অরবিন্দ রায়, স্টাফ রিপোর্টার
আজ সোমবার ২০ জানুয়ারী শহীদ আসাদ দিবস। বাংলাদেশের মুক্তি সংগ্রামের ইতিহাসের একটি তাৎপর্যপূর্ণ দিন। আসাদের এই আত্মত্যাগ চলমান আন্দোলনকে বেগবান করে। গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে পতন হয় স্বৈরশাসক আইয়ুব খানের।
শহীদ আসাদ দিবস উপলক্ষে নরসিংদীর শিবপুর উপজেলার ধানুয়া গ্রামের শহীদ আসাদের কবর জিয়ারত ও পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন বিভিন্ন সামাজিক- সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক সংগঠন। এছাড়া নরসিংদীর শিবপুরে নিজ বাড়িতে ও বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কর্মসূচি পালন করা হয়েছে ।
শহীদ আসাদের পুরো নাম আমানুল্লাহ মোহাম্মদ আসাদুজ্জামান। তিনি ১৯৪২ সালের ১০ জুন হাতিরদিয়ায় জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা আলহাজ্ব মাওলানা মোহাম্মদ আবু তাহের বিএবিটি হাতিরদিয়া সাদত আলী হাই স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা প্রধান শিক্ষক।
১৯৬০ সালে মেট্রিকুলেশন পাশ করার পর ঢাকায় জগন্নাথ কলেজে বড় তিন ভাইকে অনুসরণ করে বিজ্ঞান পড়ার জন্য এইচএসসিতে ভর্তি হন। এক বছর লেখাপড়া করার পর সিলেট মুরারী চাঁদ কলেজে ভর্তি হন। কলেজে পড়ার সময় তিনি ছাত্র রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। সেখান থেকে বিএ -অনার্স- এবং এমএ ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৬৮ সালে ঢাকা সিটি ল কলেজে এল.এল.বি কোর্সে ভর্তি হন। ফলাফল আশানুরূপ না হওয়ায় ওই বছরেই দ্বিতীয়বার মানোন্নয়ন-এমএ পরীক্ষায় অংশ গ্রহন করেন ।
১৯৬৯ সালে ১৭ জানুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলা কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সমাবেশ থেকে ১১ দফা দাবিতে অংশ গ্রহন করেন । পুলিশ-ইপিআর বাহিনীর ছাত্র-জনতার ওপর বর্বর নির্যাতনের প্রতিবাদে ২০ জানুয়ারি পূর্ণ দিবস হরতাল কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। এদিন সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ধর্মঘট ডাকা হয়। গর্ভনর মোনায়েম খান ওই দিন ঢাকা শহরে ১৪৪ ধারা জারি করেন। ১১ দফা দাবিতে প্রায় ১০ হাজার ছাত্র বিশাল মিছিল করে ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করলে পুলিশ বাধার মুখে পড়ে। আসাদ সহ কিছু ছাত্র ছত্রভঙ্গ মিছিলটি আবার সংগঠিত করে ঢাকা হলের -বর্তমান শহীদুল্লাহ হল- পাশ দিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। এ সময়ই পুলিশের গুলিতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনের সড়কে আসাদ শহীদ হন।
তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়ন -মেনন- গ্রুপ এর নেতা ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদুল্লাহ হল শাখার সভাপতি আসাদের মৃত্যুতে আন্দোলনের অগ্নিশিখা জ্বলে উঠে। শহীদ আসাদের রক্তমাখা শার্ট নিয়ে পরদিন রাজধানী ঢাকায় বের হয় স্মরণকালের বৃহত্তর শোক মিছিল। বিক্ষোভের নগরীতে পরিণত হয় প্রাদেশিক রাজধানী ঢাকা। আসাদের রক্ত আর বিক্ষুদ্ধ জনতা সেই সময়ই ছুটে যান মোহাম্মদপুর তৎকালীন আইয়ূব গেটের সামনে এবং প্রতিবাদের ক্ষুদ্ধ প্রতীক হিসাবে আইয়ূব গেটের নামফলক গুড়িয়ে দিয়ে রক্ত দিয়েই লেখেন আসাদ গেট। সেই থেকে মোহাম্মদপুর আসাদ গেটের জন্ম।
ওই সময় আসাদের শার্ট হাতে নিয়ে জনতার দীর্ঘ মিছিল দেখে কবি শামসুর রাহমানও লেখেন তার বিখ্যাত কবিতা ‘আসাদের শার্ট ‘। ‘গুচ্ছ গুচ্ছ রক্ত কবরীর মতো কিংবা সূর্যোস্তের জ্বলন্ত মেঘের মতো আসাদের শার্ট-উড়ছে হাওয়ায়-নীলিমায়।
এছাড়াও গণঅভুত্থানের নায়ক আসাদকে স্মরণীয় করে রাখতে তার জন্মভূমি নরসিংদীর শিবপুরে প্রতিষ্ঠা করা হয় সরকারী শহীদ আসাদ কলেজ, শহীদ আসাদ কলেজিয়েট গার্লস হাইস্কুল, শহীদ আসাদ সড়কসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান।
নরসিংদীর শিবপুরের ধানুয়া গ্রামে শহীদ আসাদের সমাধিস্থলে বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক সংগঠনের পক্ষ থেকে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয়।