Dhaka , Monday, 24 November 2025
নিবন্ধন নাম্বারঃ ১১০, সিরিয়াল নাম্বারঃ ১৫৪, কোড নাম্বারঃ ৯২
শিরোনাম ::
ঝালকাঠিতে এইচএসসি–আলিম কৃতি শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা ও ক্যারিয়ার কাউন্সেলিং অনুষ্ঠিত হালদা নদীতে উপজেলা প্রশাসনের অভিযান,এক লক্ষ টাকা অর্থদন্ড। চন্দনাইশে মানব কল্যাণ পরিষদের আয়োজনে বিনামূল্যে চক্ষু শিবির অনুষ্ঠিত রক্তাক্ত হত্যাকান্ডের পরও খুনিরা ধরাছোঁয়ার বাইরে জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধীদের জেরে ভাইয়ের হাতে ভাই খুন সংরক্ষণহীনতায় হারিয়ে যাচ্ছে হরিপুরের ঐতিহ্যবাহী রাজা গণেশের প্রাচীন নিদর্শন কালিয়াকৈরে বিএনপি’র ৩১ দফা বাস্তবায়নে লিফলেট বিতরণ  ও র‍্যালি অনুষ্ঠিত  সাভারে আওয়ামী লীগ নেতা গ্রেফতারের ঘটনা ভিন্ন খাতে নেওয়ার চেষ্টা মায়ানমার হতে মাদকের বিনিময়ে বাংলাদেশী সিমেন্ট পাচারকালে ৯ চোরাকারবারীকে আটক করেছে কোস্ট গার্ড আশা”বিশ্বের সবচাইতে ব্যয় সাশ্রয়ী এবং দ্রুত বর্ধনশীল ক্ষুদ্র ঋণ মডেল হিসেবে স্বীকৃতি অর্জনকারী সংস্থা:- মিনহাজুর রহমান সীমান্তে ১৫ বিজিবি’র মাদকবিরোধী তৎপরতা: দুই দিনে প্রায় ৮ লাখ টাকার মাদক ও চোরাচালান পণ্য জব্দ কর্মস্থলে অনুপস্থিতি ও শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে চাকরিচ্যুত ইবি অধ্যাপক রামু থানা পুলিশের অভিযানে মোরশেদ আলম নামের এক যুবক ই য়া বা সহ আটক ফতুল্লায় গৃহবধূর ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে খেলাফত মজলিসের প্রার্থী ইলিয়াস আহমদের গণসংযোগ নির্বাচনী সভায় জব্বার: কোরআনের আইন প্রতিষ্ঠায় জুলম-নির্যাতন দূর হবে কালিয়াকৈরে যুবনেতা খন্দকার মোশাররফ হোসেনের ৩৮ তম মৃত্যুবার্ষিকী পালন দৈনিক সংবাদের সম্পাদক আহমদুল কবিরের ২২ তম মৃত্যুবার্ষিকী পালন এনপিএস কক্সবাজার জেলা কমিটির অনুমোদন: ৩১ সদস্যের নতুন নেতৃত্ব ঘোষণা কক্সবাজারে “তারুণ্যের ভাবনায় ধানের শীষ” মহাসমাবেশে তরুণ ঢলের জোয়ার—উচ্ছ্বাসে মুখর পুরো শহর কালিয়াকৈরে বিএনপি’র ৩১ দফা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে লিফলেট বিতরণ ও র‍্যালি অনুষ্ঠিত পাইকগাছায় মৌসুমভিত্তিক বহুমুখী ফসল উৎপাদনে বদলে যাচ্ছে কৃষি অর্থনীতি কিশোরগঞ্জ বাজিতপুরে বি.এন.পি তৃণমূলের নেতাকর্মীর সঙ্গে জোট সঙ্গীর সংঘাত! রাতে অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে এলাকায় মহড়া,যৌথবাহিনীর অভিযানে আটক (২২) জলাবদ্ধতা নিরসন করে চাষীদের মুখে হাসি ফোটাবো’ উঠান বৈঠকে– তৃপ্তি হাটহাজারীতে সড়ক দুর্ঘটনায় দুজনের মৃত্যু।  হাতিয়াতে বিএনপির দু্গ্রুপের সংঘর্ষ, আহত-২২ নোয়াখালী-৬ আসনে বিএনপির প্রার্থী পরিবর্তনের দাবিতে পথসভা ছাত্রদল নেতা হত্যার বিচারের দাবিতে স্বজন ও এলাকাবাসীর মানববন্ধন ট্রেনে কাটা পড়ে ঈশ্বরদীতে নিহত ১ ইবির কলা অনুষদের তিন বিভাগে বাড়ছে ৩০টি আসন ফতুল্লায় ভাড়াবাড়িতে যুবকের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার

