
মোহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন,
ভূমিসেবা নিশ্চিতের মূল ভিত্তি হলো সঠিক সার্ভে ও সেটেলমেন্ট উল্লেখ করে ভূমি উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদার বলেন ;পৃথিবীর প্রতিটি জীব ভূমির সঙ্গে কোনো না কোনোভাবে যুক্ত। গৃহপালিত প্রাণীরা মাঠে চরে, বন্য প্রাণীরা জঙ্গলে থাকে, পাখিরা বনাঞ্চলে আশ্রয় নেয়। ভূমি কেবল মানুষের সম্পত্তি নয়; এটি পৃথিবীর সমস্ত জীবের যৌথ সম্পদ। মানুষকে উচিত হবে দায়িত্বশীলভাবে ভূমি ব্যবহার করা, পশু-পাখির আবাসস্থল সংরক্ষণ করা এবং প্রকৃতির প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া। তবেই পৃথিবী টিকে থাকবে সুন্দর, ভারসাম্যপূর্ণ ও প্রাণবন্ত এক আবাসভূমি হিসেবে। ভূমি ব্যবহারের ন্যায্যতা নিশ্চিত করতে হলে আমাদের ভাবতে হবে এই ভূমি সবার। মানুষ যেমন জীবনের জন্য ভূমির প্রয়োজন অনুভব করে, পশুরাও তেমনভাবে ভূমির ওপর নির্ভর করে বেঁচে থাকে। ভূমি শুধু উৎপাদনের মাধ্যম নয়, এটি জীববৈচিত্র্যের আশ্রয়স্থল। তাই পশুদের বেঁচে থাকার জন্য তাদের প্রাকৃতিক বাসস্থান রক্ষা করা মানবিক ও নৈতিক দায়িত্ব।
আজ রাজধানীর ডেমরায় করিম জুট মিলস্ লিমিটেড এর সভাকক্ষে বিসিএস ক্যাডারভুক্ত (প্রশাসন,পুলিশ,বন ও রেলওয়ের) এবং জুডিসিয়াল সার্ভিস এর কর্মকর্তাগণের ‘১৪১ তম সার্ভে ও সেটেলম্যান্ট প্রশিক্ষন কোর্সে’র উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন। এবারে প্রশিক্ষণ কোর্সের আয়োজন করে ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তর। এবারের ৫২ দিনের এই প্রশিক্ষণে মোট ৬০ জন প্রশিক্ষনার্থী অংশগ্রহণ করেন।
ভূমি উপদেষ্টা বলেন; সার্ভে ও সেটেলমেন্টের কাজ গুলো যথাযথভাবে সম্পাদনের জন্য কর্মকর্তাদের পেশাগত দক্ষতা, কারিগরি জ্ঞান ও বাস্তব অভিজ্ঞতা থাকা অপরিহার্য। তাই সার্ভে এন্ড সেটেলমেন্ট ট্রেনিং (Survey and Settlement Training) একটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ প্রশিক্ষণ কর্মসূচি হিসেবে বিবেচিত। ভূমি প্রশাসন ব্যবস্থায় সার্ভে ও সেটেলমেন্ট কার্যক্রম অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ। এর মাধ্যমে ভূমির সঠিক মালিকানা নির্ধারণ, রেকর্ড সংরক্ষণ ও হালনাগাদ করা হয়।
উপদেষ্টা বলেন; এই প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কর্মকর্তারা আধুনিক জরিপ পদ্ধতি সম্পর্কে গভীর জ্ঞান অর্জন করেন। এতে ভূমি জরিপ কার্যক্রম আরও দ্রুত, নির্ভুল ও স্বচ্ছ হয়। সেটেলমেন্ট প্রশিক্ষণে ভূমি রেকর্ড প্রস্তুত, হালনাগাদ ও সংরক্ষণের প্রক্রিয়া শেখানো হয়, যা নাগরিকদের সঠিক মালিকানা নিশ্চিত করতে সহায়তা করে। এতে ভূমি সংক্রান্ত বিরোধ, দখল সমস্যা ও মামলা-মোকদ্দমা অনেকাংশে হ্রাস পায়। এই প্রশিক্ষণ কর্মকর্তাদের মধ্যে দায়িত্ববোধ, সততা ও সেবার মনোভাব বৃদ্ধি করে। ভূমি ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা ও জনসেবার মান বাড়াতে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। এই প্রশিক্ষণ মাঠ পর্যায়ের কাজে বাস্তব জ্ঞান অর্জনের সুযোগ সৃষ্টি করে। ভূমি পরিমাপ, মানচিত্র অঙ্কন, রেকর্ড সংশোধন ইত্যাদি কাজের বাস্তব অনুশীলন কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দক্ষ করে তোলে।
