Dhaka , Saturday, 19 July 2025
নিবন্ধন নাম্বারঃ ১১০, সিরিয়াল নাম্বারঃ ১৫৪, কোড নাম্বারঃ ৯২
শিরোনাম ::
বাংলাদেশ থেকে সকল প্রকার বৈষম্য দূর করতে হবে- দিবালোক সিং শহীদ ফারহান ফাইয়াজের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে কবর দোয়া ও জিয়ারত জুলাই বিপ্লব-২৪ বীর শহিদ ফারহান ফাইয়াজের ১ম মৃত্যু বার্ষীকি উপলক্ষ্যে রূপগঞ্জে দোয়া ও স্বরন সভা অনুষ্ঠিত গণ বিশ্ববিদ্যালয়ে (গবি) জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পুনর্জাগরণ উপলক্ষে  “জুলাই স্মরণ ও প্রামাণ্য চিত্র প্রদর্শনী”  অনুষ্ঠিত হয়েছে। পাবনায় নিষিদ্ধ চায়না দুয়ারী জাল পুড়িয়ে ধ্বংস রায়পুরায় মোবাইল কোর্টের অভিযান, ১৫ হাজার ৫০০ টাকা জরিমানা ও দোকান উচ্ছেদ ৩ কোটি টাকার ইয়াবাসহ নারী মাদক কারবারি গ্রেফতার রাজাপুরে ছাত্রদল নেতার আপত্তিকর ভিডিও ভাইরাল, সমালোচনার ঝড় রামগঞ্জে ৩দিন ব্যাপী মাল্টিমিডিয়া  সাংবাদিকতা বিষয়ক প্রশিক্ষণ শুরু সারাদেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতি ও তারেক রহমানের বিরুদ্ধে কটুক্তির প্রতিবাদে বিক্ষোভ সমাবেশ  ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করবেন না: বিএনপি নেতা দুলুর হুঁশিয়ারি ১৫ বিজিবির একযোগে তিন স্থানে অভিযান, পৌনে তিন লাখ টাকার মাদক জব্দ কক্সবাজার সমুদ্রপাড়ে ছেলে  হারা অসহায় মায়ের প্রতীক্ষা গণঅভ্যুত্থানে নিহতদের স্মরণে মোংলায় বিএনপির মিছিল গাজীপুরে সড়ক দুর্ঘটনায় একই পরিবারের  ৩ জনসহ ৫ জনের মর্মান্তিক মৃত্যু আনোয়ারা থানা পুলিশ কর্তৃক দেশি-বিদেশী আগ্নেয়াস্ত্র, গুলি, অস্ত্র তৈরীর ছোট-বড় যন্ত্রাংশ ও নগদ টাকাসহ ১ জন গ্রেফতার চন্দনাইশে দোহাজারী পৌরসভার শ্রেণি পরিবর্তনে স্থানীয় সরকার বিভাগের যুগ্মসচিব সাইফুল ইসলাম সরেজমিনে পরিদর্শন ফাতিন আহনাফের স্বপ্নের পাশেই থাকবেন ব্যারিস্টার কায়সার কামাল জুলাই যোদ্ধাদের ঐক্যই আমাদের শক্তি – মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা বেকারত্ব দূর করতে কাজ করছে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় –উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ দপদপিয়ায় ঝুঁকিপূর্ণ বিদ্যুৎ লাইন প্রত্যাহারের দাবিতে মানববন্ধন। ঝালকাঠি জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হাবিবুর রহমান হাবিল গ্রেফতার ঝালকাঠিতে জুলাই শহীদ দিবস পালন, শহীদদের স্মরণে আলোচনা সভা ঝালকাঠিতে এনসিপি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মহাসড়ক অবরোধ নলছিটিতে ইসলামী ছাত্র আন্দোলনের বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি ডিমলায় লটারির মাধ্যমে খোলা বাজারে খাদ্যশস্য বিক্রয় ডিলার নির্বাচিত। উত্তরবঙ্গের গর্বিত সন্তান শহীদ আবু সাঈদের  জীবনদানের মধ্যে দিয়ে ফ্যাসিবাদীদের মসনদে প্রথম পেরেক মেরেছিল-শিমুল বিশ্বাস  রামগঞ্জে বিএনপি’র ওয়ার্ড কাউন্সিল অনুষ্ঠিত তিস্তা ফুঁসছে: রংপুর বিভাগের নীলফামারী, লালমনিরহাট, রংপুর ও কুড়িগ্রামে বন্যার পূর্বাভাস পাবনার ৩ মাদক ব্যবসায়ীকে ভ্রাম্যমাণ আদালতে জেল ও জরিমানা

