুলি প্রদর্শনের জন্য দৃষ্টিনন্দন স্টল নির্মাণ করা হয়। বিদ্যালয়ের প্রতিটি শ্রেণির জন্য ২টি করে স্টল বরাদ্দ করা হয়। স্টলগুলোতে শিক্ষার্থীরা প্রায় ৫০ প্রকারের পিঠাপুলি প্রদর্শন করে। পিঠা উৎসব ঘুরে দেখা যায়, প্রদর্শনকৃত পিঠাপুলির মধ্যে রয়েছে টিপিন কেক,হাতে তৈরি কেক,চুটকী, পুলি, রংপুলি,সবজি রোল,চিকেন রোল,সবজি বরা,রঙিলা পাটিসাপটা, চিকেন অন্তুন, ঝাল পাকোড়া, সাগুর ক্রিম লাড্ডু, সুজির মোহনভোগ,কোকোনাট পাটিসাপটা, পাটিসাপটার রোল,হাপানি পিঠা,সুজি কেক,নকশি পিঠা,ভাজপুলি,মদু পুলি,চিতই পিঠা, ঝাল পিঠা, মালপোয়া, মেড়া পিঠা, মালাই পিঠা, মুঠি পিঠা, কাটা পিঠা, কলা পিঠা, খেজুরের পিঠা, ক্ষীর কুলি, গোলাপ ফুল পিঠা, রসফুল পিঠা, সুন্দরী পাকান, সরভাজা, পুলি পিঠা, পাতা পিঠা, পাটিসাপটা, পাকান পিঠা, নারকেলের সেদ্ধ পুলি, নারকেল জিলাপি, তেজপাতা পিঠা, তেলের পিঠা, তেলপোয়া পিঠা, চাঁদ পাকান পিঠা, ছিট পিঠা, পানতোয়া, জামদানি পিঠা, হাঁড়ি পিঠা, ঝালপোয়া পিঠা, ঝুরি পিঠা, ছাঁচ পিঠা, ছিটকা পিঠা, চিতই পিঠা, দুধ চিতই,হাতজারা পিঠা,বিনি পিঠা, খাজা পিঠা, রসপোয়া,তাল পিঠা,ডিমের ফুটিং, ঝিনুক পিঠা, চিকেন কিমা পরটা, রসগোল্লা, চিকেন স্টিক,আন্তাশা পাকন, লাচ্ছা সেমাইয়ের লাড্ডু, নারকেলের নাড়ু, মোগলাই পরটা, ফুলকপির পাকোড়া, নুডলুসের পাকোড়া, ডিমের পুডিং, সিঙ্গারা, সমুচা, সেন্ডুইচ, পাতা পিঠা, মরিচ পিঠা, ঝিনুক পিঠা,লাচ্চা পরটা ইত্যাদি। 
পিঠাপুলি প্রদর্শনের জন্য যেসব স্টল করা হয়েছে সেগুলোরও আকর্ষনীয় নামকরণ করা হয়। নামকরণকৃত স্টগুলোর হল, মনোহর,নবান্ন, ভোজন রসিক, পার্বন, আপ্যায়ন, হাইলি আয়ু, ঐতিহ্য, লোকজ, পিঠাপুলি, পেঠুক, পিঠাকুঞ্জ, পিঠাঘর, রসের হাঁড়ি, হরেক রকম, ফুলঝুড়ি, তৃপ্তি, নকশী, পিঠা নিকেতন।
শিক্ষার্থীদের মধ্যে উৎসাহ ও উদ্দীপনা বৃদ্ধির জন্য উৎসব আয়োজনের পূর্বে আয়োজক কর্তৃপক্ষ দৃষ্টিনন্দন স্টল তৈরির জন্য, অধিক পিঠা উপস্থাপনের জন্য এবং বেশি বিক্রির জন্য আকর্ষনীয় পুরস্কার প্রদান করার ঘোষণা দেন। পিঠা উৎসবের খবর পেয়ে চারিদিক থেকে উৎসব শুরুর পূর্বে থেকে উৎসুক জনতা ও অভিভাবকরা অনুষ্ঠান স্থলে ভিড় করতে থাকে। এতে স্টলের বেচা বিক্রিও বেড়ে যায়। সন্তানদের উৎসাহিত করতে অভিভাবকরা বাড়ী থেকে রুচিসম্মত পিঠা তৈরি করে দেন স্টলে প্রদর্শনের জন্য। 
আলোচনা সভা শেষে অতিথিরা বিজয়ীদের মধ্যে পুরস্কার তুলে দেন এবং সভা সমাপ্ত ঘোষণা করেন। এতে  বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে পুরস্কার লাভ করেন  বকুল ফূল স্টল (সর্বোচ্চ মান), পাক্কন স্টল (সৌন্দর্যের জন্য), পেঠুক স্টল (সর্বোচ্চ বিক্রি), তৃপ্তি স্টল (সর্বোচ্চ আইটেম)।

