Dhaka , Friday, 5 December 2025
নিবন্ধন নাম্বারঃ ১১০, সিরিয়াল নাম্বারঃ ১৫৪, কোড নাম্বারঃ ৯২
শিরোনাম ::
আদেশ সংযুক্ত চট্টগ্রাম মহানগর যুবদল নেতা মোশাররফ’র বহিষ্কার আদেশ প্রত্যাহার পাইকগাছায় দাঁড়িপাল্লার গণসংযোগ: কালভার্ট নির্মাণে অনুদান দিলেন মাঃ আবুল কালাম আজাদ পাইকগাছার চাঁদখালীতে দুই বিএনপি নেতার বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার রূপগঞ্জে ছাত্রদলের কার্যালয়ে সশস্ত্র হামলা, আহত ৮ পাইকগাছায় বিজয় দিবস উদযাপন উপলক্ষে প্রস্তুতিমূলক সভা পাইকগাছায় ইউএনও হিসেবে যোগদান করলেন ওয়াসিউজ্জামান চৌধুরী চবির অবসরপ্রাপ্ত প্রফেসর ড. তোফায়েল আহমেদ ও প্রফেসর ড. এম. আব্দুল ওয়াহ্হাব এর শোকসভা অনুষ্ঠিত। রামগঞ্জ মার্চ ফর দাঁড়িপাল্লা অনুষ্ঠানে   সরকারি সকল অফিসে ঘুষ এবং হয়রানি বন্ধ করা হবে: নাজমুল হাসান পাটোয়ারী লালমনিরহাট সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে এক বাংলাদেশি যুবক নিহত, মরদেহ হস্তান্তর নিয়ে ধোঁয়াশা রূপগঞ্জে খালেদা জিয়ার রোগমুক্তি কামনায় দোয়া মাহফিল সরাইলেপালিত হচ্ছে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের কমপ্লিট শাটডাউন পাবনায় ধর্ষণ মামলার যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামি ১১ বছর পর জয়দেবপুরে গ্রেপ্তার শ্রীপুরে বেগম খালেদা জিয়ার সুস্থতা ও রোগ মুক্তি কামনায় পবিত্র কোরআন ও খতম দোয়া মাহফিল রূপগঞ্জে ৭০কেজি গাঁজাসহ মাদক কারবারি আটক দুর্যোগ প্রতিরোধে সকলকে সচেতন হতে হবে -ডিসি সারওয়ার ৯.৫০ লাখ টাকার শাড়ি ও মাদক জব্দ: কুড়িগ্রাম সীমান্তে বিজিবি’র সফল সাড়াশি অভিযান রূপগঞ্জে ছাত্রদলের কার্যালয়ে সশস্ত্র হামলা, জিয়া পরিবারের ছবি ভাঙচুর, আহত-৮ দেশে ফিরলেন চসিক মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন ইবিতে জুলাইবিপ্লব বিরোধী আরও ৯ শিক্ষককে বরখাস্ত এনিয়ে মোট ১৮ জন সেনাপ্রধানের সঙ্গে ফরাসি রাষ্ট্রদূতের সৌজন্য সাক্ষাৎ শ্রীপুরে বেগম খালেদা জিয়ার সুস্থতা ও রোগ মুক্তি কামনায় পবিত্র কোরআন ও খতম দোয়া মাহফিল ৮ দফা দাবিতে নোয়াখালীতে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে এটিআই শিক্ষার্থীদের অবস্থান কর্মসূচি নোয়াখালীতে ব্যবসায়ীকে গুলি করে মোটরসাইকেল ছিনতাই নোয়াখালীতে গভীর রাতে বিআরটিসির ২ বাসে আগুন রূপগঞ্জে ১৫ পিস ইয়াবাসহ দুই মাদক কারবারি গ্রেপ্তার মধ্যনগরে বাঁশের সাঁকু উদ্বোধন করলেন এমপি প্রার্থী মাওলানা আবদুল জব্বার বক্তাবলীতে মাদক ও অসামাজিক কার্যকলাপের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ সমাবেশ রূপগঞ্জে প্রজন্ম ৭১-এর নবগঠিত কমিটির সৌজন্য সাক্ষাৎ, দিপু ভূঁইয়াকে ফুলেল শুভেচ্ছা নরসিংদী ভূমিকম্পে কেঁপে উঠল শান্ত সকাল জাজিরা থানার ওসি মাইনুলের বদলি: স্বস্তিতে আ.লীগ, হতাশ সাধারণ মানুষ

