পাবনা প্রতিনিধি।।
বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন-বিএডিসির-ডাল ও তৈল বীজ প্রক্রিয়াজাতকরণ কেন্দ্র টেবুনিয়াতে অবস্থিত।
বিগত বছরের মতো এই বছরেও এখানে চাষ করা হয়েছে বারি সুর্য্যমুখী-৩ জাতের ফুলের চাষ।
বীজ প্রক্রিয়াজাত করণের জন্য করা এই সূর্যমুখী ফুলের বাগান এখন স্থানীয় দর্শনার্থীদের বিনোদন কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। প্রতিদিন এই ফুলের বাগানের মাঠ দেখতে আসছেন নানা বয়সি নারী, পুরুষ ও শিক্ষার্থীরা।
তাইতো ডাল ও তৈল বীজ বিভাগের এই প্রতিষ্ঠানে দর্শনার্থীদের আগমনে মুখরিত থাকছে দিনের বেশিরভাগ সময়। হলুদের সমারোহে দূরদূরান্ত থেকে বন্ধুবান্ধব নিয়ে ছুটে আসছেন ফুলের বাগান দেখতে। হলুদ ফুলের সঙ্গে ছবি তুলে নিজেদের মনকে আলোড়িত করছেন পুষ্প প্রেমীরা।
জানা গেছে, এটি কোনো সৌখিন ফুলের বাগান নয় দেশের ভোজ্য তেলের চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে সরকারিভাবে এখানে সূর্যমুখী ফুলের চাষ করা হয়েছে। সংরক্ষিত এলাকার ভেতরে তিন একর ফসলের মাঠে বীজ প্রক্রিয়া জাতের জন্য চাষ করা হয়েছে সূর্যমুখী ফুল।
তাইতো এখন হলুদ বর্ণের সূর্যমুখী ফুল শোভাবর্ধন করছে সেখানকার ফসলের মাঠে। এখন এটি সাময়িকভাবে বিনোদনপ্রিয় পুষ্প প্রেমী মানুষের কাছে খুবই পরিচিত স্থান। জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সাধারণ মানুষ দেখতে আসছে এই সূর্যমুখী ফুলের বাগান।
সংরক্ষিত এলাকা হলেও সাধারণ মানুষ প্রবেশে কোনো বাধা নেই। আগত দর্শনার্থীদের কারণে ফুলের বাগান যাতে নষ্ট না হয় সেই কারণে কেয়ার টেকার রেখেছেন কর্তৃপক্ষ। প্রতিদিন শতশত মানুষ আসছেন সূর্যমুখী ফুলের বাগান দেখতে। শুধু বাগান দেখেই শান্ত হচ্ছে না ফুলের সঙ্গে নানাভাবে ছবি তুলছেন তারা।
কৃষক রানা আহম্মেদ বলেন, ফুল সবার প্রিয় একইসঙ্গে ফুলের সঙ্গে বীজ যা দেশের সম্পদ। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এই ফুলের বাগান দেখার জন্য মানুষ এখানে আসছেন।
তবে অনেকেই ছবি তোলার সময় বাগান নষ্ট করছে। আমরা বেশ কয়েকজন মিলে এই ফুলের বাগানের মাঠ দেখাশুনা করছি। এই ফুলের বীজ বপনের আগে মাঠ প্রস্তুত করে তার পরে সেটি লাগাতে হয়। পাঁচ থেকে ১০ মিটার দূরত্ব রেখে বীজবপন করলে ফুল ও ফল ভালো হয়।
বাগান দেখতে আসা স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীরা বলেন, এই ফুলটা এক সিজেনে ফুটে থাকে। সচরাচর একসঙ্গে এত ফুল দেখতে পাওয়া যায় না। পড়াশুনার পাশাপাশি একটু বিনোদন নিতে এখানে আসা।
এটা আমাদের দেশের সম্পদ জানি। এই ফুলের বীজ থেকে তেল তৈরি হবে এটা দেশের অর্থনৈতিকভাবে ভূমিকা রাখবে। সবাই মিলে একসঙ্গে ছবি তুলছি ফুল দেখছি বেশ ভালো লাগছে।
