Dhaka , Wednesday, 25 December 2024
নিবন্ধন নাম্বারঃ ১১০, সিরিয়াল নাম্বারঃ ১৫৪, কোড নাম্বারঃ ৯২
শিরোনাম ::
চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে পূর্বশত্রুতার জেরে হত্যা মামলা সাজিয়ে হয়রানীর অভিযোগ।। জাহাজে শ্রমিক হত্যা- জড়িতদের গ্রেপ্তার না করলে কর্মবিরতির হুঁশিয়ারি।। মেহেরপুরে পেঁয়াজ চাষিদের মাথায় হাত।। ফরিদপুর জেলা পুলিশের মাসিক অপরাধ পর্যালোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।। ঢাকা থেকে কাশিয়ানী জংশন হয়ে খুলনা ও বেনাপোলে নতুন দুই জোড়া ট্রেন উদ্বোধন।। জলবায়ু প্রশমনে নতুন এনডিসিতে ভূমি, বন এবং জলাভূমিকে অন্তর্ভুক্ত করা হবে- পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।। বর্তমান সময়ে সাংবাদিকদের ভূমিকা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা।। বড়দিন উপলক্ষে প্রধান উপদেষ্টার শুভেচ্ছা বিনিময় প্রত্যেক ধর্মে শান্তির বাণী আছে সেই বাণী নিজের মধ্যে স্থাপন করতে হবে- প্রধান উপদেষ্টা।। ধামরাইয়ের সাবেক মেয়র কবীর মোল্লাকে ছাত্র হত্যার মামলায় গ্রেফতার করে র‌্যাব।। রাস্তা কেটে যুবলীগ নেতার সবজি চাষ প্রতিবাদ করায় পিটিয়ে আহত তাঁতীদল নেতাকে।। রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আগুন-নিহত ২ পুড়েছে শত শত ঘর।। গাজীপুরে পুলিশের  মাসিক প্রশাসনিক ও অপরাধ সভা অনুষ্ঠিত।। রূপগঞ্জে শ্রাবণধারা নামের অবৈধ শিশুখাদ্য কারখানায় প্রশাসনের অভিযান -কারখানা সিলগালা-অবৈধ পন্য ধ্বংস।। রূপগঞ্জে কৃষি জমিতে জোরপূর্বক বালু ভরাট করায় ভূমিদস্যু দালাল চক্রের সদস্যকে গণধোলাই দিলো কৃষকরা।। কালিরছড়া খাল পরিদর্শনে চসিক মেয়র ডা. শাহাদাত।। কালিয়াকৈর দৈনিক ইওেফাক পএিকার ৭২ তম প্রতিষ্ঠাতা বার্ষিকী পালন।। ভাবিকে খুন করে তাবলিগ জামায়াতে যান দেবর অতঃপর হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার।। পাইকগাছা আইনশৃঙ্খলা ও সমন্বয় কমিটির মাসিক সভা।। আমীরে জামায়াতের আগমন উপলক্ষে সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময়।। হলদিয়া আওয়ামীলীগ নেতা প্রতারক দিদারুল আলম প্রতারণা মামলায় গ্রেফতার।। ‎গণহত্যার সঙ্গে জড়িতদের বিএনপিতে নেওয়া হবে না- ফখরুল।। রাত হলেই পদ্মা নদীতে শুরু হয় বালু লুটের মহোৎসব হুমকির মুখে তীররক্ষা বাঁধ।। ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় ৫আগস্টের মতো রাজপথে নামতে হবে।। লাশ গোসলের সময় দেখা আঘাতের চিহৃ স্ত্রী গ্রেপ্তার।।  নোয়াখালীতে ছাত্র-জনতার ওপর হামলা উপজেলা যুবলীগের আহ্বায়ক গ্রেপ্তার।। জাহাজে নিয়োগে দেশের মেরিনারদের প্রাধান্য দেওয়া হবে – নৌপরিবহন উপদেষ্টা।। গাংনীতে অভিভাবক সমাবেশ অনুষ্ঠিত।। যাকাত বোর্ড হতে চলতি অর্থবছরে দরিদ্রদের মাঝে ১১ কোটি টাকা বিতরণের প্রস্তাব অনুমোদিত।। জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় তরুণদের প্রস্তুতি নিতে হবে এবং উন্নয়নের মডেল পরিবর্তন করতে হবে- পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।। দৈনিক বাংলাদেশ সমাচার’র ৯ম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উৎসবে বহুমুখী শিল্প প্রতিভাবান ব্যক্তিত্ব ড. খান আসাদুজ্জামান-এর একক সংগীত সন্ধ্যা অনুষ্ঠিত।।

