মোঃ সৌরভ হোসাইন (সবুজ),
স্টাফ রিপোর্টার সিরাজগঞ্জ ।।
এইডস এর ঝুঁকিতে এখন সিরাজগঞ্জ। চলতি বছর ৭৬ জন পজিটিভ রোগী পাওয়া গেছে। এরমধ্যে গত ৬ মাসে সিরাজগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে এইচ আইভি পরীক্ষা ৬৩ জন পজিটিভ রোগী পাওয়া গেছে। উদ্বেগজনক হারে এ জেলায় বাড়ছে এইচ আই ভি পজিটিভ রোগী। চলতি মাসে আজ পর্যন্ত ৪ জন পজিটিভ পাওয়া গেছে।
বুধবার (৭ ডিসেম্বর) সকালে সিরাজগঞ্জ ২৫০ শয্যা বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিব জেনারেল হাসপাতালের এইচ টি সি/এ আরটি সেন্টারের কাউন্সিলর এ্যান্ড এ্যাডমিনিস্টিটর মাসুদ রানা জানান, গত ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের ২০ তারিখ থেকে সিরাজগঞ্জে এইচ আই ভি পরীক্ষা শুরু হয়েছে। শুরু থেকে আজ পর্যন্ত ৭৬জন পজিটিভ রোগী পাওয়া গেছে।
তিনি জানান, বিগত বছরের তুলনায় এবছর পজিটিভ রোগীর সংখ্যা অনেক বেশী। পজিটিভ রোগীর বেশীর ভাগই ইনজেকটিভ ড্রাগ এ্যাটাকটেড। এরা ড্রাগগ্রহনের সময় সুই এবং সিরিঞ্জ শেয়ার করে এজন্যই পজিটিভের সংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে।
তিনি আরো বলেন, সচেতনতা এবং বেশীরভাগ মানুষকে যদি এইচ আই ভি পরীক্ষার আওতায় না আনা যায় তাহলে সিরাজগঞ্জে এইডস মহামারি আকার ধারণ করবে। এখানে পরীক্ষার সংখ্যা খুবই কম তার মধ্যে যাদের পরীক্ষা করা হচ্ছে তাদের ৫০ ভাগই পজিটিভ হচ্ছে। বর্তমানে জেলায় এখন পর্যন্ত ৬৭ জন এইচ আই ভি পজিটিভ রোগী পাওয়া গেছে। তার মধ্যে ২জনের বাড়ি বেলকুচি বাকি ৬৫ জনের বাড়ি সিরাজগঞ্জ সদরে। এর মধ্যে ড্রাগাএটাকটেড, সেক্সুয়াল ওয়ার্কার, তৃত্বীয় লিঙ্গ এবং সাধারণ মানুষ রয়েছে। যারা আক্রান্ত তাদের মোটিভেশনের মাধ্যমে চিকিৎসা নিতে আগ্রহী করা হচ্ছে।
যেহেতু এই রোগের কোন ভ্যাকসিন বের হয়নি তাই তাদের সাধারণ ঔষধ এবং বগুড়া শহীদ জিয়া মেডিকেল কলেজে এ আরটি সেন্টারে পাঠাচ্ছি সেখানে তাদের এন্টিরেক প্রো ভাইরাল থেরাপি মাধ্যমে চিকিৎসা প্রদান করা হচ্ছে।
তিনি জানান, মানুষের শরীরে এইচ আইভি ভাইরাস থাকলে শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়। যেহেতু এইডস একবার হলে আর সারে না তাই তাদের শরীরের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতাটা বাড়ানোর জন্য এন্টিরেক প্রো ভাইরাল থেরাপি দিতে হবে। একসময় সিরাজগঞ্জে কোন মাঠ কর্মী ছিলো না তাই এইচ আইভি পরীক্ষা তেমনভাবে হয়নি। এখন মাঠকর্মী নিয়োগ করা ফলে তারা মানুষকে কাউন্সিলিং করে পরীক্ষার আওতায় আনছে এজন্যই এত রোগী সনাক্ত হচ্ছে।
সকল ধরণের মানুষকে এই পরীক্ষার আওতায় আনতে হবে। এজন্য স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্ট সকলকে উদ্বৃদ্ধ করতে হবে যাতে সকলেই এই পরীক্ষার আওতায় আসে। গর্ভবতী মা, রক্ত প্রদানকারী, ইনজেকটিভ এ্যাডাকটেড, সেক্সুয়াল ওয়ার্কারসহ সাধারণ মানুষকে এই পরীক্ষার আওতায় আনতে হবে। সিরাজগঞ্জে পজিটিভের সংখ্যা যেহেতু বাড়ছে এবং অনেক রয়েছে তাই যদি এখন বেশী বেশী প্রচার এবং সচেতনা বৃদ্ধি না করা হয় তাহলে জেলাটা ঝুকিপুর্ণ হয়ে যাবে।