দৈনিক সংবাদের সম্পাদক আহমদুল কবিরের ২২ তম মৃত্যুবার্ষিকী পালন

  • Reporter Name
  • আপডেট সময় : 05:49:40 pm, Monday, 24 November 2025
  • 3 বার পড়া হয়েছে

 

অরবিন্দ রায়,

দৈনিক সংবাদের সম্পাদক আহমদুল কবির (মনু মিয়ার) ২২ তম মৃত্যু বার্ষিকী আজ সোমবার পালন করা হয়েছে । দৈনিক সংবাদের প্রধান সম্পাদক, গনতান্ত্রিক পার্টির সভাপতি, সাবেক সংসদ সদস্য, দেশের প্রগতিশীল ধারার রাজনীতির পুরোধা ব্যক্তিত্ব আহমদুল কবিরের (মনু মিয়া) ২২ তম মৃত্যুবার্ষিকী পলাশের ঘোড়াশাল পালন করা হবে । ২০০৩ সালের ২৪ নভেম্বর তিনি মৃত্যু বরন করেন।
মনু মিয়ার মৃত্য বার্ষিকী উপলক্ষে নরসিংদীর পলাশ উপজেলার ঘোড়াশালে তাঁর পরিবার ও আহমদুল কবির (মনু মিয়া) স্মৃতি সংসদের উদ্যোগে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে।
মনু মিয়া স্মৃতি সংসদ, বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের পক্ষ থেকে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহন করা হয়েছে।
কর্মসূচি সম্পর্কে আহমদুল কবির (মনু মিয়া) স্মৃতি সংসদের ঘোড়াশাল পৌরসভার
সভাপতি মো. নুরুল ইসলাম জানান, ফজর বাদ নিজ বাড়িতে কোরান খতম, সকাল সাড়ে ৮ টায় দুস্হদের মাঝে খাবার বিতরন,
সকাল সাড়ে ১০টায় মরহুমের কবরে পুষ্প স্তবক অর্পন ও শিক্ষার্থীদের মাঝে বৃত্তি প্রদান,বাদ যোহর অতিথি আপ্যায়ন ও দোয়া পাঠ, এতিমখানায় খাবার বিতরন, ঘোড়াশাল পৌরসভার ৭ নং ওর্য়াডে ১৮ টি দোয়া মাহফিল ও তবারক বিতরন।
জানা যায়, আহমদুল কবির ছিলেন ব্রিটিশ, পাকিস্তান ও স্বাধীন বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও সাংবাদিকতা অঙ্গনের এক প্রতিভাদীপ্ত ব্যক্তিত্ব। আপসহীন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের জন্য পাকিস্তান আমল থেকে স্বাধীন বাংলাদেশে তিনি ছিলেন একজন ভিন্নমাত্রার রাজনীতিক। মূলত তার রাজনৈতিক দর্শন ছিল এদেশের সাধারণ মানুষের অধিকার আদায়ে কাজ করা। তদানীন্তন পাকিস্তানের রাজনীতিতে অসাম্প্রদায়িক, গণতান্ত্রিক ও প্রগতিশীল যে ধারা এদেশে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে বিপুল জনগোষ্ঠীর রাজনৈতিক চেতনাকে নাড়া দিয়েছিল, সেই ধারার পুরোধা ব্যক্তিত্ব ছিলেন আহমদুল কবির।
স্বাধীন বাংলাদেশে প্রগতিশীল, গণতান্ত্রিক, সাম্প্রদায়িকতা বিরোধী রাজনীতির নিবেদিত প্রাণ ছিলেন আহমদুল কবির। দেশের রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের কাছে তিনি পরিচিত ছিলেন আদর্শবান ও নীতিনিষ্ঠ এক নেতা হিসেবে। তিনি সত্তরের দশকে গণতন্ত্রী পার্টি প্রতিষ্ঠা করেন। মৃত্যুকালে তিনি পার্টির সভাপতি ছিলেন।
আহমদুল কবির ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ ডাকসুর প্রথম ভিপি। ১৯৬৫ সালে আহমদুল কবির ন্যাপের প্রার্থী হিসেবে তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। রাজনৈতিক জীবনের পাশাপাশি তিনি সাংবাদিকতার সঙ্গে নিজেকে যুক্ত করেন। সংবাদপত্রকে তিনি তার রাজনৈতিক আদর্শ প্রচার ও স্বকীয় প্রতিভা প্রকাশের মাধ্যম হিসেবে গ্রহণ করেন। সাংবাদিকতায় তার অসাম্প্রদায়িক, প্রগতিশীল এবং বস্তুনিষ্ঠ চেতনার প্রতিরূপ হলো দৈনিক ‘সংবাদ’।
