স্টাফ রিপোর্টার।।
মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর -মাউশি’র- শিক্ষাবোর্ড এবং
বিভাগীয় কমিশনারের ৫ বারের আদেশ অমান্য করে রাজধানীর এ. কে উচ্চ মাধ্যমিক
বিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ -ভারপ্রাপ্ত- মো. সালাহ উদ্দিনকে বহাল রাখতে নানান তালবাহানা
করছেন বিদ্যালয়ের এডহক কমিটির সভাপতি ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের
জোন-৪ এর জোনাল অফিসার মো.আতাহার মিয়া। অধ্যক্ষকে বহাল রাখতে মোটা
অংকের অর্থের লেনদেনের অভিযোগ ওঠেছে ওই সভাপতির বিরুদ্ধে। অধ্যক্ষ ও সভাপতির
অপসারণ এবং তাদের দুর্নীতির বিষয়ে তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নেয়ার দাবি
জানিয়েছেন বিদ্যালয়ের শিক্ষক- শিক্ষার্থী- অভিভাবক এবং এলাকাবাসী।
২০২৩ সালের ১৯ মে- যার স্মারক নং- ১৫৭৯-৫,২০২৪ সালের ৪ অক্টোবর- যার স্মারক নং
৩১০৩-৭, ২০২৪ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর- যার স্মারক নং-২৩.৩৫১ এর আদেশে মাধ্যমিক ও
উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তর বিধি মোতাবেক জ্যেষ্ঠতম শিক্ষককে অধ্যক্ষ পদে
দায়িত্ব প্রদানের জন্য এ.কে উচ্চ মাধ্যমিক পরিচালনা পর্ষদের এডহক কমিটির
সভাপতি ও অধ্যক্ষ সালাহ উদ্দিনকে পত্র দেন মাউশি। তাদেরকে পত্র দেয়ার পরও আমলে
নিচ্ছেননা।
জানাযায়- বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ফজলুল হক ২০২৩ সালের ২৭ জুলাই অবসরে যান।
২৮ জুলাই বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি আওয়ামী লীগ সরকারের প্রভাব
খাটিয়ে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের বিধি ভঙ্গ করে এ.কে স্কুলের এমপিওভুক্ত
১৩ জন জ্যেষ্ঠতম শিক্ষককে বাদ দিয়ে সর্ব কনিষ্ঠ শিক্ষক মো. সালাহ উদ্দিন কে
অধ্যক্ষের -ভারপ্রাপ্ত- পদে নিয়োগ দেন। আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি কাজী
মনিরুল ইসলাম মনুর আস্থাভাজন এবং বৈষম্য বিরোধী ছাত্র-জনতা আন্দোলনের
বিরোধী ও অর্থ যোগানকারী সালাউদ্দিন।
বিধিবর্হিভূতভাবে অধ্যক্ষ -ভারপ্রাপ্ত- নিয়োগের প্রতিবাদে এবং নিয়োগ
বাতিল ও বিধি মোতাবেক ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ নিয়োগের দাবিতে বিদ্যালয়ের সহকারী
অধ্যাপক নাসরনি বেগম ও জ্যেষ্ঠ প্রভাষক আবু জামিল মো. সেলিম শিক্ষা অধিদপ্তরের
মহাপরিচালক বরাবরে আবেদন করেন ।
তাদের আবেদনের প্রেক্ষিতে স্কুল বা কলেজে কর্মরত অধ্যক্ষ/প্রধান শিক্ষকের পদ শূণ্য
হলে বা ছুটিতে গেলে তাদের শূণ্য পদে দায়িত্ব প্রদান বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের
পরিপত্র (স্মারক নং ৩৭.০০.০০০০.০৭৪.০০২.০০১.২০২১.৫১,তারিখ- ৫ ফেব্রæয়ারী
