জসীমউদ্দীন ইতি
ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধ।।
ঠাকুরগাঁওয়ে বদলির দুই বছর পার হলেও সরকারি কোয়ার্টার না ছাড়ার অভিযোগ উঠেছে এলজিইডির তৎকালীন কার্যসহকারী আবু সাঈদ মো. করিম ও সার্ভেয়ার মফিজুর রহমানের বিরুদ্ধে। এছাড়াও মাসের পর মাস বিনা ভাড়ায় থাকাসহ দিচ্ছেন না বিদ্যুৎ বিল। কোয়ার্টারে প্রায় ৮ লক্ষ টাকা বিদ্যুৎ বিল বকেয়া থাকা সত্ত্বেও তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি বলে জানা গেছে।
সূত্র মতে-এলজিইডির কার্যসহকারী আবু সাঈদ মো: করিম ঠাকুরগাঁও সদর থেকে প্রায় ৩ বছর আগে বদলি হয়েছেন দিনাজপুর জেলায় এবং সার্ভেয়ার মফিজুর রহমান প্রায় ২ বছর আগে বদলি হয়েছেন পঞ্চগড় জেলায়। অন্য জেলায় বদলি হওয়া সত্ত্বেও তারা সরকারি কোয়ার্টারের ঘর নিজ দখলে রেখেছেন। কর্তৃপক্ষের বারবার নোটিশের পরেও কোনভাবেই ছাড়ছেন না ঘরগুলো। এমতাবস্থায় বেকাদায় পড়েছে উপজেলা কর্তৃপক্ষ।
কোয়ার্টার বরাদ্দ -সংক্রান্ত তথ্য অনুসন্ধানে দেখা গেছে, সদর উপজেলা পরিষদের নির্বাহী কর্মকর্তা -ইউএনও- এর বাসভবন বাদে পাথরাজ- শুক- সেনুয়া ও টাংগন নামে ১৪টি দ্বিতলা বিশিষ্ট ভবন রয়েছে। সরকারি নিয়ম অনুযায়ী ভবনগুলোতে থাকা কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে বাসা ভাড়া সহ বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ না করার অভিযোগও রয়েছে।
সরকারি কোয়ার্টারে তালিকায় রয়েছেন সদর উপজেলার এলজিউডির কার্যসহকারী আবু সাঈদ মো. করিম, উপজেলা কৃষি অফিসের গার্ড বাবুল আক্তার -উপজেলা কৃষি অফিসের উচ্চমান সহকারী মঞ্জুরুল আলম- উপজেলা পরিষদের মহিলা ভাইস চেয়ারম্যানের অফিস সহায়ক রবিউল ইসলাম- উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের অফিস সহকারী সফিকুল ইসলাম- উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা বিপ্লব চন্দ্র রায়, উপজেলা নির্বাহী কার্যালয়ের সিএ কাম-উচ্চমান সহকারী রেবা খাতুন- উপজেলা এলজিউডির সার্ভেয়ার মফিজুর রহমান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার গাড়ি চালক মুন্না- বিআরডিবির জুনিয়র অফিসার -হিসাব- আবদুল হাই আল হাদী ও যুব উন্নয়ন কার্যালয়ের অফিস সহকারী কাম-কম্পিউটার অপারেটর জহির রায়হান।
প্রতিমাসে বাসা ভাড়া ৩ হাজার টাকা হলেও নিয়মিত কেউ ভাড়া পরিশোধ করেন না। এর পাশাপাশি বিদ্যুৎ বিল বকেয়াও রয়েছে প্রায় ৮ লক্ষ টাকা। এ বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে কিনা জানতে চাইলে বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ নেসকোর নির্বাহী প্রকৌশলী -অতিঃ দাঃ- মোঃ সিরাজুল ইসলাম বলেন- সদর উপজেলার সরকারি কোয়ার্টারের বিদ্যুৎ বিল বকেয়ার ব্যাপারে ইউএনও মহোদয়ের সাথে যোগাযোগ করা হয় বা নোটিশ করা হয়। বকেয়া আছে কিনা আমি দেখে বলতে পারবো।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সদর উপজেলা অফিসে কর্মরত নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কর্মচারীরা বলেন- নিয়ম অনুযায়ী এক জেলা থেকে অন্য জেলা বদলি হলে সে আগের কোয়ার্টারে থাকতে পারবে না। অনেকবার বলার পরেও ওই দুইজন কর্মকর্তা ঘরগুলো প্রায় ৩ বছর ধরে জোরজোবরদখল করে আছেন। এক্ষেত্রে অনেক কর্মচারীরা সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। একদিকে ঠিকমতো বাসা ভাড়া দেয় না অন্যদিকে লক্ষ লক্ষ টাকা বকেয়া রেখেছে বিদ্যুৎ বিল। অভিযোগ করে তারা আরো জানান- উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার গাড়ি চালক মুন্না দীর্ঘদিন যাবত যে কোয়ার্টারে বাস করছেন সেটি নিয়ম নীতির বাইরে। এছাড়াও অনেকেই বিভিন্ন হাঁস-মুরগীসহ বিভিন্ন পশু-পাখি পালন করে যা সম্পূর্ণ অবৈধ। সরকারি নিয়ম অনুযায়ী এদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার দাবি জানান তারা।
ঘর না ছাড়ার প্রসঙ্গে আবু সাঈদ মো. করিম এর সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি তার গিন্নির সাথে যোগাযোগ করার কথা বলেন। অন্যদিকে মফিজুর রহমানের সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার -ইউএনও- বেলায়েত হোসেন জানান, বদলি হওয়ার পর থেকেই তাদের একাধিকবার নোটিশসহ চূড়ান্ত নোটিশ দেওয়ার পরেও তারা ঘর ছাড়ছেন না।