নানা অনিয়মে চলছে ইট ভাটা, হুমকিতে জনস্বাস্থ্য-পরিবেশ

  • Reporter Name
  • আপডেট সময় : 04:43:06 pm, Wednesday, 7 December 2022
  • 128 বার পড়া হয়েছে

নানা অনিয়মে চলছে ইট ভাটা, হুমকিতে জনস্বাস্থ্য-পরিবেশ

মোঃ সৌরভ হোসাইন (সবুজ)

স্টাফ রিপটার সিরাজগঞ্জ।।

সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায় সরকারি নীতিমালা উপেক্ষা করে চলছে ইট ভাটা। অধিকাংশ ভাটা পরিবেশগত ছাড়পত্র ছাড়াই ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায়, মন্দির ও আবাসিক এলাকাসহ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আশপাশে ও ফসলি জমিতে স্থাপন করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, ভাটায় প্রকাশ্যে পোড়ানো হচ্ছে কাঠ। এতে স্বাস্থ্যঝুঁকির পাশাপাশি মারাত্মক হুমকির মুখে রয়েছে স্বাস্থ্য ও পরিবেশ। আইন অমান্য করে দিনের পর দিন ইট ভাটার সংখ্যা বাড়লেও সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তা ও প্রশাসনের নীরব ভূমিকার ব্যাপারে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
সংশ্লিষ্ট বিভাগের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, উপজেলায় মোট সমিতিভুক্ত ইট ভাটার সংখ্যা ২৭টি। এছাড়াও সমিতির বাইরে আরো বেশ কয়েকটি ইটভাটা রয়েছে বলে দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে। এদিকে ভাটায় উন্নত প্রযুক্তির জিগজ্যাগ কিলন, ভার্টিক্যাল স্যাফট ব্রিককিলন ও টানেল কিলন ব্যবহারের নির্দেশনা থাকলেও ভাটাগুলোতে তা ব্যবহার করা হচ্ছে না।
সরজমিনে উপজেলার রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়নের চৈত্রহাটি এইচআরবি ও এইচআরএম দুটি ইট ভাটায় সরজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, ভাটা দু’টি ফসলি জমির মধ্যে স্থাপন করা হয়েছে। দুরত্বের নিয়ম না মেনে একেবারে পাশাপাশি গড়ে তোলা ভাটা দু’টির মাঝখানে রয়েছে দুইশো বছরের পুরনো ঐতিহাসিক চৈত্রহাটি মহা কালী মন্দির। এখানে দেশ ও বিদেশের বহু পর্যটক এই মন্দিরটি প্রতিদিন দর্শন করতে আসেন। সেখানে আগত নারী-পুরুষ ও বিশেষ করে শিশুরা মারাত্মক ভাবে স্বাস্থ্য ঝুঁকির কবলে পড়ছেন বলে তারা অভিযোগ করেন।
চৈত্রহাটি বাজার মসজিদের পাশে গড়ে তোলা হয়েছে এইচআরবি ইটভাটা। মসজিদে আসা পাঁচ ওয়াক্ত নামাজীদের সর্বদা স্বাস্থ্য ঝুঁকি নিয়ে ইবাদত বন্দেগি করতে হয়। অবৈধভাবে গড়ে ওঠা এসব ইটভাটায় পরিবেশের ছাড়পত্র ছাড়াই এখনো পোড়ানো হচ্ছে কাঠ ও কয়লা। কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে কৃষি জমির মাটি। ফলে একদিকে নির্বিচারে উজাড় হচ্ছে বন, অন্যদিকে উর্বরতা হারিয়ে চাষের অযোগ্য হয়ে পড়ছে কৃষি জমি।
বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা গেছে, আকার ভেদে একটি ইট ভাটা গড়তে কমপক্ষে ৩০-৩৫ বিঘা জমির প্রয়োজন হয়। তবে ক্ষেত্র বিশেষে ৪০ থেকে ৪৫ বিঘা জমিরও প্রয়োজন হয়। আর এসব ইট ভাটা গড়ে ওঠার কারণে উপজেলার প্রায় এক হাজার ৪’শ বিঘা ফসলি জমি নষ্ট হচ্ছে।
বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৯৫ (সংশোধিত ২০১০) এবং পরিবেশ সংরক্ষণ বিধিমালা ১৯৯৭ ধারায় কাঠ দিয়ে ইট পোড়ানোকে অবৈধ ঘোষণা করেছেন আদালত। এদিকে, ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন ২০১৩ তে বলা হয়েছে কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, আবাসিক এলাকা, হাট-বাজার; অফিস আদালত, সামাজিক বনায়ন, মাছের অভয়ারণ্য, কৃষি জমিতে ইট ভাটা স্থাপন করা যাবে না মর্মে আইন রয়েছে। আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে ফসলি জমি ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সংলগ্ন করেই অধিকাংশ ইট ভাটা স্থাপন করা হয়েছে উল্লাপাড়ায়।
