Dhaka , Tuesday, 8 July 2025
নিবন্ধন নাম্বারঃ ১১০, সিরিয়াল নাম্বারঃ ১৫৪, কোড নাম্বারঃ ৯২
শিরোনাম ::
সংবাদ প্রকাশের পর কৈবর্তখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষককে শোকজ গণঅভ্যুত্থানের সঙ্গে যারা প্রতারণা করেছে, তারা দেশের জনগণের সঙ্গেও প্রতারণা করেছে পাবনায়- নাহিদ   মুষলধারে বৃষ্টিতে ডুবল নোয়াখালী, জলাবদ্ধতায় দুর্ভোগ চরমে   লালমনিরহাটে গ্রেড উন্নীতকরণসহ ৬ দফা দাবিতে স্বাস্থ্য সহকারীদের অবস্থান কর্মসূচি পাটগ্রাম থানায় হামলা ও ভাঙচুর , গ্রেপ্তার আরও দুই বিএনপি নেতা প্রবল বর্ষণে রামগঞ্জের নিন্মাঞ্চল প্লাবিত জনজীবন স্থবির হয়ে পড়েছে  জাজিরায় পদ্মা নদীভাঙনে ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে টিন, নগদ অর্থ বিতরণ নওপাড়া ইউপি যুবদলের কমিটি গঠন, আহ্বায়ক মহসিন সদস্য সচিব সুমন রূপগঞ্জে প্রেমিকা ও স্বামীর ছুরিকাঘাতে প্রেমিক নিহতের ঘটনার প্রধান আসামী স্বামী মুকুল মিয়া গ্রেফতার সার্চ মানবাধিকার সোসাইটি বাংলাদেশ-এর ১৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী কক্সবাজারে উদযাপন ফরিদপুর ৪ আসনের জামায়াত ইসলামের সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী মাওলানা সারোওয়ার হোসেনের দুর্গম চরে গণ-সংযোগ লোহাগাড়ায় ১১ জন নিহতের ঘটনায় ঘাতক বাস চালক আটক লালমনিরহাটে হাসপাতাল থেকে কলেজ ছাত্রের ঝুলন্ত মৃতদেহ উদ্ধার  কালীগঞ্জে বগুড়ার তিন নারী মাদক ব্যবসায়ী র‍্যাবের হাতে গ্রেপ্তার টেকনাফে টানা বৃষ্টিতে পানিবন্দী ৩ হাজার পরিবার, চরম দুর্ভোগে স্থানীয়রা উত্তাল সমুদ্র: ট্যুরিস্টদের সচেতনতায় কক্সবাজার সৈকতে ট্যুরিস্ট পুলিশের মাইকিং ও প্রচার অভিযান দাউদকান্দিতে ডেঙ্গুর ভয়াবহতা বাড়ছে, ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্ত ৬৩ শাকিব খানের নতুন সিনেমা: ঈদ ২০২৬-এ আসছে, কাস্টিং নিয়ে বিতর্ক প্রবাসী রেমিট্যান্সে রেকর্ড প্রবাহ: জুলাইয়ে বেড়েছে ১৫.৩৪ শতাংশ দেবলীনা-তথাগত: এক সম্পর্কের ইতি, দুই জীবনে নতুন প্রেমের সূচনা রূপগঞ্জে অস্ত্রসহ ৭ ডাকাত দলের সদস্য গ্রেফতার রূপগঞ্জে মোবাইল কোটের মাধ্যমে ৯০০ শ অবৈধ গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন তিতাস কতৃপক্ষরা কুড়িগ্রাম ভুরুঙ্গামারীতে ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনায় মাদ্রাসা শিক্ষার্থীর মৃত্যু পাবনায় ৭ দিনব্যাপী বৃক্ষরোপন অভিযান ও মেলার উদ্ধোধন গাজীপুরে  বিএনপির চার নেতা বহিষ্কার রামগঞ্জে এন সি পি র কমিটি গঠন  লরেন্স ফেস্টিভ্যালে চট্টগ্রাম সিটি মেয়র ড. শাহাদাত হোসেন ও এমপি সালমা জাহিদের সৌহার্দ্যপূর্ণ সাক্ষাৎ রামগঞ্জে এন সি পি র  ২১ সদস্যের কমিটি ঘোষনা  অন্যায়ের প্রতিবাদ করায় কুচক্রী মহলের অপপ্রচারের বিরুদ্ধে যুবদল নেতার সংবাদ সম্মেলন শরীয়তপুরের নতুন জেলা প্রশাসক হলেন তাহসিনা বেগম

