আবু তালেব
লালপুর – নাটোর প্রতিনিধি।।
নাটোরের লালপুর উপজেলার গোপালপুর নর্থবেঙ্গল সুগার মিলস লিমিটেডে আখ মাড়াই চালুর সাত ঘণ্টা পর মিলের কেয়ারিং এ যান্ত্রিক ক্রটির কারণে আখ মাড়াই ও চিনি উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। পরে ১২ঘণ্টা পর ফের আখ মাড়াই ও চিনি উৎপাদন শুরু হয়েছে।
গতবছরও একইভাবে মিল চালুর পর মাড়াই ও চিনি উৎপাদন বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। এই পরিস্থিতি উত্তরণে মিলের মেশিন বা যন্ত্রাংশ আধুনিকায়ন করা প্রয়োজন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
শনিবার -১৬ নভেম্বর- সন্ধ্যায় নর্থবেঙ্গল সুগার মিলস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক খবির উদ্দিন মোল্যা এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
তিনি জানান- শুক্রবার -১৫ নভেম্বর- বিকেলে এই মিলের আখ মাড়াই কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান।
মিলে আখ মাড়াই ও চিনি উৎপাদন শুরু করা হয়। পরে উদ্বোধনের ৭ ঘণ্টা পর দিনগত রাত ১১টার দিকে হঠাৎ করে মিলের যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দেয়।
এ কারণে আখ মাড়াই ও চিনি উৎপাদন বন্ধ হয়ে যায়। এতে প্রায় ১২ঘণ্টা মিলে আখ মাড়াই ও চিনি উৎপাদন বন্ধ ছিল।
তিনি বলেন, হঠাৎ করে মিলের কেয়ারিং এ যান্ত্রিক ক্রটির কারণে মিলের আখ মাড়াই ও চিনি উৎপাদন বন্ধের খবর পাওয়ার পরপরই নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় ক্রটি মেরামত কার্যক্রম শুরু করা হয়। দীর্ঘ সময় চেষ্টার পর আজ শনিবার দুপুর ১২টার দিকে ফের আখ মাড়াই ও চিনি উৎপাদন শুরু হয়েছে। বর্তমানে আখ মাড়াই ও চিনি উৎপাদন অব্যাহত রয়েছে।
ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, ১৯৩৩ সালে প্রতিষ্ঠিত এই মিলের জন্য জাভা থেকে পুরোনো যন্ত্রাংশ কিনে এনে মিলটি চালু করা হয়। প্রথম দিকে মিলটি বেশ লাভজনক ছিল। পরে মিলের যন্ত্রাংশগুলো দুর্বল হয়ে পড়ার কারণে সঠিকভাবে প্রসেসিং আর হয় না। এতে চিনির পরিবর্তে মুলাসিসের পরিমাণ বেশি হয়। ফলে চিনি উৎপাদনের হার কম হয়। গত কয়েক বছর ধরে মিলে আখ মাড়াই ও চিনি উৎপাদন শুরু হলেই যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দিয়েছিল। স্থানীয় ব্যবস্থাপনায় বার বার ক্রটি মেরামত করে মিলে আখ মাড়াই ও চিনি উৎপাদন করা হয়। কিন্তু আজ পর্যন্ত মিলের যন্ত্রাংশ আধুনিকায়ন করা হয়নি।
তিনি আরও বলেন, এ অবস্থাতেও গত বছর মিলে আখ মাড়াই ও চিনি উৎপাদন করে ২০ কোটি ৯০ লাখ টাকা লাভ হয়েছে। তবে মিলের ৩৫০ কোটি টাকা ব্যাংকে ঋণ থাকায় বছরে ৫৯ কোটি টাকা ব্যাংককে সুদ দিতে হয়। ফলে উৎপাদনের লাভ হলেও সুদের কারণে প্রতিবছর মিলকে লোকসান গুনতে হয়। এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে মিলের যন্ত্রাংশ সম্পূর্ণভাবে আধুনিকায়ন করা প্রয়োজন। এজন্য সরকারকে প্রায় এক হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করতে হবে।
তবে বিদ্যমান পরিস্থিতিতে কিছু নতুন মেশিন বা যন্ত্রাংশ ক্রয়ে মেরামত প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে প্রায় দুই থেকে আড়াই কোটি টাকা প্রয়োজন। এটা করা গেলে মিলের উৎপাদন ক্ষমতা আরও বৃদ্ধি পাবে এবং মিলকে আর লোকসান গুনতে হবে না। বিষয়টি শিল্প উপদেষ্টা ও সচিবকে অবহিত করা হয়েছে। তারা বিষয়টি বিবেচনা করবেন বলে জানিয়েছেন। বর্তমানে যে সমস্ত যন্ত্রাংশ দিয়ে মিলটি চলছে, এমন দুর্বল যন্ত্রাংশের মিল আধুনিক বিশ্বে কোথাও নেই।
এদিকে নর্থ বেঙ্গল সুগার মিলস লিমিটেড সূত্রে জানা যায়, চলতি ২০২৪-২৫ আখ মাড়াই মৌসুমে ১১৭ কার্য দিবসে ২ লাখ মেট্রিক টন আখ মাড়াই করে চিনি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১৫ হাজার মেট্রিক টন। আর চিনি আহরণের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৭ দশমিক ৫০ ভাগ। গত ২০২৩-২৪ মাড়াই মৌসুমে ১১৪ কার্য দিবসে আখ মাড়াই হয়েছিল ১ লাখ ৮৮ হাজার ৬৩৮ দশমিক ২৯০ মেট্রিক টন। সেখানে চিনি উৎপাদন হয়েছিল ১০ হাজার ৬৬৭ দশমিক ৫০ মেট্রিক টন, এবং চিনি আহরণের মাত্রা ছিল ৫ দশমিক ৬৮ ভাগ।
এছাড়া চলতি মৌসুমে এই মিলে ১৭ হাজার ৫০০ একর জমিতে আখ রোপণ করা হয়েছে। এর মধ্যে মিলের নিজস্ব জমি রয়েছে ২ হাজার ৫০০ একর। গত বৃহস্পতিবার -১৩ নভেম্বর- থেকে মিলের ৩১টি ক্রয় কেন্দ্রের মাধ্যমে আখ কেনা শুরু হয়েছে। এ বছর প্রতি মণ আখের দাম ধরা হয়েছে মিল গেটে ২৪০ টাকা এবং ক্রয় কেন্দ্রে ২৩৭ টাকা।
তিনি বলেন, কোনো প্রকার দুর্ঘটনা না ঘটলে এবং চাষিরা সময়মতো ও সঠিকভাবে আখ সরবরাহ করলে চিনি উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা এবার অর্জিত হবে বলে আশা করছেন মিল কর্তৃপক্ষ। নর্থ বেঙ্গল সুগার মিলের আওতায় ১৭ হাজার আখ চাষি রয়েছেন। মোট শ্রমিক-কর্মচারী রয়েছে স্থায়ী- মৌসুমি ও কানামুনা মিলে ১১০০ জন।