
তৌহিদুল ইসলাম চঞ্চল,
আজকাল সবকিছুই ডিজিটাল হয়ে গেছে, আর এই যুগে কোনো পরিষেবা নিতে গেলে গ্রাহক পরিষেবার (Customer Service) ওপর নির্ভর করতেই হয়। সম্প্রতি আমার দুটি ভিন্ন অভিজ্ঞতা হলো, যা ডিজিটাল সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর কাজের ধরণ সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা দেয়।
প্রথম ঘটনাটি একটি আন্তর্জাতিক প্রযুক্তি জায়ান্ট গুগলকে নিয়ে। বেশ কিছুদিন আগে তাদের একটি ট্রায়াল সার্ভিস নিয়েছিলাম। কথা ছিল প্রথম মাসে কোনো টাকা কাটবে না, কিন্তু পরের মাস থেকে ১৯ ডলার চার্জ করা হবে। আগ্রহ নিয়ে ফিচারগুলো ব্যবহার করতে শুরু করলাম। তবে বিপত্তি ঘটলো যখন দেখলাম প্রথম মাসেই আমার অ্যাকাউন্ট থেকে ১৯ ডলার কেটে নেওয়া হয়েছে। মাথায় হাত দিয়ে বসলাম! তবে এর আগেও এই ধরনের ভুল বোঝাবুঝির ক্ষেত্রে গুগলের হেল্প ডেস্কে যোগাযোগ করে সমাধান পেয়েছি। তাই এবারও ভাবলাম তাদের জানাবো।
হেল্প ডেস্কে কাস্টমার কেয়ার এজেন্ট মারার সাথে চ্যাটের মাধ্যমে যোগাযোগ করলাম। তাকে বিস্তারিত লিখে জানালাম যে প্রথম মাস ফ্রি থাকার কথা ছিল। তিনি আমার কথা বিশ্বাস করলেন এবং রিফান্ডের জন্য চেষ্টা করলেন, কিন্তু সম্ভবত তার এক্তিয়ারের বাইরে ছিল সেটি। এরপর আমি সাবস্ক্রিপশন বাতিল করার অনুরোধ জানালাম। মারা সাথে সাথেই তা করলেন এবং আমাকে আশ্বস্ত করলেন যে বিষয়টি টেকনিক্যাল টিমের কাছে পাঠানো হয়েছে এবং তারা ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে যোগাযোগ করবে।
আশ্চর্যজনকভাবে, সত্যিই তার মধ্যে টেকনিক্যাল টিম থেকে যোগাযোগ করা হলো। এর মাঝে মারাও একটি আপডেট ইমেইল পাঠিয়েছিলেন যে তিনি বিষয়টি গুরুত্বের সাথে দেখছেন। কিন্তু এর পরেই একটি মেইল এল যেখানে লেখা ছিল, “আপনার সাবস্ক্রিপশন ক্যানসেল হয়েছে কিন্তু রিফান্ড পলিসি অনুযায়ী আপনি টাকা ফেরত পাচ্ছেন না।” এই বার্তাটি দেখে আমি হতাশ হয়ে মারার কাছে আরেকটি মেইল পাঠালাম। কিছুক্ষণ পর মারার রিপ্লাই এল, “চিন্তা করার দরকার নেই, আমার এক্সপার্টদের সাথে কথা হয়েছে। তারা জানিয়েছেন ৪-৫ কর্ম দিবসের মধ্যে আপনি টাকাটা ফেরত পাবেন। এর মধ্যে আপনার ব্যাংকের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন।” এবং সত্যিই, কয়েক দিনের মধ্যেই আমি আমার রিফান্ড পেয়ে গেলাম। মারাকে অসংখ্য ধন্যবাদ, এবং অবশ্যই গুগলকেও তাদের প্রতিশ্রুতি রাখার জন্য কৃতজ্ঞতা জানাই।