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সঞ্চয় করে রাখুন

জনপ্রিয় সংবাদ

রূপগঞ্জে বস্ত্র ও পাটমন্ত্রীর নির্দেশে নির্মিত চার সড়কের উদ্বোধন।।

পেকুয়ায় বেড়িবাঁধ ভেঙে লোকালয়ে প্লাবিত,২ শত পরিবার পানিবন্দী।।

দুর্গাপুর মটরযান ক’র্মচা’রী শ্র’মিক ইউনিয়ন নি’র্বাচ’নে সাধারণ সম্পাদক পদে শ্রমিকদের পছন্দের প্রার্থী আলিউল আজিম

মীর নোয়াবুল হক মেমোরিয়াল হাই স্কুলে পিঠা উৎসব ঐতিহ্যের মিলনমেলা

আপডেট সময় : 04:50:35 pm, Tuesday, 21 January 2025
মোঃ আবু তৈয়ব, হাটহাজারী, চট্টগ্রাম প্রতিনিধি 
হাজার বছরের সমৃদ্ধশালী সংস্কৃতির উত্তরাধিকারী আমরা। খাদ্যরসিক বাঙালি প্রাচীনকাল থেকে প্রধান খাদ্যের পরিপূরক মুখরোচক অনেক খাবার তৈরি করে আসছে। তবে পিঠা সর্বাধিক গুরুত্বের দাবিদার। শুধু খাবার হিসেবেই নয় বরং লোকজ ঐতিহ্য এবং নারীসমাজের শিল্প নৈপুণ্যের স্মারক রূপেও পিঠা বিবেচিত হয়। বাঙালির হাজার বছরের ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতির সঙ্গে মিশে আছে পিঠা। যখনই পিঠা-পায়েস, পুলি কিংবা নাড়ুর কথা উঠে তখনি যেন শীত ঋতুটি আমাদের চোখে ও মনে ভেসে ওঠে। প্রতি শীতেই গ্রাম বাংলার ঘরে ঘরে শুরু হয় পিঠা পুলির উৎসব। 
বাংলার নারী সমাজ অতীতে শিক্ষা দীক্ষায় অনগ্রসর থাকলেও বিভন্ন লোকজ শিল্পকর্মে ছিল অত্যন্ত নিপুণ এবং সুদক্ষ। অঞ্চল ভেদে এই পিঠার বৈচিত্র্য লক্ষ্য করা যায়। গ্রামাঞ্চলে সাধারণত নতুন ধান ওঠার পর থেকেই পিঠা তৈরির আয়োজন করা হয়। শীতের এ সময় বাহারি পিঠা তৈরিতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে তারা। বাঙালির ইতিহাস ও ঐতিহ্যে পিঠা-পুলি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে বহুকাল ধরে। এটি লোকজ ও নান্দনিক সংস্কৃতিরই বহি:প্রকাশ। যান্ত্রিক সভ্যতার এই ইট-কাঠের নগরীতে হারিয়ে যেতে বসেছে পিঠার ঐতিহ্য। সময়ের স্রোত গড়িয়ে লোকজ এই শিল্প আবহমান বাংলার অপরিহার্য অঙ্গ হয়ে উঠলেও এ যুগে সামাজিকতার ক্ষেত্রে পিঠার প্রচলন অনেকটাই কমে এসেছে। 
তাই মুখরোচক খাবার হিসেবে পিঠার স্বাদ গ্রহণ ও জনসমক্ষে একে আরো পরিচিত করে তুলতে মীর নোয়াবুল হক মেমোরিয়াল হাইস্কুলে আয়োজন করা হয় পিঠা উৎসব।
তারুণ্যের উৎসব এর অংশ হিসেবে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. সেলিম উদ্দিন রেজার নির্দেশনায় মঙ্গলবার (২১ জানুয়ারি) বিদ্যালয়ের মাঠে অনুষ্ঠিত দিনব্যাপী পিঠা উৎসবের উদ্বোধন করেন রাজনীতিক,সমাজ সেবক ও শিক্ষানুরাগী এম এ শুক্কুর। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ সেলিম উদ্দিন রেজার সভাপতিত্বে ও বিদ্যালয়ের সিনিয়র সহকারী শিক্ষক মোঃ শাহ আলমের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, হাটহাজারী উপজেলার নির্বাহী অফিসার এ.বি.এম মশিউজ্জামান, প্রধান আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, হাটহাজারী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার ড. সেলিম রেজা, এতে বিশেষ অতিথি হিসেবে আরও উপস্থিত ছিলেন, প্রবীণ শিক্ষক ও শিক্ষানুরাগী নুর নাহার বেগম।