বঙ্গবন্ধু টানেল ঘিরে শিল্পের নতুন সম্ভাবনা।।  

  • Reporter Name
  • আপডেট সময় : 08:56:34 am, Saturday, 28 October 2023
  • 135 বার পড়া হয়েছে

বঙ্গবন্ধু টানেল ঘিরে শিল্পের নতুন সম্ভাবনা।।  

তৌহিদ বেলাল
ব্যুরো চিফ ।। 
একপাড়ে শহর। অন্যপাড়ে উপকূল! এক পাড়ে ঝলমলে আলোর রোশনাই, অন্যপাড়ে অন্ধকার! বহু বছর ধরে কর্ণফুলী নদীর দুই পাড়কে মানুষ চিনে আসছে এভাবেই। এই পার্থক্যের কারণে অর্থনীতি আর জীবনযাত্রার মানেও ছিল বহু ফারাক। এক পাড়ে গড়ে উঠেছে বন্দর তেল শোধনাগারসহ কত শত স্থাপনা। অন্যপাড়ে ছিল ষোলকলা অবহেলা। অথচ দুই পাড়ের দূরত্ব এক কিলোমিটারও নয়।
এত কাছে, তবুও কত দূরে’র সেই দূরত্ব যেন মিটিয়ে দিল ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল’। শুধুমাত্র যোগাযোগ ব্যবস্থার অনুন্নয়নের কারণে এত বছর ধরে কর্ণফুলী নদীর দুই পাড়ের দুই পরিচয় ছিল। এখন টানেলের কারণে দূর হলো শহর-গ্রামের সেই ব্যবধান। কর্ণফুলীর আনোয়ারা প্রান্তেও এখন অর্থনীতির অপার সম্ভাবনার হাতছানি দিচ্ছে।
চট্টগ্রাম শহরের সবচেয়ে কাছের উপজেলা হলেও আনোয়ারা-কর্ণফুলী যেন অনেকটাই পিছিয়ে ছিল উন্নয়নে। অথচ ১৯৯৫ সালের মহাপকিল্পনায় চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) আনোয়ারা উপজেলাকে (তখনো কর্ণফুলী উপজেলা হয়নি) গ্রোথ সেন্টার হিসেবে উল্লেখ করে। সেই উপজেলা ঘিরে তাই নেওয়া হয় কয়েটি প্রকল্পও। কিন্তু পরবর্তীতে সেসবের বাস্তবায়ন হয়েছে খুব কমই। অবশেষে সেই গ্রোথ সেন্টারে উন্নয়নের ফসল ফলেছে। আনোয়ারা আর গ্রাম নয়, টানেলের কল্যাণে এখন উপশহর। কেননা টানেলের এক প্রান্ত যে পড়েছে এই প্রান্তেই।
টানেলের কারণে উন্নত জীবনযাত্রা:
একদিকে ভাঙা, অন্যদিকে সরু। একটা সময় এমন সড়কের জন্য দক্ষিণ চট্টগ্রামে যেতে অবর্নণীয় যন্ত্রণায় পড়তে হতো মানুষকে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা চলে যেত কেবল আনোয়ারা সীমান্ত পার হতেই। টানেলের জন্য আনোয়ারা-বাঁশখালী প্রবেশমুখের সেই সড়কটিই এখন উন্নীত করা হয়েছে ছয় লেনে। যার কারণে চোখের পলকেই পৌঁছে যাওয়া যাচ্ছে বাঁশখালী সড়কে। টানেলের কারণে প্রশস্ত করা হয়েছে পটিয়া-চন্দনাইশগামী সড়কটিও।
বাঁশখালীর বাসিন্দা ও সংবাদকর্মী শিব্বির আহমদ রানা সেটিই যেন বলছিলেন। তিনি বলেন, ‘টানেল হয়েছে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে। কিন্তু তার সুফল পাচ্ছি আমরা বাঁশখালীবাসীও। টানেলের কারণে আনোয়ারা-বাঁশখালী সড়কের প্রবেশমুখটা এখন ছয় লেনে উন্নীত হওয়ায় আর ঘণ্টার পর ঘণ্টা জ্যামে দাঁড়িয়ে থাকতে হয় না।
টানেলকে ঘিরে শুধু সড়কের উন্নয়ন নয়। হয়েছে পোশাক, ওষুধ ও ইস্পাত কারখানা, বাণিজ্যিক মার্কেট, রেস্তোরাঁ, হাসপাতালসহ নানা প্রতিষ্ঠান হচ্ছে। এর মধ্যে কিছু স্থাপনা দাঁড়িয়ে গেছে। আর কিছু গড়ে উঠার প্রক্রিয়ায় আছে। সরেজমিনে দেখা গেছে এই চিত্র।
সেসব তুলে ধরে কালাবিবির দিঘী এলাকার বাসিন্দা ফাহিম আসাদ বাবু বলেন, ‘একটা সময় আমরাই কাজের খোঁজে শহরে যেতাম। এখন আর সেই দৃশ্য নেই। এখন শহর থেকেই মানুষ আমাদের এখানে আসছে, কাজের জন্য। এ থেকেই বুঝে নিন-টানেল আমাদের জন্য কি সুসংবাদ বয়ে এনেছে।’