সড়কতো নয় যেন ধান শুকানোর চাতাল।।

  • Reporter Name
  • আপডেট সময় : 10:21:09 am, Thursday, 13 June 2024
  • 91 বার পড়া হয়েছে

সড়কতো নয় যেন ধান শুকানোর চাতাল।।

নীলফামারী থেকে
  
সাদ্দাম আলী।।
  
  
খলান আর চাতালে পরিণত হয়ে পড়েছে নীলফামারীর সড়ক-মহাসড়ক গুলো। দেখে বুঝার উপায় নেই কোনটি সড়ক আর কোনটি চাতাল কিংবা খলান। সড়ক-মহাসড়ক দখল করে মেশিন বসিয়ে ধান মাড়াইসহ ধান-খড়- বিচালী শুকানোর কাজ করছেন কৃষকরা।
জেলার ছয় উপজেলার প্রত্যেকটি সড়ক-মহাসড়ক এখন কৃষককের ধান,খড় আর বিচালীর দখলে। এমন অবস্থায় প্রায় সড়ক দূর্ঘটনায় ঘটছে প্রাণহানির ঘটনা। তবে ক্ষেতে বা বাড়ির আশপাশে খলান না থাকায় কষ্ট করে আবাদ করা ফসল সড়ক-মহাসড়কে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাটাই-মাড়াইসহ শুকাতে বাধ্য হচ্ছেন বলে দাবি কৃষকদের। অপর দিকে প্রশাসনসহ সংশ্লিস্টরা দ্রুত উদ্যোগী না হলে এসব সড়কে দূর্ঘটনাসহ প্রাণহানির ঘটনা বাড়বে বলে দাবি করেন যানবাহন চালকরা। এদিকে সড়ক-মহাসড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক রাখাতে বিশেষ উদ্যোগের কথা জানিয়েছে জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসন।
নীলফামারী জেলার গ্রামীণ রাস্তা থেকে শুরু করে সড়ক-মহাসড়ক-আঞ্চলিক মহাসড়কে ফসল মাড়াই থেকে শুকানো আর বিচালী স্তুপ করে রাখার দৃশ্যটা দেখা মিলে প্রতিটি শস্য মৌসুমে। সড়ক গুলো দখল করে খলান কিংবা চাতালে পরিণত করে ধান মারাই থেকে শুরু করে ধান ও খড় শুকাতে ব্যস্ত কৃষককেরা। শুধু বোরো আর আমন মৌসুমেই নয় এসব সড়ক কৃষকদের দখলে থাকে ভুট্টা- গম ও পাট মৌসুমেও।
জেলার ব্যস্ততম নীলফামারী-সৈয়দপুর আঞ্চলিক মহাসড়ক- নীলফামারী-ডোমার আঞ্চলিক মহাসড়- নীলফামারী-ডিমলা- জলঢাকা-কিশোরগঞ্জ সড়কসহ ছয় উপজেলার গ্রামীন পাকা সড়ক থেকে কাঁচা সড়ক পর্যন্ত কৃষকদের এমন কর্মযজ্ঞ চলে প্রতিটি শস্য মৌসুম জুড়ে। আইন অনুযায়ী সড়ককে ফসল- খড় বা বিচালীসহ অন্য কোন পণ্য শুকানো নিষেধ থাকলেও তা মানছেন না কৃষককেরা।
সড়ক গুলোর ওপরে ধান- গম- ভুট্টা মাড়াইসহ ধান- গম- ভুট্টা ও খড় শুকানো এবং বিচালী স্তুপ করে রাখায় এসব সড়কে ঘটছে প্রায় সড়ক দূর্ঘটনা।
সোমবার সকাল থেকে সরেজমিনে জেলার ব্যস্ততম নীলফামারী-সৈয়দপুর আঞ্চলিক মহাসড়ক- নীলফামারী-ডোমার আঞ্চলিক মহাসড়,ডোমার-চিলাহাটি সড়ক, ডোমার-ডিমলা সড়ক- নীলফামারী-ডিমলা- জলঢাকা-কিশোরগঞ্জ সড়কে চলাচল করে ছোট-বড়- ভারী -মাঝাড়ি ও হালকা যানবাহনসহ সাধারণ মানুষ। এসব সড়কে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বোরো ধান মাড়াই থেকে শুরু করে ধান ও খড় শুকানোর কাজ করছেন কৃষক-কৃষানীরা।