তিনি আরো বলেন, সার্ভে এন্ড সেটেলমেন্ট ট্রেনিং শুধুমাত্র একটি প্রশিক্ষণ নয়, এটি ভূমি প্রশাসনের উন্নয়ন ও জনসেবার গুণগত মান বৃদ্ধির মূল চালিকা শক্তি। তাই প্রত্যেক কর্মকর্তার জন্য এ প্রশিক্ষণ গ্রহণ করা যেমন কর্তব্য, তেমনি এটি দক্ষ, স্বচ্ছ ও জনগণবান্ধব ভূমি ব্যবস্থাপনা গড়ে তুলার অন্যতম হাতিয়ার।
প্রশিক্ষণার্থীদের উদ্দেশে তিনি বলেন; ভূমি পৃথিবীর অন্যতম প্রধান সম্পদ। মানুষ এই ভূমির ওপর বসবাস করে, কৃষিকাজ করে, শিল্পকারখানা গড়ে তোলে কিন্তু এই পৃথিবী শুধু মানুষের নয়। পশু-পাখি, গাছপালা, জীবজন্তু সবাই মিলে এই পৃথিবীর বাস্তুতন্ত্রের অংশ। তাই ভূমির ওপর অধিকারও কেবল মানুষের একক অধিকার হতে পারে না; প্রকৃতির অন্যান্য জীবও ভূমির ওপর সমানভাবে নির্ভরশীল ও অধিকারভুক্ত।এবারের প্রশিক্ষণে আইনকানুনের পাশাপাশি হাতে কলমে অটোমেশনের বিষয় প্রশিক্ষণ দেয়া হবে। এই প্রশিক্ষণ শুধু ভূমি জরিপ শেখার প্রক্রিয়া নয়, বরং এটি একজন কর্মকর্তার পেশাগত দায়িত্ববোধ, শৃঙ্খলা ও নৈতিক মূল্যবোধ গড়ে তোলে। শৃঙ্সুখলার্ওপর জোরদিয়ে তিনি বলেন শৃঙ্রাংখলা প্রশিক্ষণের প্রধান স্তম্ভ। প্রশিক্ষণার্থীদের কর্তব্য হলো সততা, মনোযোগ, শৃঙ্খলা ও নিষ্ঠার সঙ্গে প্রশিক্ষণ সম্পন্ন করা এবং অর্জিত জ্ঞান বাস্তব জীবনে প্রয়োগ করে রাষ্ট্রের কল্যাণে জনসেবা করা।
তিনি আরো বলেন; এই প্রশিক্ষণে বিভিন্ন ক্যাডারের কর্মকর্তাগণ রয়েছে। বিভিন্ন ক্যাডারের মধ্যে একটি আন্ত:ব্যাক্তি সম্পর্ক গড়ে উঠবে যা ভবিষতে কর্মক্ষেত্রে ইতিবাচক প্রভাব পরবে। রাষ্ট্রযন্ত্রের বিভিন্ন স্তরে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীগণের মধ্যে সমন্বয়, সহযোগিতা ও আস্থার পরিবেশ তৈরি না হলে উন্নয়ন প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হয়। এই প্রশিক্ষণে ৫ টি ভিন্ন সার্ভিস একসাথে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করবে। মনে রাখেতে হবে আমরা সবাই প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী,আমাদের প্রধান দায়িত্ব রাষ্ট্রের জন্য কাজ করা। রাষ্ট্রের কাজ সুষ্ঠভাবে সম্পাদনের জন্য সকলকে একসাথে কাজ করতে হবে। আগামীর নতুন বাংলাদেশ বির্নিমান আপনাদের হাতেই এই বিশ্বাস ধারণ করতে হবে।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তরের পরিচালক (যুগ্মসচিব) ও কোর্স পরিচালক মো: মোমিনুর রশীদ। সভাপতিত্ব করেন ভূমি রেকর্ড এ জরিপ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (গ্রেড-১)মো: সাইদুর রহমান। অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য রাখেন ভূমি রেকর্ড এ জরিপ অধিদপ্তরের পরিচালক (যুগ্মসচিব) মো: শাহাদাত হোসেন।