টানেলের কারণে গোলকাটা এলাকায় গড়ে উঠেছে আনোয়ার মা-শিশু জেনারেল হাসপাতাল অ্যান্ড ডায়াগনিস্টিক সেন্টার নামের একটি চিকিৎসা সেবা প্রতিষ্ঠান। সেখানে চিকিৎসা নিতে আসা গৃহবধূ কোহিনূর হেলাল বলেন, ‘একটা সময় কোনো অসুখ হলেই আমাদের দৌঁড়াতে হতো চট্টগ্রাম শহরে। কখনো ভাঙা সড়কে, কখনো নৌ পথে আমাদের বহু কষ্টে যেতে হতো। এখন টানেলকে ঘিরে আমাদের এখানেও গড়ে উঠছে হাসপাতাল। সেজন্য আমাদের দুর্ভোগও কমেছে।
টানেলের কারণে এক সময়ের অন্ধকারে ডুবে থাকা এলাকাটি এখন জেগে থাকবে ২৪ ঘণ্টা। সেই বিবেচনায় কিনা কালাবিবির দিঘী এলাকায় ২৪ ঘণ্টার হোটেল খোলা হয়েছে। ‘টানেল রেস্টুরেন্ট অ্যান্ড বিরিয়ানি হাউস’ নামের ওই হোটেলটি নাকি জেগে থাকবে দিনরাত। সেটিই বললেন ওই হোটেলের মালিক ইশরাক রাইয়ান। তিনি বলেন, একটা সময় সন্ধ্যা হলেই আমাদের এলাকা ঘুমিয়ে পড়ত। পথেঘাটে তেমন একটা মানুষও দেখা যেত না। এখন আর সেই দিন নেই। এখন ২৪ ঘণ্টাই মানুষের আনাগোনা। টানেল চালুর পর সেটি আরও বহুগুণ বাড়বে। সেজন্য্য এই হোটেলটি চালু করেছি।’
টানেলের আগে ও পরের চিত্র:
সম্ভাব্যতা সমীক্ষা প্রতিবেদন (ফিজিবিলিটি স্টাডি রিপোর্ট) অনুযায়ী এই টানেল প্রায় ৫০ হাজার একর জায়গায় তৈরি করবে নতুন অর্থনৈতিক সম্ভাবনা। টানেলের আনোয়ারা প্রান্তে হবে অর্থনীতির নতুন দ্বার। এতবছর ধরে শিল্প কারখানার ৮৫ শতাংশই ছিল কর্ণফুলী নদীর চ্টগ্রাম শহর অংশের পাড়ে। মাত্র ১৫ শতাংশই ছিল আনোয়ারা পাড়ে। সেটি এখন সমতায় না আসলেও পার্থক্যটা কাছাকাছি চলে আসবে বলে মনে করা হচ্ছে। টানেলের আগে কারখানা ছিল মাত্র ১৫ শ একর জায়গায়। টানেলের পরে সেটি বহুগুণ বেড়ে ১২ হাজার একর জায়গায় পৌঁছাবে।
টানেলের আগে শিল্প কারখানা ছিল মাত্র ১ দশমিক ৭ শতাংশ। টানেলের পর সেটি দাাঁড়াবে ২৪ শতাংশে। বাড়বে আবাসনও। এখন আবাসান আছে ১০ শতাংশ, সেটি বেড়ে দাঁড়াবে ২০ শতাংশে। শিল্প কারখানা আর আবাসনের দাপটে অবশ্য কমবে কৃষি ও মাছ চাষ। এখন কৃষি ও মাছ চাষ হয় ৪৭ শতাংশ। সেটি কমে নেমে আসবে ২১ শতাংশে। টানেলের কারণে দূরত্বও কমবে বহুগুণ।
শিল্প-কারখানার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়বে কর্মসংস্থানও। সম্ভাবত্য যাচাইয়ের সমীক্ষা বলছে, শিল্পায়ন ও যোগাযোগের সঙ্গে এখানে প্রতি বছর ১৭ হাজার নতুন কর্মসংস্থান তৈরি হবে। এতে কমবে বেকার। কমবে দারিদ্রতার হার। আর দেশের জিডিপিতে টানেলের অবদান হবে ০.১৬ শতাংশ।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক এইচএম সেলিমুল্লাহ টানেলের কারণে অর্থনীতির ব্যাপক সম্ভাবনা দেখছেন। তিনি বলেছেন, ‘টানেলের কারণে ব্যবসা-বাণিজ্য, কর্মসংস্থান, পণ্য সামগ্রীর সেবার উৎপাদন ও সরবরাহ বহুগুণ বেড়ে যাবে। এই অবদানগুলাকে যখন আমরা জিডিপিতে মোট মূল্য আকারে হিসাব করব তখন জিডিপিতে টানেলের অবদানটা দেখব। সেটি আমরা হিসেব করে দেখছি একটা বিশাল একটা আকারের অবদান।’
টানেলের কারণে দক্ষিণ চট্টগ্রামে ব্যাপক ইতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় আনোয়ারা-কর্ণফুলী আসনের সংসদ সদস্য ও ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ। তিনি বলেন একসময় আনোয়ারাসহ দক্ষিণ চট্টগ্রাম ছিল অবহেলিত। এখন আর সেটি নেই। টানেলসহ সরকারের ব্যাপক উন্নয়ন কর্মযজ্ঞের কারণে এটিই এখন অত্যন্ত সম্ভাবনাময় একটি এলাকা।