২০২৪) মোতাবেক জেষ্ঠ প্রভাষক/জেষ্ঠতম সহকারী অধ্যাপককে অধ্যক্ষের শূণ্য পদে
দায়িত্ব প্রদান করে ১০ কর্ম দিবসের মধ্যে অধিদপ্তরকে অবহিত করার জন্য এ, কে
উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সভাপতি ও অধ্যক্ষকে পত্র দেন শিক্ষা অধিদপ্তরের সহকারী
পরিচালক (কলেজ-৩) তপন কুমার দাস । যার স্মারক নং-
৩৭.০২.০০০০.১০৫.৩১.২০২৪/১৫৭৯/৫। তারিখ ১৯/০৫/২০২৪ ইং।
মাউশির পত্রের পরও গভর্ণিং বডির সভাপতি ব্যবস্থা না নেয়ায় কলেজের এমপিওভুক্তির
জেষ্ঠতার ক্রম অনুযায়ী ৫ জন শিক্ষকের নিয়োগ এবং এমপিও সংক্রান্ত সকল কাগজপত্র
পরিচালক (কলেজ-২) এবং সহকারী পরিচালক (কলেজ-৩) এর নিকট প্রদর্শনের জন্য
সহকারী পরিচালক (কলেজ ৩) তপন কুমার দাস ১৪ আগষ্ট ২০২৪ইং তারিখ পুনরায়
সভাপতিকে পত্র দেন।
মাউশির ২য় দফা পত্রের পরও সভাপতি কোন ব্যবস্থা গ্রহন না করায় জেষ্ঠতার ক্রম
অনুযায়ী অধ্যক্ষের পদে দায়িত্ব প্রদান করতে ৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ইং তারিখ
আরেকটি পত্র দেন।
৩য় দফার আদেশের পর ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের কলেজ পরিদর্শক প্রফেসর মোঃ রিজাউল
করিম বেসরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের (স্কুল ও কলেজ) জনবল কাঠামো ও এমপিও
নীতমালা অনুযায়ী বিধি মোতাবেক গভর্ণিং বডির সভাপতিকে প্রয়োজনীয়
ব্যবস্থা নিতে ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ইং তারিখে পত্র দেন।
এ.কে উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অবৈধ ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের অপসরাণ এবং শিক্ষা
মন্ত্রণালয়ের পরিপত্র মোতাবেক জেষ্ঠতার ভিত্তিতে ভারপাপ্ত অধ্যক্ষের নিকট দায়িত্ব
দিতে বিভাগীয় কমিশনার শিক্ষা ও আইসিটি শাখার সিনিয়র সহকারী কমিশনার
উম্মে হাফছা নাদিয়া বিদ্যালয়ের সভাপতিকে ২৬/০৯/২০২৪ ইং তারিখে ৪র্থ দফা
পত্র দেন।
এ.কে উচ্চ মাধ্যমিক পরিচালনা পর্ষদের এডহক কমিটির সভাপতি ও অধ্যক্ষ সালাহ
উদ্দিনকে বিধি মোতাবেক জ্যেষ্ঠতম শিক্ষককে অধ্যক্ষ পদে দায়িত্ব প্রদানের জন্য
মাউশি ৩ বার,ঢাকা শিক্ষাবোর্ড একবার এধং শিক্ষা ও আইসিটি শাখার
সিনিয়র সহকারী কমিশনার পত্র দেয়ার পরও কোন প্রকার কর্ণপাত করছেননা বিদ্যালয়
পরিচালনা এডহক কমিটির সভাপতি আতাহার মিয়া। অধ্যক্ষকে বহাল রাখতে মোটা
অংকের অর্থ লেনদেনের অভিযোগ ওঠেছে সভাপতি আতাহর মিয়ার বিরুদ্ধে।
এদিকে অভিযোগ রয়েছে, সালাহ উদ্দিন অধ্যক্ষ বনে যাওয়ার পর নানান দুর্নীতিতে
জড়িয়ে পড়েন এবং প্রতিহিংসামুলক বিদ্যালয়ের ৫ জন শিক্ষককে বহিষ্কার এবং
২৫ জনকে শোকজ করেন। সরকার নিষিদ্ধ সহায়ক লেকচার কোম্পানির বই সহায়ক