এইচআরবি ইট ভাটার ম্যানেজার আব্দুর রউফ জানান, সাধারণত মধ্যম সারির একটি ভাটায় বছরে ৬০ থেকে ৭০ লাখ ইট পোড়ানো হয়। আর প্রতি আট হাজার ইটের জন্য কাঁচামাল হিসাবে ব্যবহার হয় এক হাজার ঘনফুট মাটি। সেই মাটির জোগান আসে কৃষি জমি থেকে। এজন্য প্রতিটি ভাটায় বছরে পাঁচ থেকে ছয় একর জমির উপরিভাগের মাটি ব্যবহার করা হয়। সে হিসাবে উপজেলার ৩৫টি ভাটাতে প্রতি বছর অন্তত ১৫০ একর জমির মাটির স্টপ সয়েল ব্যবহার করা হচ্ছে। তিনি আরও জানান, প্রতিটি ইট ভাটায় দেদাচ্ছে পোড়ানোর হচ্ছে কাঠ। এতে উজাড় হচ্ছে বন, বেড়ে যাচ্ছে মানুষের স্বাস্থ্য ঝুঁকি, ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে পরিবেশ।
চৈত্রহাটি মন্দিরের পুরোহিত শ্রী সুবল চন্দ্র চক্রবর্তী জানান, মন্দির, মসজিদ ও জনবসতি এলাকায় ইটভাটা স্থাপন করা আইনগত ভাবে নিষেধ রয়েছে। আইন অমান্য করে মন্দির এলাকায় ইটভাটা স্থাপন করা হয়েছে। এতে মন্দিরে আগত ভক্ত ও অনরাগীরা স্বাস্থ্য ঝুঁকির সম্মুখিন হচ্ছেন।
এইচআরবি ইটভাটার যৌথ মালিকের একজন মো. আতাউর রহমান রাজু জানান, অধিকাংশ ভাটাই কৃষি জমিতে স্থাপিত। আমারটাও তার ব্যতিক্রম নয়। পরিবেশ ছাড়পত্রের ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, আবেদন করেছি কিন্তু ভাটা আইনের শর্তাবলী পুরণ করতে না পারায় পরিবেশ অধিদপ্তর বর্তমানে ছাড়পত্র দিচ্ছে না। এভাবেই আমরা চালাচ্ছি।
এইচআরএম ইটভাটার মালিক বোরহান উদ্দিন জানান, কৃষকের ফসলি জমি ৫ বছর মেয়াদে লিজ নিয়ে ভাটা স্থাপন করেছি। পরিবেশ ছাড়পত্র নেই। অধিদপ্তরে আবেদন করেছি।
উল্লাপাড়া ইটভাটা মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. কামরুজ্জামান বাবু জানান, উল্লাপাড়া উপজেলা ইটভাটা মালিক সমিতির আওতায় ২৭টি ভাটা রয়েছে। এছাড়া সমিতির বাইরেও বেশ কয়েকটি ভাটা রয়েছে।
উল্লাপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. আতাউল গনি ওসমানী বলেন, ইট ভাটার বিষাক্ত ধোঁয়ায় ব্রংকাইটিস, শ্বাসকষ্টসহ স্থানীয়দের মধ্যে শ্বসনতন্ত্রের বিভিন্ন রোগের প্রকোপ মারাত্মক ভাবে দেখা দিতে পারে।
কৃষিতে ইট ভাটার প্রভাব নিয়ে জানতে চাইলে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সুর্বণা ইয়াসমিন সুমি বলেন, গত তিন বছর হলো নতুন করে কোনো ভাটার অনুমোদন দেওয়া হয়নি। কৃষিজমির উপরি ভাগের মাটি কাটা হলে এর জমির উর্বরতা নষ্ট হয়ে যায়। এতে জমিতে ফসল উৎপাদন ব্যাপক হারে কমে যায়। ফসলি জমির মাটি কেটে ভাটায় ব্যবহার বন্ধে ও ফসলি জমির পাশে ইটভাটা স্থাপনে নিষেধাজ্ঞা আরোপের জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে আমরা লিখিতভাবে অনুরোধ জানাব।
আইন অমান্য করে মানুষের বসতবাড়ি, কৃষি জমিতে ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আশপাশে ভাটা স্থাপন, পরিচালনা ও অনিয়ম বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. উজ্জল হোসেন জানান, আইন আমান্য করে গড়ে ওঠা ইট ভাটা মালিকদের বিরুদ্ধে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সিরাজগঞ্জ পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মো. আব্দুল গফুর জানান, ইটভাটা নিয়ন্ত্রণ আইনের আলোকে নতুন করে ভাটাগুলোর তালিকা প্রণয়নের কাজ চলছে। অনিয়মের কোনো অভিযোগ পেলে খতিয়ে দেখা হবে।