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সঞ্চয় করে রাখুন

জনপ্রিয় সংবাদ

রূপগঞ্জে বস্ত্র ও পাটমন্ত্রীর নির্দেশে নির্মিত চার সড়কের উদ্বোধন।।

পেকুয়ায় বেড়িবাঁধ ভেঙে লোকালয়ে প্লাবিত,২ শত পরিবার পানিবন্দী।।

সংবাদ প্রকাশের পর কৈবর্তখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষককে শোকজ

বঙ্গবন্ধু টানেল ঘিরে শিল্পের নতুন সম্ভাবনা।।  

আপডেট সময় : 08:56:34 am, Saturday, 28 October 2023
তৌহিদ বেলাল
ব্যুরো চিফ ।। 
একপাড়ে শহর। অন্যপাড়ে উপকূল! এক পাড়ে ঝলমলে আলোর রোশনাই, অন্যপাড়ে অন্ধকার! বহু বছর ধরে কর্ণফুলী নদীর দুই পাড়কে মানুষ চিনে আসছে এভাবেই। এই পার্থক্যের কারণে অর্থনীতি আর জীবনযাত্রার মানেও ছিল বহু ফারাক। এক পাড়ে গড়ে উঠেছে বন্দর তেল শোধনাগারসহ কত শত স্থাপনা। অন্যপাড়ে ছিল ষোলকলা অবহেলা। অথচ দুই পাড়ের দূরত্ব এক কিলোমিটারও নয়।
এত কাছে, তবুও কত দূরে’র সেই দূরত্ব যেন মিটিয়ে দিল ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল’। শুধুমাত্র যোগাযোগ ব্যবস্থার অনুন্নয়নের কারণে এত বছর ধরে কর্ণফুলী নদীর দুই পাড়ের দুই পরিচয় ছিল। এখন টানেলের কারণে দূর হলো শহর-গ্রামের সেই ব্যবধান। কর্ণফুলীর আনোয়ারা প্রান্তেও এখন অর্থনীতির অপার সম্ভাবনার হাতছানি দিচ্ছে।
চট্টগ্রাম শহরের সবচেয়ে কাছের উপজেলা হলেও আনোয়ারা-কর্ণফুলী যেন অনেকটাই পিছিয়ে ছিল উন্নয়নে। অথচ ১৯৯৫ সালের মহাপকিল্পনায় চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) আনোয়ারা উপজেলাকে (তখনো কর্ণফুলী উপজেলা হয়নি) গ্রোথ সেন্টার হিসেবে উল্লেখ করে। সেই উপজেলা ঘিরে তাই নেওয়া হয় কয়েটি প্রকল্পও। কিন্তু পরবর্তীতে সেসবের বাস্তবায়ন হয়েছে খুব কমই। অবশেষে সেই গ্রোথ সেন্টারে উন্নয়নের ফসল ফলেছে। আনোয়ারা আর গ্রাম নয়, টানেলের কল্যাণে এখন উপশহর। কেননা টানেলের এক প্রান্ত যে পড়েছে এই প্রান্তেই।
টানেলের কারণে উন্নত জীবনযাত্রা:
একদিকে ভাঙা, অন্যদিকে সরু। একটা সময় এমন সড়কের জন্য দক্ষিণ চট্টগ্রামে যেতে অবর্নণীয় যন্ত্রণায় পড়তে হতো মানুষকে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা চলে যেত কেবল আনোয়ারা সীমান্ত পার হতেই। টানেলের জন্য আনোয়ারা-বাঁশখালী প্রবেশমুখের সেই সড়কটিই এখন উন্নীত করা হয়েছে ছয় লেনে। যার কারণে চোখের পলকেই পৌঁছে যাওয়া যাচ্ছে বাঁশখালী সড়কে। টানেলের কারণে প্রশস্ত করা হয়েছে পটিয়া-চন্দনাইশগামী সড়কটিও।