২৩ কিলোমিটারের নীলফামারী-ডোমার আঞ্চলিক মহাসড়ক দখল করে সড়কের ওপর কৃষক-কৃষানীরা ধান মাড়াই করছেন কেউ বা ধান ও খড় শুকাচ্ছেন কেউ বা আবার ধান-খড় উল্টেয়ে দিচ্ছেন। কেউ কেউ আবার সড়কের দুই ধারে বিচালী স্তুপের কাজ করছেন। শুকাতে দেওয়া ধান ওপর দিয়ে যাতে যানবাহন যেতে না পারে সেই জন্য ইট বাঁশ বা কাঠের টুকরো দিয়ে বন্ধ রাখা হয়েছে সড়ক। সড়কের দুই পাশে ধান ও খড় শুকানোয় সংকুচিত হয়ে পড়েছে সড়কটি। এতে ওই সড়কে দুর্ঘটনার ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে যানবাহন গুলোকে। একই অবস্থা ২৩ কিলোমিটারের নীলফামারী-সৈয়দপুর অঞ্চলিক মহাসড়ক ২২ কিলোমিটারের নীলফামারী-জলঢাকা ২৩ কিলোমটিারের নীলফামারী-সৈয়দপুর সড়ক এমনকি জেলার ছয় উপজেলার অন্যান্য সড়ক গুলো।
সকাল থেকে ডোমার বামুনিয়া এলাকায় ডোমার-ডিমলা সড়কের ওপর মেশিন বসিয়ে ধান মাড়াই করছেলিন ওই এলাকার কৃষক আফসার আলী -৫২-। এসময় তার সাথে কথা হলে তিনি বলেন-  প্রায় ৭০ বিঘা জমিতে বোরো ধান আবাদ করেছি। ইতোমধ্যে সব ধান কাটা হয়েছে। এতো গুলো ধান শুকাবো কোথায়?  ক্ষেতসহ বসত বাড়ির আশপাশে কোথাও ধান শুকানোর খলান নাই। ধান মাড়াই করে শুকাতে না পারলে সব নস্ট হয়ে যাবে। খলান না থাকায় সড়কের ওপর ধান মাড়াইসহ শুকাতে হচ্ছে। যদি খলান থাকতো তহলে কি আর সড়কে শুকাতাম!
ওই সড়কের কিছু দূর গিয়ে দেখা যায় ধান শুকাচ্ছেন কয়েকজন কৃষক-কৃষানী। শুকনো ধানের ওপর দিয়ে যাতে কোন যানবাহন যেতে না পারে এজন্য চতুর দিকে ইট দিয়ে বন্ধ করে রেখেছেন তারা। এসময় সেখানে ধান উল্টে দিচ্ছিলেন কৃষানী স্মৃতি বেগম -৩৫- । তার সাথে কথা হলে তিনি বলেন,‘ গ্রামের কোথাও খলান নাই। যদি খলান থাকতো তাহলে সেখানে ধান শুকাতাম। খলান না থাকায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সড়কে ধান শুকাতে হচ্ছে। আমাদের কারণে হয়তো মানুষসহ যানবাহনের চলাচলে কস্ট হচ্ছে কিন্তু আমরা নিরুপায়। আমরা জীবনের ঝুকি নিয়ে যদি এই ধান গুলো শুকিয়ে ঘরে তুলতে না পারি তাহলে আমরা খাব কি?
সফিকুল ইসলাম -৪৮- নামের এক কৃষক বলেন- এক সময় প্রতিটি গ্রামের খলান ছিল। কৃষকরা নিজেদের খলানে ধান মাড়াই থেকে শুরু করে ধান ও খড় শুকাতো। এখন সেই খলান আর নেই! পারিবারিক কারণে বাবা-ছেলে-ভাই-বোনের মধ্যে জমির ভাগাভাগি হয়ে যাচ্ছে এতে যে যতটুকু ফসলী জমি পাচ্ছে তাতে শুধু ফসল আবাদ করছে। কিন্তু সেই ফসল কোথায় মাড়াই থেকে শুকাবে তা কেউ চিন্তা করছেনা। কারণ প্রত্যেকটি গ্রামের পাকা-কাঁচা সড়ক রয়েছে। আমরা কৃষকরা সেই সড়কেই ধান থেকে শুরু করে প্রত্যেকটি ফসল মাড়াই থেকে শুরু করে শুকাতে পারছি।’
