এম. মতিন, চট্টগ্রাম ব্যুরো।
বাহার উদ্দিন বাহার ওরফে মাটি বাহার। ছিলেন বাসার দারোয়ান সেখান থেকে হয়ে গেলেন চট্টগ্রামের বায়োজিদ এলাকার কিং! একসময় ছিলেন বিএনপি ক্যাডার, এখন যুবলীগের প্রভাবশালী নেতা। হঠাৎ প্রভাবশালী নেতা বনে যাওয়া কে এই বাহার?
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কুমিল্লা চৌদ্দগ্রামের বাসিন্দা মোঃ লাল মিয়ার ছেলে বাহার উদ্দিন বাহার ছিলেন চট্টগ্রাম বায়েজিদ চৌধুরী নগর হাসান সাহেবের খামার বাড়ির দারোয়ান। আগে এই খামার বাড়ীর দারোয়ান ছিল তার বাবা লাল মিয়া। বাবা মারা যাওয়ার পর পৈতৃকসূত্রে ওই দারোয়ানের দায়িত্বটি পেয়েছিলেন তার ছেলে বাহার।
দায়িত্ব পেয়েই বাহার বায়েজিদ থানা এলাকায় সরকারি পাহাড় দখল করে মাটি বিক্রি শুরু করে। এরপর তাকে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। আস্তে আস্তে সে সরকারি পাহাড় দখল করে বিভিন্ন ব্যাক্তির কাছে পাহাড়ের দখলস্বত্ব বিক্রি করে দুই হাতে কামিয়েছেন কাড়ি কাড়ি টাকা। ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে রাজনৈতিক ঢাল ব্যবহার করতে রাতারাতি বনে গেলেন জালালাবাদ যুবলীগের প্রভাবশালী নেতা বিএনপির এই ক্যাডার।
যুবলীগের নেতা সেজেই বাহার শুরু করে বায়োজিদ এলাকায় আধিপত্য বিস্তার। গড়ে তোলেন পুলিশের সোর্স আনোয়ার, সন্ত্রাসী মিঠু, বোম আলম, বাদলের ভাই লিটন, শাহজাহান, সোর্স আনোয়ারের ভাই আবু, বোনের জামাই মঈনুদ্দিন, ভাগিনা বাবলু এবং তার প্রধান সহযোগি শুক্কুরকে নিয়ে বিশাল সন্ত্রাসী গ্রুপ। এই গ্রুপ দিয়ে বায়োজিদ এলাকার মাদক ব্যবসা, আধিপাত্য বিস্তার, ছিনতাই সবকিছুতেই নিয়ন্ত্রণ করে মাটি বাহার।
সূত্র জানায়, নগরীর বায়েজিদ এলাকায় নির্বিচারে পাহাড় কাটছে বাহার ও তার সিন্ডিকেট। আবার পাহাড় নিজের দখলে রাখতে গড়ে তুলেছে কিশোর গ্যাংদের দিয়ে আরেকটি সন্ত্রাসী বাহিনীও। এই বাহিনীকে ব্যবহার করে বায়েজিদের চৌধুরী নগর-চন্দ্রনগর শ্যামল ছায়াসহ আশপাশের অসংখ্য বড় বড় পাহাড় কেটে কোটি-কোটি টাকার মালিক এখন বাহার উদ্দিন বাহার। বর্তমানে তার রয়েছে বিলাসবহুল বাড়ি ও একাধিক ফ্লট। তবে, তার বিরুদ্ধে পাহাড়কাটা, চাঁদাবাজি, দখলবাজিসহ একাধিক মামলাও রয়েছে।
এদিকে বাংলাদেশের মানচিত্রে বায়েজিদ এলাকাটি পাহাড়ি এলাকা হিসেবে পরিচিত। কিন্তু সন্ত্রাসী বাহারের সিন্ডিকেট দিন-রাত নির্বিচারে পাহাড় কাটার কারণে এলাকাটি বর্তমানে প্রায় পাহাড় শূন্য হয়ে পড়েছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, বায়েজিদ চন্দ্রনগর কিষোয়ান কারখানার পিছনে রয়েছে মাটি বাহারের বহুতল ভবন আবার পাহাড় কেটে করেছেন কয়েকটি প্লট ও ছোট ছোট ভাড়া ঘর। অভিযোগ রয়েছে, বায়েজিদ এলাকায় কেউও কোন বাড়ি-ঘর নির্মাণ করতে গেলে মাটি বাহারকে দিতে হয় মোটা অংকের চাঁদা। সরকারি পাহাড় দখল করে প্লট বাণিজ্য, শিল্প কারখানায় চাঁদাবাজি করে ইতিমধ্যে হয়েছেন কোটি টাকার মালিক। এখনো বায়েজিদ থানার চন্দ্রনগর, চৌধুরী নগর, শেরশাহ বাংলা বাজার, আকবরশাহ শাপলা আবাসিক, এলাকাসহ অন্তত ২০টি স্থানে চলছে পাহাড়কাটার মহোৎসব।
স্থানীয় লোকজন জানান, পাহাড়ী জমি দখল, পাহাড় কাটা ও প্লট বাণিজ্যে করছেন সংঘবদ্ধ সন্ত্রাসী চক্রটি।শুধু তাই নয়, এলাকায় জুয়ার আসর, মাদক ব্যবসাসহ সব অপরাধের সাথে জড়িত বাহার উদ্দীন বাহার। তার সিন্ডিকেটের হাতে জিম্মি এখানকার ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষ। তার রয়েছে বিশাল কিশোর গ্যাং, সন্ত্রাসী গ্রুপ ও চাঁদাবাজ গ্রুপ।
পাহাড় কাটার বিষয়ে জানতে মাটি বাহারের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘আমি রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার, আমার বিরুদ্ধে আমার দলের লোকজন পায়দা লুটতে অপপ্রচার চালাচ্ছে, আমি যে পাহাড় কাটি তার কোন প্রমাণ কারো কাছে নেই।’
গত সোমবার পরিবেশ অধিদপ্তর সরেজমিন ঘটনাস্থলে গেলে পাহাড় কাটার ভয়াবহ চিত্র দেখতে পায় এবং পাহাড় কাটার অপরাধে ১০ জনকে নোটিশ দিয়েছে পরিবেশ অধিদপ্তর।
এ বিষয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে পরিবেশ অধিদপ্তরের এক উপ পরিচালক বলেন, ‘গত ১৭/১২/২০২০ তারিখে চৌধুরী নগর এলাকায় পাহাড় কাটার দায়ে বাহার উদ্দিন বাহারকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছিল। পরিবেশ অধিদপ্তর বাদী হয়ে বাহার সহ কয়েকজনকে আসামি করে আদালতে একটি মামলা দায়ের করেছে। মামলাটি বর্তমানে চট্টগ্রাম আদালতে চলমান আছে।’