পিঠা উৎসবে প্রধান অতিথি হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী অফিসার জনাব এ বি এম মশিউজ্জামান, বলেন, বাঙ্গালির চিরায়ত ঐতিহ্য পিঠা পায়েস এবং আতিথিয়তা সাধারণত শিক্ষাঙ্গনগুলি এ ধরণের ঐতিহ্য উজ্জীবনকারী কর্মসূচী পালন করেন। মীর নোয়াবুল মেমোরিয়াল হাই স্কুল এ মহতী এবং ঐতিহ্যবাহী কর্মসূচী হাতে নিয়েছে। এজন্য আমি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকসহ সংশ্লিষ্ঠদের ধন্যবাদ জানাই। এ উদ্যোগ আমাদেরকে আমাদের শেকড়ে নিয়ে যায়। তাই ব্যস্ততার মাঝে ও আমি এ উৎসবে অংশ নিতে এসেছি।
 প্রধান আলোচক উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার ড. সেলিম রেজা  বলেন-চীকেন চাপ, গ্রীল আর ফাস্ট ফুডে চাপা পড়ে যাচ্ছে বাঙালীর ঐতিহ্যবাহী পিঠাপুলি। সেই হারিয়ে যাওয়া ঐতিহ্যকে উজ্জীবিত করারই একটি প্রয়াস এ পিঠা উৎসব। এ সুন্দর এবং মনোজ্ঞ আয়োজন শিক্ষার্থীদের যেমন আনন্দ দেবে তেমনি ভবিষ্যতে উদ্যোক্তা হওয়ার জন্য অনুপ্রাণিত করবে।
 পিঠা উৎসবের উদ্ভোধক এম এ শুক্কুর বলেন “পিঠা বাঙালির সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। শীতের মৌসুম এলেই গ্রামবাংলার প্রতিটি ঘরজুড়ে পিঠার ঘ্রাণ ছড়িয়ে পড়ে। পিঠা শুধু খাবার নয়; এটি বাঙালির আবেগ, ভালোবাসা এবং সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের বহিঃপ্রকাশ। বিভিন্ন অঞ্চলে ভিন্ন ভিন্ন পিঠার নাম, স্বাদ ও রূপ দেখা যায়। নামে, স্বাদে ও রূপে বাহারি রকমের পিঠা তৈরির মাধ্যমে গ্রামীন নারী সমাজ আমাদের ঐতিহ্যকে ধরে রেখেছে। বিদ্যালয়ে এ ধরনের আয়োজন সত্যি প্রশংসনীয়। আমাদের এই তরুণ শিক্ষার্থীরা ভবিষ্যতে আমাদের এই ঐতিহ্যের বাহক হয়ে কাজ করবে।
পিঠা উৎসবের সভাপতি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জনাব মুহাম্মদ সেলিম উদ্দীন রেজা বলেন- কারিকুলামের পাশাপাশি সহ পাঠ্যক্রমিক কার্যক্রম শিক্ষার্থীদের সুপ্ত মেধা ও প্রতিভা বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে শিক্ষাদানের পাশাপাশি আনন্দময় পরিবেশ নিশ্চিত করা জরুরী। আজকের এ উৎসব ক্যাম্পাসকে আনন্দঘন করে শিক্ষার্থীদের বিদ্যালয়ের দিকে আকর্ষিত করার একটি কৌশলমাত্র।