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সঞ্চয় করে রাখুন

জনপ্রিয় সংবাদ

রূপগঞ্জে বস্ত্র ও পাটমন্ত্রীর নির্দেশে নির্মিত চার সড়কের উদ্বোধন।।

পেকুয়ায় বেড়িবাঁধ ভেঙে লোকালয়ে প্লাবিত,২ শত পরিবার পানিবন্দী।।

চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে পূর্বশত্রুতার জেরে হত্যা মামলা সাজিয়ে হয়রানীর অভিযোগ।।

নানা অনিয়মে চলছে ইট ভাটা, হুমকিতে জনস্বাস্থ্য-পরিবেশ

আপডেট সময় : 04:43:06 pm, Wednesday, 7 December 2022

মোঃ সৌরভ হোসাইন (সবুজ)

স্টাফ রিপটার সিরাজগঞ্জ।।

সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ায় সরকারি নীতিমালা উপেক্ষা করে চলছে ইট ভাটা। অধিকাংশ ভাটা পরিবেশগত ছাড়পত্র ছাড়াই ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায়, মন্দির ও আবাসিক এলাকাসহ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আশপাশে ও ফসলি জমিতে স্থাপন করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, ভাটায় প্রকাশ্যে পোড়ানো হচ্ছে কাঠ। এতে স্বাস্থ্যঝুঁকির পাশাপাশি মারাত্মক হুমকির মুখে রয়েছে স্বাস্থ্য ও পরিবেশ। আইন অমান্য করে দিনের পর দিন ইট ভাটার সংখ্যা বাড়লেও সংশ্লিষ্ট বিভাগের কর্মকর্তা ও প্রশাসনের নীরব ভূমিকার ব্যাপারে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
সংশ্লিষ্ট বিভাগের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, উপজেলায় মোট সমিতিভুক্ত ইট ভাটার সংখ্যা ২৭টি। এছাড়াও সমিতির বাইরে আরো বেশ কয়েকটি ইটভাটা রয়েছে বলে দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে। এদিকে ভাটায় উন্নত প্রযুক্তির জিগজ্যাগ কিলন, ভার্টিক্যাল স্যাফট ব্রিককিলন ও টানেল কিলন ব্যবহারের নির্দেশনা থাকলেও ভাটাগুলোতে তা ব্যবহার করা হচ্ছে না।
সরজমিনে উপজেলার রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়নের চৈত্রহাটি এইচআরবি ও এইচআরএম দুটি ইট ভাটায় সরজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, ভাটা দু’টি ফসলি জমির মধ্যে স্থাপন করা হয়েছে। দুরত্বের নিয়ম না মেনে একেবারে পাশাপাশি গড়ে তোলা ভাটা দু’টির মাঝখানে রয়েছে দুইশো বছরের পুরনো ঐতিহাসিক চৈত্রহাটি মহা কালী মন্দির। এখানে দেশ ও বিদেশের বহু পর্যটক এই মন্দিরটি প্রতিদিন দর্শন করতে আসেন। সেখানে আগত নারী-পুরুষ ও বিশেষ করে শিশুরা মারাত্মক ভাবে স্বাস্থ্য ঝুঁকির কবলে পড়ছেন বলে তারা অভিযোগ করেন।
