রূপগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ) প্রতিনিধি
সারাদেশেই যখন কিশোর কিশোরী আর তরুণদের বিপদগামীতার খবরে হতাশ অভিভাবকমহল। সেখানে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের তরুণরা স্বেচ্চাসেবী সংগঠন করে মানবিক সেবায় নিয়োজিত থাকায় কিছুটা তৃপ্তি পাচ্ছে জনসাধারন। এদের কেউ বৃক্ষরোপনে, কেউবা প্রতিবন্ধিদের সেবায় আবার কেউবা দরিদ্রদের জন্য খাদ্য, বস্ত্র, এমনকি ঘরবাড়ি দিয়ে সহযোগীতায় যুক্ত রয়েছেন। আবার বিনামুল্যে রক্তদানেও পিছিয়ে নেই তারা। এদের মাঝে উপজেলার পিতলগঞ্জ, হারিন্দা, মধূখালী ও ব্রাহ্মনখালীর তরুণদের উদ্যোগে গঠিত লিল্লাহ ফান্ড নামে গ্রামের অলিগলির অন্ধকার রাস্তায় আলোকবাতির ব্যবস্থা করে সম্প্রতি আলোচনায় এসেছেন কতিপয় তরুণ। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রশংসায় ভাসছেন তারা।
সরেজমিন ঘুরে জানা যায়, উপজেলার ৭টি ইউনিয়ন , ২টি পৌরসভার ৬লাখ লোকের অধিক বাসিন্দাদের মাঝে গ্রাম, ওয়ার্ড বা ইউনিয়ন ভিত্তিক এমনকি উপজেলা ভিত্তিক স্বেচ্চাসেবী সংগঠন রয়েছে অর্ধশতাধিক। এসব সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত রয়েছে স্থানীয় স্কুল কলেজ পড়–য়া শিক্ষার্থী। এছাড়াও কর্মজীবি লোকজনও জড়িত রয়েছে এমন সংগঠন ভিত্তিক সামাজিক কর্মে। এসব সংগঠনের মাঝে উপজেলার সদর ইউনিয়নের বেইলার টেক এলাকায় অনির্বাণ ডিজেবল চাইল্ড কেয়ার নামে প্রতিবন্ধিদের সেবাদানে উপজেলা ব্যাপি আলোচনায় রয়েছেন সোহেল রানা। তিনি জন্মগত বা পরিস্থিতিগতভাবে শারীরিক প্রতিবন্ধিদের স্বাস্থ্যসেবা ও শিক্ষা নিয়ে কাজ করছেন। এদের মাঝে এতিমদেরকে ফান্ড গঠন করে সেবা দিয়ে আসছেন।
সেবাদানে বাদ যায়নি প্রবাসীদের উদ্যোগ। প্রবাসে থেকেও দেশের তরুণদের সংগঠিত করে অর্থ দিয়ে সহযোগীতার হাত বাড়িয়েছেন পূর্বাচলের খোকন, মুসলিম ও জসিমউদ্দিনসহ আরো অনেকে। তাদের গঠিত সংগঠনের মাধ্যমে স্থানীয় দরিদ্ররা ঘর বাড়ি, ঈদ,বস্ত্র, খাদ্য সহায়তা পাচ্ছে তালিকাভুক্তরা। স্ব্চ্চোয় রক্তদানে তরুণদের সংগঠন একতা বøাড ফাউন্ডেশন করে ব্যাপক প্রশংশিত হয়েছেন ওই সংগঠনের তরুনরা। তারা স্থানীয় সরকারী বেসরকারী হাসপাতালসহ যে কোন রক্ত আবেদনকারীর চাহিদা পূরণ করছে বিনামূল্যে। তারা নিজেদের রক্তের গ্রæপ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ করে উন্মুক্ত সহায়তায় নিয়োজিত রয়েছে। এমন একাধিক সংগঠন রক্তদানে কাজ করছেন। নিয়মিত স্বেচ্চায় বিনামূল্যে রক্তদাতা গোলাকান্দাইলের তরুণ গোলাম শহিদুল বলেন, আজকাল টাকা ছাড়া পানি পাওয়া যেখানে দায়, সেখানে রূপগঞ্জের তরুণরা বিনামূল্যে রক্ত দিতে প্রস্তুত থাকে। মানুষ হিসেবে মানুষের জন্য কিছু করতে পারার এমন সুযোগ হাতছাড়া করা লোকগুলোকে আমি মানুষ ভাবিনা।
