
অরবিন্দ রায়
স্টাফ রির্পোটার।।
নরসিংদীর পলাশের বেদনা দত্ত ৫০ বছর পর বীরাঙ্গনার স্বীকৃতি পেয়েছে। স্বাধীনতার সুদীর্ঘ ৫০টি বছর যার খোঁজ কেউ নেয়নি, সেই বেদনা দত্তই পেয়েছে বীরাঙ্গনার রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি। ১৯৭১ সালে দেশে মহান মুক্তিযুদ্ধে নির্যাতনের স্বীকার হয়েছেন অসংখ্য নারী। বিজয়ের ৫০ বছরে বেদনাকে দেওয়া হয় বীরাঙ্গনার স্বীকৃতি। স্বীকৃতি পেয়ে খুশি বেদনা দত্তসহ তার প্রতিবেশীরা।
বেদনা দত্তের বাড়ি নরসিংদীর পলাশ উপজেলার জিনারদী ইউনিয়নের বরিবাড়ি এলাকায়। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময় মুক্তিবাহিনীদের রান্না করে খাওয়াতেন, তাদের বিভিন্নভাবে সহায়তা করতেন। ঐ সময় জিনারদী বরিবাড়ি রেল ব্রিজের নিচে পাকিস্তানিদের ক্যাম্প ছিলো। ক্যাম্পে থাকা সিরাজ নামে এক রাজাকারের চোখ পড়ে বিধবা বেদনা দত্তের উপর। ঘরে ছোট্ট তিনটি শিশু সন্তান তার উপর আবার ইজ্জতের কথা চিন্তা করে তার কুপ্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় বেদনাকে তুলে দেওয়া হয় পাকিস্তানিদের হাতে। নরপশুরা তাকে ৩দিন ক্যাম্পে রেখে পাশবিক নির্যাতন করে। পরে মৃত ভেবে জঙ্গলে ফেলে দেয়। অবশেষে ৪দিন পর কৌশলে বাড়ি ফেরেন তিনি। গ্রাম্য চিকিৎসকের সহায়তায় কিছুটা সুস্থ হয়ে অবহেলা, বঞ্চনা আর লোক লজ্জায় সন্তানদের নিয়ে এলাকা ছেড়ে চলে যান বেদনা। শরীরের বিভিন্ন অংশে, কপালে ও মুখে আজও ক্ষতচিহ্ন দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি।
বেদনা দত্ত জানান, দীর্ঘদিন পর নিজ বাড়িতে এসে বীরাঙ্গনার মেয়ে হওয়ায় জোসনা দত্তকে বিয়ে দিতে পারেননি। যার ফলে মেয়েটি আজ পাগল প্রায়। বাড়িতে এসে অন্যের বাড়িতে কাজ করে ও লতা-পাতা খেয়ে জীবিকা নির্বাহ করছেন। সম্প্রতি সরকারিভাবে প্রাপ্ত ভিজিডি চালই তার একমাত্র ভরসা।
বেদনা দত্তের আবেদনের প্রেক্ষিতে স্থানীয় প্রশাসনের সুপারিশক্রমে সরকার বেদনা দত্তকে বীরাঙ্গনা হিসেবে গেজেটভুক্ত করেন। বিজয় দিবসে তাকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দিয়েছে। দীর্ঘ ৫০ বছর পর হলেও তাকে স্বীকৃতি দেওয়ায় সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান বেদনা দত্ত। যেই বেদনা দত্ত দেশের মুক্তিকামী মানুষের জন্য সাহায্য করতে গিয়ে এত নির্যাতন সহ্য করেছেন তাকে যেন পূর্ণ মর্যাদা দান করা হয়। তিনি অন্যের বাড়িতে কাজ করেছেন। বিল থেকে লতাপাতা এনে খেয়ে দিন পার করেছেন। তিনি আজ বীরাঙ্গনা স্বীকৃতি পাওয়ায় খুশী এলাকাবাসী।
জিনারদী ইউনিয়ন মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা সুলতান উদ্দিন পাঠান জানান, বেদনা দত্ত যুদ্ধের সময় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখলেও বিভিন্ন কারণে তাকে যথা সময়ে তালিকাভুক্ত করতে না পারা লজ্জাজনক। তবে যেহেতু তাকে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে তার জন্য সরকারকে কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ।
স্থানীয় জিনারদী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ কামরুল ইসলাম গাজী বলেন, তিনি মুক্তিযোদ্ধা আগে আমরা জানতাম না, যখনই জেনেছি তখনই তাকে প্রতিমাসে ৩০ কেজি করে চালের কার্ড করে দেওয়া হয়েছে। এছাড়া মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্ত করার জন্য সার্বিক সহায়তা করা হয়েছে।
দীর্ঘদিন পর হলেও বেদনা দত্তকে বিজয় দিবসে বীরাঙ্গনার স্বীকৃতি দিতে পেরে নিজেকে গর্ববোধ করেন।
পলাশ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান সৈয়দ জাবেদ হোসেন বলেন, বেদনা দত্তকে বীরাঙ্গনার স্বীকৃতি দানের মাধ্যমে আবারো প্রমাণ হলো এই সরকার মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের সরকার। যার ফলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের মৃক্তিযোদ্ধাদের উপযুক্ত সম্মান দিয়েছেন। আর এ বেদনা দত্তকে বীরাঙ্গনার স্বীকৃতি দেওয়ায় প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি