স্টাফ রিপোর্টার ভোলা।।
গ্রাজুয়েশন শেষ করে সরকারি চাকরিতে করতে চায়
তজুমদ্দিন উপজেলার চাঁচড়া ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের মাঝির পুকুর পাড় এলাকার মোতুরুন বেপারী বাড়ির হতদরিদ্র গার্মেন্টসকর্মী শাহজাহানের ছেলে শারীরিক প্রতিবন্ধী সিয়াম। প্রতিবন্ধী ও দারিদ্রতা কোন কিছুতেই যেন হার মানাতে পারেনি শারীরিক প্রতিবন্ধী সিয়ামকে। মায়ের কাঁধে ভর দিয়েই মায়ের সহযোগিতা ও পৃষ্ঠপোষকতায় শারীরিক প্রতিবন্ধী আর দারিদ্রতাকে পিছনে ফেলে অদম্য ইচ্ছা শক্তি নিয়ে দিনের পর দিন কষ্ট করে চালিয়ে যাচ্ছেন তার লেখাপড়া। চোখে মুখে একটাই স্বপ্ন যে করেই হোক গ্রাজুয়েশন অর্জন করতে হবে, ঢুকতে হবে সরকারি চাকরিতে। তিল তিল করে জমানো নিজের দীর্ঘদিনের কত শত স্বপ্ন,পূরণের সাথে সাথে পূরণ করতে হবে বাবা-মার দেখা অপূরণীয় হাজারো স্বপ্ন,বড় ছেলে হিসেবে নিতে হবে সংসারের সব দায়-দায়িত্ব।
অধরা সেই স্বপ্নগুলোকে মনের গহীনে জমা করে অধম্য ইচ্ছা শক্তি নিয়ে মায়ের কাঁধে ভর করে ইতোমধ্যে সিয়াম ভোলার লালমোহন উপজেলার ধলীগৌরনগর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের বিজ্ঞান বিভাগ থেকে ২০২২ সালে এসএসসি পরীক্ষায় কৃতিত্বের সাথে উত্তীর্ণ হয়ে বর্তমানে সে ধলীগৌরনগর ডিগ্রি কলেজ থেকে বিএমটি কোর্সের প্রথম বর্ষের পরীক্ষা দিচ্ছেন। সরেজমিনে গিয়ে খোঁজ নিয়ে জানা যায,এখনও সিয়াম প্রতিদিন প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূর থেকে ক্রাচ আর মায়ের হাতে ভর করে পরীক্ষা দিতে আসছেন উপজেলা সদরের লালমোহন সরকারি মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে। হাঁটি হাঁটি পা-পা করে সিয়াম কিন্তু তার অবিশ লক্ষ্যে পৌঁছতে প্রাণপণ চেষ্টা করে যাচ্ছে ক্রাচ এবং মায়ের হাতে ভর করে। বলছিলাম জন্ম থেকেই শারীরিক প্রতিবন্ধী মোঃসিয়াম তজুমদ্দিন উপজেলার চাঁচড়া ইউনিয়নের ৬ নং ওয়ার্ডের মাঝির পুকুর পাড়ের বেপারী বাড়ির শাহজাহান- নাসিমা দম্পত্তির মোট তিন ছেলে-মেয়ের ভেতর বড় ছেলে শারীরিক প্রতিবন্ধী সিয়ামের কথা। যে কি-না জন্মের পর থেকে ঠিকমত হাঁটতে পারেন না। চলাফেরার ভরসা ক্রাচ আর মায়ের হাত। শারীরিক প্রতিবন্ধী হয়েও যেন অদম্য সিয়াম সমাজের অন্যান্যদের মতো নেমে গেছেন জীবন যুদ্ধে । আর তাই জীবন যুদ্ধের সেই অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছতে এখনো প্রতিদিন ক্রাচ আর মায়ের হাতে ভর করে এইচএসসি সমমানের বিজনেস ম্যানেজমেন্ট ও টেকনলজি (বিএমটি) কোর্সের প্রথম বর্ষের পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করছেন তিনি।