এবার ব্যতিক্রম উদ্যোগ পাওয়া গেলো উপজেলার পিতলগঞ্জ গ্রামে। এ গ্রামের অর্ধশত তরুণ মিলে পিতলগঞ্জ লিল্লাহ ফান্ড গঠন করেন। স্থানীয় তরুণ ব্যবসায়ী খাইরুল ইসলাম ভুইয়া ও কর্মজীবি রাসেল মোল্লা‘ এবং ইব্রাহিম খলিলের নেতৃত্বে প্রতি ঈদে স্থানীয় দরিদ্রদের ইদসামগ্রি বিতরণ করেছেন এতোদিন। তবে গ্রাম এলাকায় সড়ক বাতি না থাকায় রাতের অন্ধকারে সাধারনের চলাচলে অসুবিধা হচ্ছে। এমন পরিস্থিতি মোকাবেলায় তারা নিজেরা চাঁদা তুলে ৩ গ্রামে ৫০টির অধিক বৈদ্যুতিক বাতির ব্যবস্থা করে দেন।এসব বাতির মাসিক বিদ্যুৎ খরচ ওই তরুণদের অর্থায়নে পরিশোধ করা হয়। আবার তা রক্ষণাবেক্ষনের জন্য নিয়মিত পর্যবেক্ষন করেন তারা। এ সংগঠনের সভাপতি খাইরুল ইসলাম বলেন, আমরা নিজেদের অর্থায়নে ৫০টি অন্ধকার স্পটে ৫০টি বাতির ব্যবস্থা করেছি। স্থানীয় ধনীদের অনুরোধ করেছি তারা যেন তাদের বাড়ির পাশে একটি বাতি দেয়। এতে অনেকেই সারা দিয়েছেন। এ বাতির ব্যবস্থা করায় সাধারন মানুষ চলাচলে যেমন সুবিধা পেয়েছে তেমনি কমে এসেছে চুরির ঘটনাও। মাদকসেবীদেরও আড্ডা কমে গেছে।
স্বেচ্চাসেবীদের সংগঠন করেই সেবা দিচ্ছেন শুধু তাই নয়, সংগঠন ছাড়াও স্বেচ্চাশ্রমে করোনাকালীন লকডাউন পরিস্থিতি মোকাবেলায় মাঠে নেমেছিলেন ভুলতার তরুণ রাকিব হাসান। তিনি রাস্তার যানজট নিরসনে কাজ ছাড়াও এসব সংগঠনের ডাকে তাদের সঙ্গে নেমে পড়েন মানবিক সেবায় । রূপগঞ্জের যে প্রান্তেই স্বেচ্চাসেবীরা কাজ করুক না কেন , সেখানেই তিনি অংশ নেন স্বেচ্চায়। নিজেই কাজে নেমে পড়েন।
তরুণদের মানবিক সেবার পরিধি এমন যে, তারা স্থানীয় দরিদ্র কারো চিকিৎসা সংক্রান্ত অর্থনৈতিক সমস্যায় পড়লে নিজেরা নেমে পড়েন অর্থ সংগ্রহে। সড়ক মহাসড়কের গাড়ী ও ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে চেয়ে ধনীর সন্তানেরাও মানবিক হয়ে হাত পাতেন ওই দরিদ্রদের জন্য।
এসব বিষয়ে রূপগঞ্জ প্রেসক্লাবের সভাপতি কলামিষ্ট লায়ন মীর আব্দুল আলীম বলেন, রূপগঞ্জের বিপদগামী তরুণদের জন্য স্বেচ্চাসেবকরা হতে পারেন পাথেয়। এ ক্ষেত্রে অভিভাবক মহলের উচিত তাদের সন্তানদের চলাফেরা পর্যবেক্ষন জরুরী। যারা ভালো কাজ করে তাদের সংগঠনে যুক্ত করে দেয়া ও অভিভাবকদের নৈতিক দায়িত্ব। সামাজিক দায়বদ্ধতায় তরুণদের এমন উদ্যোগ প্রশংসনীয়। তাই তাদের পাশে থেকে, তাদের উৎসাহ দিতে রূপগঞ্জ প্রেসক্লাবের সাংবাদিকরাও বিশেষ ভূমিকা পালন করছেন।