
মাজিদ আল মামুন, মেহেরপুর:
মেহেরপুরে মাংস ব্যবসায়ীদের বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে গরু ক্রয়, জবেহ ও মাংস ভাগাভাগিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন অধিকাংশ লোকজন।
পবিত্র ঈদুল ফিতর আসলেই কিছু সংখ্যক অসাধু ব্যবসায়ী কর্তৃক মাংসের মূল্য বৃদ্ধি করা ও ঈদে ৭/৮ হাজার টাকার মাংস কেনার সক্ষমতা না থাকায় মেহেরপুরের অধিকাংশ লোকজন এ উদ্যোগ নিয়েছেন।
শনিবার (২৯ মার্চ), সকাল থেকে বিকেল অবধি মেহেরপুরের সদর, গাংনী ও মুজিবনগর উপজেলার অধিকাংশ এলাকা ঘুরে গরু জবেহ ও মাংস ভাগাভাগির দৃশ্য চোখে মেলে।
শুধু নিম্ন আয়ের মানুষই নয় বরং মুক্তিযোদ্ধা, শিক্ষক, ব্যবসায়ী, চাকুরিজীবী ও কৃষকসহ বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার লোকজন এ উদ্যোগ নিয়েছেন।
মেহেরপুরে গত ২ বছর ধরে এমন দৃশ্য চোখে মিলছে। ব্যবসায়ীদের বাদ দিয়ে নিজেরাই কেন এমন উদ্যোগ নিয়েছেন এমন প্রশ্নে মাংস সমিতির সদস্যরা জানান, ঈদ আসলেই অসাধু মাংস ব্যবসায়ীরা মাংস মূল্য বৃদ্ধি করে দেয়। এতে করে অনেকেই বেশি মূল্যে মাংস কিনে ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে পারেনা। তাছাড়া বেশি মাংস কেনার সামর্থ্যও অনেকের থাকেনা। যার কারণে ঈদুল ফিতর শেষ হলেই পরবর্তী বছরের জন্য প্রথমে ৫’শ টাকা জমা দিয়ে সদস্য হতে হয় মাংস সমিতির। পরবর্তীতে প্রতি সপ্তাহে প্রতি সদস্য একজন নির্দিষ্ট সদস্যের কাছে ১’শ থেকে ১’শ ৫০ টাকা করে জমা রাখেন। এভাবে প্রায় ৫০ সপ্তাহ ধরে টাকা জমা দিয়ে থাকেন। পরে ঈদুল ফিতরের ৮/১০ দিন পূর্বে ঐ টাকা দিয়ে গরু ক্রয় করে থাকেন। যারা ১’শ টাকা করে জমা রাখেন তারা ১ লক্ষ ৩৫/৪০ হাজার টাকায় গরু ক্রয় করেন। আর যারা ১’শ ৫০ টাকা বা ২’শ টাকা করে জমা রাখেন তারা বড় ও বেশি মূল্যের গরু ক্রয় করে থাকেন। যা ঈদের ১ সপ্তাহ পূর্ব থেকে ঈদের পূর্বের দিন পর্যন্ত জবেহ করা হয়ে থাকে। আর মাংস সমিতির সদস্যের অধিকাংশই নারী সদস্য। অবশ্য পুরুষ সদস্যরাও এ সমিতি করে থাকে। প্রতিটা সমিতিতে ১০/১৫ এমনকি ২০/৩০ জন সদস্যও রয়েছে। অধিকাংশ গ্রামে ৫/১০ টি এমন সমিতি রয়েছে। এসব সমিতির সদস্যরাই নিজ উদ্যোগে এসব গরু জবেহ করে তা ভাগাভাগি করে থাকে। অনেকে ঝামেলা এড়াতে কসাইকে ৩ হাজার টাকা, কোন কোন এলাকায় ৪ থেকে সাড়ে ৪ হাজার টাকা দিয়ে কসাইয়ের মাধ্যমে এসব গরু জবেহ করে কাটাছেঁড়া করে থাকে।
মাংস সমিতির সদস্যদের বক্তব্য অনুযায়ী গরু জবেহ ও ভাগাভাগির মধ্যেও অনেক আনন্দ রয়েছে। কেউ বলেন বনভোজনের মতো, কেউ বা বলেন ঈদের পূর্বেই আরেকটি ঈদের আনন্দ।
সাধারণত মহিলা সদস্যরা ভুঁড়ি কাটা ধোয়ার কাজ করেন এবং পুরুষ সদস্যরা মাংস ভাগাভাগি ও বিলি করে থাকেন।
মাইলমারী গ্রামের আতিয়ার রহমান জানান, গত ২ বছর ধরে এ গ্রামে এমন উৎসব চলে আসছে। এতে করে জনসাধারণকে মাংস কেনার টাকা যোগানে টেনশন করতে হচ্ছে না। ধনী-গরিব সকলেই এ সমিতির মাধ্যমে ১২/১৮ কেজি করে মাংস পাচ্ছেন। এক্ষেত্রে সাপ্তাহিক কিস্তি পরিশোধের ন্যায় ৫০ সপ্তাহে টাকা গুনতে হচ্ছে সাড়ে ৭ হাজার টাকা থেকে ১২ হাজার টাকা। যে মাংস ব্যবসায়ীর কাছে কিনতে গুনতে হবে বাড়তি টাকা।
হাফেজ উদ্দীন জানান, এ সমিতির মাধ্যমে সকলে খুব সহজেই ১০/১২ কেজি মাংস পাচ্ছে। সমিতি ব্যতিরেকে ব্যবসায়ীর কাছ থেকে ১০/১২ কেজি মাংস কেনার সামর্থ্য অনেকেরই থাকেনা।
আজান গ্রামের মাহাবুল ইসলাম জানান, আমাদের গ্রামে এমন ৯/১০ টি সমিতি রয়েছে।
সাহারবাটী গ্রামের আনিসুর রহমান জানান, ইতিপূর্বে এমন দেখা যায়নি তবে গত ২ বছর ধরে ব্যবসায়ীদের বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে সাধারণ মানুষের অধিকাংশই সমিতির মাধ্যমে গরু ক্রয় করে তা ভাগাভাগি করে ঈদ উদযাপন করছেন।
এদিকে এ সমিতি চালু হওয়ায় অধিকাংশ কসাইয়ের মাথায় হাত! ঈদ এলেই দাম বাড়িয়ে ৮’শ টাকা কেজি দরে বিক্রি করলেও এবারে হয়তো তা সম্ভব হবেনা। কারণ প্রতিটা গ্রামেই অসংখ্য মাংস সমিতি রয়েছে সুতরাং কসাইদের কাছে মাংস কেনার লোকজন তেমন একটা নেই বললেই চলে। অন্যান্য বছরে প্রতিটা গ্রামে কসাইগণ ২/৪ টা গরু মহিষ জবেহ করার প্রচারণার মাইকিং করলেও এবারে তেমন একটা প্রচারণা কানে আসেনি।