৩১ আগষ্ট সরেজমিনে গিয়ে তার সাথে আলাপ করলে সে জানান, আমি ঠিকমতো চলতে পারি না। তবুও প্রাথমিক থেকে শুরু করে এ পর্যন্ত পড়ালেখা করছি। এর জন্য সব সময় আমার সৃষ্টিকর্তা ও আমার পরিবার আমাকে সহযোগিতা করছে। মা আমার জন্য সবচেয়ে বেশি কষ্ট করেছেন। কোথায়ও যেতে হলে মা-ই আমার সঙ্গে যান। আমার স্বপ্ন গ্রাজুয়েশন শেষ করে একটি সরকারি চাকরি করার। আল্লাহ সহায় থাকলে অদম্য ইচ্ছা শক্তি দিয়ে আজ অথবা কাল আমার অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছতে পারবো এবং সরকারি চাকরি করে মুছে দেবো পরিবারের অতীতের দুঃখ কষ্টের সকল গ্লানি আর দূর করবো পরিবারের অস্বচ্ছলতা। আপনাদের মাধ্যমে সরকারের কাছে আমার দাবি, আমি গ্রাজুয়েশন শেষ করলে সরকার যেন আমাকে একটা চাকরি দেয়।
প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী সিয়ামের মা মোসা. নাছিমা বেগম বলেন, সিয়ামসহ আমার মোট ৩ সন্তান। এর মধ্যে ছেলে একজন, মেয়ে দুইজন। ছেলে সিয়াম জন্ম থেকেই প্রতিবন্ধী। দুই মেয়ের মধ্যে এক মেয়েও প্রতিবন্ধী। ওই মেয়ে একটুও চলাফেরা করতে পারে না। তবে ছেলে সিয়ামকে হাত ধরে সহযোগিতা করলে কিছুটা চলতে পারে। তবে বেশি হাঁটতে পারে না। তাই মাঝে মধ্যে কোলেও নিতে হয়। সিয়ামের পড়ালেখা এই পর্যন্ত চলাতে আমার অনেক কষ্ট করতে হয়েছে। আমার কষ্ট হলেও ছেলেটার স্বপ্ন পূরণের জন্য সব সময় তাকে অনুপ্রেরণা দিচ্ছি। আমি চাই, প্রতিবন্ধী হয়েও আমার ছেলে মানুষের মতো মানুষ হোক।
সিয়ামের বর্তমান শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ধলীগৌরনগর ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ মো. আকবর হোসেন জানান, সিয়াম একজন মেধাবী শিক্ষার্থী। তার পড়ালেখা চালিয়ে যাওয়ার জন্য আমাদের প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করা হচ্ছে। সরকারি-বেসরকারিভাবেও যদি সিয়ামের পরিবারকে সহযোগিতা করা হয়, তাহলে সে সহজে কাঙ্ক্ষিত স্বপ্ন পূরণ করতে পারবে।
লালমোহন উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, আমরা দেখি অনেক সুস্থ-সবল ছেলে মেয়েরাও খুব বেশি পড়ালেখা করছে না। তবে শিক্ষার্থী সিয়াম প্রতিবন্ধী হয়েও পড়ালেখা চালিয়ে যাচ্ছে। আমি তার উচ্চশিক্ষার জন্য সফলতা কামনা করছি। এছাড়া পরীক্ষা কেন্দ্রে প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের সরকারি যে সুযোগ-সুবিধা রয়েছে সিয়ামকে তার সবকিছুই দেওয়া হচ্ছে। সিয়ামের পড়ালেখা চালিয়ে যেতে যত ধরনের সহযোগিতার প্রয়োজন হয় তা ইতোমধ্যে প্রদান করেছি এবং সামনেও করব।