ওই সড়কে দিয়ে অটোরিকায় যাত্রী নিয়ে ডোমার শহরে আসছিলেন চালক মশিউর রহমান -৪০- বলেন- সড়কে ধান- ভুট্টা- গম এবং খড় শুকানো হচ্ছে। এতে করে সড়কে চরম ঝুঁকি নিয়ে আমাদের চলাচল করতে হচ্ছে। চলন্ত গাড়ি থামতে ব্রেক চাপলে ধান আর খড়ে স্লিপ করে দুর্ঘটনায় পড়তে হচ্ছে।
ট্রাক চালক আবু সুফিয়ান -৩৬- বলেন- পঞ্চগড় থেকে ট্রাকে পাথর বোঝাই করে ট্রাক নিয়ে গাইবান্ধা যাবো। পঞ্চগড় থেকে নীলফামারী সড়কের দুই ধারে চলছে ধান মাড়াই থেকে ধান-খড় শুকানোর কাজ। এতে সড়কে দুই ধার সংকুচিত হয়েগেছে। গাড়িটা যে একটু দ্রুত গতিতে নিয়ে যাবো তার কোন উপায় নেই। এই পুরো সড়কে ৩০ কিলোমিটারের উপরে গাড়ি টানায় মুসকিল। সড়ক দখল করে ধান-খড় যারা শুকাচ্ছে তারা কোন দিকে নজর রাখছে না। যে যার মতো চলাচল করছে, আসার পথে চার বার দূর্ঘটনার হাত থেকে বেঁচে গেছি।  
নীলফামারী সদরের রামনগর গ্রামের বাসিন্দা আনোয়ারুল ইসলাম -৩২- বলেন-  সড়কে ধান-খড় শুকানোর কারণে প্রায় ঘটছে সড়ক দুর্ঘটানা। এতে প্রায় ঘটছে প্রাণহানি। গত ৬মে  নীলফামারী-জলঢাকা সড়কের সিংদই বটতলী নামক স্থানে সড়কে শুকাতে দেয়া খড়ে মোটসাইকেল স্লিপ করে পড়ে গিয়ে ট্রাকের চাকায় পিস্ট হয়ে মারা যায় দুহুলী উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা আমার নানী সুফিয়া বেগম। এসময় আহত মোটরসাইকেল চালক মাদ্রাসা শিক্ষক আমার নানা আব্দুল হাই।
তিনি বলেন-  সড়কে যাতে কেউ ধান,খড় শুকাতে না পারে এজন্য দ্রুত প্রশাসনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা দরকার। তা না হলেও এসবের জন্য আরো দূর্ঘটনা বাড়বে সড়কে।
ধান শুকানোর পর্যাপ্ত জায়গা না থাকায় কৃষকরা সড়কের মধ্যে ধান ও খড়সহ বিভিন্ন কৃষিপণ্য শুকানোর কাজ করেন বলে জানান পুলিশ সুপার মো. গোলাম সবুর। তবে এর ফলে যাতে মানুষের চলাচলের বিঘœ না ঘটে বা ঝুঁকি তৈরী হয় সে বিষটি আমরা তরারকী করছি।
এদিকে সড়কে ধান-খড় শুকানোর কারনে যানবাহন চলাচলে বিঘ ঘটছে এবং ছোট খাটো দূর্ঘটনা ঘটছে বলে স্বীকার করেন জেলা প্রশাসক পঙ্কজ ঘোষ। তিনি বলেন-  কৃষি বিভাগকে স্থানীয় সরকারের প্রতিষ্ঠানগুলোর মাধ্যমে কৃষকদের সচেতন করতে অনুরাধ করা হচ্ছে যাতে সড়কে ধান-খড় বা এসব কৃষিপণ্য শুকাতে না দেয়।
তবে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. এস. এম. আবু বকর সাইফুল ইসলাম বলেন- সড়কে ধান ও খড় শুকানোর কারণে প্রায় দূর্ঘটনার ঘটনা ঘটছে। বিষয়টি নিয়ে ভাবার সময় এসেছে। সরকারের পাশাপাশি বড় বড় কৃষক বা সামর্থ্যবান কৃষকরাও এলাকাভিত্তিক খলান বা চাতাল তৈরী করতে পারেন। তাহলে আর ঝুঁকি নিয়ে সড়কে কৃষিপণ্য শুকাতে হবে না