বিদ্যালয়ের সিনিয়র সহকারী শিক্ষক জনাব মো: আবুল হাসেম জানান, পিঠাপুলি প্রদর্শনের জন্য দৃষ্টিনন্দন স্টল নির্মাণ করা হয়। বিদ্যালয়ের প্রতিটি শ্রেণির জন্য ২টি করে স্টল বরাদ্দ করা হয়। স্টলগুলোতে শিক্ষার্থীরা প্রায় ৫০ প্রকারের পিঠাপুলি প্রদর্শন করে। পিঠা উৎসব ঘুরে দেখা যায়, প্রদর্শনকৃত পিঠাপুলির মধ্যে রয়েছে টিপিন কেক,হাতে তৈরি কেক,চুটকী, পুলি, রংপুলি,সবজি রোল,চিকেন রোল,সবজি বরা,রঙিলা পাটিসাপটা, চিকেন অন্তুন, ঝাল পাকোড়া, সাগুর ক্রিম লাড্ডু, সুজির মোহনভোগ,কোকোনাট পাটিসাপটা, পাটিসাপটার রোল,হাপানি পিঠা,সুজি কেক,নকশি পিঠা,ভাজপুলি,মদু পুলি,চিতই পিঠা, ঝাল পিঠা, মালপোয়া, মেড়া পিঠা, মালাই পিঠা, মুঠি পিঠা, কাটা পিঠা, কলা পিঠা, খেজুরের পিঠা, ক্ষীর কুলি, গোলাপ ফুল পিঠা, রসফুল পিঠা, সুন্দরী পাকান, সরভাজা, পুলি পিঠা, পাতা পিঠা, পাটিসাপটা, পাকান পিঠা, নারকেলের সেদ্ধ পুলি, নারকেল জিলাপি, তেজপাতা পিঠা, তেলের পিঠা, তেলপোয়া পিঠা, চাঁদ পাকান পিঠা, ছিট পিঠা, পানতোয়া, জামদানি পিঠা, হাঁড়ি পিঠা, ঝালপোয়া পিঠা, ঝুরি পিঠা, ছাঁচ পিঠা, ছিটকা পিঠা, চিতই পিঠা, দুধ চিতই,হাতজারা পিঠা,বিনি পিঠা, খাজা পিঠা, রসপোয়া,তাল পিঠা,ডিমের ফুটিং, ঝিনুক পিঠা, চিকেন কিমা পরটা, রসগোল্লা, চিকেন স্টিক,আন্তাশা পাকন, লাচ্ছা সেমাইয়ের লাড্ডু, নারকেলের নাড়ু, মোগলাই পরটা, ফুলকপির পাকোড়া, নুডলুসের পাকোড়া, ডিমের পুডিং, সিঙ্গারা, সমুচা, সেন্ডুইচ, পাতা পিঠা, মরিচ পিঠা, ঝিনুক পিঠা,লাচ্চা পরটা ইত্যাদি। 
পিঠাপুলি প্রদর্শনের জন্য যেসব স্টল করা হয়েছে সেগুলোরও আকর্ষনীয় নামকরণ করা হয়। নামকরণকৃত স্টগুলোর হল, মনোহর,নবান্ন, ভোজন রসিক, পার্বন, আপ্যায়ন, হাইলি আয়ু, ঐতিহ্য, লোকজ, পিঠাপুলি, পেঠুক, পিঠাকুঞ্জ, পিঠাঘর, রসের হাঁড়ি, হরেক রকম, ফুলঝুড়ি, তৃপ্তি, নকশী, পিঠা নিকেতন।
শিক্ষার্থীদের মধ্যে উৎসাহ ও উদ্দীপনা বৃদ্ধির জন্য উৎসব আয়োজনের পূর্বে আয়োজক কর্তৃপক্ষ দৃষ্টিনন্দন স্টল তৈরির জন্য, অধিক পিঠা উপস্থাপনের জন্য এবং বেশি বিক্রির জন্য আকর্ষনীয় পুরস্কার প্রদান করার ঘোষণা দেন। পিঠা উৎসবের খবর পেয়ে চারিদিক থেকে উৎসব শুরুর পূর্বে থেকে উৎসুক জনতা ও অভিভাবকরা অনুষ্ঠান স্থলে ভিড় করতে থাকে। এতে স্টলের বেচা বিক্রিও বেড়ে যায়। সন্তানদের উৎসাহিত করতে অভিভাবকরা বাড়ী থেকে রুচিসম্মত পিঠা তৈরি করে দেন স্টলে প্রদর্শনের জন্য। 
আলোচনা সভা শেষে অতিথিরা বিজয়ীদের মধ্যে পুরস্কার তুলে দেন এবং সভা সমাপ্ত ঘোষণা করেন। এতে  বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে পুরস্কার লাভ করেন  বকুল ফূল স্টল (সর্বোচ্চ মান), পাক্কন স্টল (সৌন্দর্যের জন্য), পেঠুক স্টল (সর্বোচ্চ বিক্রি), তৃপ্তি স্টল (সর্বোচ্চ আইটেম)।