দৈনিক সংবাদে বস্তুনিষ্ঠ খবর ও মতামত প্রকাশের মধ্য দিয়ে তিনি অসাম্প্রদায়িক, প্রগতিশীল ও বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতার এক নতুন ধারা সৃষ্টি করেন। আমৃত্যু তিনি এই আদর্শ লালন করে গেছেন। কমনওয়েলথ প্রেস ইউনিয়নের বাংলাদেশ চ্যাপ্টারের সভাপতির পদও তিনি অলঙ্কৃত করেছিলেন । ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাক হানাদার বাহিনী তাকে গ্রেফতার করে। আহমদুল কবির দেশের একজন বিশিষ্ট শিল্পোদ্যোক্তাও ছিলেন। এদেশের শিল্প-বাণিজ্য প্রসারে তার ব্যাপক অবদান রয়েছে।
আহমদুল কবিরের (মনু মিয়া) বাবা মরহুম আবু ইউসুফ লুৎফুল কবির ছিলেন ঘোড়াশালের জমিদার। মায়ের নাম মরহুমা সুফিয়া খাতুন। তার জন্ম ৩ ফেব্রুয়ারি ১৯২৩ ঘোড়াশালে। তিনি ২০০৩ সালের ২৪ নভেম্বর কলকাতার এপোলো গ্লেনইগল হাসপাতালে বাংলাদেশ সময় বিকেল ৪টা ৫৫ মিনিটে মারা যান।
অর্থনীতিতে সম্মানসহ বিএ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালে তিনি ১৯৪৫-৪৬ সালে ডাকসুর প্রথম সহ-সভাপতি নির্বাচিত হন। এ ছাড়াও ১৯৪২-৪৩ সালে তিনি সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের ক্রীড়া সম্পাদক ছিলেন। ১৯৬৫ সালে ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির প্রার্থী হিসেবে তিনি তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৭৯ সালে নরসিংদী-২ (পলাশ-শিবপুর) নির্বাচনী এলাকা থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের সদস্য নির্বাচিত হন।
১৯৮৬ সালে নরসিংদী-২ (পলাশ) নির্বাচনী এলাকা থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে জাতীয় সংসদের সদস্য নির্বাচিত হন। আহমদুল কবির অর্থনীতিতে গ্র্যাজুয়েশন ডিগ্রি লাভ করার পর রিজার্ভ ব্যাংক অফ ইন্ডিয়ায় যোগদান করেন ও ফরেন এক্সচেঞ্জ বিভাগের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৫০ সালে তিনি পাকিস্তানের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে যোগদান করেন। ১৯৫১ সালে গ্যাটে সম্মেলনে যোগদান করেন। ১৯৫৪ সালে তিনি নিজের ব্যবসায় যোগদান করেন।
আহমদুল কবির তদানীন্তন পাকিস্তান ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ছিলেন। দীর্ঘদিন তিনি কৃষক সমিতির কোষাধ্যক্ষ ছিলেন। আশির দশকে তার নেতৃত্বে গণতন্ত্রী পার্টি গঠিত হয়। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি গণতন্ত্রী পার্টির সভাপতি ছিলেন।
১৯৭০ থেকে ১৯৮০ সাল পর্যন্ত তিনি বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সম্মেলনে যোগদান করেন। রোমে ফাও-এর কনফারেন্সে প্রতিনিধি হিসেবে যোগ দেন। ইইসি দেশগুলোতে তিনি বাণিজ্য প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পাকিস্তান সরকার ‘সংবাদ’ অফিস পুড়িয়ে দেয় এবং আহমদুল কবিরকে গ্রেফতার করে। মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি সামরিক জান্তা ‘সংবাদ’ প্রকাশের জন্য অনেক প্রলোভন দেখায়, কিন্তু আহমদুল কবির পত্রিকা প্রকাশ করেননি। স্বাধীনতার পরপরই তিনি জেল থেকে মুক্তি লাভ করেন ও সংবাদ পুনঃপ্রকাশ করেন।