বাঁশখালীর বাসিন্দা ও সংবাদকর্মী শিব্বির আহমদ রানা সেটিই যেন বলছিলেন। তিনি বলেন, ‘টানেল হয়েছে কর্ণফুলী নদীর তলদেশে। কিন্তু তার সুফল পাচ্ছি আমরা বাঁশখালীবাসীও। টানেলের কারণে আনোয়ারা-বাঁশখালী সড়কের প্রবেশমুখটা এখন ছয় লেনে উন্নীত হওয়ায় আর ঘণ্টার পর ঘণ্টা জ্যামে দাঁড়িয়ে থাকতে হয় না।
টানেলকে ঘিরে শুধু সড়কের উন্নয়ন নয়। হয়েছে পোশাক, ওষুধ ও ইস্পাত কারখানা, বাণিজ্যিক মার্কেট, রেস্তোরাঁ, হাসপাতালসহ নানা প্রতিষ্ঠান হচ্ছে। এর মধ্যে কিছু স্থাপনা দাঁড়িয়ে গেছে। আর কিছু গড়ে উঠার প্রক্রিয়ায় আছে। সরেজমিনে দেখা গেছে এই চিত্র।
সেসব তুলে ধরে কালাবিবির দিঘী এলাকার বাসিন্দা ফাহিম আসাদ বাবু বলেন, ‘একটা সময় আমরাই কাজের খোঁজে শহরে যেতাম। এখন আর সেই দৃশ্য নেই। এখন শহর থেকেই মানুষ আমাদের এখানে আসছে, কাজের জন্য। এ থেকেই বুঝে নিন-টানেল আমাদের জন্য কি সুসংবাদ বয়ে এনেছে।’
টানেলের কারণে গোলকাটা এলাকায় গড়ে উঠেছে আনোয়ার মা-শিশু জেনারেল হাসপাতাল অ্যান্ড ডায়াগনিস্টিক সেন্টার নামের একটি চিকিৎসা সেবা প্রতিষ্ঠান। সেখানে চিকিৎসা নিতে আসা গৃহবধূ কোহিনূর হেলাল বলেন, ‘একটা সময় কোনো অসুখ হলেই আমাদের দৌঁড়াতে হতো চট্টগ্রাম শহরে। কখনো ভাঙা সড়কে, কখনো নৌ পথে আমাদের বহু কষ্টে যেতে হতো। এখন টানেলকে ঘিরে আমাদের এখানেও গড়ে উঠছে হাসপাতাল। সেজন্য আমাদের দুর্ভোগও কমেছে।
টানেলের কারণে এক সময়ের অন্ধকারে ডুবে থাকা এলাকাটি এখন জেগে থাকবে ২৪ ঘণ্টা। সেই বিবেচনায় কিনা কালাবিবির দিঘী এলাকায় ২৪ ঘণ্টার হোটেল খোলা হয়েছে। ‘টানেল রেস্টুরেন্ট অ্যান্ড বিরিয়ানি হাউস’ নামের ওই হোটেলটি নাকি জেগে থাকবে দিনরাত। সেটিই বললেন ওই হোটেলের মালিক ইশরাক রাইয়ান। তিনি বলেন, একটা সময় সন্ধ্যা হলেই আমাদের এলাকা ঘুমিয়ে পড়ত। পথেঘাটে তেমন একটা মানুষও দেখা যেত না। এখন আর সেই দিন নেই। এখন ২৪ ঘণ্টাই মানুষের আনাগোনা। টানেল চালুর পর সেটি আরও বহুগুণ বাড়বে। সেজন্য্য এই হোটেলটি চালু করেছি।’