সদরপুরে চুন,রং,চিনিতে তৈরি হচ্ছে নকল  খেজুর গুড় স্বাস্থ্যঝুঁকিতে মানুষ।।

  • Reporter Name
  • আপডেট সময় : 10:56:46 am, Wednesday, 1 January 2025
  • 117 বার পড়া হয়েছে

সদরপুরে চুন,রং,চিনিতে তৈরি হচ্ছে নকল  খেজুর গুড় স্বাস্থ্যঝুঁকিতে মানুষ।।

মামুন মিঞা

সিনিয়র স্টাফ রিপোর্টার ফরিদপুর।।

   

   

ফরিদপুরের খেজুরের গুড়ের আলাদা একটা সুনাম ছিলো বহু বছর আগে থেকেই।খাঁটি গুড়ের সুগন্ধ চারপাশে ছড়িয়ে পড়ে অগ্রহায়ণ মাসেই।এ গুড়ের স্বাদই আলাদা।সেই খেজুরের গুড় এখন নেই বললেই চলে।

জেলার বিভিন্ন স্থানে অতি গোপনে গড়ে উঠেছে ভেজাল গুড় তৈরি কারখানা।দেখে বুঝার ও কায়দা নেই-হুবহু এক রকমের। স্বাদ গন্ধও ঠিক আছে। বিশেষ করে সদরপুর উপজেলা বিভিন্ন স্থানে গড়ে উঠেছে ভেজাল গুড় তৈরি কারখানা।
    
খেজুরের রস ছাড়াই তৈরি হচ্ছে খেজুরের গুড়। দেখতে অবিকল  খেজুর গুড়ের মতো মনে হলেও আসলে এসব ভেজাল খেজুর গুড়। এসব গুড়ের উপাদান অপরিশোধিত ভারতীয় চিনি,পুরাতন পঁচা গুড়, রং, আটা- চুন- রাসায়নিক এবং ভেষজ নির্যাস।

ফরিদপুর জেলার সদরপুর উপজেলায় প্রতিবছর খেজুর গাছের সংখ্যা কমলেও বাড়ছে ভেজাল গুড়ের উৎপাদন। এজন্য এ উপজেলার ঢেউখালী, নয়রশি ও কৃষ্ণপুরসহ আনাচে কানাচে গড়ে উঠেছে কারখানা। প্রতিদিন এ গুড় যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। এতে ফরিদপুরের গুড়ের সুনাম নষ্টের পাশাপাশি বাড়ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে- শীত এলে সদরপুরে এক শ্রেণির মৌসুমে ব্যবসায়ী কারিগর এনে অথবা নিজেরাই কারখানা খুলে বসেন। রাতারাতি প্রতিটি কারখানায় ২০০-৩০০ কেজি গুড় তৈরি করেন। এর পর বিভিন্ন হাট বাজারে এসব ভেজাল গুড় বিক্রি করেন। বিশেষ করে চন্দ্রপাড়া ও আটরশি দরবার শরীফের বাৎসরিক ওরস আসলে এসব গুড় বেশি বানানো হয়। চড়া দামে বিক্রি করেন এসব গুড়।

সরেজমিন কয়েকটি এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, যত্রতত্র গড়ে উঠেছে কারখানা।  ভারতীয় অপরিশোধিত চিনি ও গুড়ের টিন কেটে টুকরো করা হচ্ছে। সাথে দেওয়া হচ্ছে ১০-১২ কেজি ঝোলা গুড়,দিয়ে জ্বালানো হয়। পরে অপরিশোধিত চিনি ও গুড়ের দলা  মেশানো হচ্ছে। তারপর দেওয়া হচ্ছে  নির্যাস, রং, রাসায়নিক, চুন ও আটা। মিশিয়ে তৈরি হচ্ছে অভিনব  খেজুরের গুড়।প্রকাশ্যে চলছে এমন কর্মকাণ্ড।
অপরিশোধিত চিনি-গুড় ভারত থেকে আমদানি করা হয় বলে দাবি কারখানা মালিকদের।

তারা বলেন, অনেক আগে থেকেই এসব ব্যবহার করা হচ্ছে। আগে প্রতি মণ গুড় তৈরিতে খেজুরের রস কিংবা ঝোলা গুড়ের সঙ্গে ৫-১০ কেজি চিনি দেওয়া হতো। এখন টিনভর্তি ভারতীয় অপরিশোধিত চিনি-গুড়ের প্রায় ২২ কেজি উপকরণ মেশানো হয়।

