ইবি প্রতিনিধি।।
গত ডিসেম্বর মাস থেকে বন্ধ রয়েছে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়-ইবি-ল্যাবরেটরি স্কুল এন্ড কলেজের শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বেতন-ভাতা। অর্থ সংকটে তাদেরকে বেতন দিতে পারছে না বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। সরকারের ব্যয় সংকোচন নীতির কারণে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।
এ নিয়ে আজ শনিবার-২৭ জানুয়ারি-বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ভবনের সামনে বেতন-ভাতা চালুর দাবিতে মানববন্ধন করেছে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ল্যাবরেটরি স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। মানববন্ধনে প্রতিষ্ঠানটির প্রধান শিক্ষক মুজাম্মিল হক মোল্লাহ, সহকারী শিক্ষক গোলাম মামুনসহ ১২ জন শিক্ষক ও ৩ জন কর্মচারীসহ দুই শতাধিক শিক্ষার্থী অংশ নেয়। মানববন্ধনে তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের ন্যায় যথা সময়ে বেতন-ভাতা প্রাপ্তির বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জোর দাবি তোলেন।
প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষকদের দাবি, ইউজিসি ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ল্যাবরেটরী স্কুল এন্ড কলেজের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত নিয়োজিত সকল জনবলকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব ইসলামিক এডুকেশন এন্ড রিসার্স এর ডেমনেস্ট্রেশন ইউনিটের জনবল হিসাবে আত্মীকরণ করেছে। প্রতিষ্ঠানটির নিয়োগকৃত সকল জনবল বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য সকল জনবলের ন্যায় সিন্ডিকেট কর্তৃক নিয়োগপ্রাপ্ত।
কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল জনবল যথাসময়ে নিয়মিত বেতন-ভাতা পেলেও প্রতিষ্ঠানটির শিক্ষক-কর্মচারীরা দীর্ঘদিন যাবৎ যথা সময়ে নিয়মিত বেতন-ভাতা পাচ্ছে না। এখনও পর্যন্ত তাদেরকে গত ডিসেম্বর মাসের বেতন দেয়নি বিশ্ববিদ্যালয় কতৃপক্ষ। বিষয়টি সমাধানে কয়েক দফায় কর্তৃপক্ষের দ্বারস্থ হয়েও কোনো সমাধান মেলেনি।
এ বিষয়ে ইবি ল্যাবরেটরি স্কুল এন্ড কলেজের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক মুজাম্মিল হক মোল্লাহ বলেন,
‘অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়েও স্কুল এন্ড কলেজ রয়েছে। মঞ্জুরি কমিশন সকলকে একই রকম বরাদ্দ দিয়েছে। কিন্তু অন্য প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা যথানিয়মে বেতন পেলেও শুধু আমাদের বেতন বন্ধ রয়েছে। ইতোপূর্বে আমি উপাচার্য, উপ-উপাচার্য, ট্রেজারাসহ সকলের সাথে কথা বলেছি, তখন তারা বেতনের আশ্বাস দিয়েছে। তবে এক মাস পার হলেও আমরা বেতন পাইনি। প্রশাসনের সবাই বেতন পাচ্ছে, শুধু আমরা পাচ্ছি না।’
তিনি আরও বলেন, ‘উপাচার্য প্রথমে বেতন দেওয়ার আশ্বাস দিলেও দ্বিতীয়বার দেখা করতে গেলে আমার সাথে তিনি রুঢ় আচরণ করছেন।
এদিকে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানায়, প্রতিষ্ঠাকালীন সময় থেকে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন খাত থেকে ভর্তুকি দিয়ে স্কুলটির পরিচালনা করে আসছে। বর্তমানে স্কুলটি পরিচালনায় প্রতিবছর ব্যয় হয় এক কোটি বিশ লাখ টাকা। এদিকে ইউজিসি থেকে প্রতিবছর স্কুলের জন্য মাত্র বিশ লক্ষ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। বাকি এক কোটি টাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন খাত থেকে ধার নিয়ে ভর্তুকি দিয়ে আসছে কর্তৃপক্ষ। তবে গতবছর থেকে স্কুলের জন্য সেই অর্থ বরাদ্দও বন্ধ করে দিয়েছে ইউজিসি। ফলে গত বছর খরচের পুরোটাই ভর্তুকি দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এছাড়া সরকারের ব্যয় সংকোচন নীতির কারণে বিশ্ববিদ্যালয় আগের মত অর্থ বরাদ্দও পাচ্ছে না। ফলে অর্থ সংকটে গত মাস থেকে স্কুলের শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বেতন বন্ধ রয়েছে।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. আলমগীর হোসেন ভূঁইয়া বলেন, ‘প্রতিষ্ঠানটি পরিচালনায় শুরু থেকে ভর্তুকি দিয়ে আসছে বিশ্ববিদ্যালয়। তবে সরকারের ব্যয় সংকোচন নীতির ফলে এখন বিশ্ববিদ্যালয়ের খাতে পর্যাপ্ত অর্থ নেই। আমরা বিষয়টি নিয়ে ইউজিসি কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলেছি। শীঘ্রই একটি সমাধান করা হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্সটিটিউট অব ইসলামিক এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চ (আইআইইআর) পরিচালক অধ্যাপক ড. মামুনুর রহমান বলেন, ‘আইআইইআর এর ফান্ড থেকে ধার করে এতদিন বেতন দেওয়া হয়েছে। এখন আমাদের তহবিলেও অর্থ নেই।
এ বিষয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ড. শেখ আবদুস সালাম বলেন একমাস হয়েছে বেতন বন্ধ রয়েছে। কিন্তু গত বছরেই ইউজিসি থেকে অর্থ বরাদ্দ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।