
নিজস্ব প্রতিবেদক:
“মাটির গন্ধ, ঘামের গন্ধ-এই গন্ধই আমার আপন গন্ধ।” এমন বিশ্বাস বুকে ধারণ করে সাংবাদিকতার পাশাপাশি কৃষিকাজে নেমেছেন দৈনিক আজকের বাংলা পত্রিকার সাতকানিয়া প্রতিনিধি মোঃ মিজানুর রহমান। দীর্ঘদিন ধরে তিনি কলমের মাধ্যমে সমাজের কথা তুলে ধরলেও এবার নিজ হাতে মাটির সঙ্গে মিশে শুরু করেছেন জীবনের নতুন এক অধ্যায়-কৃষিজীবন।
সম্প্রতি চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলার সদর ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ড দক্ষিণ রূপকানিয়া নিজ এলাকায় ধান কাটার মৌসুমে তাকে দেখা গেছে মাঠে কাস্তে হাতে ধান কাটতে। ঐতিহ্যবাহী পাঞ্জাবি-পায়জামা পরে মাঠে নেমে তিনি যেন এক নতুন বার্তা দিলেন-“কাজে লজ্জা নেই, লজ্জা অলসতায়। যে মাটি আমাকে বাঁচায়, সেই মাটির জন্য ঘাম ঝরানোই গর্ব।”
স্থানীয়রা জানান, সাংবাদিক মিজানুর রহমান ছোটবেলা থেকেই গ্রামীণ জীবনের সঙ্গে নিবিড়ভাবে যুক্ত ছিলেন। সাংবাদিকতার পাশাপাশি তিনি সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে নিরলসভাবে কাজ করে আসছেন। তিনি শুধু সংবাদকর্মীই নন-একজন সমাজকর্মী ও তরুণ উদ্যোক্তাও বটে। তিনি সাংবাদিকতা শুরু করার আগে, চট্টগ্রাম শহরে ব্যবসার পাশাপাশি তিনি ২০১৩ সাল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত আল-আমিন পাড়া সমাজ পরিচালনা কমিটির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তার নেতৃত্বে সমাজে শিক্ষা, সামাজিক উন্নয়ন ও ঐক্য প্রতিষ্ঠায় বহু কার্যক্রম বাস্তবায়িত হয়। সমাজে তার এই ইতিবাচক নেতৃত্বের সময় কিছু স্বার্থান্বেষী মহল ঈর্ষান্বিত হয়ে বিরোধিতা শুরু করলেও কেউ কখনো তার বিরুদ্ধে অন্যায়, অনিয়ম বা দুর্নীতির প্রমাণ দিতে পারেনি। পরবর্তীতে তিনি ব্যক্তিগত ও পারিবারিক কারণে স্বেচ্ছায় সভাপতির পদ থেকে অব্যাহতি নেন। স্থানীয়রা বিশ্বাস করেন, তিনি দায়িত্বে থাকলে সমাজের আরও উন্নয়নমূলক কাজ বহুগুণে বাস্তবায়ন হতো। বর্তমানে তিনি গ্রামে ফিরে এসে সাংবাদিকতার পাশাপাশি আত্মনির্ভরতার দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে নিজ উদ্যোগে কৃষিকাজ শুরু করেছেন।
মিজানুর রহমান বলেন, সাংবাদিকতা আমাকে শিখিয়েছে মানুষের কথা বলতে, আর কৃষি আমাকে শিখিয়েছে নিজের পরিশ্রমে বাঁচতে। কলম ও কাস্তে-দুটোই আমার অস্ত্র, দুটোই মানুষের কল্যাণের জন্য।” দেশের মাটির প্রতি টান এবং আত্মনির্ভরতার চিন্তা থেকেই আমি কৃষিকে জীবনের অংশ করে নিয়েছি। গ্রামীণ জনপদে তার এই উদ্যোগ ইতিমধ্যেই ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। স্থানীয় তরুণদের অনেকে তার এই উদ্যোগকে অনুপ্রেরণা হিসেবে দেখছেন।
একজন স্থানীয় যুবক বলেন, সাংবাদিক মিজান ভাই প্রমাণ করেছেন-সমাজ পরিবর্তন শুধু লেখায় নয়, কাজ করেও সম্ভব। তিনি দেখিয়ে দিয়েছেন, ইচ্ছা থাকলে যেকোনো মানুষ মাটির কাজকে সম্মানের সঙ্গে করতে পারে। মিজানুর রহমানের মতে, আজকের তরুণ সমাজ যদি আধুনিক কৃষিতে আগ্রহী হয়, তবে দেশের খাদ্য নিরাপত্তা আরও শক্তিশালী হবে। যে যুবক কৃষিকে ভালোবাসবে, সে কখনো বেকার থাকবে না।
বাংলাদেশের কৃষিনির্ভর সমাজে তার এই উদ্যোগ নিঃসন্দেহে অনুকরণীয়- যেখানে একজন সংবাদকর্মী একই সঙ্গে সমাজের খবর রাখছেন, আবার মাঠে ঘাম ঝরিয়ে দিচ্ছেন আত্মনির্ভরতার অনন্য বার্তা।