টানেলের আগে ও পরের চিত্র:
সম্ভাব্যতা সমীক্ষা প্রতিবেদন (ফিজিবিলিটি স্টাডি রিপোর্ট) অনুযায়ী এই টানেল প্রায় ৫০ হাজার একর জায়গায় তৈরি করবে নতুন অর্থনৈতিক সম্ভাবনা। টানেলের আনোয়ারা প্রান্তে হবে অর্থনীতির নতুন দ্বার। এতবছর ধরে শিল্প কারখানার ৮৫ শতাংশই ছিল কর্ণফুলী নদীর চ্টগ্রাম শহর অংশের পাড়ে। মাত্র ১৫ শতাংশই ছিল আনোয়ারা পাড়ে। সেটি এখন সমতায় না আসলেও পার্থক্যটা কাছাকাছি চলে আসবে বলে মনে করা হচ্ছে। টানেলের আগে কারখানা ছিল মাত্র ১৫ শ একর জায়গায়। টানেলের পরে সেটি বহুগুণ বেড়ে ১২ হাজার একর জায়গায় পৌঁছাবে।
টানেলের আগে শিল্প কারখানা ছিল মাত্র ১ দশমিক ৭ শতাংশ। টানেলের পর সেটি দাাঁড়াবে ২৪ শতাংশে। বাড়বে আবাসনও। এখন আবাসান আছে ১০ শতাংশ, সেটি বেড়ে দাঁড়াবে ২০ শতাংশে। শিল্প কারখানা আর আবাসনের দাপটে অবশ্য কমবে কৃষি ও মাছ চাষ। এখন কৃষি ও মাছ চাষ হয় ৪৭ শতাংশ। সেটি কমে নেমে আসবে ২১ শতাংশে। টানেলের কারণে দূরত্বও কমবে বহুগুণ।
শিল্প-কারখানার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়বে কর্মসংস্থানও। সম্ভাবত্য যাচাইয়ের সমীক্ষা বলছে, শিল্পায়ন ও যোগাযোগের সঙ্গে এখানে প্রতি বছর ১৭ হাজার নতুন কর্মসংস্থান তৈরি হবে। এতে কমবে বেকার। কমবে দারিদ্রতার হার। আর দেশের জিডিপিতে টানেলের অবদান হবে ০.১৬ শতাংশ।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক এইচএম সেলিমুল্লাহ টানেলের কারণে অর্থনীতির ব্যাপক সম্ভাবনা দেখছেন। তিনি বলেছেন, ‘টানেলের কারণে ব্যবসা-বাণিজ্য, কর্মসংস্থান, পণ্য সামগ্রীর সেবার উৎপাদন ও সরবরাহ বহুগুণ বেড়ে যাবে। এই অবদানগুলাকে যখন আমরা জিডিপিতে মোট মূল্য আকারে হিসাব করব তখন জিডিপিতে টানেলের অবদানটা দেখব। সেটি আমরা হিসেব করে দেখছি একটা বিশাল একটা আকারের অবদান।’
টানেলের কারণে দক্ষিণ চট্টগ্রামে ব্যাপক ইতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় আনোয়ারা-কর্ণফুলী আসনের সংসদ সদস্য ও ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ। তিনি বলেন একসময় আনোয়ারাসহ দক্ষিণ চট্টগ্রাম ছিল অবহেলিত। এখন আর সেটি নেই। টানেলসহ সরকারের ব্যাপক উন্নয়ন কর্মযজ্ঞের কারণে এটিই এখন অত্যন্ত সম্ভাবনাময় একটি এলাকা।