মোঃ আবু তৈয়ব
হাটহাজারী- চট্টগ্রাম- প্রতিনিধি।।
গত ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪ ছিল হাটহাজারীর সামাজিক, সাংস্কৃতিক সংগঠন জাগৃতির নির্বাচন। উৎসব মুখর, শান্তিপূর্ণ এবং প্রায় ৮০ শতাংশ ভোটারের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত হলো উত্তর চট্টলার ঐতিহ্যবাহী সামাজিক সংস্কৃতি ও ক্রীড়া সংগঠন জাগৃতি নির্বাচন । এই নির্বাচনের জন্য আহব্বায়ক কমিটি, নির্বাচন কমিশনার, তাঁর কর্মকর্তা বৃন্দ জাগৃতি সকল সদস্য ধন্যবাদ পাওয়ার যোগ্য। নির্বাচন অবাধ- সুষ্টু- নিরপেক্ষ গ্রহণযোগ্য প্রশ্নাতীত হওয়া যে অসম্ভব কিছু নয় তারই প্রকৃষ্ট উদাহরণ জাগৃতির নির্বাচন। একটি সামাজিক সংগঠনের তুলনায় রাষ্ট্র অনেক বড়। অনেক শক্তিশালী। রাষ্ট্রের সক্ষমতা অনেক বেশি। এই সরল সত্য কাউকে উদাহরণ দিয়ে বুঝানো নিষ্প্রয়োজন। একটি সামাজিক সংগঠন যদি একটি অবাধ, সুষ্ঠু নিরপেক্ষ গ্রহণযোগ্য প্রশ্নাতীত নির্বাচন অনুষ্ঠান করতে সক্ষম হয়- তাহলে তা কখনো রাষ্ট্রের পক্ষে অসম্ভব কিছু নয়। প্রয়োজন কেবল দেশপ্রেম, সদিচ্ছা, সততা, আন্তরিকতা এবং কমিটমেন্ট।
বিগত দেঢ় দশকে আমাদের রাষ্ট্রযন্ত্রের অনেক কিছুই ধ্বংস হয়েছে। সকল ধ্বংসযজ্ঞ নৈরাজ্য একচেটিয়া বাজি স্বৈরাচারীতা লুটপাট, এইসবের মূলে ছিল নির্বাচন ব্যবস্থার অভূতপূর্ব ক্ষতি সাধন। নির্বাচন ব্যবস্থা- নির্বাচন কমিশন এবং সরকারের গ্রহণযোগ্যতা, বিশ্বাসযোগ্যতা নেমে এসেছিল শূন্যের কোঠায়। নির্বাচনের প্রতি সাধারণ মানুষের কোন আগ্রহ ছিল না। নির্বাচন পরিণত হয়েছিল তামাশার বস্তুতে। এর ফলে বুর্জোয়া শ্রেণী হয়ে উঠেছিল সমাজ তথা রাষ্ট্রের কর্ণধার। রাষ্ট্রের সর্বত্র চরম নৈরাজ্য দুর্নীতি, অনিয়ম, খুন, গুম হয়ে উঠেছিল নিত্যদিনের রোজনামচা।
বর্তমান সরকার যদি নির্বাচন ব্যবস্থায় শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হয়- তাহলে নির্বাচনের প্রতি মানুষের আস্থা এবং বিশ্বাস আবার দ্রুতই ফিরে আসবে। গতকাল জাগৃতির নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা হয়েছিল রাত এক টার সময়। এই শীতের দিনে রাত এক টা পর্যন্ত শত শত মানুষ শীত উপেক্ষা করে রাস্তায় অবস্থান করেছিল। নির্বাচনের ফলাফল জানার আগ্রহ উৎসাহ উদ্দীপনা ছিল প্রচন্ড। নির্বাচনটি গ্রহণযোগ্য হয়েছিল বলেই ফলাফল জানার প্রতি মানুষের এই আগ্রহ। একটি সামাজিক সংগঠনের নির্বাচনের প্রতি মানুষের যদি এতটা গ্রহণযোগ্যতা থাকে তাহলে সরকার যদি স্থানীয় এবং জাতীয় নির্বাচনগুলি গ্রহণযোগ্য করতে সক্ষম হয় তাহলে নির্বাচনের প্রতি মানুষের আগ্রহ আস্থা এবং বিশ্বাস কতটা ফিরে আসবে তা সহজেই অনুমেয়।