এর সঙ্গে ১০-১২ কেজি ঝোলা গুড়, আটা ও রাসায়নিক মেশালেই এক মণ গুড় হয়। প্রতি কেজি অপরিশোধিত চিনি-গুড় ৭০-৮০ টাকায় কিনলেও বাজারের খেজুরের গুড় ২০০ থেকে ৪০০ টাকায় বিক্রি হয়। এতে কয়েক গুণ লাভ হচ্ছে।

উপজেলার চরবিষ্ণুপুর ইউনিয়নের এক গাছি আজাদ হোসেন বলেন, আগে ফরিদপুরের নাম শুনলেই ক্রেতারা হুমড়ি খেয়ে পড়তেন গুড় কিনতে। তবে বর্তমানে প্রতারিত হয়ে তারা আগ্রহ হারিয়েছে।

এখন গাছিদের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়ে আসল গুড় কিনতে হয়। ভেজাল গুড়ে ভেষজ নির্যাস মেশানোর কারণে আসলের চেয়ে ঘ্রাণ বেশি হয়। বাজারে আসল ও ভেজাল, সব একই দাম। আসল গুড় তৈরি করা কঠিন। এ জন্য রস ও ঝোলা গুড় কেজি হিসেবে স্থানীয়দের কাছে বিক্রি করে দিচ্ছি। তারা অগ্রিম টাকা দিয়ে এসব কিনছে।

গুড় তৈরি কারখানার কারিগরদের সাথে কথা বলে জানাযায়,প্রাকৃতিক কারণে খেজুর গাছে আগের মতো রস হয় না। রস ছাড়া আসল খেজুর গুড় তৈরি করবো কিভাবে? গুড়ের পরিমাণ বাড়াতে সামান্য রসের সাথে আমরা চিনি মেশাই। যখন রস থাকেনা তখন পুরাতন গুড়, চিনি আর কেমিক্যাল দিয়ে নতুন গুড় তৈরি করি। তাতে অল্প টাকায় কিছুটা গুড়ের স্বাদ পায় ক্রেতারা। আমরা এসব গুড় তৈরি করছি বলে অনেকে গুড় খেতে পারছে। না হলে গুড় আর চোখে দেখতে হতো না।

কেমিক্যাল মিশ্রিত গুড় খেলে আলসার- ডায়রিয়া- কলেরাসহ পেটের নানান সমস্যা দেখা দিতে পারে বলে জানান সদরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এর মেডিকেল অফিসার ডা.মো.সালাউদ্দিন। তিনি আরও বলেন, এসব গুড় দিয়ে শিশুদের খাদ্য তৈরি করে খাওয়ালে কিডনি, হৃদযন্ত্র, ব্রেন ও লিভার ক্যান্সারের মতো জটিল রোগে আক্রান্ত হতে পারে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নিটুল রায় বলেন- গাছ কমলেও গুড়ের উৎপাদন বেড়েছে। কারখানাগুলোয় নিম্নমানের সাদা ও লাল অপরিশোধিত চিনি-গুড় মেশানো হচ্ছে। এতে গুনগত মান থাকছে না। এতে প্রকৃত উৎপাদনকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। আমরা এ বিষয়ে সবাইকে সচেতন করে যাচ্ছি কিন্তু তাতে খুব একটা লাভ হচ্ছে না।

বাংলাদেশ ভোক্তা সমিতি -ক্যাব- এর সদরপুর উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক প্রভাত কুমার সাহা বলেন, ভেজাল গুড় তৈরি বন্ধে এ উপজেলায় অনেক অভিযান চালানো প্রয়োজন। নতুন কিছু কারখানার তথ্য মিলেছে। সেখানে দ্রুত অভিযান চালানো হবে। এ বিষয়ে শীঘ্রই প্রশাসনের সাথে আমরা আলোচনা করবো।

উপজেলার সচেতন মহল বলছে, কারখানাগুলোর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে টিকতে পারছে না আসল গাছিরা। গাছিরা দৈনিক ১০ কেজি গুড় তৈরিতেই ক্লান্ত আর কারখানা মালিকরা দিনে ১০ থেকে ১২ মণ গুড় তৈরি করছে। বর্তমানে সুনাম হারাতে বসেছে ফরিদপুর অঞ্চলের গুড়।

এভাবে চলতে থাকলে সদরপুরসহ ফরিদপুরের গুড় আর চলবে না। সদরপুরে ভেজাল গুড়ের কারখানা বন্ধে দ্রুত অভিযানের পাশাপাশি সরকারি উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সঞ্চয় করে রাখুন