আপনার মতামত লিখুন

Your email address will not be published. Required fields are marked *

আপনার ইমেইল ও অন্যান্য তথ্য সঞ্চয় করে রাখুন

জনপ্রিয় সংবাদ

আদেশ সংযুক্ত চট্টগ্রাম মহানগর যুবদল নেতা মোশাররফ’র বহিষ্কার আদেশ প্রত্যাহার

সড়কতো নয় যেন ধান শুকানোর চাতাল।।

আপডেট সময় : 10:21:09 am, Thursday, 13 June 2024
নীলফামারী থেকে
  
সাদ্দাম আলী।।
  
  
খলান আর চাতালে পরিণত হয়ে পড়েছে নীলফামারীর সড়ক-মহাসড়ক গুলো। দেখে বুঝার উপায় নেই কোনটি সড়ক আর কোনটি চাতাল কিংবা খলান। সড়ক-মহাসড়ক দখল করে মেশিন বসিয়ে ধান মাড়াইসহ ধান-খড়- বিচালী শুকানোর কাজ করছেন কৃষকরা।
জেলার ছয় উপজেলার প্রত্যেকটি সড়ক-মহাসড়ক এখন কৃষককের ধান,খড় আর বিচালীর দখলে। এমন অবস্থায় প্রায় সড়ক দূর্ঘটনায় ঘটছে প্রাণহানির ঘটনা। তবে ক্ষেতে বা বাড়ির আশপাশে খলান না থাকায় কষ্ট করে আবাদ করা ফসল সড়ক-মহাসড়কে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাটাই-মাড়াইসহ শুকাতে বাধ্য হচ্ছেন বলে দাবি কৃষকদের। অপর দিকে প্রশাসনসহ সংশ্লিস্টরা দ্রুত উদ্যোগী না হলে এসব সড়কে দূর্ঘটনাসহ প্রাণহানির ঘটনা বাড়বে বলে দাবি করেন যানবাহন চালকরা। এদিকে সড়ক-মহাসড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক রাখাতে বিশেষ উদ্যোগের কথা জানিয়েছে জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসন।
নীলফামারী জেলার গ্রামীণ রাস্তা থেকে শুরু করে সড়ক-মহাসড়ক-আঞ্চলিক মহাসড়কে ফসল মাড়াই থেকে শুকানো আর বিচালী স্তুপ করে রাখার দৃশ্যটা দেখা মিলে প্রতিটি শস্য মৌসুমে। সড়ক গুলো দখল করে খলান কিংবা চাতালে পরিণত করে ধান মারাই থেকে শুরু করে ধান ও খড় শুকাতে ব্যস্ত কৃষককেরা। শুধু বোরো আর আমন মৌসুমেই নয় এসব সড়ক কৃষকদের দখলে থাকে ভুট্টা- গম ও পাট মৌসুমেও।