আহমদুল কবির ১৯৫৪ সালে সংবাদের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ১৯৭২ সালে তিনি সম্পাদকের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ২০০১ সালে প্রধান সম্পাদক হন। তিনি আমৃত্যু এ দায়িত্ব পালন করে গেছেন। আহমদুল কবির স্ত্রী, দুই ছেলে, এক মেয়ে ও অসংখ্য আত্মীয়স্বজন, গুণগ্রাহী ও রাজনৈতিক অনুসারী রেখে গেছেন।

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সঞ্চয় করে রাখুন

জনপ্রিয় সংবাদ

ঝালকাঠিতে এইচএসসি–আলিম কৃতি শিক্ষার্থীদের সংবর্ধনা ও ক্যারিয়ার কাউন্সেলিং অনুষ্ঠিত

দৈনিক সংবাদের সম্পাদক আহমদুল কবিরের ২২ তম মৃত্যুবার্ষিকী পালন

আপডেট সময় : 05:49:40 pm, Monday, 24 November 2025

 

অরবিন্দ রায়,

দৈনিক সংবাদের সম্পাদক আহমদুল কবির (মনু মিয়ার) ২২ তম মৃত্যু বার্ষিকী আজ সোমবার পালন করা হয়েছে । দৈনিক সংবাদের প্রধান সম্পাদক, গনতান্ত্রিক পার্টির সভাপতি, সাবেক সংসদ সদস্য, দেশের প্রগতিশীল ধারার রাজনীতির পুরোধা ব্যক্তিত্ব আহমদুল কবিরের (মনু মিয়া) ২২ তম মৃত্যুবার্ষিকী পলাশের ঘোড়াশাল পালন করা হবে । ২০০৩ সালের ২৪ নভেম্বর তিনি মৃত্যু বরন করেন।
মনু মিয়ার মৃত্য বার্ষিকী উপলক্ষে নরসিংদীর পলাশ উপজেলার ঘোড়াশালে তাঁর পরিবার ও আহমদুল কবির (মনু মিয়া) স্মৃতি সংসদের উদ্যোগে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে।
মনু মিয়া স্মৃতি সংসদ, বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের পক্ষ থেকে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহন করা হয়েছে।
কর্মসূচি সম্পর্কে আহমদুল কবির (মনু মিয়া) স্মৃতি সংসদের ঘোড়াশাল পৌরসভার
সভাপতি মো. নুরুল ইসলাম জানান, ফজর বাদ নিজ বাড়িতে কোরান খতম, সকাল সাড়ে ৮ টায় দুস্হদের মাঝে খাবার বিতরন,
সকাল সাড়ে ১০টায় মরহুমের কবরে পুষ্প স্তবক অর্পন ও শিক্ষার্থীদের মাঝে বৃত্তি প্রদান,বাদ যোহর অতিথি আপ্যায়ন ও দোয়া পাঠ, এতিমখানায় খাবার বিতরন, ঘোড়াশাল পৌরসভার ৭ নং ওর্য়াডে ১৮ টি দোয়া মাহফিল ও তবারক বিতরন।