জনপ্রিয় সংবাদ

রূপগঞ্জে বস্ত্র ও পাটমন্ত্রীর নির্দেশে নির্মিত চার সড়কের উদ্বোধন।।

পেকুয়ায় বেড়িবাঁধ ভেঙে লোকালয়ে প্লাবিত,২ শত পরিবার পানিবন্দী।।

বাংলাদেশ থেকে সকল প্রকার বৈষম্য দূর করতে হবে- দিবালোক সিং

সদরপুরে চুন,রং,চিনিতে তৈরি হচ্ছে নকল  খেজুর গুড় স্বাস্থ্যঝুঁকিতে মানুষ।।

আপডেট সময় : 10:56:46 am, Wednesday, 1 January 2025

মামুন মিঞা

সিনিয়র স্টাফ রিপোর্টার ফরিদপুর।।

   

   

ফরিদপুরের খেজুরের গুড়ের আলাদা একটা সুনাম ছিলো বহু বছর আগে থেকেই।খাঁটি গুড়ের সুগন্ধ চারপাশে ছড়িয়ে পড়ে অগ্রহায়ণ মাসেই।এ গুড়ের স্বাদই আলাদা।সেই খেজুরের গুড় এখন নেই বললেই চলে।

জেলার বিভিন্ন স্থানে অতি গোপনে গড়ে উঠেছে ভেজাল গুড় তৈরি কারখানা।দেখে বুঝার ও কায়দা নেই-হুবহু এক রকমের। স্বাদ গন্ধও ঠিক আছে। বিশেষ করে সদরপুর উপজেলা বিভিন্ন স্থানে গড়ে উঠেছে ভেজাল গুড় তৈরি কারখানা।
    
খেজুরের রস ছাড়াই তৈরি হচ্ছে খেজুরের গুড়। দেখতে অবিকল  খেজুর গুড়ের মতো মনে হলেও আসলে এসব ভেজাল খেজুর গুড়। এসব গুড়ের উপাদান অপরিশোধিত ভারতীয় চিনি,পুরাতন পঁচা গুড়, রং, আটা- চুন- রাসায়নিক এবং ভেষজ নির্যাস।

ফরিদপুর জেলার সদরপুর উপজেলায় প্রতিবছর খেজুর গাছের সংখ্যা কমলেও বাড়ছে ভেজাল গুড়ের উৎপাদন। এজন্য এ উপজেলার ঢেউখালী, নয়রশি ও কৃষ্ণপুরসহ আনাচে কানাচে গড়ে উঠেছে কারখানা। প্রতিদিন এ গুড় যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। এতে ফরিদপুরের গুড়ের সুনাম নষ্টের পাশাপাশি বাড়ছে স্বাস্থ্যঝুঁকি।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে- শীত এলে সদরপুরে এক শ্রেণির মৌসুমে ব্যবসায়ী কারিগর এনে অথবা নিজেরাই কারখানা খুলে বসেন। রাতারাতি প্রতিটি কারখানায় ২০০-৩০০ কেজি গুড় তৈরি করেন। এর পর বিভিন্ন হাট বাজারে এসব ভেজাল গুড় বিক্রি করেন। বিশেষ করে চন্দ্রপাড়া ও আটরশি দরবার শরীফের বাৎসরিক ওরস আসলে এসব গুড় বেশি বানানো হয়। চড়া দামে বিক্রি করেন এসব গুড়।

সরেজমিন কয়েকটি এলাকায় গিয়ে দেখা গেছে, যত্রতত্র গড়ে উঠেছে কারখানা।  ভারতীয় অপরিশোধিত চিনি ও গুড়ের টিন কেটে টুকরো করা হচ্ছে। সাথে দেওয়া হচ্ছে ১০-১২ কেজি ঝোলা গুড়,দিয়ে জ্বালানো হয়। পরে অপরিশোধিত চিনি ও গুড়ের দলা  মেশানো হচ্ছে। তারপর দেওয়া হচ্ছে  নির্যাস, রং, রাসায়নিক, চুন ও আটা। মিশিয়ে তৈরি হচ্ছে অভিনব  খেজুরের গুড়।প্রকাশ্যে চলছে এমন কর্মকাণ্ড।
অপরিশোধিত চিনি-গুড় ভারত থেকে আমদানি করা হয় বলে দাবি কারখানা মালিকদের।

তারা বলেন, অনেক আগে থেকেই এসব ব্যবহার করা হচ্ছে। আগে প্রতি মণ গুড় তৈরিতে খেজুরের রস কিংবা ঝোলা গুড়ের সঙ্গে ৫-১০ কেজি চিনি দেওয়া হতো। এখন টিনভর্তি ভারতীয় অপরিশোধিত চিনি-গুড়ের প্রায় ২২ কেজি উপকরণ মেশানো হয়।

