মোঃ আসিফুজ্জামান আসিফ
সিনিয়র ষ্টাফ রিপোর্টার।।
থমকে আছে মহাসড়ক -সেই সঙ্গে আটকে গেছে কয়েক হাজার যানবাহন। বকেয়া বেতন ও সার্ভিস বেনিফিটসহ বিভিন্ন দাবিতে মহাসড়কে শ্রমিকদের অবরোধে সৃষ্টি হয়েছে এই স্থবিরতা। সমাধান না হওয়ায় মহাসড়কে কেটেছে শ্রমিকদের রাত। প্রায় ২৪ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও দাবি পূরণের আশ্বাস দেয়নি কোনো পক্ষ।
মঙ্গলবার -১ অক্টোবর- সকাল ৮টার দিকে নবীনগর চন্দ্রা মহাসড়কের বাইপাইল থানা রোড এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে- শ্রমিকদের অবরোধ কর্মসূচি চলছে। নারী ও পুরুষ শ্রমিকদের মহাসড়কের উভয় পাশে বসে থাকতে দেখা গেছে তাদের। এর আগে গতকাল সোমবার সকাল ৯টার দিকে মহাসড়কটি অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করে বার্ডস গ্রুপের শ্রমিকরা। দাবি আদায় না হওয়ায় সড়ক অবরোধ করে চলে দিনভর এই কর্মসূচি। তবে বৃষ্টি উপেক্ষা করে রাতেও ছিল সমান উপস্থিতি। ২৪ ঘণ্টা সড়ক অবরোধ করে আন্দোলন করলেও এখন পর্যন্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বা মালিকপক্ষের কাউকে দেখা যায়নি। কিন্ত দীর্ঘ সময় যানচলাচল বন্ধ থাকায় ভোগান্তিতে পড়েছে সাধারণ মানুষের পাশাপাশি অন্যান্য কারখানার শ্রমিকরা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়- গত ২৭ আগস্ট এক নোটিসের মাধ্যমে বার্ডস গ্রুপ লে-অফ জানান- রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ও বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দার কারণে বেশ কিছুদিন যাবৎ কারখানাতে কোনো প্রকার কাজ নেই। এরপরেও কারখানা কর্তৃপক্ষ অব্যাহতভাবে আর্থিক লোকসানের মধ্য দিয়ে ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনা করে যাচ্ছিল। শত চেষ্টা করেও নতুন কোনও কাজের অর্ডার সংগ্রহ করতে পারেনি- যা কর্তৃপক্ষের নিয়ন্ত্রণ বহির্ভূত। এমতাবস্থায় ২৮ আগস্ট থেকে গ্রুপটির আর এন আর ফ্যাশনস লিমিটেড- বার্ডস গার্মেন্টস লিমিটেড- বার্ডস ফেডরেক্স লিমিটেড এবং বার্ডস অ্যান্ড জেড লিমিটেডের সব সেকশনের কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করা হয়।
শ্রমিকরা বলেন- ২৭ তারিখের ইস্যু করা নোটিসের মাধ্যমে ২৮ আগস্ট আশুলিয়ার বাইপাইল এলাকার বার্ডস গ্রুপের সব কারখানা লে-অফ ঘোষণা করা হয়। এসময় শ্রমিক কর্মচারীদের আগস্ট মাসের বেতন সেপ্টেম্বরের ১০ তারিখ ও সার্ভিস বেনিফিটসহ ক্ষতিপূরণ ৩০ সেপ্টেম্বর পরিশোধের দিন ধার্য করা হয়। চুক্তিমতো শ্রমিকদের বেতনের টাকা পরিশোধ করলেও ৩০ সেপ্টেম্বর সার্ভিস বেনিফিটসহ ক্ষতিপূরণের টাকা প্রদানের আরও তিন মাস সময় চেয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। নির্ধারিত টাকা পরিশোধ না করায় শ্রমিকরা সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করে। এদিকে শ্রমিকদের টাকা পরিশোধ না করলেও শ্রমিক নেতাদের প্রায় সাড়ে ৮ লাখ টাকা উৎকোচ হিসাবে প্রদান করেছে কারখানা কর্তৃপক্ষ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শ্রমিকনেতা বলেন, ‘শ্রমিকদের নির্ধারিত পাওনাদি পরিশোধের তারিখ ৩০ সেপ্টেম্বর ধার্য করা ছিল। এই তারিখ পিছিয়ে আরও তিন মাস সময় চান কর্তৃপক্ষ। শ্রমিকদের বুঝিয়ে এই তিনমাস সময় নিয়ে দিতে শ্রমিক নেতারা ২০ লাখ টাকা দাবি করেন কারখানা কর্তৃপক্ষের কাছে। পরে ১২ লাখ টাকায় দফা রফা হয়। ২৯ সেপ্টেম্বর ৪ শ্রমিক নেতা কারখানার আইনজীবী ‘আমেনার’ সঙ্গে মিটিং করেন। পরে বার্ডস গ্রুপের পক্ষ থেকে তিন মাস সময় চেয়ে একটি নোটিস দেওয়া হয়। নোটিসের খবর শ্রমিকদের মাঝে ছড়িয়ে পড়লে শ্রমিকরা উত্তেজিত হয়ে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন।
শিল্পপুলিশ জানায়- বিভিন্ন কারখানার অভ্যন্তরীণ সমস্যার কারণে আজ শিল্পাঞ্চলে ১৩-১- ধারায় বন্ধ রয়েছে ৭টি কারখানা এবং আরও ৭টি কারখানায় সাধারণ ছুটি রয়েছে।
এ ব্যাপারে শিল্প পুলিশ-১ পুলিশ সুপার সারোয়ার আলমের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলেও তাকে পাওয়া যায়নি।