চৈত্রহাটি বাজার মসজিদের পাশে গড়ে তোলা হয়েছে এইচআরবি ইটভাটা। মসজিদে আসা পাঁচ ওয়াক্ত নামাজীদের সর্বদা স্বাস্থ্য ঝুঁকি নিয়ে ইবাদত বন্দেগি করতে হয়। অবৈধভাবে গড়ে ওঠা এসব ইটভাটায় পরিবেশের ছাড়পত্র ছাড়াই এখনো পোড়ানো হচ্ছে কাঠ ও কয়লা। কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে কৃষি জমির মাটি। ফলে একদিকে নির্বিচারে উজাড় হচ্ছে বন, অন্যদিকে উর্বরতা হারিয়ে চাষের অযোগ্য হয়ে পড়ছে কৃষি জমি।
বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা গেছে, আকার ভেদে একটি ইট ভাটা গড়তে কমপক্ষে ৩০-৩৫ বিঘা জমির প্রয়োজন হয়। তবে ক্ষেত্র বিশেষে ৪০ থেকে ৪৫ বিঘা জমিরও প্রয়োজন হয়। আর এসব ইট ভাটা গড়ে ওঠার কারণে উপজেলার প্রায় এক হাজার ৪’শ বিঘা ফসলি জমি নষ্ট হচ্ছে।
বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৯৫ (সংশোধিত ২০১০) এবং পরিবেশ সংরক্ষণ বিধিমালা ১৯৯৭ ধারায় কাঠ দিয়ে ইট পোড়ানোকে অবৈধ ঘোষণা করেছেন আদালত। এদিকে, ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন ২০১৩ তে বলা হয়েছে কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, আবাসিক এলাকা, হাট-বাজার; অফিস আদালত, সামাজিক বনায়ন, মাছের অভয়ারণ্য, কৃষি জমিতে ইট ভাটা স্থাপন করা যাবে না মর্মে আইন রয়েছে। আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে ফসলি জমি ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সংলগ্ন করেই অধিকাংশ ইট ভাটা স্থাপন করা হয়েছে উল্লাপাড়ায়।
এইচআরবি ইট ভাটার ম্যানেজার আব্দুর রউফ জানান, সাধারণত মধ্যম সারির একটি ভাটায় বছরে ৬০ থেকে ৭০ লাখ ইট পোড়ানো হয়। আর প্রতি আট হাজার ইটের জন্য কাঁচামাল হিসাবে ব্যবহার হয় এক হাজার ঘনফুট মাটি। সেই মাটির জোগান আসে কৃষি জমি থেকে। এজন্য প্রতিটি ভাটায় বছরে পাঁচ থেকে ছয় একর জমির উপরিভাগের মাটি ব্যবহার করা হয়। সে হিসাবে উপজেলার ৩৫টি ভাটাতে প্রতি বছর অন্তত ১৫০ একর জমির মাটির স্টপ সয়েল ব্যবহার করা হচ্ছে। তিনি আরও জানান, প্রতিটি ইট ভাটায় দেদাচ্ছে পোড়ানোর হচ্ছে কাঠ। এতে উজাড় হচ্ছে বন, বেড়ে যাচ্ছে মানুষের স্বাস্থ্য ঝুঁকি, ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে পরিবেশ।