বর্তমান সরকারের কাছে আমাদের প্রত্যাশা- তারা আমাদেরকে এমন নির্বাচন উপহার দিবে যে নির্বাচন বিগত ৫৩ বছরে কেউ দেখেনি। বাংলাদেশের নির্বাচন ব্যবস্থা হবে সমগ্র পৃথিবীর জন্য নির্বাচনী রোল মডেল। আমি দৃঢ় ভাবে বিশ্বাস করি বর্তমান সরকারের পক্ষে তা সম্ভব।
অত্যন্ত দুঃখজনক সত্য আমরা বিজয়কে উপভোগ করতে শিখেছি কিন্তু পরাজয়কে কিভাবে মেনে নিতে হয় তা শিখিনি। বিজয়ীর গলায় পুষ্প মাল্য পড়াতে আমরা খুবই উৎসুক। বিজিতের পাশে দাঁড়িয়ে তাকে সাহস জোগাতে এবং সান্তনা দিতে আমরা বড়ই কৃপণ।পরাজয়কে সহজ ভাবে মেনে নেওয়ার মত মানসিক ঔধার্য এখনো আমরা অর্জন করতে পারিনি। হৃদয়টাকে পারিনি আকাশের মত বিশাল করতে। পারিনি চিন্তা এবং চেতনায় ঝরনার মত স্বচ্ছ এবং উচ্ছল হতে। বিজয়ী, বিজিত হাত ধরাধরি করে এগিয়ে যাবে লক্ষ পানে,এ যেন আমাদের ভাবনার অতীত। কল্পনার বিষয়। যতদিন না আমরা এই শক্তি অর্জন করতে পারব ততদিন অভিষ্ট লক্ষ্য অর্জন আমাদের জন্য কঠিন থেকেই যাবে।
হেরে গেলেই, কারচুপির অভিযোগ আমাদের একটা মজ্জাগত রোগ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই সংস্কৃতি খুবই লজ্জার। এই মনোবৃত্তি পরিহার করে সচেতনতা বাড়াতে হবে যেন কেউ কারচুপি করতে না পারে।
জাগৃতি নব নির্বাচিত সকল কর্মকর্তাদের প্রতি আমার পরামর্শ থাকবে বিজয়ী এবং বিজিত এক হয়ে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে আরো বহুদূর এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে প্রাণের জাগৃতিকে। কেবল কিছু খেলাধুলা-সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের মধ্যেই যেন জাগৃতি কর্মসূচি সীমাবদ্ধ না থাকে। যেমন- জাগৃতি একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের মডেল সমাজের সামনে উপস্থাপন করলো। এটি পুরো জাতির জন্য শিক্ষণীয় একটি বিষয়। স্বেচ্ছায় রক্তদান- শীতার্ত মানুষের পাশে দাঁড়ানো- বেকার যুবকদের কর্মমুখী প্রশিক্ষণ দান- শিক্ষাবৃত্তি প্রদান- মাদক মুক্ত সমাজ গঠন- সামাজিক উন্নয়ন- যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নে বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখতে পারে জাগৃতি।
জয় এবং পরাজয় একই পাখির দুই ডানা। হার জিত চিরন্তন একটি বিষয়। এটি মেনে না নেয়ার কোন উপায় নেই। তাই বিজিত বন্ধুদের প্রতি আমার পরামর্শ আপনারা সংগঠন বিমুখ হবেন না। সকলেই মিলে হাতে হাত রেখে এগিয়ে যাবেন লক্ষ্য পানে।