জেলার ব্যস্ততম নীলফামারী-সৈয়দপুর আঞ্চলিক মহাসড়ক- নীলফামারী-ডোমার আঞ্চলিক মহাসড়- নীলফামারী-ডিমলা- জলঢাকা-কিশোরগঞ্জ সড়কসহ ছয় উপজেলার গ্রামীন পাকা সড়ক থেকে কাঁচা সড়ক পর্যন্ত কৃষকদের এমন কর্মযজ্ঞ চলে প্রতিটি শস্য মৌসুম জুড়ে। আইন অনুযায়ী সড়ককে ফসল- খড় বা বিচালীসহ অন্য কোন পণ্য শুকানো নিষেধ থাকলেও তা মানছেন না কৃষককেরা।
সড়ক গুলোর ওপরে ধান- গম- ভুট্টা মাড়াইসহ ধান- গম- ভুট্টা ও খড় শুকানো এবং বিচালী স্তুপ করে রাখায় এসব সড়কে ঘটছে প্রায় সড়ক দূর্ঘটনা।
সোমবার সকাল থেকে সরেজমিনে জেলার ব্যস্ততম নীলফামারী-সৈয়দপুর আঞ্চলিক মহাসড়ক- নীলফামারী-ডোমার আঞ্চলিক মহাসড়,ডোমার-চিলাহাটি সড়ক, ডোমার-ডিমলা সড়ক- নীলফামারী-ডিমলা- জলঢাকা-কিশোরগঞ্জ সড়কে চলাচল করে ছোট-বড়- ভারী -মাঝাড়ি ও হালকা যানবাহনসহ সাধারণ মানুষ। এসব সড়কে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বোরো ধান মাড়াই থেকে শুরু করে ধান ও খড় শুকানোর কাজ করছেন কৃষক-কৃষানীরা।
২৩ কিলোমিটারের নীলফামারী-ডোমার আঞ্চলিক মহাসড়ক দখল করে সড়কের ওপর কৃষক-কৃষানীরা ধান মাড়াই করছেন কেউ বা ধান ও খড় শুকাচ্ছেন কেউ বা আবার ধান-খড় উল্টেয়ে দিচ্ছেন। কেউ কেউ আবার সড়কের দুই ধারে বিচালী স্তুপের কাজ করছেন। শুকাতে দেওয়া ধান ওপর দিয়ে যাতে যানবাহন যেতে না পারে সেই জন্য ইট বাঁশ বা কাঠের টুকরো দিয়ে বন্ধ রাখা হয়েছে সড়ক। সড়কের দুই পাশে ধান ও খড় শুকানোয় সংকুচিত হয়ে পড়েছে সড়কটি। এতে ওই সড়কে দুর্ঘটনার ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে যানবাহন গুলোকে। একই অবস্থা ২৩ কিলোমিটারের নীলফামারী-সৈয়দপুর অঞ্চলিক মহাসড়ক ২২ কিলোমিটারের নীলফামারী-জলঢাকা ২৩ কিলোমটিারের নীলফামারী-সৈয়দপুর সড়ক এমনকি জেলার ছয় উপজেলার অন্যান্য সড়ক গুলো।
সকাল থেকে ডোমার বামুনিয়া এলাকায় ডোমার-ডিমলা সড়কের ওপর মেশিন বসিয়ে ধান মাড়াই করছেলিন ওই এলাকার কৃষক আফসার আলী -৫২-। এসময় তার সাথে কথা হলে তিনি বলেন-  প্রায় ৭০ বিঘা জমিতে বোরো ধান আবাদ করেছি। ইতোমধ্যে সব ধান কাটা হয়েছে। এতো গুলো ধান শুকাবো কোথায়?  ক্ষেতসহ বসত বাড়ির আশপাশে কোথাও ধান শুকানোর খলান নাই। ধান মাড়াই করে শুকাতে না পারলে সব নস্ট হয়ে যাবে। খলান না থাকায় সড়কের ওপর ধান মাড়াইসহ শুকাতে হচ্ছে। যদি খলান থাকতো তহলে কি আর সড়কে শুকাতাম!