হিসেবে পাঠ্য করে মোটা অংকের অর্থ হাতিয়ে নেন। ডিপার্টমেন্টাল পরীক্ষা
নিয়ে কিছু শিক্ষককে বহিষ্কারের পরিকল্পনা করেন, এসএসসি ২০২৪ সালের পরীক্ষার
ফি ৪৩ লাখ ৬১ হাজার ৭শ টাকা আদায় করে ২৮ লাখ টাকা বণ্টন করে অবশিষ্ট টাকা
হাতিয়ে নেন।
১০ম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের বাধ্যতামূলক কোচিংয়ের মাধ্যমে ১৪ লাখ ৫০ হাজার
টাকা আদায় করেন। সে টাকা থেকে ৯ লাখ টাকা বণ্টন করে অবশিষ্ট টাকা অধ্যক্ষ
হাতিয়ে নেন। অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত) হওয়ার ৬ মাসের মধ্যে ৪৫ লাখ টাকা দিয়ে নোয়া
ইসকোয়ার ব্যক্তিগত গাড়ি ক্রয় করেন এবং ৩৬ জন শিক্ষককে নতুন করে নিয়োগ
দিয়ে মোটা অংকের অর্থ হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
এদিকে অধ্যক্ষের পদত্যাগের দাবিতে ৭,৮ ও ৯ আগষ্ট ক্যাম্পাসে টানা ৩দিন বিক্ষোভ
মিছিল ও সমাবেশ করেন শিক্ষার্থীরা। সেনাবাহিনী ক্যাম্পাসে গিয়ে বিষয়টি
মীমাংসার আশ্বাস দেয়ার পর শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ বন্ধ করেন। অধ্যক্ষ বিদ্যালয়ে না
যেয়ে বিষয়টি মিমাংসার সুযোগ না দিয়ে কৌশল অবলম্বন করে কারো সাথে
আলাপ না করে বিধিবহির্ভূতভাবে ১৩ আগষ্ট থেকে ৫ দিন স্কুল বন্ধ ঘোষণা
করেন।
একাধিক শিক্ষার্থী অভিভাবক অভিযোগ করে বলেন, সালাহ উদ্দিন আহমেদ
বিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষকের চেয়ে জুনিয়র। সিনিয়র শিক্ষককে অধ্যক্ষের দায়িত্ব না
দিয়ে একজন অদক্ষ ও কনিষ্ঠ শিক্ষককে তৎকালীন আওয়ামী লীগের সময়ে অন্যায়ভাবে
অধ্যক্ষ পদে বসানো হয়েছে। তার কাছে বেতন, ফি কমানোসহ কোন আবেদন
নিয়ে গেলে দুর্ব্যবহার করেন। তাকে অভিলম্বে অপসারণ করে শিক্ষা অধিদপ্তরের
বিধি মোতাবেক অধ্যক্ষকে দায়িত্ব দেয়ার দাবি জানান।
এ বিষয়ে কলেজের অধ্যক্ষ (ভারপ্রাপ্ত) মো. সালাহ উদ্দিনের বক্তব্য জানতে তার ব্যবহৃত
মুঠোফোনে একাধিকবার চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি।
বিদ্যালয় পরিচালনার এডহক কমিটির সভাপতি মো.আতাহার মিয়া বলেন, চিঠি
দিলেইতো কাজটা হয়ে যাবেনা, এটা একটা প্রসেস আছে। আমি তো স্কুলের
শিক্ষকনা। ওই স্কুলের কে জেষ্ঠ, কে জেষ্ঠনা, তা তো আমি জানিনা। একটা সাফ
কমিটি করে দিয়েছি,সাফ কমিটি থেকে আমি রিপোর্ট পেয়েছি। আমি
কমিটিকে রিপোর্ট দিতে বলেছিলাম। জেষ্ঠ শিক্ষক হিসেবে নাসরিন মেডাম
আবেদন করেছেন। সাফ কমিটির সবাই নাসরিন মেডাম জেষ্ঠ তার কথাই বলেছেন।
বলার পরেও কিছু অবজারভেশন আছে। বিভিন্ন সময়ের নিয়োগের বিষয় টিসয়
নিয়া। ওইটা নিয়ে আমি বসছি আরকি। ওইটা নিয়া হয়তো মেডামের কাছে
কিছু জানতে চাওয়া হবে। সমাধান হয়ে যাবে।