জানা যায়, আহমদুল কবির ছিলেন ব্রিটিশ, পাকিস্তান ও স্বাধীন বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও সাংবাদিকতা অঙ্গনের এক প্রতিভাদীপ্ত ব্যক্তিত্ব। আপসহীন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের জন্য পাকিস্তান আমল থেকে স্বাধীন বাংলাদেশে তিনি ছিলেন একজন ভিন্নমাত্রার রাজনীতিক। মূলত তার রাজনৈতিক দর্শন ছিল এদেশের সাধারণ মানুষের অধিকার আদায়ে কাজ করা। তদানীন্তন পাকিস্তানের রাজনীতিতে অসাম্প্রদায়িক, গণতান্ত্রিক ও প্রগতিশীল যে ধারা এদেশে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে বিপুল জনগোষ্ঠীর রাজনৈতিক চেতনাকে নাড়া দিয়েছিল, সেই ধারার পুরোধা ব্যক্তিত্ব ছিলেন আহমদুল কবির।
স্বাধীন বাংলাদেশে প্রগতিশীল, গণতান্ত্রিক, সাম্প্রদায়িকতা বিরোধী রাজনীতির নিবেদিত প্রাণ ছিলেন আহমদুল কবির। দেশের রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের কাছে তিনি পরিচিত ছিলেন আদর্শবান ও নীতিনিষ্ঠ এক নেতা হিসেবে। তিনি সত্তরের দশকে গণতন্ত্রী পার্টি প্রতিষ্ঠা করেন। মৃত্যুকালে তিনি পার্টির সভাপতি ছিলেন।
আহমদুল কবির ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ ডাকসুর প্রথম ভিপি। ১৯৬৫ সালে আহমদুল কবির ন্যাপের প্রার্থী হিসেবে তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। রাজনৈতিক জীবনের পাশাপাশি তিনি সাংবাদিকতার সঙ্গে নিজেকে যুক্ত করেন। সংবাদপত্রকে তিনি তার রাজনৈতিক আদর্শ প্রচার ও স্বকীয় প্রতিভা প্রকাশের মাধ্যম হিসেবে গ্রহণ করেন। সাংবাদিকতায় তার অসাম্প্রদায়িক, প্রগতিশীল এবং বস্তুনিষ্ঠ চেতনার প্রতিরূপ হলো দৈনিক ‘সংবাদ’।
দৈনিক সংবাদে বস্তুনিষ্ঠ খবর ও মতামত প্রকাশের মধ্য দিয়ে তিনি অসাম্প্রদায়িক, প্রগতিশীল ও বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতার এক নতুন ধারা সৃষ্টি করেন। আমৃত্যু তিনি এই আদর্শ লালন করে গেছেন। কমনওয়েলথ প্রেস ইউনিয়নের বাংলাদেশ চ্যাপ্টারের সভাপতির পদও তিনি অলঙ্কৃত করেছিলেন । ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাক হানাদার বাহিনী তাকে গ্রেফতার করে। আহমদুল কবির দেশের একজন বিশিষ্ট শিল্পোদ্যোক্তাও ছিলেন। এদেশের শিল্প-বাণিজ্য প্রসারে তার ব্যাপক অবদান রয়েছে।
আহমদুল কবিরের (মনু মিয়া) বাবা মরহুম আবু ইউসুফ লুৎফুল কবির ছিলেন ঘোড়াশালের জমিদার। মায়ের নাম মরহুমা সুফিয়া খাতুন। তার জন্ম ৩ ফেব্রুয়ারি ১৯২৩ ঘোড়াশালে। তিনি ২০০৩ সালের ২৪ নভেম্বর কলকাতার এপোলো গ্লেনইগল হাসপাতালে বাংলাদেশ সময় বিকেল ৪টা ৫৫ মিনিটে মারা যান।
