স্টাফ রিপোর্টার
টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরে শিক্ষিকা ও ছাত্রীসহ বিভিন্নজনের ছবি ব্যবহার করে পর্নো ভিডিও বানিয়ে মেসেঞ্জার গ্রুপে পোস্ট করছে একটি ভয়ংকর অপরাধী চক্র। এরপর পর্নো ভিডিও দেখিয়ে চক্রটি সংশ্লিষ্টদের কাছে টাকা দাবি করছে। এ ঘটনায় এক স্কুলছাত্রীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গত সোমবার পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে। তবে অভিযোগ উঠেছে, স্কুলছাত্রীকে গ্রেপ্তার করা হলেও পর্নো ভিডিও তৈরির সঙ্গে মূল অপরাধী চক্রের সদস্যরা রয়েছে ধরাছোঁয়ার বাইরে।
ওই স্কুলছাত্রীকে গত রবিবার রাতে তার বাসা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। এদিকে ওই স্কুলছাত্রীকে গ্রেপ্তারের খবরে থানায় হাজির হন কয়েকজন ভুক্তভোগী। এ সময় তারা ওই ছাত্রীসহ তার অভিভাবকদেরও শাস্তি দাবি করেন।
পুলিশ জানায়, উপজেলার কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষিকা, ছাত্রী ও ব্যক্তিদের ছবি ব্যবহার করে তৈরি পর্নো ভিডিও একাধিক মেসেঞ্জার গ্রুপে পোস্ট করা হয়। পরে পোস্ট করা ভিডিওর সঙ্গে মোবাইল নম্বর দিয়ে লাখ লাখ টাকা চাওয়া হয়। ‘দিলরুবাথ ও রাকিবুল ইসলাম’ নামের আইডি থেকে মেসেঞ্জার গ্রুপ তৈরি করা হয়েছে। পরে সেই গ্রুপে পর্নো ভিডিও পোস্ট করা হয়। পুলিশ ফেসবুক ও গুগল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে আইডিগুলোর মালিক বা ব্যবহারকারীকে শনাক্ত করেছে। এই ঘটনায় জড়িত থাকার সন্দেহে ওই ছাত্রীর ফোন ও ল্যাপটপ জব্দ করে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। জব্দ করা ফোন থেকে এসব পোস্ট ও ভিডিও ছড়ানোর প্রমাণ পাওয়া গেছে।
গ্রেপ্তার স্কুলছাত্রী জানায়, তার ছবি ব্যবহার করে পর্নো ভিডিও বানানো হয়েছে। সেই ভিডিও দেখিয়ে তার পরিবারের কাছে টাকা চাওয়া হয়। ঘটনার সঙ্গে জড়িত মির্জাপুরের সীমান্ত ও গোপালপুরের সিফাতকে পুলিশ ডেকে এনেছিল। তারা স্বীকারও করেছে। কিন্তু তারপরও তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।
গ্রেপ্তার স্কুলছাত্রীর বাবা বলেন, ‘এসব ঘটনার সঙ্গে আমার মেয়ে জড়িত নয়। তার ছবি দিয়ে নগ্ন ভিডিও বানিয়ে টাকা দাবি করা হয়েছিল। যেসব মোবাইল নম্বরে টাকা পাঠাতে বলা হয়েছিল তাদের পুলিশ ধরেছিল। তারা স্বীকারও করেছে এ ঘটনা। সে সময় তার মেয়ের মোবাইল ফোন চেক করে কোনো কিছু পাওয়া যায়নি। পরে মোবাইল ফেরত দিলেও রবিবার রাতে মেয়েকে গ্রেপ্তার করা হয়। সোমবার পর্নোগ্রাফি মামলায় তাকে আদালতে পাঠানো হয়েছে।’
ভূঞাপুর থানার তদন্ত কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন বলেন, জি-মেইল দিয়ে একাধিক ফেসবুক আইডি খোলা হয়েছে ওই ছাত্রীর মোবাইল ফোনে। লোকলজ্জার ভয়ে অনেকেই কিছু বলতে চান না। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী একজন থানায় অভিযোগ করেন। পরে অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত করা হয়। গুগল, ফেসবুক কর্তৃপক্ষের সঙ্গেও যোগাযোগ করা হয়। পরে তদন্তে আইডি ব্যবহারকারীর পরিচয় শনাক্ত হওয়ার পরই ওই ছাত্রীকে গ্রেপ্তার করা হয়।
ভূঞাপুর থানার এএসআই নজরুল ইসলাম বলেন, ওই ছাত্রীকে আদালতে পাঠানোর পর তাকে কারাগারে পাঠান বিচারক।
পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইন-২০১২ অনুযায়ী, কোনো ব্যক্তি পর্নোগ্রাফির মাধ্যমে অন্য কোনো ব্যক্তির সামাজিক বা ব্যক্তির মর্যাদাহানি করলে বা ভয়ভীতির মাধ্যমে অর্থ আদায় বা অন্য কোনো সুবিধা আদায় বা কোনো ব্যক্তির জ্ঞাত বা অজ্ঞাতে ধারণ করা কোনো পর্নোগ্রাফির মাধ্যমে ওই ব্যক্তিকে মানসিক নির্যাতন করলে তিনি অপরাধ করেছেন বলে গণ্য হবে। এ ধরনের অপরাধের জন্য সর্বোচ্চ ৫ বছর পর্যন্ত সশ্রম কারাদণ্ড এবং দুই লাখ টাকা পর্যন্ত অর্থদণ্ডে দণ্ডিত করার বিধান রয়েছে।
টাঙ্গাইলের ঘটনায় মানবাধিকারকর্মী তাসলিমা তিন্নি বলেন, বর্তমান সময়ে উঠতি বয়সের তরুণীরা এসব পর্নোগ্রাফিতে জড়িয়ে পড়ছে সামাজিক অবক্ষয়ের কারণে। তাদের উচিত খারাপ সঙ্গ ত্যাগ করা।
তিনি বলেন, সম্প্রতি ঘটে যাওয়া টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরে যে স্কুলছাত্রী আটক হয়েছে তার বয়স মাত্র ১৫ বছর। এই মেয়েটির বিষয়টা গভীরভাবে ভেবে দেখা উচিত প্রশাসনকে। এত কম বয়সের একটা মেয়ের এ ধরনের কাজ করতে অনেক সাহস দরকার। তার পেছনে কেউ না থাকলে এমন কাজ করা তার পক্ষে করা সম্ভব নয়। বিষয়টি আজকে তাকে কোন জায়গা নিয়ে গেছে এটা জানা খুবই জরুরি। স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগিতা নিয়ে নিয়ম অনুযায়ী সামনের দিকে এগুলো অবশ্যই আমরা খুঁজে পাব।
তিনি আরও বলেন, আমার কাছে মনে হচ্ছে এই মেয়েটার পরিবারের অন্য সদস্যরাও এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত। কারণ একটা শিশু তো পর্নোগ্রাফিতে জড়িত হতে পারে না। এ ব্যাপারে তদন্ত হওয়া দরকার।