চৈত্রহাটি মন্দিরের পুরোহিত শ্রী সুবল চন্দ্র চক্রবর্তী জানান, মন্দির, মসজিদ ও জনবসতি এলাকায় ইটভাটা স্থাপন করা আইনগত ভাবে নিষেধ রয়েছে। আইন অমান্য করে মন্দির এলাকায় ইটভাটা স্থাপন করা হয়েছে। এতে মন্দিরে আগত ভক্ত ও অনরাগীরা স্বাস্থ্য ঝুঁকির সম্মুখিন হচ্ছেন।
এইচআরবি ইটভাটার যৌথ মালিকের একজন মো. আতাউর রহমান রাজু জানান, অধিকাংশ ভাটাই কৃষি জমিতে স্থাপিত। আমারটাও তার ব্যতিক্রম নয়। পরিবেশ ছাড়পত্রের ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, আবেদন করেছি কিন্তু ভাটা আইনের শর্তাবলী পুরণ করতে না পারায় পরিবেশ অধিদপ্তর বর্তমানে ছাড়পত্র দিচ্ছে না। এভাবেই আমরা চালাচ্ছি।
এইচআরএম ইটভাটার মালিক বোরহান উদ্দিন জানান, কৃষকের ফসলি জমি ৫ বছর মেয়াদে লিজ নিয়ে ভাটা স্থাপন করেছি। পরিবেশ ছাড়পত্র নেই। অধিদপ্তরে আবেদন করেছি।
উল্লাপাড়া ইটভাটা মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. কামরুজ্জামান বাবু জানান, উল্লাপাড়া উপজেলা ইটভাটা মালিক সমিতির আওতায় ২৭টি ভাটা রয়েছে। এছাড়া সমিতির বাইরেও বেশ কয়েকটি ভাটা রয়েছে।
উল্লাপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. আতাউল গনি ওসমানী বলেন, ইট ভাটার বিষাক্ত ধোঁয়ায় ব্রংকাইটিস, শ্বাসকষ্টসহ স্থানীয়দের মধ্যে শ্বসনতন্ত্রের বিভিন্ন রোগের প্রকোপ মারাত্মক ভাবে দেখা দিতে পারে।
কৃষিতে ইট ভাটার প্রভাব নিয়ে জানতে চাইলে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সুর্বণা ইয়াসমিন সুমি বলেন, গত তিন বছর হলো নতুন করে কোনো ভাটার অনুমোদন দেওয়া হয়নি। কৃষিজমির উপরি ভাগের মাটি কাটা হলে এর জমির উর্বরতা নষ্ট হয়ে যায়। এতে জমিতে ফসল উৎপাদন ব্যাপক হারে কমে যায়। ফসলি জমির মাটি কেটে ভাটায় ব্যবহার বন্ধে ও ফসলি জমির পাশে ইটভাটা স্থাপনে নিষেধাজ্ঞা আরোপের জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে আমরা লিখিতভাবে অনুরোধ জানাব।
আইন অমান্য করে মানুষের বসতবাড়ি, কৃষি জমিতে ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আশপাশে ভাটা স্থাপন, পরিচালনা ও অনিয়ম বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. উজ্জল হোসেন জানান, আইন আমান্য করে গড়ে ওঠা ইট ভাটা মালিকদের বিরুদ্ধে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সিরাজগঞ্জ পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মো. আব্দুল গফুর জানান, ইটভাটা নিয়ন্ত্রণ আইনের আলোকে নতুন করে ভাটাগুলোর তালিকা প্রণয়নের কাজ চলছে। অনিয়মের কোনো অভিযোগ পেলে খতিয়ে দেখা হবে।