অর্থনীতিতে সম্মানসহ বিএ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালে তিনি ১৯৪৫-৪৬ সালে ডাকসুর প্রথম সহ-সভাপতি নির্বাচিত হন। এ ছাড়াও ১৯৪২-৪৩ সালে তিনি সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের ক্রীড়া সম্পাদক ছিলেন। ১৯৬৫ সালে ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির প্রার্থী হিসেবে তিনি তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৭৯ সালে নরসিংদী-২ (পলাশ-শিবপুর) নির্বাচনী এলাকা থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের সদস্য নির্বাচিত হন।
১৯৮৬ সালে নরসিংদী-২ (পলাশ) নির্বাচনী এলাকা থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে জাতীয় সংসদের সদস্য নির্বাচিত হন। আহমদুল কবির অর্থনীতিতে গ্র্যাজুয়েশন ডিগ্রি লাভ করার পর রিজার্ভ ব্যাংক অফ ইন্ডিয়ায় যোগদান করেন ও ফরেন এক্সচেঞ্জ বিভাগের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৫০ সালে তিনি পাকিস্তানের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে যোগদান করেন। ১৯৫১ সালে গ্যাটে সম্মেলনে যোগদান করেন। ১৯৫৪ সালে তিনি নিজের ব্যবসায় যোগদান করেন।
আহমদুল কবির তদানীন্তন পাকিস্তান ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ছিলেন। দীর্ঘদিন তিনি কৃষক সমিতির কোষাধ্যক্ষ ছিলেন। আশির দশকে তার নেতৃত্বে গণতন্ত্রী পার্টি গঠিত হয়। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি গণতন্ত্রী পার্টির সভাপতি ছিলেন।
১৯৭০ থেকে ১৯৮০ সাল পর্যন্ত তিনি বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সম্মেলনে যোগদান করেন। রোমে ফাও-এর কনফারেন্সে প্রতিনিধি হিসেবে যোগ দেন। ইইসি দেশগুলোতে তিনি বাণিজ্য প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পাকিস্তান সরকার ‘সংবাদ’ অফিস পুড়িয়ে দেয় এবং আহমদুল কবিরকে গ্রেফতার করে। মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি সামরিক জান্তা ‘সংবাদ’ প্রকাশের জন্য অনেক প্রলোভন দেখায়, কিন্তু আহমদুল কবির পত্রিকা প্রকাশ করেননি। স্বাধীনতার পরপরই তিনি জেল থেকে মুক্তি লাভ করেন ও সংবাদ পুনঃপ্রকাশ করেন।

আহমদুল কবির ১৯৫৪ সালে সংবাদের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ১৯৭২ সালে তিনি সম্পাদকের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ২০০১ সালে প্রধান সম্পাদক হন। তিনি আমৃত্যু এ দায়িত্ব পালন করে গেছেন। আহমদুল কবির স্ত্রী, দুই ছেলে, এক মেয়ে ও অসংখ্য আত্মীয়স্বজন, গুণগ্রাহী ও রাজনৈতিক অনুসারী রেখে গেছেন।