অন্যদিকে, আমার দ্বিতীয় অভিজ্ঞতাটি বাংলাদেশের একটি তথাকথিত নামকরা হোস্টিং ও ডোমেইন সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের সাথে। তাদের ওয়েবসাইটে দেওয়া হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরে একটি সাধারণ জিজ্ঞাসা নিয়ে মেসেজ করলাম। কিন্তু সেখান থেকে বলা হলো অন্য একটি ডিপার্টমেন্টে যোগাযোগ করতে এবং একটি চ্যাট লিঙ্ক দেওয়া হলো। সেই লিঙ্কে যুক্ত হওয়ার পর একজন প্রতিনিধি এলেন। আমি তাকে বললাম, “দেখুন আমার এসএমএস-এর মাধ্যমে যোগাযোগ করতে অসুবিধা হচ্ছে, তাই যদি আপনার নম্বরটা দিতেন তাহলে সরাসরি কথা বলতে পারতাম, সময়ও বাঁচতো।” কিন্তু তিনি সরাসরি না করে দিলেন এবং বললেন এমন নিয়ম নেই।
আমি আবার হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরে ফিরে গিয়ে বিষয়টি জিজ্ঞাসা করলাম। তাদের উত্তর ছিল, “এটা অন্য ডিপার্টমেন্টের ব্যাপার, বিষয়টি আমাদের জানা নেই।” অথচ যারা কাস্টমার ম্যানেজার, তাদের অন্তত প্রাথমিক কিছু বিষয়ে ধারণা থাকা উচিত। এরপর সেই চ্যাট লিঙ্কে ফিরে গিয়ে দেখি অন্য একজন ব্যক্তি রিপ্লাই দিচ্ছেন! আমি বললাম যে আমি কিছুক্ষণ আগে অন্য একজনের সাথে কথা বলছিলাম। এর কিছুক্ষণ পর আগের সেই প্রতিনিধি আবার ফিরে এলেন। আমি তাকে বললাম আমার খুব ছোট একটি জিজ্ঞাসা আছে। তখন তিনি আমাকে একটি ক্যালেন্ডার দিলেন এবং অন্য আরেকজনের সাথে ৩০ মিনিট কথা বলার জন্য একটি তারিখ বুক করতে বললেন! যখন আমার সাথে বিস্তারিত কথা বলা হবে!
এই দুটি ঘটনা থেকে আমার কিছু বিষয় উপলব্ধি হলো। প্রথমত, একজন কাস্টমার সার্ভিস প্রতিনিধির যদি প্রয়োজনীয় তথ্য এবং সমস্যা সমাধানের ক্ষমতা থাকে, তাহলে গ্রাহকের সময় বাঁচে এবং কোম্পানির প্রতি আস্থা বাড়ে। দ্বিতীয়ত, নিজের সমস্যা স্পষ্টভাবে বোঝাতে পারলে এবং কোম্পানির সদিচ্ছা থাকলে সমাধান সম্ভব। তবে তৃতীয় এবং সম্ভবত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, বাংলাদেশের ঐ কোম্পানিটি নিজেদেরকে ‘নামকরা’ প্রমাণ করার চেষ্টায় একজন সম্ভাব্য গ্রাহককে যেভাবে হয়রানি করলো, তা একেবারেই কাম্য নয়। ডিজিটাল যুগে গ্রাহকদের সাথে এমন আচরণ কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য না। আন্তরিকতা এবং সঠিক তথ্যের অভাবে অনেক সময় ভালো সুযোগও হাতছাড়া হয়ে যায়।
পরিশেষে বলতে চাই, গ্রাহক পরিষেবা শুধুমাত্র একটি বিভাগ নয়, এটি একটি কোম্পানির প্রতিচ্ছবি। গ্রাহকের সাথে ভালো ব্যবহার এবং দ্রুত সমস্যা সমাধান করার মাধ্যমেই একটি প্রতিষ্ঠান দীর্ঘস্থায়ী সম্পর্ক তৈরি করতে পারে।