
চব্বিশের জুলাই–আগস্টে গণঅভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। রায় ঘোষণার পরপরই তাকে দেশে ফেরত চেয়ে ভারত সরকারের কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে অনুরোধ জানিয়েছে বাংলাদেশ।
সোমবার (১৭ নভেম্বর) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়, রায়ে পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালকে জুলাই হত্যাকাণ্ডে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে। মানবতাবিরোধী অপরাধে দণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের আশ্রয় দেওয়া কোনো দেশের পক্ষেই বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ নয় বলেও উল্লেখ করা হয়।
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট কঠোর আন্দোলনের মুখে ভারত পালিয়ে যান শেখ হাসিনা এবং তখন থেকেই নয়াদিল্লিতে নির্বাসিত জীবন কাটাচ্ছেন। গত দেড় বছরে তাকে ফেরত দেওয়ার অনুরোধ জানালেও ভারত তাতে সাড়া দেয়নি। ফলে দুই দেশের সম্পর্ক দীর্ঘদিন ধরে উত্তপ্ত অবস্থায় রয়েছে। এবার মৃত্যুদণ্ডের রায় সেই উত্তেজনা আরও বাড়াতে পারে বলে ধারণা বিশ্লেষকদের।
ঢাকায় ভারতের সাবেক হাইকমিশনার পিনাক রঞ্জন চক্রবর্তী প্রশ্ন তুলেছেন—‘নয়াদিল্লি কীভাবে তাকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিতে পারে?’ অন্যদিকে জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সঞ্জয় ভরদ্বাজ বলেছেন, ভারত এই মামলাকে বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন শক্তির রাজনৈতিক প্রতিশোধ হিসেবে দেখছে। তার মতে, বর্তমান বাংলাদেশ সরকার ভারত–বিরোধী মনোভাবাপন্ন হিসেবে নয়া দিল্লির দৃষ্টিতে বিবেচিত হচ্ছে।
রায়ের প্রতিক্রিয়ায় ভারতের বিবৃতিতে বলা হয়েছে, তারা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে এবং বাংলাদেশে শান্তি, স্থিতিশীলতা ও গণতন্ত্রের স্বার্থে সব অংশীজনের সঙ্গে যুক্ত থাকবে।
তবে সম্পর্কের বর্তমান টানাপোড়েন কাটাতে দ্রুত কোনো অগ্রগতি হবে না বলে মনে করেন পিনাক রঞ্জন চক্রবর্তী। বাংলাদেশের পরবর্তী নির্বাচনই হতে পারে নতুন সূচনার সুযোগ, যদিও সেই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নেই। ভারতের বিরোধী বড় দলগুলো সাধারণত ভারতকে সমালোচনা করলেও নির্বাচিত প্রশাসনের সঙ্গে কাজ করাই ভারতের জন্য সুবিধাজনক হবে বলে তিনি মনে করেন।
ভারতের জিন্দাল গ্লোবাল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর শ্রীরাধা দত্ত বলেন, হাসিনাকে ঘিরে ভারত বর্তমানে কঠিন অবস্থানে আছে। তবে বাংলাদেশের জনগণের তার প্রতি ক্ষোভও উপেক্ষা করা যাবে না। তার মতে, ভারত আপাতত নির্বাচন পর্যন্ত অপেক্ষা করবে এবং ভবিষ্যতে যেই সরকার আসুক, তার সঙ্গে সম্পর্ক পুনর্গঠনের দিকেই নজর দেবে।

