জেলার বাহির থেকে আসা বহিরাগত দর্শনার্থীরা বলেন, বাচ্চাদের প্রকৃতির সঙ্গে সম্পর্ক তৈরির জন্য তাদের নিয়ে এখানে এসেছি। একসঙ্গে এত ফুল দেখলেই মন ভালো হয়ে যায়। বাচ্চারাও বেশ আনন্দ পাচ্ছে ফুল দেখে।
পাবনা বিএডিসির উপ-পরিচালক ড. শামীম আহম্মেদ বলেন, সরকারিভাবে ১৯৭৫ সাল থেকে তেল জাতীয় শস্যের মধ্যে তিল ও সরিষার পাশাপাশি সূর্যমুখী চাষ করে আসছি আমরা।
ভোজ্য তেলের চাহিদা পূরণের জন্য সরকার সূর্যমুখী চাষে কৃষকদের উদ্বুদ্ধকরণে কাজ করছেন। তেল বীজের চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে বিএডিসি কৃষকদের ভালো বীজ সরবরাহের লক্ষ্যে এই ফুলের চাষ করা। এই মাঠ থেকে ভালো বীজ সংগ্রহ করে কৃষকদের মধ্যে সরবরাহ করা হয়।
তিনি আরও বলেন, সূর্যমুখী বীজ ও তেলের দাম বেশি হওয়ার কারণে কৃষক কম খরচে এই ফসল চাষাবাদ করছে। এই ফসলে খরচ কম লাভ বেশি। সূর্যমুখী ফুলের বীজের ও তেলের দাম বেশি।
স্বাস্থ্যসম্মত তেল হওয়াতে এর চাহিদা অনেক বেশি। তবে চাষাবাদ কম হওয়ায় এই ফুলের বীজ থেকে যে তেল পাওয়া যায় তার দাম একটু চড়া। আমরা চেষ্টা করছি কৃষকদের স্বল্পমূল্যে বীজ সরবরাহ করে সরিষার পাশাপাশি সূর্যমুখী চাষাবাদের আগ্রহ বৃদ্ধি করতে।
বিএডিসির তথ্যমতে, সূর্যমুখী এশটি তেল ফসল। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ব্যাপক চাষাবাদ হয়ে থাকে। বর্তমানে পটুয়াখালী, রাজশাহী, যশোর, কুষ্টিয়া, নাটোর, দিনাজপুর, গাজীপুর, টাঙ্গাইল ও পাবনা জেলাতে সীমিত আকারে এই ফসলের চাষাবাদ হচ্ছে।
নভেম্বর মাসের প্রথমদিকে মাঠ প্রস্তুত করে এই ফুলের বীজ বপন করা হয়। বীজ বপনের এক মাসের মধ্যে গাছে ফুলের কলি আসতে শুরু করে। আর জানুয়ারি মাসে প্রথম থেকে সেটি শোভাবর্ধন করতে থাকে মাঠে।
এবারে প্রতিষ্ঠানটি তাদের নিজস্ব তিন একর জমিতে বারী-০৩ জাতের সূর্যমুখী ফুলের চাষ করছেন। পাবনায় এই ফুলের বাগানের মাঠ থেকে ১২০০ কেজি বীজ সংগৃহীত হবে। সেই বীজ তালিকাভুক্ত কৃষকদের মধ্যে বিতরণ করবেন প্রতিষ্ঠানটি।
প্রতিষ্ঠানটি তেল জাত ফসলের মধ্যে তিল, সরিষা ও সূর্যমুখীর চাষাবাদ করে উন্নত জাতের বীজ কৃষকদের মধ্যে স্বল্পমূল্যে সরবরাহ করে থাকেন। দেশের ভোজ্য তেলের চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে তিল, সরিষার পাশাপাশি সূর্যমুখী চাষাবাদে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করণের কাজ করছে তারা।
প্রতিবিঘা ফসলের মাঠে সূর্যমুখী চাষে খরচ হয় ১৪ থেকে ১৫ হাজার টাকা। আর ফসল পাওয়া যায় আট থেকে ১০ মণ করে। প্রতি কেজি সূর্যমুখী বীজ বিক্রি হয় ৫০০ টাকা কেজি দরে। এক মণ সূর্যমুখী বীজ থেকে তেল পাওয়া যায় ১৫ থেকে ১৬ লিটার।
এই তেল স্থানীয় বাজারসহ বিশ্ব বাজের রয়েছে ব্যাপক চাহিদা। তাই মনের বিনোদন ও আনন্দের পাশাপাশি সূর্যমুখী ফুল হাসি ফোটাবে কৃষকসহ সব বিনোদন প্রিয় মানুষদের এমনটাই প্রত্যাশা সংশ্লিষ্টদের।