এর সঙ্গে ১০-১২ কেজি ঝোলা গুড়, আটা ও রাসায়নিক মেশালেই এক মণ গুড় হয়। প্রতি কেজি অপরিশোধিত চিনি-গুড় ৭০-৮০ টাকায় কিনলেও বাজারের খেজুরের গুড় ২০০ থেকে ৪০০ টাকায় বিক্রি হয়। এতে কয়েক গুণ লাভ হচ্ছে।

উপজেলার চরবিষ্ণুপুর ইউনিয়নের এক গাছি আজাদ হোসেন বলেন, আগে ফরিদপুরের নাম শুনলেই ক্রেতারা হুমড়ি খেয়ে পড়তেন গুড় কিনতে। তবে বর্তমানে প্রতারিত হয়ে তারা আগ্রহ হারিয়েছে।

এখন গাছিদের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়ে আসল গুড় কিনতে হয়। ভেজাল গুড়ে ভেষজ নির্যাস মেশানোর কারণে আসলের চেয়ে ঘ্রাণ বেশি হয়। বাজারে আসল ও ভেজাল, সব একই দাম। আসল গুড় তৈরি করা কঠিন। এ জন্য রস ও ঝোলা গুড় কেজি হিসেবে স্থানীয়দের কাছে বিক্রি করে দিচ্ছি। তারা অগ্রিম টাকা দিয়ে এসব কিনছে।

গুড় তৈরি কারখানার কারিগরদের সাথে কথা বলে জানাযায়,প্রাকৃতিক কারণে খেজুর গাছে আগের মতো রস হয় না। রস ছাড়া আসল খেজুর গুড় তৈরি করবো কিভাবে? গুড়ের পরিমাণ বাড়াতে সামান্য রসের সাথে আমরা চিনি মেশাই। যখন রস থাকেনা তখন পুরাতন গুড়, চিনি আর কেমিক্যাল দিয়ে নতুন গুড় তৈরি করি। তাতে অল্প টাকায় কিছুটা গুড়ের স্বাদ পায় ক্রেতারা। আমরা এসব গুড় তৈরি করছি বলে অনেকে গুড় খেতে পারছে। না হলে গুড় আর চোখে দেখতে হতো না।

কেমিক্যাল মিশ্রিত গুড় খেলে আলসার- ডায়রিয়া- কলেরাসহ পেটের নানান সমস্যা দেখা দিতে পারে বলে জানান সদরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এর মেডিকেল অফিসার ডা.মো.সালাউদ্দিন। তিনি আরও বলেন, এসব গুড় দিয়ে শিশুদের খাদ্য তৈরি করে খাওয়ালে কিডনি, হৃদযন্ত্র, ব্রেন ও লিভার ক্যান্সারের মতো জটিল রোগে আক্রান্ত হতে পারে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নিটুল রায় বলেন- গাছ কমলেও গুড়ের উৎপাদন বেড়েছে। কারখানাগুলোয় নিম্নমানের সাদা ও লাল অপরিশোধিত চিনি-গুড় মেশানো হচ্ছে। এতে গুনগত মান থাকছে না। এতে প্রকৃত উৎপাদনকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। আমরা এ বিষয়ে সবাইকে সচেতন করে যাচ্ছি কিন্তু তাতে খুব একটা লাভ হচ্ছে না।

বাংলাদেশ ভোক্তা সমিতি -ক্যাব- এর সদরপুর উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক প্রভাত কুমার সাহা বলেন, ভেজাল গুড় তৈরি বন্ধে এ উপজেলায় অনেক অভিযান চালানো প্রয়োজন। নতুন কিছু কারখানার তথ্য মিলেছে। সেখানে দ্রুত অভিযান চালানো হবে। এ বিষয়ে শীঘ্রই প্রশাসনের সাথে আমরা আলোচনা করবো।

উপজেলার সচেতন মহল বলছে, কারখানাগুলোর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে টিকতে পারছে না আসল গাছিরা। গাছিরা দৈনিক ১০ কেজি গুড় তৈরিতেই ক্লান্ত আর কারখানা মালিকরা দিনে ১০ থেকে ১২ মণ গুড় তৈরি করছে। বর্তমানে সুনাম হারাতে বসেছে ফরিদপুর অঞ্চলের গুড়।

এভাবে চলতে থাকলে সদরপুরসহ ফরিদপুরের গুড় আর চলবে না। সদরপুরে ভেজাল গুড়ের কারখানা বন্ধে দ্রুত অভিযানের পাশাপাশি সরকারি উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।