ওই সড়কের কিছু দূর গিয়ে দেখা যায় ধান শুকাচ্ছেন কয়েকজন কৃষক-কৃষানী। শুকনো ধানের ওপর দিয়ে যাতে কোন যানবাহন যেতে না পারে এজন্য চতুর দিকে ইট দিয়ে বন্ধ করে রেখেছেন তারা। এসময় সেখানে ধান উল্টে দিচ্ছিলেন কৃষানী স্মৃতি বেগম -৩৫- । তার সাথে কথা হলে তিনি বলেন,‘ গ্রামের কোথাও খলান নাই। যদি খলান থাকতো তাহলে সেখানে ধান শুকাতাম। খলান না থাকায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সড়কে ধান শুকাতে হচ্ছে। আমাদের কারণে হয়তো মানুষসহ যানবাহনের চলাচলে কস্ট হচ্ছে কিন্তু আমরা নিরুপায়। আমরা জীবনের ঝুকি নিয়ে যদি এই ধান গুলো শুকিয়ে ঘরে তুলতে না পারি তাহলে আমরা খাব কি?
সফিকুল ইসলাম -৪৮- নামের এক কৃষক বলেন- এক সময় প্রতিটি গ্রামের খলান ছিল। কৃষকরা নিজেদের খলানে ধান মাড়াই থেকে শুরু করে ধান ও খড় শুকাতো। এখন সেই খলান আর নেই! পারিবারিক কারণে বাবা-ছেলে-ভাই-বোনের মধ্যে জমির ভাগাভাগি হয়ে যাচ্ছে এতে যে যতটুকু ফসলী জমি পাচ্ছে তাতে শুধু ফসল আবাদ করছে। কিন্তু সেই ফসল কোথায় মাড়াই থেকে শুকাবে তা কেউ চিন্তা করছেনা। কারণ প্রত্যেকটি গ্রামের পাকা-কাঁচা সড়ক রয়েছে। আমরা কৃষকরা সেই সড়কেই ধান থেকে শুরু করে প্রত্যেকটি ফসল মাড়াই থেকে শুরু করে শুকাতে পারছি।’
ওই সড়কে দিয়ে অটোরিকায় যাত্রী নিয়ে ডোমার শহরে আসছিলেন চালক মশিউর রহমান -৪০- বলেন- সড়কে ধান- ভুট্টা- গম এবং খড় শুকানো হচ্ছে। এতে করে সড়কে চরম ঝুঁকি নিয়ে আমাদের চলাচল করতে হচ্ছে। চলন্ত গাড়ি থামতে ব্রেক চাপলে ধান আর খড়ে স্লিপ করে দুর্ঘটনায় পড়তে হচ্ছে।
ট্রাক চালক আবু সুফিয়ান -৩৬- বলেন- পঞ্চগড় থেকে ট্রাকে পাথর বোঝাই করে ট্রাক নিয়ে গাইবান্ধা যাবো। পঞ্চগড় থেকে নীলফামারী সড়কের দুই ধারে চলছে ধান মাড়াই থেকে ধান-খড় শুকানোর কাজ। এতে সড়কে দুই ধার সংকুচিত হয়েগেছে। গাড়িটা যে একটু দ্রুত গতিতে নিয়ে যাবো তার কোন উপায় নেই। এই পুরো সড়কে ৩০ কিলোমিটারের উপরে গাড়ি টানায় মুসকিল। সড়ক দখল করে ধান-খড় যারা শুকাচ্ছে তারা কোন দিকে নজর রাখছে না। যে যার মতো চলাচল করছে, আসার পথে চার বার দূর্ঘটনার হাত থেকে বেঁচে গেছি।  