সিরাজগঞ্জ মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রন অধিদপ্তরের সহকারি পরিচালক আবু আব্দুল্লা জাহিদ জানান, জেলায় মুলত ইনজেকটিভ ড্রাগ এটাকটেডরে মাধ্যমে এইচ আই ভি বেশী ছড়াচ্ছে। এ নিয়ে সবাই আতংকৃত, জেলা আইন শৃঙ্খলা সভায় এই নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তবে সবার ধারণা প্যাথিডিনের মাধ্যমে এই ড্রাগ গ্রহন করছে। কিন্ত আসলে প্যাথেডিন লাইসেন্স ধারিরা বিক্রি করে। খুচরা পর্যায়ে এটা পেসক্রিপশন ব্যাতিত বিক্রি হয়না। এটা সাধারণত হাসপাতালগুলোতে বিক্রি হয় অপারেশনের কাজে ব্যবহারের জন্য। কিন্তু ভারতীয় নিষিদ্ধ ব্রুপিনরফিন ইনজেকশন চোরাই পথে এদেশে আসছে এবং এরই মাধ্যমে ড্রাগ এটাকটেপরা এটা ইনজেকশন নিচ্ছে।
তিনি আরো বলেন, জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রন অধিদপ্তর থেকে বিভিন্ন সময় অভিযান পরিচালনা করে ২ হাজারের বেশী ব্রুপিনরফিন এ্যাম্পুল আটক করা হয়েছে। কিন্তু শহরের বিভিন্ন এলাকায় বিশেষ করে শহরের ধানবান্ধি মহল্লায় এই ইনজেকশন বিক্রি করা হচ্ছে। সুচ সিরিঞ্জ শেয়ারের কারণে এই রোগ দ্রুত ছড়িয়ে পরছে। মানুষকে সচেতন করা না হলে এটি ভয়াবহ রুপ নিবে। ফেন্সিডিল, হিরোইন, গাজাসহ বিভিন্ন মাদকের পাশাপাশি ব্রুপিনরফিনের বিরুদ্ধেও অভিযান পরিচালনা করতে হবে।
এইচ আইভি প্রতিরোধ বিষয়ে সিরাজগঞ্জে কাজ করে লাইট হাউজ নামেএকটি এনজিও। এখানকার সাব ডি আইসি ইনচার্জ জাহাঙ্গীর আলম জানিয়েছেন জেলায় একমাত্র তারাই এইচ আইভি প্রতিরোধ নিয়ে সচেতনতা মুলক কাজ করেন। তারা মুলত ৩য় লিঙ্গের জনগোষ্ঠীর মধ্যে সচেুনতার কাজ করেন এছাড়া মেল সেক্স ওয়ার্কারদের মধ্যেও তারা সচেতনতার কাজ করেন।
তিনি বলেন দুই বছর ধরে সিরাজগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে ইনজেশটিভ ড্রাগ এটাকটেড এবং ফিমেল সেক্স ওয়ার্কারদের মধ্যে কাজ করছে। তাদের কে টেষ্ট্রের আওতায় আনছে। তাতে যা বুঝা যাচ্ছে সিরাজগঞ্জ এইডস ভয়াবহ রুপ ধারণ করছে। সবাইকে এখনো টেষ্টের আওতায় আনা হয়নি। সবাইকে টেস্টের আওতায় আনলে আক্রান্তের সংখ্যা আরো বেড়ে যাবে। সবাইকে সচেতন করতে হবে নইলে এটা ছড়িয়ে পরবে সবার মাঝে।
তিনি বলেন, দীর্ঘ দিন বন্ধ থাকার পর সরকারি ভাবে এইডস নিয়ে কাজ হচ্ছে। আমাদেরও সীমাবদ্ধতা রয়েছে। বাজেটের অভাব যে কারনে সবাইকে টেষ্ট করাতে পারছি না। এইডস প্রতিরোধে সামাজিক সচেতনতা এবং সকলকে কে টেষ্টের আওতায় আনা হলে সমাজ ঝুকিমুক্ত হবে। লাইট হাউজ যে ভাবে কাজ করে আমাদের যদি পর্যাপ্ত বাজেট থাকে তাহলে আমরা সবধরণের মানুষের মধ্যে কাজ করতে পারবো। জেলায় নতুন করে মাঠকর্মী নিয়োগ করার কারণেই কিন্ত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে।
সিরাজগঞ্জ সিভিল সার্জন রামপদ রায় বলেন, জেলায় দ্রুত বাড়ছে এইচ আই ভি পজিটিভ রোগী সংখ্যা। আমরা সরকারিভাবে সবাইকে সচেতনা বৃদ্ধি জন্য বিভিন্ন প্রচার-প্রচারণা করছি। সবাইকে এইচআইভি রোগ প্রতিরোধে সামাজিক সচেতনতা এবং সকলকে টেষ্টের আওতায় আনার জন্য চেষ্টা করছি।