মোঃ সৌরভ হোসাইন (সবুজ)
স্টাফ রিপোর্টার সিরাজগঞ্জ।।
’
প্রায় একইভাবে চামড়াজাত পণ্য বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম রফতানি পণ্য হওয়া সত্ত্বেও সিন্ডিকেটের কারসাজিতে শিল্পটি বিপন্ন হতে চলেছে। তৃণমূল পর্যায়ে বিক্রেতা ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের চামড়ার ন্যায্য মূল্য না পাওয়ার পেছনে আমলাতান্ত্রিক জটিলতার সঙ্গে সিন্ডিকেটের দৌরাত্মও রয়েছে। এ দুইয়ের কারসাজিতে চামড়া শিল্প আজ মুখ থুবড়ে পড়েছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায় এবার একেবারেই দাম নেই চামড়ার। অনেক অপেক্ষার পর দশ মন ওজনের গরুর চামড়া ঈদ পরবর্তীতে মাত্র ১শ টাকায় বিক্রি করেছি। কিন্তু খাঁসির চামড়ার কোন ক্রেতা না থাকার ফলে পরিবেশ রক্ষার স্বার্থে চামড়া মাটিতে পুতে রেখেছি।’ অনেক দুঃখ নিয়ে কথাগুলো বললেন সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া পৌর শহরের ঝিকিড়া মহল্লার বাসিন্দা আইনুল হক। পানির দামে চামড়ার বিক্রির কথা আরো জানালেন উল্লাপাড়া উপজেলার পূর্বদেলুয়া গ্রামের ইসাহাক আলী। তিনি ৫ লাখ টাকা দামের ষাঁড় গরুর চামড়া বিক্রি করেছেন মাত্র ৩শ টাকায়। অনুরুপ কথা বললেন, কাশিনাথ পুরের আব্দুল হামিদ, রামনগরের জিল্লুর, বড়পাঙ্গাসী গ্রামের আব্দুল গফুর সহ আরো অনেক চামড়া বিক্রেতা। বস্তুতঃ এ বছর উল্লাপাড়ায় কোরবানীর পশুর চামড়ার দাম খুবই কম। এতে বিক্রেতা যেমন কম মূল্য পেয়েছে। পাশাপাশি মৌসুমী চামড়ার ব্যবসায়ীরাও চামড়া কিনে খুব লাভবান হতে পারেননি। সরকারের বেধে দেওয়া দামে ট্যানারী মালিকেরা চামড়া কেনেন না বলে জানালেন এক আড়তদার।
উল্লাপাড়া পৌরসভার মৌসুমী চামড়া ব্যবসায়ী স্বপন দাস জানান, এবার চামড়ার বাজার খুবই কম। তিনি বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার মিলে মাত্র ৭৫ টি গরুর চামড়া কিনেছেন। তিনি প্রতি পিচ চামড়া ১শ টাকা থেকে শুরু করে গরুর আকার ভেদে ৪ টাকা পর্যন্ত কিনেছেন। তবে খাঁশির চামড়ার চাহিদা না থাকায় তিনি এই চামড়া কেনেন নাই। ক্রয়কৃত চামড়া লবন জাত করা ছাড়াই তিনি বিক্রি করে দিয়েছেন। কিন্তু স্থানীয় আড়তদাররা এসব চামড়া বেশি দামে নিচ্ছেন না। এতে তাদের লাভের পরিমান সীমিত বলে মনে করছেন এই ব্যবসায়ী। স্বপন দাসের মত একই রকম কথা বলছেন উল্লাপাড়ার মৌসুমী চামড়া ব্যবসায়ী রজিৎ দাস ও ইব্রাহীম হোসেন।
উল্লাপাড়ার চামড়ার আড়তদার মোহাব্বত হোসেনের সাথে কথা বললে তিনি জানান ঢাকার ট্যানারী মালিকরা সরকারের বেধে দেওয়া দরে কখনোই চামড়া কেনেন না। লবনজাত করে ট্যানারীতে চামড়া বিক্রি করতে গেলে ৩৫ টাকা থেকে ৪৫ টাকা বর্গফুট দরে তারা চামড়া কিনে থাকেন। তার পরেও ভাল চামড়াগুলো তারা বেছে নেন এবং ছোট আকারের চামড়া এবং সামান্য খুদ যুক্ত চামড়া তারা কখনোই কেনেন না। ফলে মৌসুমী ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চামড়া কিনে লবনজাত করা, পরিবহন ব্যয়, লেবার খরচ, যাচাই বাছাই খরচ, যাচাইকারীর খরচ বাদে তাদের লাভ হয় খুবই কম। পাশাপাশি ট্যানারী থেকে ফেরৎ যাওয়া চামড়াগুলো সামান্য মূল্যে বিক্রি করতে হয় তাদেরকে। ফলে আড়তদাররা বেশী দামে চামড়া কেনার ঝুকি নিতে চান না বলে উল্লেখ করেন মোহাব্বত হোসেন।