নীলফামারী সদরের রামনগর গ্রামের বাসিন্দা আনোয়ারুল ইসলাম -৩২- বলেন-  সড়কে ধান-খড় শুকানোর কারণে প্রায় ঘটছে সড়ক দুর্ঘটানা। এতে প্রায় ঘটছে প্রাণহানি। গত ৬মে  নীলফামারী-জলঢাকা সড়কের সিংদই বটতলী নামক স্থানে সড়কে শুকাতে দেয়া খড়ে মোটসাইকেল স্লিপ করে পড়ে গিয়ে ট্রাকের চাকায় পিস্ট হয়ে মারা যায় দুহুলী উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা আমার নানী সুফিয়া বেগম। এসময় আহত মোটরসাইকেল চালক মাদ্রাসা শিক্ষক আমার নানা আব্দুল হাই।
তিনি বলেন-  সড়কে যাতে কেউ ধান,খড় শুকাতে না পারে এজন্য দ্রুত প্রশাসনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা দরকার। তা না হলেও এসবের জন্য আরো দূর্ঘটনা বাড়বে সড়কে।
ধান শুকানোর পর্যাপ্ত জায়গা না থাকায় কৃষকরা সড়কের মধ্যে ধান ও খড়সহ বিভিন্ন কৃষিপণ্য শুকানোর কাজ করেন বলে জানান পুলিশ সুপার মো. গোলাম সবুর। তবে এর ফলে যাতে মানুষের চলাচলের বিঘœ না ঘটে বা ঝুঁকি তৈরী হয় সে বিষটি আমরা তরারকী করছি।
এদিকে সড়কে ধান-খড় শুকানোর কারনে যানবাহন চলাচলে বিঘ ঘটছে এবং ছোট খাটো দূর্ঘটনা ঘটছে বলে স্বীকার করেন জেলা প্রশাসক পঙ্কজ ঘোষ। তিনি বলেন-  কৃষি বিভাগকে স্থানীয় সরকারের প্রতিষ্ঠানগুলোর মাধ্যমে কৃষকদের সচেতন করতে অনুরাধ করা হচ্ছে যাতে সড়কে ধান-খড় বা এসব কৃষিপণ্য শুকাতে না দেয়।
তবে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. এস. এম. আবু বকর সাইফুল ইসলাম বলেন- সড়কে ধান ও খড় শুকানোর কারণে প্রায় দূর্ঘটনার ঘটনা ঘটছে। বিষয়টি নিয়ে ভাবার সময় এসেছে। সরকারের পাশাপাশি বড় বড় কৃষক বা সামর্থ্যবান কৃষকরাও এলাকাভিত্তিক খলান বা চাতাল তৈরী করতে পারেন। তাহলে আর ঝুঁকি নিয়ে সড়কে কৃষিপণ্য শুকাতে হবে না